Thursday, May 28, 2020
জীবন বেচে দিয়েছি সিটিসেল রেটে - ভূবন মুন্সী
'মানুষ, মানে যারা মারণমন্ত্র, শেল তৈরি করতে পারে? তার চেয়ে যারা তাল পাতার ব্যাগ তৈরি করতে পারে তারা বেশি মানুষ। যারা একশোবার করে ইউরোপ, আমেরিকায়, এশিয়ায় কনফারেন্স পাতায় আর ভাঙ্গে, পরস্পরকে বজ্জাৎ বলে গালাগাল দেয়- একেবারে উৎখাত করে ফেলবার ফিকিরে থাকে, তারাই তো মানুষ এখনকার পৃথিবীতে; আর তাদের তাবেদাররা - ব্যাঙ্কে অফিসে - ডিপার্টমেন্টাল চেয়ারে বসে পৃথিবীর সর্বত্র।' তারাই আজ সর্দার, শ্রেষ্ঠ - 'যারা প্রাসাদের সচিত্র গলিতে জমে ষড়যন্ত্রে, মন্দিরের উদার অলিন্দে মাতে ষড়যন্ত্রে।'
মেজরিটি মানুষও তাদের চিন্তায়, চেতনায় চালিত। সাধারনত 'আহার, পান, অর্থোপার্জন ও বংশ বৃদ্ধি যেন গণিতের নিয়মে অতি সুশৃঙ্খল ভাবে পরপর সম্পাদিত হয়ে চলেছে। বেশ সুখী তারা। তাদের ঘুমের ব্যাঘাত কিছুতেই হয়না।' সব কিছুতেই যেন বোহেমিয়ানায় ভেসে যাওয়া।
'মানুষ যা প্রকৃত নয়, নিজেকে যখন তাই ভাবে- তখনিতো এগিয়ে আসে জ্বরা, সমস্ত নকল, বর্তমান হয়ে উঠে করুণ প্রাক্তন।' এক গলা নোংরা জলে ডোবে যায় মানচিত্র। শকুনি ডানা মেলে আকাশে। আজ 'লক্ষ কোটি শকুনি পাখা বিস্তার করেছে আকাশে। যে আলোয় আলোকিত থাকতো পৃথিবী, সে আলোটা আড়ালে পড়েছে। পৃথিবীময় শকুনি পাখার অন্ধকার ছায়া।'
'পৃথিবীর সমস্ত রূপ অমেয় তিমির মৃতদেহের দুর্গন্ধের মতো।' 'কোথায় সমাজ, অর্থনীতি? - স্বর্গগামী সিঁড়ি?' ' যতই শান্তিতে স্থির হয়ে যেতে চাই, কোথাও আঘাত ছাড়া - তবুও আঘাত ছাড়া অগ্রগামী সূর্যালোক নেই।'
জীবনকে যেন বেচে দিয়েছে সিটিসেল রেটে; পোদ্দারের হাতে। স্বার্থের মদ গিলে মগ্ন সবাই। জুয়া খেলছে জীবন বাজি রেখে। 'পৃথিবীর গভীর গভীরতর অসুখ এখন।'
তবু মুখোমুখি দাঁড়াবার সময় কোথায়? মুখোমুখি দাঁড়াবার মানুষ কোথায়? 'আমাদের জীবনের অর্ধেক সময় তো আমরা সঙ্গমে আর সন্তান উৎপাদনে শেষ করে দিলাম, সুধীবৃন্দ, তবু জীবনে কয়বার বলুনতো আমরা আমাদের কাছে বলতে পেরেছি, ভালো আছি, খুব ভালো আছি।'
কেউ বলছিনা এসব। ভাবছিনা। কেউ বলছেনা- 'আমি ঘোষণা দিচ্ছি ডিটেনশন সেল থেকে।' আমি তোমাদের অগ্রাহ্য করি।
কেউ বলছেনা - 'তোমাকে জিততে হবে মনে রেখো, ফেরার সকল পথ বন্ধ হয়ে গেছে।'
আসলেই ফেরার সকল পথ বন্ধ হয়ে গেছে। তবু কেউ কিছু বলছেনা। কেন বলছেনা? ভেবেছিলাম মানুষ ক্রমশ বড় হবে। সবার উপরে মানুষ সত্য হবে। দেখি সত্য হয়ে গেছে রোবট - সঙ্গী হয়ে গেছে মানুষের।
দেখি এক পাল মাথা মোটা ষাঁড়। এক পাল ভেড়া। এক পাল গরু - পৃথিবীতে ঠাসাঠাসি, গাদাগাদি - প্রচন্ড রকম ভীড়। দেখি সবাই - নিউট্রন বোম বুঝে, মানুষ বুঝেনা।
ফিরে যাই নিজের কাছে। আর্চনায় জপি-
'Show me your ways
My Lord;
teach me your paths.
Lead me in your truth
and teach me.'
আলোর ঝলক ছুটে আসে আমার দিকে- ইতিহাসের পথ বেয়ে; যে ইতিহাসকে জেনেছি - 'ইতিহাস বেলেল্লা মিছিল ছাড়া কিছু নয়, চুন- কালি- সঙের মিছিল ছাড়া কিছু নয়' - তা এবার পথ হয়ে উঠে আসে। 'মানুষের ঘামে নিষিক্ত শ্রম আমাকে আলোকিত করে। শ্রমের ঘামে এক-একটি ফোঁটা যেন এক-একটি হীরকখণ্ড। এর এই শ্রম যেন এক বিস্ফোরক এবং এই বিস্ফোরণই আমাকে অজ্ঞতা থেকে, অন্ধকারের অতল গহ্বর থেকে, আলোর ঝলকানিতে আমাকে জাগিয়ে দেয়, আমি চেতনা ফিরে পাই, আমি জেগে উঠি। সেই মিথ্যে, অজ্ঞতা আর অন্ধকারের দিন চলে গেছে। বিজ্ঞানের আলোক সম্পাত চারদিক উদ্ভাসিত করেছে। এবার তবে চলতে হবে বিজ্ঞানের আলোয়, যেতে হবে সামনে, আরো সামনে এবং অনেক দূর- দূরান্তরে।'
'সুচেতনা, এই পথে আলো জ্বেলে- এ পথেই পৃথিবীর ক্রম মুক্তি হবে।'
২৮.০৫.২০২০
কৃতজ্ঞতাঃ
১. জীবনানন্দের জীবনী ভিত্তিক উপন্যাস - এক জন কমলালেবু - শাহাদুজ্জামান।
২. মরচে পড়া পেরেকের গান - হ্যেল্ডার্লিন, অনুবাদ- বুদ্ধদেব বসু।
৩. এক অনন্ত জীবনের জীবনী- সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
৪. দরজার বাইরে- সমরেন্দ্র।
৫. সংশপ্তক - শহীদুল্লা কায়সার।
৬. জন্ম মৃত্যু-জীবনযাপন - আবুল হাসান।
৭. আমি তোমাদের অগ্রাহ্য করি - মাহমুদ দারবিশ, ইংরেজি অনুবাদ- সাদি সিমাবি & এলেন।
৮. মিছিলে নতুন মুখ - রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ।
৯. চণ্ডীদাস।
১০. অশ্লীল সভ্যতা - হেলাল হাফিজ।
১১. Bible
১২. Lightining - RimBaud, অনুবাদ - সফিউদ্দিন আহমদ।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment