Monday, May 18, 2020

ইতিহাসের বৃহত্তম ধোঁকা - ভূবন মুন্সী


এই মুহূর্তে পৃথিবী এক আশ্চর্য আতঙ্কের ভিতর দিন যাপন করছে। করোনা ভাইরাস তার জাদুকরী ক্ষমতা দিয়ে আগ্রাসন চালাচ্ছে পৃথিবীতে। এটা সাইক্লোন কিংবা টর্নেডোর মতোন ঘর বাড়ি উপড়ানো তান্ডব লীলা নয়, জৈবিক হাত দ্বারা নির্মিত পারমানবিক বোমার বিধ্বংসী আগ্রাসনও নয়, এটা যেন অনেকটা গলা টিপে ধরে ত্রাস সৃষ্টি করা এবং ক্রমাগত হত্যার আয়োজন।

সবচেয়ে তাজ্জবের ব্যাপার মোড়ল রাষ্ট্র গুলো এখনো ব্যর্থ চোখ মেলে নিশ্চুপ তাকিয়ে আছে। আগ্রাসী অসহায়ত্ব পরস্পরকে ক্রমশ আলাদা করে দিচ্ছে। সার্বিয়া এই দূর্দিনে বুঝে গেলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন "রূপকথা" বৈ আর কিছু নয়। সার্ক, ওআইসি, জি-৮ সহ আঞ্চলিক জোট গুলো জোটহীনতার চেহারায় উপস্থিত। বৈশ্বিক জোটের বাতিঘর জাতিসংঘ মুখে কুলুপ এঁটেছেন।

সকলে একসাথে কি মিথ্যে প্রবঞ্চনাই না করেছে বেড়ে উঠা প্রজন্মের সাথে। চন্দ্র, মঙ্গল অভিযান নিয়ে ব্যাস্ততা  দেখিয়েছে এতোদিন, কি বৃহৎ আস্ফালন! অথচ সব অভিযান  আজ ম্লান হয়ে গেলো করোনার সংকটে।


তারা এতোদিন স্পাইডার ম্যান এর অলৌকিক শক্তিকে দেখিয়েছে মানুষের পক্ষে, পক্ষান্তরে ভিন গ্রহ থেকে আসা এলিয়েনদের শায়েস্তা করেছে। সবার কি সম্মিলিত প্রচেষ্টা এলিয়েনদের ধরতে, মারতে! অথচ কিনা পৃথিবী নামক গ্রহটাকে রেখেছে পুরো অরক্ষিত। রাষ্ট্র আর "অদৃশ্য মোড়লেরা" নিজেদের পুঁজির বিকাশে পৃথিবীকে ক্রমাগত ঠেলে দিয়েছে সংকটের খাঁদে।

এক ধরনের সিন্যামাটিক তথ্য প্রযুক্তি প্রদর্শন করে অলৌকিক মগজ তৈরি করে দেওয়া হয়েছে পরবর্তী প্রজন্মকে। একদিকে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে সংহত করেছে নিজেদের পুঁজিবাদী অস্তিত্ব, অন্যদিকে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করেই মানুষের দৃষ্টি নিয়ে গেছে বাস্তবতা বিবর্জিত অলৌকিকতার দিকে।

অদৃশ্য মোড়লেরা বিজ্ঞানকে হস্তগত করেই ব্যাপক হারে ঘটিয়েছে ইন্ড্রাস্টিয়ালাইজেশন। গ্লোবাল ওয়ার্মিং ত্বরান্বিত করে বাড়িয়ে দিয়েছে সি-লেভেল। বরফ গলে অবমুক্ত হয়েছে প্রাচীন জীবানু। বাড়িয়ে দিয়েছে খরা, বন্যা, জ্বলোচ্ছাস, অগ্নুৎপাত আর ঘন ঘন মহামারীর হুমকি।

সার্স সংকট পরবর্তী পৃথিবীতে নতুন মহামারীর আশংকা থাকা সত্ত্বেও মোড়ল রাষ্ট্র ও অদৃশ্য মুরুব্বীদের কোন তৎপরতা দেখা যায়নি। বরং যুক্তরাষ্ট্রে করোনা সংকটের প্রাক মুহুর্তে ট্রাম্পের উক্তি (রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসনের দিকে ঠেলে দেওয়ার কৌশল, কোভিড-১৯) রাষ্ট্রের গদিতে বসে থাকা পুরোহিতদের ভাবনার কেন্দ্রকে চিহ্নিত করে। গদিটাই আসল, বাদবাকি চিচিং ফাঁক।

'মার্চের ১৬ তারিখ, ঠিক যেদিন স্পেনিশ সরকার সমস্ত বেসরকারি হাসপাতালকে জাতীয়করণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ; সেইদিনই মাদ্রিদের একটি হাসপাতালের বাইরে অঝরো ক্রন্দনরত এক নারীর ভিডিও ফুটেজ দেখেছিল গোটা বিশ্ব। তার স্বামী সবেমাত্র করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন এবং পরীক্ষায় তারও করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছিল। কিন্তু জরুরি পরিস্থিতিতে চিকিৎসা করার মতো ‘যথেষ্ট অসুস্থ নয়’ বলে এই নারীটিকে হাসপাতাল থেকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছিল'। যথেষ্ট অসুস্থ নয়, সেলুকাস!

নভেম্বরে নতুন রোগের সন্দেহ উদ্রেক হলেও উহানে লক ডাউন উদ্যোগ নেওয়া হয় জানুয়ারীর তেইশ তারিখে। বিলম্বের কারণতো স্পষ্ট- প্রবৃদ্ধির সূচক নিম্নগামী হওয়ার ভয়। সেলুকাস!

তবে যোগ্যরাই টিকে থাকবে- এ নীতি সচল হলে রাষ্ট্রিক ঠকুর, পুঁজিপতি পান্ডব আর একনিষ্ঠ প্রজাগণ ছাড়া বাকিরা যে কোভিডে ধরা খাবে অথবা দূর্ভিক্ষে এটা নিশ্চিত।

এলিয়েন মারার স্বপ্ন দেখে বেড়ে ওঠা তরুন, বিপদ দেখে মনে মনে স্পাইডার ম্যান হয়ে ওঠা তরুন কি সাংঘাতিক ধোঁকা পেয়ে এসেছে পূর্বজদের কাছ থেকে। অন্তত শিকরী যুগের আদিম মানুষগণও এতো কপটতা করার নির্মমতা দেখায়নি।

করোনা ভাইরাস কিংবা তার সাথে আগত সংকট সমাধানের নূন্যতম যোগ্যতা পৃথিবীর নেই, ভাবতেই অবাক লাগে। অথচ চন্দ্র, মঙ্গল অভিযানে, সমরাস্ত্রে কি বিশাল ইনভেস্টমেন্ট। স্পাইডার ম্যান, এলিয়েন নিয়ে কত মাতামাতি, শিশুদের পুষ্টির যত্নে ডানো, হরলিক্স, মাদার হরলিক্সের বিজ্ঞাপনী প্রচার। কি ফাঁপা শক্তিমত্তা, মেকি যত্নআত্তির প্রকাশ। সেলুকাস!


০৩.০৪.২০২০

No comments:

Post a Comment