Monday, May 18, 2020
পুনরাবৃত্তি - ১ > এম. ইকবাল
লোকটার ডাকনাম হাবু, পেশায় কৃষক, পড়াশোনার দৌড় কেলাস ফাইভ পর্যন্ত। বাপের সামান্য জমি আছিল, চাষবাষ কইরা কোনমতে দিন চইলা যাইতো। পড়ালেহার খরচ জোগাবার না পাইরা স্কুলে যাওয়া বন্ধ হইয়া গেছিলো হাবুর। একটুখানি জমি, কোনমতে দিন চলে, এইডা বেইচা তো আর পড়ালেহা করানো সম্ভব না, তাছাড়া পড়ালেহা কইরা কি হইবো? গরীব মানুষ, চাকরি দিব কেডায়? দেশে যে গন্ডগোল চলতাছে কখন যে কি হয় কওয়া যায় না।
হাবুর বাপ বাবলু, যুদ্ধের সময় পাকবাহিনীর হাত থেইকা কোনমতে জান নিয়া পালাইতে গিয়া অন্ধকারে গর্তের মধ্যে লাফ দেয়। নিচে শক্ত মাটি আছিল, বুঝবার পারে নাই। মাটিতে পইড়া ডাইন ঠ্যাং ভাইঙ্গা গেছিল। চিৎকার মারবারও পারে নাই, পাকবাহিনীর হাতে ধরা পড়বার ভয়ে। দুইদিন গর্তের মধ্যে লুকাইয়া আছিলো। দুই দিন পরে রাইতের বেলা অন্ধকারে গর্ত থেইকা বার হইয়া কোনমতে ঘরে ঢুইকা দেখে ঘরের সব কিছু লন্ডভন্ড, খাবার মত কিচ্ছু নাই ঘরে। যা আছিল সব ঐ কানা মন্টু নিয়া গেছে। বাবলুরে আর মুক্তিবাহিনীর পোলাপানরে ঘরে না পাইয়া ঘরের সবকিছু লন্ডভন্ড করে। তারপর তার বাড়ির আশেপাশে সব জায়গায় খুজে। তবুও তারে খুইজা না পাইয়া তার পাকা ধানক্ষেতটারে পাড়ায়া মাটিতে মিশায়া ফেলে।
বাবলুর গলা শুকায়া আসে, বাড়ির পাশের পাগাড় থাইকা ভাঙ্গা গেলাসে একটু জল নিয়া খায়, গলাডা ভিজায়। ভিজা গলায় চিৎকার দেওন যায়, শব্দ বেশি হয়। কিন্তু গলাডা আবার শুকাইয়া যায়। সে আর চিৎকার দেয় না। ধানক্ষেতটার দিকে তাকাইয়া সে শুকনা গলায় বিড় বিড় করে- “হালারা আমার ধানক্ষেতটারে শেষ কইরা দিলো”।
অন্ধকারে কাউরে খুইজা না পাইয়া দুইদিনের খালিপেট নিয়া সে ঘরের মেঝেতে শুইয়া পড়ে, প্রচন্ড বেদনা আর ভাঙ্গা ঠ্যাং নিয়াই কোনমতে ঘুমায়।
পরের দিন পাশের বাড়ির কানু মিয়া বাবলুর বাড়িতে খোজ নিতে আইসা দেখে লোকটা ঘরের মেঝেতে মরার মতন পইড়া আছে, ডাইন পাও ভাঙ্গা। সে তাড়াতাড়ি বাবলুরে ধইরা নিয়া চাইরডা খাওয়াইয়া তার নিজের রিকশা দিয়া বাবলুরে শশুর বাড়ি পৌছাইয়া দেয়।
বাবলু মুক্তিবাহিনীর লাইগা নিজের ঘরে ডাইলভাত খাওনদাওনের ব্যবস্থা করতো। পাশের এলাকার কানা মন্টু জাইঙ্গার ব্যবসা ছাইড়া দিয়া রাজাকার বাহিনীতে নাম দেয়। তার কাম হইলো পাকবাহিনীরে নানান খবর সরবরাহ করা। তয় পাশের এলাকায় বাবলু যে এত বড় একটা কাম করতাছে, গোপনে মুক্তিবাহিনীরে ঘরে থাকবার ব্যবস্থা কইরা দিছে, খাওনাদাওনের ব্যবস্থা কইরা দিছে, এত বড় একটা খবর পাকবাহিনীরে না দিয়া সে কেমনে থাকে? তার একটা দায়িত্ব আছে না?
মুক্তিবাহিনীরা কয়দিন পরে পরে মাঝে মধ্যেই রাইতের অন্ধকারে গোপনে বাবলুর বাড়িতে আইসা উঠে। যুদ্ধ করতে করতে গুলি আর বোমা ফুরাইয়া গেলে দুই একদিনের জন্যে বাবলুর বাড়িতে আইসা উঠে। এই এলাকায় বাবলুই তাদের সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধু। তারপর দুই-তিন দিন ভালমন্দ খাইয়া, গুলি আর বোমা হাতে পাইলে আবার হঠাৎ কইরা রাইতের অন্ধকারে উধাও হইয়া যায়। দুরের কোনো এলাকায় অপারেশন চালাইতে চইলা যায়।
সেইদিনও মুক্তি বাহিনী খবর পাডায় বাবলুর কাছে, আইজকা তারা বাবলুর গেরামে আইবো, একদিন থাইকা চইলা যাইবো। কোনমতে খাওনদাওনের ব্যবস্থ্যা করলেই হইবো, এত ভালো কিছু রান্ধন লাগবো না। তাছাড়া বাবলুর বউডা পাঁচ মাসের পোয়াতি, বেশি রান্ধিবার গেলে তার বউয়ের কষ্ট হইয়া যাইবো।
বাবলুর আরেকটা পোলা আছিল, বছরখানিক আগে উডানে খেলতে গিয়া পানিতে পইড়া ডুইবা মরে। দেড় বছরের পোলা, সারা বাড়ি দৌড়ায়া বেড়াইতো, বাপ-রে কেবল চিনছে কোনমতো। একদিন বাবলুর বউ শেফালী রান্ধিবার গেছে, পোলাডা বল নিয়া উডানে খেলতেছিল। শেফালী একটু পরে পরে ঘর থাইকা উকি দিয়া পোলাডারে দেখে, বাইরে খেলতাছে কি না। আছরের আযান দেওয়ার লগে লগে শেফালী মুখ বাইর কইরা পোলাডারে খোজে, দেখে পোলাডা উডানে নাই। শেফালীর বুকের মধ্যে ছ্যাৎ কইরা উডে। দৌড় দিয়া উডানের আরেক মাথায় যায়। দেখে পোলাডা আবার ধান ক্ষেতের দিকে গেল কি না! পোলাডারে দেখা যায় না। শেফালী চিৎকার কইরা ডাকতে থাহে, হাবুরে, হাবু, কই গেলি রে বাপ, ও হাবু, হাবুরে… কোন সাড়া শব্দ পায় না শেফালী। শেফালীর মাথা ঝিম ঝিম কইরা উডে, সে কানে যেন কিছু শোনে। পানিতে ঢিল মারলে যে শব্দ হয়, সেই শব্দ। দৌড় দিয়া পাগাড়ে যায়।
পাগাড়ের মাঝখানে লাল বলডা দুলতে দুলতে ভাসতাছে। আর কি যেন একটা পানির নিচ থেইকা বুদবুদ ছাড়তাছে। শেফালীর বুকটা ধড়ফড় কইরা উঠে। চিৎকার দিবার চায় কিন্তু গলা দিয়া কোন শব্দ বের হয় না। সে দৌড় দিয়া পাগাড়ের মধ্যে চইলা যায় যেহান থেইকা বুদবুদ উঠতেছিল। দুই হাতে পোলাডারে ধইরা কাছাড়ে তুইলা গলা ফাডায়া চিৎকার করে- আল্লারে--- আমার কি হইলো রে--- আমার হাবুরে--- । হাবু তহনও মরে নাই একটু একটু কইরা হেচকি মারতাছে। কিন্তু শেফালী কি করবো বুঝতে পারে না। পোলাডারে বুকের মধ্যে একবার চাইপা ধরে আর একবার নামায়া পেডের মধ্যে চাপ দেয় যদি পেট থেইকা পানি বাইর হয়। আশেপাশের মানুষজন দৌড়ায়া আসার আগেই হাবুর শরীর নেতায়া আসে। পোলাডা আর দম নিবার পারে না। মায়ের চউক্ষের সামনে পোলাডার দুইচোখ বন্ধ হইয়া যায়। শেফালীও সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার দিয়া মাটিত পইড়া মুর্ছা যায়।
দুই তিনডা মাস শেফালী আর বাবলু কেউ কারো দিকে তাকায় না। দুই জনের মুখ শুকায়া কাঠ হইয়া যায়। খাওয়ার কোন ঠিক নাই, ঘরদোড় সব আওলাঝাওলা কইরা দুই জন ঘরের মধ্যে পইড়া থাহে। এই দুর্দিনেও পাশের বাড়ির কানু মিয়ার বউ তাদের রান্ধা বাড়া কইরা খাওয়ায়। এই এলাকায় বাবলুর কাছের মানুষ বলতে ওই একটা পরিবারই আছে। কানু আর কানুর বউ চাম্পা। তাদের কোন পোলাপান নাই। হাবুর পোলাডারেই তারা নিজের পোলার মতো আদর করতো। হাবু মইরা যাওয়াতে দুইডা পরিবারই ভাইঙ্গা পড়ে। কানু পেশায় রিকশা চালক। সে নিজের রিকশা চালায়, বড়লোকী কারবার ।
কয়েক দিন ঘরে পইড়া থাইকা বাবলু ঘর থেইকা বাইর হয়, ক্ষেতে যায়। ধানক্ষেতটা মনোযোগ দিয়া দেখে। এই ধানক্ষেতটাও তার পোলার মতোই। ধানক্ষেতটার দিকে তাকায়া আবার তার পোলার কথা মনে হয়। সে গামছা দিয়া মুখ ঢাইকা কতক্ষণ কান্দে। তারপর আস্তে আস্তে উইঠা কিছুক্ষণ ধানগাছ গুলারে হাতায়। তারপর মনডারে শক্ত কইরা নিজেরে কয়, যা হইবার হইছে, আল্লার ফেরেসতারে আল্লায় লইয়া গেছে, আমার আর বইসা থাকলে চলবে না, এইবার কামে নামতে হইবো। সে দিল থেইকা পোলাডার লাইগা আল্লার কাছে দোয়া করে- হে আল্লা, তুমি আমার পোলাডারে জান্নাতে জায়গা দিও।
দেখতে দেখতে প্রায় বছর যায়। বাবলুর বউ আগের সবকিছু ভুইলা একটু স্বাভাবিক হয়। তার পেটে আবার বাচ্চা আসে। দুইজনের মুখেই আবার কিছুটা হাসি ফুইটা উঠে। এর মধ্যেই শুরু হয় গন্ডগোল। পাকবাহিনীরা হঠাৎ কইরা রাইতের আন্ধারে ঢাকা শহরে আক্রমণ কইরা বসে, বাড়ি ঘরে আগুন লাগায়। তারপর থেইকা শুরু হয় যুদ্ধ। সারাদেশেই মুক্তিবাহিনীর দল তৈরী হয়। জায়গায় জায়গায় মুক্তি বাহিনীরা অস্ত্র নিয়া পাহারা দেয়। সেই সাথে রাজাকারেরাও সারা দেশে তাদের কার্যক্রম চালায়, পাকবাহিনীরে সাহায্য করাই তাদের কাম। পাশের এলাকার মন্টু সেই সময়ই রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেয়। মাইনষের বাড়িঘরে আগুন লাগায়া জিনিসপত্রগুলা যদি লোপাট করন যায় সেই আশায়। তাছাড়া এই যুদ্ধের সময়তো তার জাইঙ্গার ব্যবসা চলবে না। তাইলে সে খাবে কি?
ডিসেম্বর মাসে যুদ্ধ শেষ হয়। বাংলাদেশের জন্ম হয়। সব মানুষের মুখে হাসি। পেটে ভাত নাই, তবুও শান্তি। হারামজাদারা দেশ থেইকা বিদায় হইছে। কিছুদিন পড়েই মন্টুর ঘরেও আলো ফুটে। আরেকটা পোলার জন্ম হয়। কি সুন্দর পোলাডা! ঠিক যেন হাবু। জন্মের পরেই পোলাডার চিৎকার শুইনা শেফালী চমকাইয়া উঠে। এই চিৎকার তো সে আগেও শুনছে! বড় পোলা জন্মের সময়ই ঠিক এই চিৎকারটাই দিছে। ঠিক একই চেহারা, একই গলা। শেফালী সঙ্গে সঙ্গেই ঠিক কইরা ফেলে, এই পোলার নামও সে ‘হাবু’ই রাখবে। এই পোলার মধ্যে দিয়া সে আগের পোলাডারেও খুইজা পাইছে। শেফালীর মনে হয়, তার চাইতে সুখী দুনিয়াতে আর কেউ নাই। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই আবার তার মনে হয়, দেশে এহন আকাল, ঘরে ক্চ্ছিু নাই, পোলাডারে ঠিকমতো খাওয়াইতে পারবো তো? তবুও পোলাডার মুখের দিকে চাইয়া দিলডা জুড়াইয়া যায়। ঘরে খাওন নাই, তাও শান্তি।
কষ্টে কষ্টে তবুও দিনগুলা চইলা যায়। পোলাডা আস্তে আস্তে বড় হয়। যে বছর পোলাডার স্কুলে যাওয়ার কথা, তার আগের বছর দেশে আবার গন্ডগোল হয়। বঙ্গবন্ধুরে গুলি কইরা মাইরা ফেলে কত্তগলা বেইমান। পুরা দেশ থমথমে হইয়া যায়। সেনা বাহিনী দেশের ক্ষমতায় যায়। তারপর থেইকা দুই-তিন বছর পরে পরে একটার পর একটা গন্ডগোল লাইগা আছে। এর মধ্যে দিয়াই পোলাডা ক্লাস ফাইভ পাস করে। পড়ালেহা করানোর ইচ্ছা থাকলেও অভাবের কারনে হাবুরে আর স্কুলে ভর্তি করানো সম্ভব হয় নাই। বই খাতা ছাইড়া দিয়া বাপের সঙ্গে মাঠে কাম করতে যায়। শেফালীর বুকটা ধুকপুকাইয়া উঠে। পোলাডারে লেহাপড়া করানোর ইচ্ছা আছিল, একটুখানি জমি, আবাদ-ফসল কইরা কোনমতে সংসার চলে, এইডা বেইচা তো আর পড়ালেহা করানো সম্ভব না। তাছাড়া পড়ালেহা করায়া কি হইবো ? গরীব মানুষ! চাকরি দিব কেডায়?
এমনিতেও দেশের যা অবস্থা, কহন কি হয় তা তো কওয়া যায় না। হাবুর আর পড়ালেহা করা হয় না। গামছা কান্দে লইয়া, লেংটি পইড়া বাপের লগে মাঠে কাম করতে যায়। ধীরে ধীরে ওই একটুকরা জমিই তার দেশ, দুনিয়া হইয়া ওঠে। ওখানেই ধান চাষ করে, ওখানেই সবজি চাষ করে। মাঝে মধ্যে মাইনষের ক্ষেতেও মজুরীর কাম করে। আস্তে আস্তে সংসারের সব কাজ কাম শিইখা ফেলে। স্বৈরাচার সরকারের পতন হইলে দেশে গণতন্ত্রের শুরু হয়। তার সংসারেও গণতন্ত্রের ছোয়া লাগে। তারে বিবাহ দিয়া বাপ মা কিছুটা দায়মুক্ত হয়। এদিকে গনতন্ত্র কিছুদিনের মধ্যেই একনায়কতন্ত্রে পরিনত হইলো। সে বুঝতে পারে, সংসারে সে মূল্যহীন। অভাবের সংসারে সব পুরুষরাই কাপুরুষ। তবুও যে-সব মহিলারা অভাবের সংসার ধইরা রাখতে প্রাণপন চেষ্টা কইরা থাকে তারা নিতান্তই সাদাসিধা বোকা টাইপের মহিলা। কিন্তু হাবুর বউ কোন মতেই বোকা মহিলা ছিলেন না। তাই সে একটা বাচ্চার জন্ম দিয়া তাকে হাবুর কোলে তুইলা দিয়া ঘর ছাইড়া বাহির পানে চইলা গেলেন এই ভেবে যে- যদি অভাবটাকে অতিক্রম করন যায়। পরে তার কি হইছিল তা কেউ জানে না, কারন যে নারী ঘর ছাইড়া যায়- তার খবর কেউ কইতে পারে না অথবা রাখে না। এইদিকে হাবু নীরবে তার বউয়ের বিদায়শোক অতিক্রম কইরা চান্দের কনা পোলাডারে কোলেপিডে কইরা মানুষ করতে থাকে। এইদিকে হাবুর বাপ-মা, অর্থাৎ বাবলু আর শেফালী পোলার কষ্ট আর একাকীত্ব বুঝতে পাইরাও সব নিয়তি মাইনা লইয়া ফুটফুটে নাতির লগে আনন্দ ভাগাভাগি করার অভিনয় করতে করতে কিছুদিনের মধ্যে দুইজনই ইহকাল ত্যাগ করলেন। হাবুও কিছুদিনের মধ্যেই উপলব্ধি করতে পারল যে, পোলাডারে পাইয়া সে হাতে চাঁদ পাইয়াছিল বটে কিন্তু বাবা-মা কে হারাইয়া চিরকালের জন্য সে যেন সূর্যটারে হারাইল।
[হাবুর জীবনের পরবর্তী গল্পটা খুবই করুণ। কারন, দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক পালাবদলের মধ্যে দিয়া দেশটা এমন একটা জায়গায় পৌছে যাচ্ছিল যেখানে হাবুরা সমাজের পতিত, ফেলনা ছাড়া আর কিছুই নয়। তাছাড়া ছোট খাটো কৃষক হিসেবে পরবর্তী বাংলাদেশে তাদের কোন জায়গা ছিলো না। বেশিরভাগ কৃষকরা তাদের কৃষিজমি সহ কৃষকত্ব হারাইতে হারাইতে প্রথমে শ্রমিক এবং পরে সমাজের উচ্ছিষ্টভোগী, ত্রানভোগী হয়ে বাঁচতে থাকে। এক্ষেত্রে হাবু প্রাণপনে পিতৃভুমিটুকু আকড়াইয়া ধরিয়াছিলো। পিতার রেখে যাওয়া জমিটুকুতে সে প্রতিবছর ফসল ফলায়।]
কিন্তু তারও এহন বয়স হইছে। যদিও সে এহন এই যুগের মানুষ তবুও এই যুগের কোন প্রভাব তার উপর পড়ে নাই। এই করোনা ভাইরাসের আমলেও সে তার ক্ষেতডারে সবুজে সবুজে ভইরা ফালাইছে। কিন্তু সে জানতো না তার ছোডো ধানক্ষেতটাও প্রযুক্তির কারনে ইতিহাসের পাতায় জায়গা কইরা নিছে। তার ক্ষেতে কি কারনে এত সরকারী-বেসরকারী নেতা, সাংবাদিক, পুলিশ, বিজিবি, এমপি, মন্ত্রীদের ভিড় তা বুঝবার পারে না। তার আগেই সে বুইঝা যায়, এইবার তার না খাইয়া থাকতে হইবে আর না হয় মাইনষের দুয়ারে হাত পাততে হইবে। সে মাথায় হাত দিয়া মাটিতে বইসা পড়ে। মাটির সাথে মিশ্যা যাওয়া পাকা ধানের ছড়াগুলার দিক তাকাইয়া মনের খেয়ালেই সে বইলা উঠে “হালারা আমার ধানক্ষেতটারে শেষ কইরা দিলো”।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment