Sunday, May 10, 2020

'সামাজিক দূরত্ব নয়, শারীরিক দূরত্ব' - ভূবন মুন্সী



মানুষ সামাজিক জীব আর জীবগত শর্তে অপর জীব থেকে পৃথক না হয়েও পৃথক (সৃষ্টির সেরা) হয়ে উঠেছে সামাজিক সাংস্কৃতিক শর্তে বা বোধগত ক্রিয়ার উপস্থিতিতে, আর এ বোধগত ক্রিয়া তথা পারস্পরিক নির্ভরতা ও সমন্বিত ক্রিয়ার মাধ্যমে মানুষ বিনির্মান করে যাচ্ছে বৃহৎ হতে বৃহত্তর সমাজ।

আদিম শিকারী সমাজ হতে কৃষি বিপ্লব, তারপর বিজ্ঞানীদের হাতে প্রযুক্তির উল্লম্ফন সব কিছুর গতিই সামাজিক শর্ত পূরণে মানুষকে আরও সামাজিক, পারস্পরিক করার গন্তব্যে। সব সংকটেই মানুষ আরও সামাজিক হয়ে উঠবে তথ্য বিনিময় ও সাহায্য সহযোগিতা এবং পারস্পরিক নির্ভরতায় এটাতো সামাজিকতারই শর্ত। তবে "সামাজিক দূরত্ব মেনে চলুন" এমন আদেশ কি করে ন্যায় বিধান করতে বা সংকটের সামাধানিক পথ বা পথ্য হিসেবে নির্দিষ্ট হতে পারে!

একবিংশ শতাব্দীর পুরো সময়টাই মানুষের জন্য নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ সামনে নিয়ে আসবে। ২০০০ সালের টুইন টাওয়ার হামলার পর থেকে একের পর এক নতুন নতুন রাষ্ট্রিক সংকট প্রকট হচ্ছিলো আমাদের সামনে। 'জলবায়ু পরিবর্তন' যে ইতোমধ্যে মহাসংকট হিসেবে দেখা দিয়েছে তা বিজ্ঞানের চোখ দিয়ে দেখলে স্পষ্টই বোঝা যায়। আর একবিংশের দ্বিতীয় দশকের সূচনালগ্নেই এক "বাইবেলিক সংকট" হাজির হলো আমাদের দোরগোড়ায়। করোনা সংকট ইতোমধ্যে ছুঁয়ে ফেলেছে সমগ্র দুনিয়া।


"কোভিড-১৯" ভাইরাসের সংক্রমণে এখন পর্যন্ত প্রাণ দিয়েছে এক লক্ষের অধিক, আর আক্রান্ত আঠারো লক্ষাধিক। যে কোন মহামারী কর্ম ও জীবিকার উপর আঘাত হানে, মন্থর করে দেয় অর্থনীতির গতিময় চাকা।

করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় পরামর্শক বা পথ প্রদর্শক হিসেবে রয়েছে ডাক্তার ও অনুজীব বিজ্ঞানী। তাদের নির্দেশনাই সুপ্রিম। আমরা আশার চোখ মেলে তাকিয়ে আছি ল্যাবরেটরির দিকে।

এ বৈশ্বিক সংকটে বিশেষত আমার প্রিয় মাতৃভূমির দিকে তাকিয়ে দেখি দেশ কান্ডারী সবাই যেন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক আর আমরা সবাই ওয়ান টু ক্লাস ফাইভের স্টুডেন্ট। কিভাবে হাত ধৌত করতে হবে, কোন আঙুলের ফাঁকে কোন আঙুল দিতে হবে তা নিয়ে তুমুল মজমা। অথচ রাষ্ট্রের কাজ "না করা কাজটাই" সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

"না করা কাজ" তো এটাই যে, মার্চ মাসের আট তারিখে কোভিড ঊনিশ শনাক্ত হওয়ার পর যা করা উচিৎ ছিলো। প্রধান মন্ত্রী থেকে শুরু করে সবাই নির্বাচনের আমেজে ডুবে রইলেন, ছুটি ও পরিবহন সেবা বন্ধের মতো আদা কাঁচড়া সিদ্ধান্ত নিলেন, গার্মেন্টস বন্ধ ও খোলা, অতপর বন্ধ ছেলেমি পূর্ণ এক সিদ্ধান্ত নিলেন। আর সবাই মিলে প্রাইমারির শিক্ষক হয়ে আমাদের উপদেশ দিলেন।

আইএলও এর হিসেব মতে ৩৩০ কোটি বেকারের জন্ম হতে চলেছে। এ হাওয়া আমাদের দেশেও লাগছে। কর্মহীন মানুষ গুলোর ব্যবস্থাপনা অধিক গুরুত্বপূর্ণ, অন্তত খাদ্যের ব্যবস্থাপনা। "প্রণোদনা" যা দেওয়া হবে তা তো রাঘব বোয়াল সাহেবগনই শেষ করে দেবে। যে ভাবে চাল আলু চুরি করার আসুরিক চরিত্র প্রকাশ পাচ্ছে তাতে করে "না খাওয়া" মানুষ গুলো কখোন ক্ষুব্ধ হয়ে "মানচিত্র" খেতে চাইবে হারামজাদাদের কাছে কে জানে!

সামাজিক দূরত্ব নয়, বরং সামাজিক একাট্টা তথা তথ্য বিনিময় ও পারস্পরিক সহযোগিতাই আমাদেরকে এ সংকট মোকাবিলার শক্তি দিতে পারে।

বিজ্ঞান আমাদের শারীরিক দূরত্ব মেনে চলার সিদ্ধান্ত দিয়েছে। "সাবান-সোডা" দিয়ে হাত ধৌত করার নির্দেশনা দিয়েছে। প্রত্যক্ষ কোন প্রতিকার (মেডিসিন) না আসা পর্যন্ত আমরা প্রতিরোধ ব্যবস্থা চালিয়ে যেতে থাকি। এক্ষেত্রে ব্রিফিং এর চেয়ে চিকিৎসা সেবা ও ঘরে থাকা মানুষের খাদ্য নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের জন্য অধিক গুরুত্বপূর্ণ।

এ সংকটে চাল ডাল চুরির ঘটনাও জন ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে দিতে পারে। এমন ঘটনা শুধু আমাদের নয়, বরং বৈশ্বিক সংকটকে আরও উসকে দেবে। শারীরিক দূরত্ব মেনেই আরও সামাজিক হয়ে উঠা অতীব জরুরি।  বৈশ্বিক সমন্বিত পরিকল্পনাও জরুরি হয়ে উঠেছে। অথচ ট্রাম্প থেকে মোদি, নিউইয়র্কের শেয়ার মার্কেটের দলাল থেকে আফগান রাখাল সবাই কেমন করে টিস্যু পেপার কিংবা চাল ডালের পুটলা নিয়ে কেমন করে যোগাযোগহীন অসামাজিক হয়ে গেল! এটাতো সংকট সমাধানের বিপরীত শর্ত।

নতুন এক পৃথিবীর প্রবেশ মুখে আমরা। এ যেনো নব জন্ম হতে চলেছে পৃথিবীর। "ধাত্রী" সচেতন হও।

১২.০৪.২০২০

No comments:

Post a Comment