Monday, June 29, 2020

কোভিড-১৯ : বাংলাদেশের মার্চ টু জুন - ভূবন মুন্সী।





কে অপেক্ষায় ছিলো এমন পৃথিবীর জন্য! উহান হতে ইতালি, কানাডা হতে যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশ, ভারত কিংবা আরব হতে আফ্রিকা কেউ কী প্রতীক্ষায় ছিলো এমন পৃথিবীর জন্য? কেউ কী জানতো পতিত পল্লী হতে প্রার্থনালয় সব একযোগে বন্ধ হয়ে যাবে একদিন এবং সেটা খুব দ্রুতই। কেউ আন্দাজ করতেই পারেনি নতুন বছর বরণের পরপরই অ্যারাবিয়ান আগাম সংকেতের সেই দাজ্জাল সম বিকট রূপ গ্রাস করবে পৃথিবী; হাসরের মাঠে ছুটতে থাকা শংকিত মানুষের মতোন গোটা দুনিয়ার মানুষ 'ইয়া নাফসি' জপতে থাকবে ঘর দোয়াড় বন্ধ করে ২০২০ খ্রিস্টাব্দের শুরু থেকেই।

যখন শংকা জাগলো
রাত ১:৩৮। ৩১শে ডিসেম্বর ২০১৯। চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে অপরিচিত নিউমোনিয়া শনাক্তের ঘোষণা আসলো একটি সরকারী ওয়েবসাইট থেকে। তখন কেউ কী ভেবেছিলো খুব দ্রুতই ইরানের ভাইস প্রেসিডেন্ট, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিংবা কানাডার ফার্স্ট লেডি এ অপরিচিত নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হবে? কেউ কী ভেবে ছিলো এটা পৃথিবীকে তালাবদ্ধ করবে কয়েক দিনের মধ্যেই? সব কিছু খুব দ্রততায় বদলে গেলো।

রেড এলার্ট : প্যানডেমিক-২০২০

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা ভাইরাসের আক্রমণ নিশ্চিত করলেন জানুয়ারিতে। ২১শে জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম করোনা রুগী শনাক্ত হয়। ৩০শে জানুয়ারি WHO করোনাকে Global Health Emergency ঘোষনা করে। চীনের বাইরে ফিলিপাইনে ২রা ফেব্রুয়ারি এক করোনা রুগীর মৃত্যু হয়। ক্রমশ দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়ে COVID-19 ভাইরাস। বাংলাদেশে তখন রাত সাড়ে দশটা। ১১ই মার্চ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবার করোনাকে বৈশ্বিক মহামারী ঘোষণা করলো। গ্লোবাল প্যানডেমিক!


সাবান বা স্যানিটাইজার এবং মাস্ক ও গ্লাভস
পুরো পৃথিবী একযোগে একই কাজ শুরু করলো। সবাই ঘর বন্ধী হলো। এ রূপ পৃথিবী দেখিনি আর। সবাই মাস্ক পরিধান শুরু করলো। নিয়মিত সাবান, স্যানিটাইজার দিয়ে, হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে করোনা প্রতিরোধ গড়ে তুললো। ভিন্ন কোন সমাধান না থাকায় প্রধান মন্ত্রী থেকে ওয়ার্ড মেম্বার সবাই নির্দেশনায় নামলো। এটা ভালো ছিলো। কিন্তু যখন এটাতেই গোটা বিশ্ব ঘুরতে লাগলো, এটা ছিলো বৈশ্বিক স্বাস্থ্য খাতের সবচেয়ে দূর্বল দিক।

কোভিড-১৯ : বাংলাদেশ প্রেক্ষিতঃ

বাংলাদেশে প্রথম করোনা ব্যাধি

মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। বাংলাদেশের আইইডিসিআর এর পরিচালককে এখন সবাই চেনে। তাঁর পোশাক পরিচ্ছদ নিয়েও রুগ্ন সামাজিক মিডিয়া কয়েক দিন ব্যস্ত সময় কাটিয়েছে। ৮ই মার্চ ফ্লোরা ম্যাডাম সংবাদ সম্মেলনে নিশ্চিত করলেন তিন জন করোনা রুগীর কথা। ইতালি ফেরত দু জন পুরুষ, তাদের আত্মীয় এক নারী। টোলার বাগ, মিরপুর, ঢাকা প্রথম রেড সার্টিফিকেট পেয়ে গেলো। পরে ক্রমশ করোনা গ্রাস করলো সমগ্র দেশ। ১৮ই মার্চ হতে বাংলাদেশেও শুরু হলো মৃত্যুর করুণ সংবাদ। দীর্ঘ হতে থাকলো মৃত্যুর মিছিল।

লকডাউন হয়ে গেলো সাধারণ ছুটি

দেরি হয়ে গেলো। ঘোষণা আসলো ২২শে মার্চ। ২৬শে মার্চ হতে ৪ই এপ্রিল দশ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষনা করা হলো। বিদেশ ফেরৎ মিশে গেছে সমগ্র দেশে। রাস্তায় রাস্তায় রাজধানী ফেরৎ মানুষের ঢল। শঙ্কা এবং আনন্দ উভয়ই চোখে পড়লো রাস্তায়। শঙ্কাটা যেন অস্পষ্ট। লকডাউনের স্থলে সাধারণ ছুটি শঙ্কা ও সচেতনতা দুটোতেই ভাটা নিয়ে আসলো।

নেতা যখন শুধুমাত্র মোটিভেশানাল স্পিকার

মোটিভেশানটা এখন বাংলাদেশে ট্রেন্ড হয়ে গেছে। অসম্ভবকে সম্ভব করতে সবাই ডায়ালগ দিতে প্রস্তুত। করোনা ভাইরাস প্রসঙ্গে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণদের কথা মোটিভেট এবং হাস্যরস দুটোই দিয়েছে। কখনো কখনো অতি বাড়তি বক্তব্য বা তেলবাজি মূর্খামির পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। সাধারণ একটা অংশ পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ও অবশ্য পালনীয় ডেলিভারিটাও অবজ্ঞায় উড়িয়ে দিয়েছে। ফল ফলেছে আরও মারাত্মক।

ধান কাটা, ফটোসেশান ও আজাইরা কাজী

বিশ্ব ব্যাংকের হিসেব মতে এখনো বাংলাদেশের ৮৭℅ গ্রামীণ মানুষের আয়ের উৎস কৃষি। বৈশ্বিক ভাবেও কৃষিতে বাংলাদেশ অবদান রাখছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের জানুয়ারি ২০২০ খ্রিস্টাব্দের তথ্যমতে বিশ্বে সবজি, ধান ও আলু উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান যথাক্রমে ৩য়, ৪র্থ এবং সপ্তম। কিন্তু কৃষক ও কৃষিতে রাষ্ট্রীয় হাত যেন অনেকটা অচ্ছুৎ কিংবা প্রদর্শনী মূলক। এ বোরো মৌসুমে সকলের ধান কাটার জন্য কৃষকের ক্ষেতে নামা যেন প্রদর্শনী উৎসবে পরিণত হয়। ধান হাতে ফটোসেশানের হিড়িক পড়ে। ফাঁকটা সবাই জানে। অভিনয়টাও বুঝে। প্রযুক্তিকে দূরে রেখে উপর উপর একদিনের আদর। যদিও ক্রিকেট গর্ব, বর্তমান সাংসদ মাশরাফি বিন মর্তুজা ধান কাটার প্রযুক্তি সরবরাহ করে সোশাল মিডিয়ায় নায়ক হয়ে উঠেছিলেন। এই সংবাদের ভাইরাল অপর সাংসদের কৃষক উন্নয়নের খরাকে প্রকাশ করে।  চলতি বাজেটেও ধান ক্রয় বিক্রয়, কৃষি ঋণ, বীজ বিতরণ, উন্নত কৃষি পরিকল্পনা অনাদরে থেকেছে বলে বিশ্লেষকদের মত।

হাসপাতাল, নার্স ও ডাক্তার

করোনা স্বাস্থ্য সংকট। এ সংকটে প্রত্যক্ষ সৈনিক ডাক্তার ও নার্স। ক্যাম্প হলো হাসপাতাল। যুদ্ধে সৈনিকদের অস্ত্র না থাকা যেমন শংকার, তেমনি এ ভাইরাস সংকটে পিপিই'র অপ্রতুলতাও গভীর শংকার। করোনা দেশের স্বাস্থ্য খাতের দূর্বলতা ওপেন করেছে এবং এটা বিশ্বের সকল দেশের স্বাস্থ্য সক্ষমতা ওপেন করেছে। মাস্ক সংকট, ভেন্টিলেটরের অভাব, আইসোলেশন সংকট গভীর ভাবে ভাবিয়ে তুলেছে। সর্বোপরি স্যালুট সকল ডাক্তার ও নার্সদের। গণস্বাস্থ্যের ভূমিকাও প্রশংসনীয়।  বিপরীতে কিট অনুমোদন বা প্রয়োগ পরীক্ষায় ঢিলেমি ভাব স্বাস্থ্য খাত সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্র জনদের অতি নীচু মানসিকতাকে প্রকাশ করে।

মানবতা এবং আসুরিকতা

সংকট এলেই উন্মোচিত হয় চারিত্রিক বাইবেল। করোনা সংকটে সামাজিক ফ্রন্টের সহযোগিতার স্বতঃস্ফুর্ত উদ্যোগ মানবিকতার জয় গান ঘোষণা করে।  ব্যক্তি বা সংগঠনগত সহযোগিতার হাত ছিলো লক্ষনীয়। বিপরীতে সরকারী ত্রাণ চুরির ঘটনা ছিলো ব্যাপক ভাবে জন ধিক্কৃত।

করোনা রোগী এবং অমানবিক আচরণ

কোভিড-১৯ ভইরাস অতিমাত্রায় সংক্রমিত রোগ। মানুষ হতে মানুষে দ্রুত এবং সহজেই ছড়িয়ে পড়ে। দূরত্ব বজায় রাখা আবশ্যক। রুগীর সাথে অমানবিক আচরণ কোন পরিস্থিতিতেই কাম্য নয়। কিন্তু ঘটেছে এসব। অতি অমানবিক কিছু ঘটনা। খুবই লোমহর্ষক। অসুস্থ মা, বাবা, স্বামী কিংবা সম্তানকে ফেলে দেওয়ার, রেখে চলে যাওয়ার মতোন ঘটনা। এটা আমাদের রাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও ব্যাধি সংক্রান্ত অজ্ঞাতার বহিঃপ্রকাশ। হাসপাতালে চিকিৎসা না পাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে, যদিও হাইকোর্ট এ সমস্ত কার্যকলাপকে ফৌজদারী অপরাধ হিসেবে রায় দিয়েছে।

অমীমাংসিত এবং অচল শিক্ষা খাত

১৬ই মার্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষনা করা হয়। আজ অবধিও বন্ধ আছে। এরকম বৈশ্বিক এবং সংক্রামক সংকটে এটাই স্বাভাবিক। শৈশবেই, কৈশোরেই ফুসফুসে ভাইরাসের তান্ডব থাবা অভিভাবক হিসেবে আমিও মানতে পারিনা। রাষ্ট্রও পারেনি এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষনা করে যথার্থ কাজ করেছে। রাষ্ট্র সচেতন ভূমিকা নিয়ে সংসদ টিভিতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকদের জন্য ক্লাস সম্প্রচার করছে। ৭ই এপ্রিল হতে প্রাথমিক ও প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ের জন্য চালু করেছে 'ঘরে বসে  শিখি' কার্যক্রম। এ কার্যক্রম সরকারকে সচেতন প্রয়াসে রোড পর্যন্ত নিশ্চিত করা উচিৎ এবং প্রাইভেট বিদ্যালয় সমূহের কার্যক্রম টোটালি বন্ধ আছে, এ ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিৎ।

ঈদ আনন্দ এবং ভাইরাসের বিস্তার

২৬শে মার্চে শুরু হওয়া সাধারন ছুটি ৭বার বর্ধিত হয়ে চলে আসে ৩০শে মে পর্যন্ত। এর মধ্যে ২৪-২৬শে মে ছিলো ঈদুল ফিতরের ছুটি। পৃথিবী সুদ্ধ ধর্মীয় আচার ও উৎসব অনেক পূর্ব হতেই সংকোচিত ছিলো। বাংলাদেশেও ছিলো। ছিলো মুক্ত চলাচলের বাঁধা। সন্ধ্যা ৬টা হতে ভোর ৬টা পর্যন্ত বাসা থেকে বের না হবার প্রজ্ঞাপন। ঈদ সামনে রেখে শিথিলতা নিয়ে আসা হয়। শুরুর দিককার বক্তব্য, আমরা করোনার চেয়েও শক্তিশালী কিংবা লকডাউন নয়, সাধারণ ছুটিতে বেড়াতে আসা জনগন এখনো সিরিয়াস নয় সরকারী নির্দেশনায়। ঈদ মার্কেটে জনভিড় আরও বাড়িয়ে দেয় করোনার বিস্তার।


কুয়াশার চাদরে ঢাকা পুরনো অসুর

করোনায় তটস্থ গোটা বিশ্ব। ইতালি, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইরানে নাকানিচুবানি। চিকিৎসা সংকট ও চিকিৎসায় অবহেলা দুটোই মিটআপ করা হচ্ছে দেশে দেশে। এর মধ্যে ধর্ষণ, খুন, ডাকাতি, ছিনতাই যেন কমে গেলো। ব্যাপারটা ছিলো আশার এবং ভালো লাগার। কিন্তু না, তা নয়। কুয়াশার চাদর ভেদ করে চোখে পড়ে পুরনো অসুর। সবাই যেন থমকে যায়। আসুরিক ভীবৎষতা দেখে।

ভাষাগত সংকট: জনগণ, রাষ্ট্র এবং মিডিয়া

লকডাউনের সময় ছিলো সেটা। ২৬শে মার্চ ঘোষনা করা হলো সাধারন ছুটি।  রাষ্ট্রের তৎপরতা লকডাউনের অনুরূপ। শব্দগত প্রয়োগে এটা রাষ্ট্রের ভুল। আইসোলেশন, লকডাউন যতোদিন পর বোধগম্য হলো, ততোদিনে কেল্লাফতে, মানে সব শেষ। দেশটার সব জেলা করোনার আশ্রম। সামাজিক দূরত্ব এবং শারীরিক দূরত্বকে এক রূপেই প্রচর হচ্ছে শুরু থেকেই। সামাজিক দূরত্ব কোন পরিস্থিতিতেই কাম্য নয়। আর এটা বোধগম্য করার প্রচেষ্টা মিডিয়া কিংবা রাষ্ট্র কারও ছিলো না, এখনো নেই আর নেই বলেই রোগীকে রাস্তায় ফেলে দেবার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করেছে স্বয়ং রাষ্ট্র এবং মিডিয়া। সোসিয়াল ডিসট্যান্স শব্দটা বৈশ্বিক ভাবেই ভাষাগত সংকটকে প্রকাশ করেছে।

মরার উপর খাড়ার ঘা

সকল মহামারীতে জন জীবনের সংকট ক্রমশ ঘনীভূত হতে থাকে। চীনের সেই কোভিড-১৯ সমগ্র বিশ্বে কামড়  দিয়েছে ইতোমধ্যে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে দেশে দেশে। বাংলাদেশেও সে বৈরী হাওয়া প্রবাহিত হচ্ছে। যা ভাবছিলাম প্রথম থেকে তাই হলো। এটা ঘটে গেলো আমার শোবার ঘরে। পরদিন সকালে খোঁজ নিয়ে দেখি প্রতিবেশীর আরও তিন ঘরে এবং আমার মামার ঘরে ঘটেছে। জুন মাসের শেষ দিন। আজ মঙ্গলবার। জানা গেলো সেইম ঘটেছে আশপাশের কয়েকটি ঘরে। তারমানে চুরি, ডাকাতি, লুটপাট বৃদ্ধি পেয়ে গেছে ইতোমধ্যে। আর্থিক সংকটের যোগ্য মীমাংসা না আসলে এভাবেই সামাজিক অস্থিরতা বাড়তে থাকবে। এই সমস্ত পুকুর চুরি, নাস্তা বিল বিশ কোটি টাকা ইত্যাদি ঘটনা সংকট কালে সামাজিক অস্থিরতাকে উসকে দিচ্ছে, আরও দেবে। ভোগান্তি আপ টু বটম সকলেরই বাড়ছে।

ময়ূর এসে ধাক্কা দিলো মর্নিং বার্ডকে

মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। লঞ্চ দূর্ঘটনায় ত্রিশোর্ধ মৃত্যু। সুসময় কখোন আসবে! কখোন ফিরবে! ফিরবেনা?তের ঘন্টা পর পানির তলদেশ হতে জীবীত এক জন উদ্ধার। সুসময় ফিরে আসার সংবাদ গুলো এরকমই হয়। সহস্র মৃত্যুর ভিড়েও স্বপ্ন দেখায়। বুকে জাগায় আগামীর স্বপ্ন দেখার সাহস।

সুসময়ের অপেক্ষায় পৃথিবী

নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরদেন নিজের ড্রয়িংরুমে মেয়েকে নিয়ে আনন্দে নাচতে থাকেন, সগর্বে জানান- আমরা করে দেখিয়েছি। সুসময় ফিরে আসার সংবাদ এরকমই হয়। নিউজিল্যান্ড প্রথম করোনা মুক্ত দেশ। খুব দ্রুতই,  হ্যাঁ, এটা সম্ভবত খুব দ্রুতই ঘটবে, যেদিন আমরা আমাদের সন্তানদের নিয়ে নাচবো। বলবো- ইয়েস, উই ক্যান। হ্যাঁ। হ্যাঁ, আমরা পারি। করোনা মুক্ত বাংলাদেশ, করোনা মুক্ত পৃথিবী- এই তো।

৩০শে জুন, ২০২০ খ্রিস্টাব্দ।

Thursday, June 25, 2020

"কেমন পৃথিবী দেখতে চাই" - এবার তরুণ চিন্তাবিদ, কবি ও কমরেডের মুখোমুখি মেসেঞ্জার অব কসমোলজি।




জীবনকে ঘিরে সময় নিরিখে বদলে যায় প্রয়োজনীয় প্রত্যাশা, অনিবার্য দাবি, দাবি আদায়ের শপথ। সেই দাবি বা প্রত্যাশার যৌক্তিক দন্ডও সময় নিজে। সমাজিস্থিত কন্ডিশনাল ম্যাটার বা বাস্তব শর্তসমূহ জন্ম দেয় প্রয়োজন, প্রত্যাশার।  প্রাযুক্তিক বিকাশে বিশ্ব এখান গাঁয়ের চেয়েও ছোট। কিন্তু আমরা আমাদের সেকেলে রীতি নীতি সমেত এখনো in situ অর্থে মধ্যযুগীয় বা তৎপশ্চাৎ দেশীয়। নতুন সময়কে আইডেন্টিফাই করেই বৌদ্ধিক মানুষ ফুঁক দিচ্ছে নতুন বাঁশিতে, ধরিত্রীতে তুলতে চাচ্ছে নতুন সুর। সময়ের আহবান উপেক্ষা করার সাধ্য- সে তো ঈশ্বরেরও নেই।

Messenger Of Cosmology মুখোমুখি হয়েছিলো তরুণ চিন্তাবিদ, কবি ও কমরেডের। পড়ুন। স্বপ্ন দেখুন। আপনিও আওয়াজ দিন। ফুঁক দিন নতুন বাঁশিতে। কোমল সুরে সৃজন হোক, কংক্রিট সুরে ভেস্তে যাক জ্বরা, জীর্ণতা, প্রচলিত আচল পাড় ও আসুরিক পুরুষ।
মানুষ মুক্তি পাক। সম্পাদকীয়।

মানবজাতি, প্রকৃতি মেতে উঠুক খুঁনসুটির খেলায় - এ.কে.এম খাদেমুল বাশার।

ছোট একটা ভাইরাস দেখিয়ে দিলো এক নিমিষেই কিভাবে এই পৃথিবীকে বদলে দেয়া যায়। এই পৃথিবীর ওপর দিনের পর দিন যেভাবে অবিচার করা হয়েছে তা ভষাতীত। কালের পরিক্রমায় পৃথিবীর ওপর এ অসহনীয় অত্যাচার আর  কত সহ্য করার মতো ছিল। পৃথিবী এখন মানব জাতিকে বুঝিয়ে দিয়েছে সব সময় সহ্য করা আসলেই কতটা কঠিন। ভাইরাসের কারণে পৃথিবী এখন সেজেছে নতুন রূপে। চারদিকে গাড়ির হর্ণের কোন শব্দ নেই, সবুজের সমারোহে পাখির কলরবে মুখরিত চারদিক। এমনই এক পৃথিবীতো আমরা চাই। যে পৃথিবীতে থাকবেনা দূষণ, থাকবেনা কোলাহল, দৃঢ় হবে পারিবারিক বন্ধন, শিশু বন্ধী জীবনে থাকলেও বাবা-মাকে কাছে পেয়ে তার মন ঠিকই ভরেছে উৎফুল্লতায়। ভাইরাসের কারণে আক্রান্ত রোগী কোটির কাছকাছি গিয়ে পৌঁছেছে, মৃতের সংখ্যা লাখ পেরিয়েছে অনেক আগেই। এতোসব হিসেবের কাতারে পৃথিবীর মানুষ বুঝতে শিখেছে ঘরে বসেও কিভাবে সব কাজ করা যায়, কিভাবে ঘরে থেকেও পৃথিবীকে বদলে দেওয়া যায়। যদি এভাবেই পৃথিবীকে নতুন রূপে সাজিয়ে নেয়া যায়, তবে মানবজাতির এভাবেই পরিকল্পনা করা উচিৎ। শুধু মানুষই কেন এই পৃথিবীতে বাঁচতে চাইবে, বাঁচুক না আরো নাম না জানা লাখ লাখ প্রাণীকূলও। মানবজাতি, প্রকৃতি মেতে উঠুক খুঁনসুটির খেলায়। সে খেলায় অপরাজিত থাকুক দু'দলই। পৃথিবী ভরে উঠুক সুখে, বেঁচে থাকার মায়ায়।

মানসিক সুস্থতা ও মননের সুষ্ঠ বিকাশের দিকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন- হাসান রাকিব।



এই কথাও একদম অমূলক নয় যে চলমান করোনাকালীন এবং করোনা পরবর্তী পৃথিবীবাসী যে সংকটের মুখোমুখী হতে যাচ্ছে তা শুধুই অর্থনৈতিক নয় বরং মনস্তাত্ত্বিক বা মানসিক এবং বুদ্ধিভিত্তিক।
বোধ ও মননের জায়গা থেকে আমরা যথেষ্ট শক্তিশালী ও আদর্শিক হয়ে উঠতে পরিনি। আধুনিক জীবনসংকট, রাষ্ট্রসমস্যা, আগ্রাসী অর্থনীতি ও আধিপত্যের রাজনীতিতে আমারা জর্জরিত। বোধের কতটুকু যে সুবোধ তা নির্ণয় করা আজ দুরূহ। সমাজব্যবস্থা আমাদের শিখাচ্ছে যে সত্য আমাদের সবসময় সাহায্য করতে পারছে না। এ ধরনের জীবনের নানাবিধ আচরনিক কলাকৌশলে আমরা সব সময় একটা মানসিক অস্থিতিশীলতায় ভোগী। করোনা পরিস্থিতিতে বর্তমানের সংকট আর ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা আমাদের এই অস্থিতিশীলতাকে আরও গাঢ় করে তুলছে  আর তার সাথে রয়েছে অমীমাংসিত যৌন চাহিদার  মতো সমস্যা।
তাই এই পরিস্থিতিতে আমাদের মানসিক সুস্থতা ও মননের সুষ্ঠ বিকাশের দিকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। শুধুমাত্র অর্থনৈতিক ভোগে বিভোর না থেকে যেতে হবে শিল্প-সাহিত্যের কাছে, দর্শনের সান্নিধ্যে। খুঁজতে হবে- কীভাবে জীবনকে উপভোগ করতে হয়, অনুভূতি ও কল্পনার রস কীভাবে আস্বাদন করতে হয়।
নিশ্চিত করতে হবে চিন্তার স্বাধীনতা, বুদ্ধির স্বাধীনতা।
থাকতে হবে আত্মপ্রকাশের স্বাধীনতা তাহলেই অর্জন করা যাবে সঠিক মূল্যবোধ তথা   মানুষ্যত্ব।
এমনও তো হতে পারে পৃথিবীর পরবর্তী মহামারী হবে মনস্তাত্ত্বিক অথবা বুদ্ধিভিত্তিক।
নিশ্চিত করে বলা যায় কি কিছু?

মানুষ মানবীয় মর্যাদা ফিরে পাক - মোঃ ইয়াছিন মিয়া।




সত্য-সুন্দর একটা পৃথিবী চাই। পৃথিবীর হারিয়ে যাওয়া সতীত্ব ফিরে চাই। মানুষ মানবীয় মর্যাদা ফিরে পাক;
যেখানে ব্যাক্তিকে বায়োজাপ্ত করে পুঁজিবাদ।
মানিকের ঈশ্বরত্ব ঠাঁই নিক মানুষ নামটিতে।
এটুকুই চাই।

পৃথিবীটা আমার থেকে আমাদের হোক - মোঃ মমিন মিয়া



আমি রাত জেগে স্বপ্ন দেখি দিগন্তের মিছিলে প্রাণ এসেছে। নতুন সমাজ বিনির্মানে, ইতিহাস গড়তে মানুষ পাড়ি দিয়েছে পর্বত হিমালয়, নিজেদের ভাঙতে প্রতিনিয়ত নিজের সাথে যুদ্ধ আর সামাজিক মানুষ হওয়ার প্রত্যয়ে, আমি থেকে আমরা এই স্বপ্নটা দেখে
হেঁটে যাচ্ছে আগামী পৃথিবীর জন্য।


মানুষের পৃথিবীতে মানুষ বাঁচুক স্বস্থিবোধের কমল নিঃশ্বাসে - মোঃ শামীম মিয়া


পুঁজিবাদের গরম শ্বাস প্রশ্বাস আছরে পড়ে পৃথিবীর আনাচে কানাচে, জীবনে হয়ে উঠে নরকবাস। দ্বন্দ্বের বৈরিতা ভাগ করে দেই উচু নিচু স্তর, কেউ হয় পুঁজিপতি কেউ না খেয়ে খেয়ে চামড়া ঢুকে গেছে হাড়ের ফাঁকে। ভাগাভাগির স্মার্টনেস রক্ষার্থে সীমানায়, কাঁটাতারে ঝুলে থাকে তাজা প্রাণের গল্প।

পৃথিবীটা কি এখনও মানুষের হয়নি।

তবে আগামীটা যেমন চাই-

মানুষের পৃথিবীতে মানুষ বাঁচুক স্বস্থিবোধের কমল নিঃশ্বাসে, এই বাস গৃহের সব প্রাচীর ভেঙ্গে একাকার হয়ে গড়ে উঠুক মানবিক পৃথিবী। নতুন মানবীয় ব্যবস্থাপনায় অখন্ড বিশ্বগ্রামে প্রশান্তি নামুক। আসুন এক সাথে বাঁচি, বসুমাতার সন্তান হিসেবে একে অপরে হই সহযোগী, গৃহদাহ যুদ্ধ বাদ দিয়ে  আবার নতুন করে সাজাই ঘর- বোধের মানুষ, মানবিক মানুষের বাসযোগ্য পৃথিবী।

সংগ্রামটা তাই মানুষ হওয়ার মর্যাদায় আত্ম-অমানবিক প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে - মোঃ শামীম রেজা




রক্তজ প্রবণতায় আদিমতা, বিভাজনে দাসসুলভ, প্রভুত্বে সামন্ততান্ত্রিক এবং স্বার্থপরতায় পুঁজিবাদী চেতনার আকর সমূলে উৎপাটন করার সময় হয়েছে। জীবন এবং জগতকে ঘিরে যে মূল্যবোধ এবং সেই মূল্যবোধের উপর দাঁড়িয়ে যে মর্যাদাবোধ তা যদি মনুষ্যত্ব ও মানবিকবোধ উত্তীর্ণ হয়ে প্রকৃতজ স্বত্ত্বায় একাকার না হতে পারে একাকারের এই মহাক্ষণ মানব জাতীর জন্য মঙ্গলজনক হয়ে ওঠবে না।
সংগ্রামটা তাই মানুষ হওয়ার মর্যাদায় আত্ম-অমানবিক প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে।

Monday, June 22, 2020

সংগ্রামটা প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে - মোঃ শামীম রেজা



এমন একটা সময় পার করতেছি আমরা যখন আমাদের বিশ্বাস, অভ্যস্ততা, মূল্যবোধ সবকিছুতেই একটা বড় ধরনের ধাক্কা লেগে গেছে। এই ধাক্কা সামষ্টিক এবং ব্যক্তি জীবনের সমগ্রব্যাপী প্রভাব বিস্তার করে ফেলছে। আচার-সংষ্কার-প্রথা সবকিছুতেই শুধু ভাবনাগত  পরিবর্তনই ঘটছে না বরং ক্রম পরিবর্তনীয় এক নতুন বাস্তবতার ভিতর প্রবেশ করছি এবং এগুলোকে সহিয়ে নেওয়ার জন্য যে ধীর-স্থির বাস্তবতার প্রয়োজন সেটাও ঘটে যাচ্ছে।

একাকারের যে যুগে পৃথিবী প্রবেশ করেছিল প্রযুক্তির হাত ধরে সেটা ছিল যান্ত্রিক বাস্তবতা। প্রযুক্তির এই অগ্রগামীতার সাথে ঠিক তাল মেলাতে পারছিল না মানুষের তৈরি সামাজিক-রাষ্ট্রিক নিয়ম, বিশ্বাস, মূল্যবোধ, সর্বোপরি  প্রকৃতিজ সমন্বয়করণ গ্যাপটা খুব বেশি হয়ে যাচ্ছিল।

ভূ-প্রকৃতি বিবেচনায় এবং সাংস্কৃতিক বলয় থেকে উৎসারিত মানবিকতা বোধের এবং জীবন কেন্দ্রীক মূল্যবোধের উপর দাঁড়িয়ে সময় বাস্তবতার উপর নির্ভর করে গড়ে ওঠে নিয়ম-নীতি-আচার-প্রথা-বিশ্বাস। এই বিষয়গুলোর মধ্যে থাকে বিয়ে-থা থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের কর আরোপ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি পর্যন্ত। খন্ডিত পৃথিবীর বাস্তবতায় (যোগাযোগের বাস্তবতা যার নির্ধারক) একেক অঞ্চলের বাস্তবতা অনুসারে নিয়ম-নীতি-আচার-প্রথা-বিশ্বাস গড়ে ওঠেছিল যা ছিল অনেকটা প্রকৃতি নির্ভর।

মানুষের প্রয়োজন বোধ এবং সেখান থেকে সৃষ্ট সন্তুষ্টি বোধ মানুষের পুরোজীবনকে গতিময় করে। এই গতি সামগ্রিক জগত-সংসারে কতকিছু যে সৃষ্টি করে ফেলতে পারে তার উদাহরণ মানব-সভ্যতার ইতিহাস।
আধুনিক অর্থনীতি শাস্ত্র মানুষের এই সন্তুষ্টিকে অর্থনীতিকরণের মাধ্যমে তার রূপরেখা এবং সংজ্ঞা বাতলে দিয়েছেন এবং তার উপর ভিত্তি করেই ভোক্তা আচরণ কেমন হলে বাজার চাঙ্গা থাকবে সে বিষয়ে নিরন্তর গবেষণা চলেছে এবং চলে। তো সন্তুষ্টি বোধের সাথে মানুষের চেতনাবোধের এবং সংস্কারের ত্রিমাত্রিক সমান্তরাল একটা সম্পর্ক রয়েছে।

উপযোগিতা হলো অর্থনীতির ভাষায় সন্তুষ্টি। সাধারন অর্থে সন্তুষ্টি বলতে যা বোঝায় অর্থনীতির সন্তুষ্টি একটু ভিন্ন।

তো কেমন সে সন্তুষ্টি?

কোন পণ্য বা সেবা বা ঘটনাসমূহ থেকে উদ্ভূত যা ব্যক্তিকে সন্তুষ্টি দিতে সক্ষম তাকেই ঔ পণ্যের উপযোগিতা বলে। এই উপযোগিতার কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে একটা হলো "উপযোগ  মানসিক ধারণা"। আরেকটি হলো "উপযোগের ক্ষেত্রে নীতি-নৈতিকতার বিষয় বিবেচিত হয় না"।
উপযোগ হলো সন্তুষ্টি। এই সন্তুষ্টি হলো ভোক্তার। পক্ষ হলো দুটো, পণ্য এবং ভোক্তা।

ভোক্তা তো স্বয়ংক্রিয় কোন স্বত্ত্বা নয়। ভোক্তা একজন ব্যক্তি। তো ব্যক্তির উৎপত্তি, কর্মবলয়, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রিক সম্পর্কসমূহের কেন্দ্রে থাকেন ঔ ব্যক্তিটি। এমন করে প্রত্যেকটি ব্যক্তিই এক একটা কর্মকান্ড এবং সম্পর্কের কেন্দ্র এবং প্রত্যেকটা ব্যক্তিই মহাকালের মধ্যবর্তী সময়ে অবস্থান করে তার সাপেক্ষে।

তার পিছনে থাকে লক্ষ বছরের বিগত ইতিহাস আর সামনে থাকে অনাগত মহাকাল। ব্যক্তির জীবন থেকে উৎসারিত বোধ এবং সেই বোধের প্রয়োগই যাপনে প্রতিফলিত হয় (তবে সেটা সাধারন অর্থে সমাজ, রাষ্ট্র বিধি মেনে)।

ব্যক্তি কে?

ব্যক্তি হলো একটা বোধ স্বত্তা।

বোধ কি স্বয়ং গড়ে উঠে?

বোধ গঠিত হয় স্থান-কাল-পাত্র বিবেচিত মানদন্ড অনুসারে। শিশু জন্ম নেওয়ার পর ব্যক্তি হয়ে উঠতে থাকে। বিনির্মাণ হতে থাকে তার পরিচয় সমূহ। এইসব পরিচয় তার আইডেন্টিটি তৈরি করে সে নিজে থেকে এই আইডেন্টিটি তৈরি করতে সক্ষম নয়। এই আইডেন্টিটি বস্তুজগত এবং অবস্তুজগতের সাথে তার কিরূপ সম্পর্ক এবং সম্পর্কজাত ক্রিয়া কেমন হবে সেটা নির্ধারণ করে দেয় সময়ের সাপেক্ষে।

মানুষ হওয়ার শর্তগত কারণেই ব্যক্তি সমাজ থেকে প্রাপ্ত এই আইডেন্টিটি কে একসময় মাড়িয়ে যেতে সক্ষম সাংস্কৃতিক অভিযোজনের কারণে এবং মাড়িয়ে গিয়ে বিনির্মাণ করে নিজের মনুষ্যত্ব বোধের ন্যায়দন্ডে নতুন দিনের নতুন পরিচয়। একই সাথে খোলনলচে পাল্টে ফেলতে পারে জীবন কেন্দ্রীক যাবতীয় প্রচল মূল্যবোধ এবং দৃষ্টিভঙ্গি। সফলতা-বিফলতা সুখ-শান্তি-মুক্তি এই সব জীবনের সার সূচক গুলো যে রঙে তাকে সমাজ-পরিবার -রাষ্ট্র রাঙিয়ে দেয় তার মনের আকাশ জুড়ে একদিন সেই সব রঙকে মিথ্যা ঘোষণা করে বেরিয়ে পড়তে পারে। তার উদাহরণ ইতিহাসে আছে।  সন্তুষ্টি বোধের ধারণা ব্যক্তি নির্মাণ করতে পারে যদি ব্যক্তি সামষ্টিক হয়ে উঠতে পারেন। অন্যথায় ব্যক্তির বোধের সাথে ব্যক্তিবোধের রূচিগত সমাজতাত্ত্বিক তেমন কোন ভিন্নতা নাই।

ব্যক্তির সন্তুষ্টিবোধ গড়ে ওঠে এই বস্তুগত এবং অবস্তুগত সম্পর্ক ক্রিয়া থেকে। সন্তুষ্টি প্রাপ্তির জন্য যে ক্রিয়াদি ব্যক্তির করতে হয় সেসব ক্রিয়ার যদি লেনদেন এবং বাজারী মূল্য না থাকে তো সেই সন্তুষ্টি অর্থনীতির সন্তুষ্টি নয় এবং সেসব কর্মসমূহকে ইরেশনাল বিহ্যাভিয়ার বলে গণ্য করা হয়। রেশনাল এবং ইরেশনাল মানুষের সাধারন এবং স্বাভাবিক মান বিচারে নিযুক্ত দুটি শব্দ। যখন ইরেশনাল বলা হয় তখন সেটা মানুষের সাধারন বৈশিষ্ট্য থেকেই খারিজ করে দেওয়া হয়। 

ব্যক্তির সন্তুষ্টি বোধ কোথা থেকে আসে? কিভাবে গড়ে ওঠে সন্তুষ্টি বোধের সংস্কার? পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্র তথা পারস্পারিক সম্পর্কজাত হয়ে তথ্য বিনিময় এবং গড়ে ওঠা অভ্যাসের মাধ্যমে। এমনকি খাদ্যের যে স্বাদবোধ বা নান্দনিক বোধ সেটাও তো ঔ পরিবার-সমাজ-তথা সংস্কৃতি থেকেই প্রাপ্ত হয়।
ব্যক্তি দুটো পদ্ধতিতে আত্মীয়করণ করে তার স্বভাব, বৈশিষ্ট্য, চরিত্র এবং আচরণ গড়ে তোলে। অভ্যস্তকরণ এবং দীক্ষিতকরণ। অভ্যস্তকরণ প্রক্রিয়ায় থাকে ব্যক্তি এবং বস্তগত ঘটনাবলির সাথে সার্বক্ষণিক মিথস্ক্রিয়া, আর যে মাধ্যমে সে সংযোগ স্থাপন করে তা হলো দীক্ষিতকরণ। দীক্ষিতকরণ প্রক্রিয়ায় তথ্য হয় প্রধান এবং মৌলিক শর্ত। একজন পাকা কৃষক মাটি দেখলেই বুঝতে পারেন কখন বীজ বুনতে হবে। এটা তার পূর্ব অভিজ্ঞতাজাত শিক্ষা, শুধু তথ্য নয়। ব্যক্তির ভিতরে আগমনকারী সব তথ্যই শিক্ষায় রূপান্তর হয়না। দীক্ষিতকরণ এই কাজটা করে কোন তথ্যকে শিক্ষায় রুপান্তর করতে হবে সেটা সে নির্ধারন করে নেয় এবং ঔ মোতাবেক ব্যক্তির ভিতর কাজ চালাতে থাকে।

সন্তুষ্টিবোধ স্বয়ং ব্যক্তির ভিতর হাজির হয় না এটা সমাজ-সংস্কার থেকেই আসে। সমাজ সংস্কার তৈরি হয়, সন্তুষ্টিবোধ স্বয়ং ব্যক্তির ভিতর হাজির হয় না এটা সমাজ-সংস্কার থেকেই আসে। সমাজ সংস্কার তৈরি হয় সেই সমাজের উৎপাদন এবং বন্টন পদ্ধতি এবং জগত ও শরীর মনের সাথে তার যে নিত্য সংযোগ সেই সংযোগের সম্পর্ক বিবেচনার উপর।
একটা হিংস্র বাঘ কেবল অভুক্ত থাকলেই শিকারে প্রবৃত্ত হয় কিন্তু মানুষ! মানুষের এই লোভ সভ্যতায় সৃজনশীল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে। মানুষ মানবিকতার সীমা রেখে টেনেছে স্বজাতীর স্বার্থ অক্ষুন্ন রেখে, বিভাজনের প্রাথমিক এই বলয়টা ভেঙে ফেলা দরকার। এরপর মানব সমাজে রাষ্ট্র, লিঙ্গ, ধর্ম, নীতি, অর্থ ইত্যাদি বিষয়গুলোকে বিভাজন এবং ইত্যাদি বিষয়গুলোর উপর ভিত্তি করে যে পদ্ধতিতে জ্ঞানকান্ডের শাখা-প্রশাখা বিস্তার হয়েছে তা একেবারে গোড়া থেকে ছেটে ফেলার সময় হয়েছে।

রক্তজ প্রবণতায় আদিমতা, বিভাজনে দাসসুলভ, প্রভুত্বে সামন্ততান্ত্রিক এবং স্বার্থপরতায় পুঁজিবাদী চেতনার আকর সমূলে উৎপাটন করার সময় হয়েছে। জীবন এবং জগতকে ঘিরে যে মূল্যবোধ এবং সেই মূল্যবোধের উপর দাঁড়িয়ে যে মর্যাদাবোধ তা যদি মনুষ্যত্ব ও মানবিকবোধ উত্তীর্ণ হয়ে প্রকৃতজ স্বত্ত্বায় একাকার না হতে পারে একাকারের এই মহাক্ষণ মানব জাতীর জন্য মঙ্গলজনক হয়ে ওঠবে না।
সংগ্রামটা তাই মানুষ হওয়ার মর্যাদায় আত্ম-অমানবিক প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে।

২২.০৬.২০২০

Sunday, June 21, 2020

সংকট উত্তরণে নয়া রাজনৈতিক দ্বার উন্মোচন | তানজিল আহমেদ আকাশ



মানুষ সামাজিক ও রাজনৈতিক জীব। সমাজ নিয়ন্ত্রণের মূল চাবিকাঠি শিক্ষা, সেই শিক্ষার হাতেখড়ি পরিবার (একজন ব্যক্তির প্রথম সংগঠন) থেকে যা সমাজিক কোষ। নির্দিষ্ট ভূখন্ডে সংঘবদ্ধভাবে বসবাসরত বিশাল জনগোষ্ঠীকে সমন্বয়ের জন্য গড়ে উঠে সংগঠন, তার জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন নিয়ম নীতি ও ভাবাদর্শিক চর্চা। ভূমিষ্ঠ শিশুর অসচেতনভাবে রাজনীতিতে পদার্পন জন্মসনদ দিয়ে, অতঃপর শুরু হয় ক্রমাগত রাজনৈতিক র‍্যাট-রেস।

সত্যই সুন্দর, সুন্দরই সত্য। কিন্তু তা অাজ ভুলে গিয়ে ছাত্র নেতা থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ অাসুরীক তান্ডবলীলায় নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করছে নাকি সচেতন ভাবে দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছে?

সচেতনভাবে রাজনীতি চর্চা ব্যাতিরেখে সবাই অাঙুল ফুলে কলাগাছের মতো হাইব্রিড নেতা হতে ব্যস্ত।রাজনীতি বলতেই সকল রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মাথায় চলে আসে মাইকে গলাবাজি, রাজপথে মিছিল, বোমাবাজি, হরতাল, লুট, ক্ষমতার অপব্যবহার, জনগনকে বিভিন্ন ফাঁদে ফেলে তাদের থেকে স্বার্থ হাসিল করা অার তাই "জনগনই সকল ক্ষমতার উৎস" জ্যাঁ জ্যাঁক রুশোর সেই লাইনটি পুঁথিতে ঠাই পেয়েছে স্ব-সম্মানে, প্রায়োগিক ক্ষেত্রে নয়।

বাংলাদেশ যে দলগুলো শাসন করছে এবং ভবিষ্যতে শাসন করার অভিপ্রায় নিয়ে ক্ষমতার স্বর্ণশিয়রে বসার ইচ্ছা পোষণ করে যাচ্ছে তাদের চিন্তাভাবনার মাঝে সম্মিলিত হওয়ার কোন লেশটুকু নেই কিংবা যাও বা ভাবছে তা অনেক কুয়াশাচ্ছন্ন।

নিউটনকে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের মেম্বার করা হয়েছিল। সমগ্র পার্লামেন্টারীয়ান জীবনে তিনি মাত্র একটি কথা বলেছিলেন "জানালা খুলে দাও"; এমন নির্বাক অংশীদারত্ব কাম্য নয়।

দেশের তত্ত্ববিদগন ঐক্যের পথ অনুসন্ধান করার পরিবর্তে দলাদলি বা বিরোধিতার পথে হাঁটছে।বিরোধীতার চিন্তা থেকে বিরোধীতাই জন্ম নেয় অথচ যেখানে সকলের লক্ষ্য জনগণ তা ভুলে সামান্য স্বার্থের জন্য নিজেদের মধ্যে রেশারেশির পাল্লা ভারী করছে।

এদেশে সকলে দল করছে ক্ষমতার জন্য। 'পাওয়ার গেইম' এ পরিনত হয়েছে সমসাময়িক রাজনীতি।মানবিকতার সামান্য স্ফুরণ নেই। রাজনৈতিক মূল্যবোধ, সৌন্দর্য, নৈতিকতা, দায়দায়িত্ব, সংস্কৃতি সব আজ লুপ্ত।

সময় নিরন্তর পরিবর্তনশীল, তাই প্রয়োজন হয়ে পড়েছে সর্বক্ষেত্রে বিজ্ঞাননিষ্ঠভাবে নতুনত্বের।রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও তা সত্য হয়ে উঠেছে, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের হাতে জন্ম নেওয়া পুরাতন, জীর্ণ রাজকীয় রীতিনীতি থেকে সরে এসে নতুনভাবে সুনির্দিষ্ট মতাদর্শিক দিশায় নতুন রাজনীতির দ্বার উন্মোচন করে সংকট থেকে উত্তরণ ধ্রুব সত্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

২০.০৬.২০২০

Friday, June 12, 2020

করোনা, রাষ্ট্র এবং পাশ-বালিশ > শ্রী রীতি


আমি পাশ-বালিশ নিয়ে ঘুমোবো কিনা সেটা আমার ব্যাপার। এই নিয়ে কারো জ্ঞান আমি শুনতে চাই না। কিন্তু এটা খুবই গুরুতর প্রশ্ন যে, করোনাকে পাশ-বালিশ করেই যদি ঘুমোতে হয় তাহলে দুমাস ধরে লকডাউন করেছিলেন কেন?

যে বিষয়গুলি সম্পর্কে আমি খুব ভালোভাবে অবহিত তার মধ্যে এটাও রয়েছে যে করোনা ভাইরাস নিয়েই আমাদের গোটা মানবসমাজকে আগামী দিনে বাঁচতে হবে। এটা নিয়ে আমি এত বড় বড় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের যুক্তিগ্রাহ্য বক্তব্য শুনে নিয়েছি যে আপনার কাছ থেকে এই জ্ঞান শুনতে চাই না। তাছাড়া এটাতে আমি খুব ভীত, তাই আপত্তি করছি এবং অন্য কোনো উপায় খুঁজে বেড়াচ্ছি এমনও নয়। কিন্তু যেহেতু আপনি ঐ চেয়ারটায় বসে আছেন, সেই কারণে আপনাকে সুনির্দিষ্টভাবে কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর দিতেই হবে। এড়িয়ে যাওয়া চলবে না।

করোনা ভাইরাসের মেডিসিন/ভ্যাকসিন বের করার দায়িত্ব আপনার নয়, আপনি কেন ব্যর্থ, এসব প্রশ্নের উত্তর আপনাকে দিতে হবে না।

কিন্তু লকডাউনের দুই মাস সময়টা ছিল প্রস্তুতির জন্য। মানুষ কৃচ্ছসাধন করলেন, সেই সুযোগে আপনার সরকার স্বাস্থ্যক্ষেত্রে কোন প্রস্তুতিটা নিল?

দুমাস পরে এবার আমি ভাবতে পারবো তো করোনা হলেও চিন্তা নেই, সরকারী হাসপাতালে আমার চিকিৎসার সুব্যবস্থা রয়েছে? ভেন্টিলেটর, অক্সিজেন ইত্যাদির পর্যাপ্ত ব্যবস্থা হয়েছে তো?

আচ্ছা, ব্যক্তিগত সতর্কতা অবলম্বন করে যদি বা করোনা সংক্রমণ থেকে বেঁচেও যাই তাহলেও অন্যান্য নানা রোগ তো আমাকে ছাড়বে না, তার চিকিৎসার ব্যবস্থা হাসপাতালে এবার ফিরে এসেছে তো?

আচ্ছা, আমার বয়স না হয় সবে পঞ্চাশ পেরোলো, কিন্তু আমার বহু প্রিয়জন, আত্মজনের বয়স হয়েছে, অনেকে ডায়াবেটিস, অ্যাজমা, হাইপ্রেসার ইত্যাদির নানা রোগে ভুগছেনও। করোনা হলেই এবার আর তাঁদের প্রায় বিনাচিকিৎসায় মরতে হবে আর কোমরবিডিটির তালিকায় নাম লেখাতে হবে না তো?

মন্দির মসজিদ খুলতে বলেছেন, বেশ করেছেন। কিন্তু বলি কি, হাসপাতালগুলোকে এই দুমাসে খোলার মতো করে খোলার ব্যবস্থা করেছেন তো? নইলে ডায়ালিসিস আর কেমো নেওয়ার অপেক্ষায় যারা দিন কাটাচ্ছেন তাঁদের কি হাসপাতালের বদলে ধর্মস্থানে যেতে বলবো?

করোনা যখন শুরু হয়েছিল তখন আপনার সাঙ্গপাঙ্গরা মিম তৈরি করে ফেসবুকে ছড়িয়েছিল, ছবিতে দেখা যাচ্ছিল আপনি দুহাত দিয়ে করোনা ভাইরাসকে রুখে দিচ্ছেন আর রাজ্যবাসী নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে। আপনার স্তাবকরা বলতে শুরু করেছিলেন যে, মমতা ব্যানার্জি থাকতে এ রাজ্যে করোনা থাবাই বসাতে পারবে না। সম্ভবত তাঁরা আপনার নামে মন্দির তৈরির পরিকল্পনা করছিলেন, শীতলা মন্দিরের মতো। আর আপনি? আপনি তখন প্রশান্ত কিশোরের পরামর্শ মতো রাস্তায় গোল্লা আঁকছিলেন। দেড় দুঘন্টা ধরে টিভিতে বকবক করে কীভাবে হাত ধুতে হবে শেখাচ্ছিলেন, কলকাতা এবং জেলায় জেলায় অজস্র কোভিড হাসপাতাল গড়ে তোলার গল্প শোনাচ্ছিলেন।

ভালোই করেছেন। ঠিকই আছে। আপনি যেমন রাজনীতিক তেমন রাজনীতিই করেছেন। কিন্তু এবার তো জবাব দিতেই হবে। জবাব পেলে আমি নিশ্চিন্তে পাশবালিশ জড়িয়ে ঘুমোতে পারব। আর না পেলে আমি তো এখন ঘুমিয়ে সময় কাটাতে পারব না।

দুশ্চিন্তায় আমার ঘুম উবে যাবে আর আমি আপনার প্রশাসনকে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে দেব এটা ভুলেও ভাববেন না। প্রতিদিন আঙুল তুলে আপনাকে দায়ী করে যাব। যদি উপযুক্ত সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো থাকে তাহলে করোনা ভাইরাসকে নিয়ে জীবন কাটাতে আমার আপত্তি নেই। না থাকলে, করোনা ভাইরাসকে তাড়ানোর ক্ষমতা আমার নেই, কিন্তু আপনাকে ক্ষমতা থেকে তাড়ানোর লড়াই করে যাব। যদি তাতে স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর সামান্য উন্নতিও হয়; করোনাকে নিয়েই না হয় জীবন কাটাবো।

১২.০৬.২০২০

Wednesday, June 10, 2020

বাজেট ব্যবস্থাপনা - ভূবন মুন্সী



শ্রুত গল্পে জানি, কোন এক পয়গাম্বর একদিনের ঈশ্বরত্ব চেয়ে নেয় পরম ঈশ্বরের কাছ থেকে। সারা দিন শ্রম শেষে সৃজন করে অসম্পূর্ণ বাদর। মল ত্যাগের স্থান দিতে ভুলে যায়।

জনৈক অনার্য কৃষক কৃষির ঈশ্বরত্ব চেয়ে নেয় এক সিজন। পরিমিত জল আর ঝঞ্চাহীন পরিবেশে ধান গাছ এবনরমালি বেড়ে উঠতে থাকে। এক মাথা উচু গাছ। প্রচুর ধান বীজ। বীজের ভিতর চিটা। অথচ ঝড়ো হাওয়া পেলে শেকড় মাটির গভীরে যেতো। ধানে চাল হতো।

গল্প হতে যা শেখা যায়-  প্রভূত্ব শুধু প্রভূর হাতে মানায়। ভিন্ন হাতে যথাযথ বিধানে বৈকল্য আসে।

রাষ্ট্রীক ঈশ্বর-জনগন যদি বেমালুম ভূলে যায় তার ঈশ্বরত্ব অথবা কাক ঠুকরে খায় তার মসনদী প্রভূত্ব, তবে তলহীন সমস্যা তালগোল পাকিয়ে দেয় যাপনের মাঠে। ঈশ্বরত্ব, এটাতো শুধু ঈশ্বরের হাতেই যথাযথ।
ব্যাক্তি বিশেষ রাষ্ট্রিক ঠাকুর হয়ে যদি ঈশ্বরত্ব কেড়ে নেয় জনগনের হাত হতে, ঠাকুর যদি মহা প্রভূর ভাবে নিজেকে ব্যাস্ত রাখে, তবে চাওয়া সত্ত্বেও দিনান্তে দেশের পরিনতি মোটেই শুভ হয় না।

ছ'শতক চোখের দৃষ্টি কোন ভাবেই চৌত্রিশ কোটি চোখের দৃষ্টি কে ছাড়িয়ে যেতে পারে না। বরং ঐ ছ'শতকের দৃষ্টি মোটের তুলনায় ন্যাগলেজেবল। তাই সতেরো কোটি পূঁজারি কে বাদ দিয়ে তিনশো ঠাকুরের সিদ্ধান্ত কোন ভাবেই যৌক্তিক হতে পারে না বা তিনশো ঠাকুর কে ভরসা করে ভার দিলেও কোন ভাবেই যথাযথ সিদ্ধান্ত নিতে পারবেনা।

এটাই হবে কল্যাণের পথ- ঐ তিনশো ঠাকুর, যাঁরা পূঁজো ব্যবস্থাপনা কমিটিতে আছেন, তাঁরা যদি পূঁজো দিতে ইচ্ছুক সতেরো কোটি পূঁজারির বাঞ্চা শোনে তারপর ব্যবস্থাপনার পথে অগ্রসর হন এবং পূঁজারিদেরও উচিত আপনার দায় আমলে নিয়ে যথার্থ হওয়া।

এ সিদ্ধান্ত বা ব্যবস্থাপনাই হবে জগতে ঐশ্বিক ব্যবস্থাপনা। অন্যথায় অসম্পূর্ণ বাদর সৃজন হবে অথবা বস্তা ভর্তি চিটা নিয়ে ফিরতে হবে যাপন ঘরে।

২০১৮

Tuesday, June 9, 2020

তোমাকে অভিবাদন বাংলাদেশ - ভূবন মুন্সী

সিন্ধু হতে নদিয়া অতপর বাংলাদেশ। প্রাচীন সন্দীপের সুনাম ঝুলিতে নিয়ে, গৌর-নিতাই-লালনের নদিয়ায় শুদ্ধ হয়ে, পুনঃপুনঃ গঙ্গা স্নানে, বঙ্গোপসাগরের সাথে দ্রোহ করে, পদ্মার পলি নিয়ে ঋদ্ধ হয়ে, অতপর একাত্তরে প্রাচীন বঙ্গের পূর্ণ প্রকাশ - বাংলাদেশ।

"যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা, পুরাটাই ছল' এ নীতিতে দস্যু জাত বেনিয়া বৃটিশ পলাশীর আম্র কানন হতে চুরি করে বঙ্গ তথা উপমহাদেশের স্বাধীন সুর্য। দীর্ঘ সংগ্রামের পরিনতি অর্থে ৫২ থেকে ৭১ হয়ে আবার বৈদ্যনাথ তলার আম বাগানে বঙ্গ পুরুষ উদয় করে স্বাধীনতার নব সুর্য।
১৬ই ডিসেম্বর সুর্য হেসে বলে - সুপ্রভাত বাংলাদেশ।

ঢাকাই মসলিনে বিশ্বচোখ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। জাহাজ রপ্তানি করে বঙ্গদেশ। মানুষ তত্ত্বের অনুষঙ্গে উঠে আসে বাউল গান। বিশ্বমন মুগ্ধ হয়ে শ্রবণ করে। একতারার সুরে, বাউলের গানে বিমোহিত বিশ্বলোক পেয়ে যায় অমৃতের স্বাদ। তোমাকে অভিবাদন বাংলাদেশ।
৫২তে সালাম - রফিকদের রক্ত দামে বাংলা ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা পায় আবার সেই সালাম - রফিকরাই সহস্রাব্দের সন্ধিক্ষণে ২০০০ সালে বসুমতীর সকল সন্তানের মুখের দাবি প্রতিষ্ঠা করে বৌদ্ধিক সংগ্রামে। আজ বঙ্গের অক্ষর শহীদ মিনারের লাল সুর্য ছুঁয়ে দাঁড়িয়ে থাকে জাতিসংঘের সম্মুখে। তোমাকে অভিবাদন বাংলাদেশ।

দুরন্ত মুসা ইব্রাহীম দ্রোহী পদক্ষেপে উঠে যায় এভারেস্টের চূড়ায়। সুউচ্চ শিখরে সেঁটে দেয় লাল-সবুজের পতাকা। জননী নিশাত মজুমদার সেই চূড়ায় উঠে শীতল পাটির মতোন মসৃণ হাতে বুলিয়ে দেয় সোহাগী পরশ। সাবাস - বাংলাদেশ।
অসহায় রোহিঙ্গা শিশুর করুন আর্তনাদে মাতৃত্ব জেগে ওঠে বাংলাদেশ সরকারের বঙ্গীয় মনে। মানবিক মমত্ববোধে অসহায় রোহিঙ্গাদের ঠাঁই দিয়ে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বিশ্ব মানচিত্রের সকল দেশে কাঁটাতারহীন অখন্ড মানবিক বিশ্ব গঠনের সওগাত পাঠিয়ে দিয়েছে।
তোমাকে অভিবাদন বাংলাদেশ।

সমগ্র বিশ্ব জুড়েই সংকট - রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক আর প্রতিবেশিক সংকট। বাংলাদেশ- নির্বাচন কালীন সংকটের দগদগে ক্ষত সেঁটে আছে তোমার গায়ে; সচেতন শুশ্রূষায় মুছে নাও; অপরাপর দেশের সাথে তুমিও এই করোনার আগুন নেভাও।
একবিংশের দুই দশকের সফলতা সাথে নিয়ে আরও বেগবান হয়ে উঠ উন্নতির দিকে, প্রান্তরে প্রান্তরে হয়ে উঠ আরও সবুজ।

পুনশ্চঃ তোমাকে অভিবাদন বাংলাদেশ।

Sunday, June 7, 2020

'মেসেঞ্জার অব কসমোলজি' প্রাসঙ্গিক আমাদের দ্রোম কথা - সম্পাদকীয়



প্রাচীন মানুষ গুহা হতে ছড়িয়ে পড়ে প্রান্তরে, অন্ধকার থেকে আলোর দিকে, বৃত্তের কেন্দ্র থেকে পরিধির আইল বরাবর ছুটতে থাকে মানুষ, পূর্ণতা পেতে চায়; অনুপম প্রকৃতির অঙ্গ হতে খুলতে থাকে বাহারী বসন, রূপ দেখে, ছুটে চলে ফের।

আদ্য হতে যাত্রা...  আজ অবধি... থামবে কখোন... গন্তব্য কোন সীমানায়...


সব অজানা। শুধু জানি, যতোদিন মানুষ থাকবে, থাকবে মানুষের পৃথিবী, ঠিক ততোদিন মানুষকে ছুটতে হবে সম্মুখে, ছুটতে হবে শুভ্রতার টানে।

ঘূর্ণন নৃত্যে ব্যস্ত  এই পৃথিবীতে মানুষের দ্রোহ মিথ্যার সাথে, প্রকৃতির সাথে প্রেম, প্রেম মানুষে মানুষে ; বৌদ্ধিক মানুষ চায় ন্যায্যতার সুষম বিধান, পারস্পরিক মর্যাদায় পরস্পরের হৃদাসন।


তবু অন্ধকার তাড়া করে ফিরে ছয়ার মতোন, মিথ্যা আপাং কাঁটা হয়ে সেঁটে থাকতে চায় গায়ে, ব্যাকডেটেড হাত খামচে ধরে মানুষের গতিময় গ্রহ; ঠিক তখোনি ভেসে আসে ডাক-ডংকা, বেজে ওঠে সুর-সঙ্গীন, পশ্চাৎপদতা পায়ে ঠেলে পৃথিবীর ঋদ্ধ সন্তানদের বোদ্ধিক জরায়ু হতে জন্ম নেয় দ্রোম।

নবজন্মের এই কালে -

এই অন্ধকার,

এই স্থবিরতা,

প্যারালাইজড সভ্যতা,

ব্যাকডেটেড হাত,

এই অসারতা চূর্ণবিচূর্ণ করার প্রত্যয়ে রুদ্র রূপ ধারন প্রাধান হয়ে উঠে; বিনয়ের চেয়ে স্পর্ধাই আরাধ্য হয়ে উঠে ; স্থবির সভ্যতার গালে কষতে হয় শোধরানোর থাপ্পড়, বোধে শব্দ বাণ, তীক্ষ্ণ খঞ্জরে করতে হয় ব্যাবচ্ছেদ বিশ্লেষণ; হ্যাঁচকা টানে অচলতার মুখোশ আলগা করে দৃশ্যমান করতে হয় ভিতরের দগদগে ক্ষত। প্রত্যাহ ক্রমোত্তোরিত  পথে চেতনার সংগ্রামে যাপনে নিজেকে এগিয়ে নিতে হয়, নিজের ভেতর নিজেকে করতে হয় সংহত। সংহত তারুণ্যের স্পর্ধায়, দ্রোহে, প্রেমে, বিনয় ও সংগ্রামে মিথ্যার কালিমা লুপ্ত হোক, জাহেলিয়াতের বুক চিড়ে বেরিয়ে আসুক স্পষ্ট আলো। সুস্পষ্ট দিশায় বৌদ্ধিক চোখের অন্ধত্ব ঘুচে যাক, দ্রষ্টব্যে প্রশান্ত হোক জৈবিক চোখ, কহতব্য কন্ঠ চিড়ে বেরিয়ে আসুক, প্রচলিত অচল পাড় ভাঙ্গার উল্লাসে তারুণ্য হয়ে উঠুক খরস্রোতা নদী, স্বর্গীয় সাহসে হয়ে উঠুক ব্রহ্মপূত্র, সেমেটিক শুদ্ধতায় উৎসর্গীত আঙ্গুলে লিখুক বিস্ফোরক অক্ষর- পাল্টে দেবার সংবিধান।

জলজ সময়কে দ্রোহের উষ্ণতায় আমরা আকাশে উড়িয়ে দেবো; জন্ম দেবো মেঘ; প্রেমের টানে মেঘ হতে ঝড়াবো তুমুল বৃষ্টি; গড়বো বাস যোগ্য শ্যামল আবাস।

ডান হাতে দ্রোহ, বাম হাতে প্রেম; জৈবিক দুই চোখে পড়ি পৃথিবীর অক্ষর, অষ্ট প্রহর খোলে রাখি 'জেনেটিক চোখ',  পাঁজরের মতোন প্রিয় পেন্সিল ঘষে আমরা আঁকি দ্রোম শহর।


এ যাত্রায় 'মেসেঞ্জার অব কসমোলজি'তে সবাই স্বাগতম।

Thursday, June 4, 2020

বিরামহীন ধরিত্রী হঠাৎ থমকে দাঁড়ালো - তানজিল আহমেদ আকাশ


সৌরজগতের একমাত্র গ্রহ যা মানুষের আবাস ভূমি হিসাবে যুগের পর যুগ ক্রমান্বয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে মানুষের বুদ্ধিমত্তা কে কাজে লাগিয়ে তা পৃথিবী।

বিরামহীন ধরিত্রী হঠাৎ থমকে দাঁড়ালো কোভিড -১৯ এর করাল গ্রাসে। দন্ডায়মান সমস্যার সম্মুখে নির্বোধের মত অপলকভাবে চেয়ে আছে মোড়ল রাষ্ট্রসহ তাদের সাথে সুরে সুর মেলানো সকল রাষ্ট্রসমূহের কর্তাব্যক্তিগণ।

সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে পৃথিবী ভুলতেই বসেছিলো মানুষই মুখ্য, অার যা কিছু তারা তৈরি করেছে যাপনের ক্ষেত্রে সকল কিছুই গৌণ। বর্তমান কর্মে ভবিষ্যতের বীজ রোপিত হয়, আর বর্তমান কর্মদিশা ঠিক করতে ফিরে থাকাতে হয় ইতিহাসের দিকে।

ঊনিশ শতকে মানব জাতির সবচেয়ে বড় অবক্ষয়- প্রথম বিশ্বযুদ্ধ (১৯১৪-১৯১৮) ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (১৯৩৯-১৯৪৫)। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রথম পারমানবিক বোমা ব্যাবহার করা হয়; গোটা বিশ্ব পরিনত হয় এক মৃত্যুপুরীতে। তাছাড়াও ধর্মযুদ্ধ, শতবর্ষব্যাপী যুদ্ধ, আফিম যুদ্ধ, রুশ-জাপান যুদ্ধ, কোরিয়া যুদ্ধ, ভিয়েতনাম যুদ্ধ, ইরাক-ইরান যুদ্ধ, উপসাগরীয় যুদ্ধ, ইরাক-মার্কিন যুদ্ধ, স্পেনের গৃহযুদ্ধ, সিপাহী বিপ্লব, ইংল্যান্ডের গৌরবময় বিপ্লব সহ বিগত যুদ্ধে অসংখ্য মানুষের প্রাণহানী ঘটে; ক্ষতি হয় অর্থনৈতিক এবং প্রাকৃতিক।

বিগত শতাব্দীর মহমারী- এইডস, হাম, বসন্ত/গুটি বসন্ত, পোলিও, ইবোলা, হেপাটাইটিস(এ,বি,সি)প্লেগ, হুপিংকাশি, যক্ষা, মেনিনজাইটিস, ল্যাপ্রসি, সোয়াইন ফ্লু, স্প্যাানিশ ফ্লু, ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, গনোরিয়া, কলেরা, ধনুষ্টংকার(টিটেনাস) সহ নানা ধরনের অসুখে, মহামারীতে হাজার হাজার লোক প্রাণ হারিয়েছে আর পুরো পৃথিবীর মানুষকে দাঁড় করিয়েছে এক বিষন্ন  সারিতে।

প্রত্যেকটা মহমারী প্রমাণ করে পৃথিবীটা শুধু মানুষের একসাথে মিলে মিশে বসবাসের জন্য, মানুষে মানুষে দ্বন্দ্বের জন্য নয়। কিন্তু মানুষ নিজেদের রক্ষার জন্য তৈরি করে অত্যাধুনিক অস্ত্র যেমনঃ- প্যাট্রিয়ট, টোমাহক, জেনিথ, স্ট্রলা, স্কাড, নডং, ত্রিশূল, হাতফ, হিমোনু, পৃথ্বী, জেরিকা, হ্যাফটসহ নানা ধরনের অাধুনিক অস্ত্র - যদিও শেষ পর্যন্ত মানুষের রক্ষা হয়ে ওঠে না।

স্রষ্টার তৈরি মানুষ এক বিস্ময়কর জীব - যারা প্রয়োজনে নিজেকে সহ পুরো পৃথিবীকে পরিবর্তন করতে সচেষ্ট হয় - গড়ে তুলে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, সংগঠন, সভ্যতা - অার এগুলোর জন্য তৈরি করে নানা ধরনের নীতিমালা, বিধি-নিষেধ। দক্ষিন আফ্রিকা পারমানবিক বোমা তৈরি করার পরও স্বেচ্ছায় ধ্বংস করে ফেলে ১৯৯১ সালে ডি ক্লার্কের নেতৃত্বে অর্থাৎ প্রয়োজনে ভেঙ্গে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন করে গড়ে তোলার ক্ষমতাও রয়েছে মানুষের।

অস্ত্র উৎপাদন বন্ধ করে মহামারীকে পিছনে ফেলে নতুন কোন আদর্শিক চর্চা ও বিচার-বিশ্লেষণ, মেধা-মননসহ সব দিক কাজে লাগিয়ে গড়ে উঠুক বাসযোগ্য পৃথিবী।

০৪.০৬.২০২০

Wednesday, June 3, 2020

একটা ব্যর্থ পৃথিবীতে আমরা বসবাস করছি - মোঃ ইয়াছিন মিয়া



রহস্যের তলানিতে অনেক কিছুই পড়ে আছে। ইতিহাসের চরিত্রে এর পূর্বে কখনোই এমন দৃষ্টিভঙ্গি দেখা যায়নি, যা চিনিয়ে দিতে পারে বর্তমান পৃথিবীর ম্যাচুরিটি। পুঁজিবাদী দুনিয়া জন্ম নিয়েছে। পৃথিবীর চোখ মানুষ দেখছেনা, অর্থকেই দেখছে। তাই পৃথিবী এখন পর্যন্ত অর্থকেই সুরক্ষা দিয়ে আসছে। পুঁজিবাদী দুনিয়া মানুষকেও পণ্যে পরিণত করেছে। মানুষের জায়গা দখল করে নিয়েছে অর্থ। মানুষ ভুলে গিয়েছে মানুষের জন্যে অর্থের প্রয়োজন, অর্থের জন্যে মানুষ নয়।

এখন পর্যন্ত পৃথিবী কখনো মানুষের হয়ে উঠেনি, মানুষকে সুরক্ষা দেয়নি। করোনা ভাইরাস তা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।  মানুষের সুরক্ষায় পৃথিবীর প্রতিটি রাষ্ট্র ব্যার্থতার প্রমাণ দিচ্ছে। একটা ব্যার্থ পৃথিবীতে আমরা বসবাস করছি। মৌলিক অধিকার গুলো থাক, মানুষ বাঁচার অধিকার থেকেই বঞ্চিত হচ্ছে।

 মঙ্গলযান, চন্দ্রযান, নতুন নতুন ক্ষেপণাস্ত্র, জাতিসংঘ, সার্ক, ওআইসি, জি-৮, বাণিজ্যিক জোট আর পৃথিবীর সকল তাবেদার - সকল মুখোশের সিক্রেট ফাস হয়ে গেছে।  তবুও কি আগামী পৃথিবীর মানুষের মুক্তি মিলবে? করোনা কি হতে পারবে একবিংশ শতাব্দীর রেনেসাঁ?

 ইতিহাসের তলানিতে লক্ষ কোটি লাশ পড়ে আছে, মুক্তি মেলেনি। আমাদের মুক্তি রাজনীতিবিদদের কাছে বন্ধক দেয়া। রাজনীতি মানব সমাজের সর্বাঙ্গীন পরিণতি নির্ধারণের নিয়তি। প্রয়োজন সঠিক রাজনৈতিক ব্যাবস্থা।

 বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট : জাতির তরুণ-তরুণীর মেজরিটি অংশ পলিটিক্যাল ভিউ তে লিখে "I hate politics", "No interest"।  

পৃথিবীকে যদি প্রশ্ন করা হয়,  নিজের যত্ন নিতে অক্ষম কেন? হয়ত পৃথিবী বলবে : কারণ এখানে হাজারটা নির্বোধ টাইপের মানুষ বসবাস করে।  বের্টোল্ট ব্রেখট বলেছিলেন, “নিকৃষ্টতম অশিক্ষিত হচ্ছে সে, যে রাজনৈতিকভাবে অশিক্ষিত। সে শুনতে চায় না, বলতে চায় না, রাজনৈতিক বিষয়ে অংশগ্রহণ করে না। সে জানে না জীবনের মূল্য, ধান-মাছ-আটা-বাসা ভাড়া-জুতা বা ঔষুধের দাম- সবকিছু নির্ভর করে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর। এই রাজনৈতিক অশিক্ষিতরা এতই মূর্খ যে, বুক ফুলিয়ে গর্ব করে বলে, রাজনীতিকে ঘৃণা করি! এই নির্বোধ জানে না, তার রাজনৈতিক অজ্ঞতা থেকে জন্ম নেয় পতিতা, পরিত্যক্ত সন্তান এবং সবচেয়ে নিকৃষ্টতম ভণ্ড রাজনীতিবিদ, দুর্নীতিবাজ এবং দেশি-বিদেশি কর্পোরেট কোম্পানির ভৃত্য দালাল।"

একটি জাতি যদি তার প্রয়োজন, অপ্রয়োজন, অজ্ঞতা, মূর্খতা ইত্যাদি ভাবতেই না পারে, তার কিসের গনতন্ত্র?  "বোধের উন্মেষ মুক্তির সমর্থক।"  করোনা পৃথিবীর কি বোধের উন্মেষ ঘটাতে পারবে? 

কাঁটাতারের পৃথিবী কোন সমাধান আনতে পারেনি। বৈশ্বিকতায় সমাধানের পথ ধরে পৃথিবীতে নতুন সংবিধান, নতুন চুক্তি, নয়া বৈশ্বিক বাণিজ্য, নতুন নীতির উদ্ভব হবে। হতে পারে আগামী পৃথিবী রাজনৈতিক অস্থিরতায় ভূগবে। তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা পুরনো নৃত্যে নতুন অলংকার কপচাবেন। হতে পারে তকমাধারী বৈশ্বিক জোটগুলো আর পৃথিবীর তাবেদাররা আবার কাঁচের দেয়াল গড়বেন। হতে পারে পৃথিবী ফিরে যাবে তার বৈরিতায়। কারণ এখন পর্যন্ত পৃথিবী তার সমাধানহীনতায় ভুগছে এক মতাদর্শিক সংকটে।

মনুষের কর্মযজ্ঞে মতাদর্শিক দিশায় মুক্তি আসুক।

০১.০৬.২০২০

পরীক্ষায় ফেল অথবা আত্মহত্যা অথবা খুন হয়ে যাওয়া সম্ভাবনা সমূহ - মোঃ শামীম রেজা


এস এস সি বা এইচ এস সি বোর্ড পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হওয়ার পর যখন পত্রিকাতে শিরোনাম দেখি কোমলমতি বাচ্চাদের আত্মহত্যার  এবং একই সাথে নাম করা স্কুল ও সেরা কিছু শিক্ষার্থীদের ছবি ছাপা - দুটো খবরই আমার কাছে সমানভাবে দুঃখজনক এবং অশ্লীল। প্রথম ঘটনাটার জন্য সামষ্টিকভাবে দ্বিতীয় ঘটনাটার কোন না কোন ভাবে দায় আছে।

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা কি? কেন ছেলে মেয়েদের কে শিক্ষিত করার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়?

একসময় বলা হতো মানুষের মত মানুষ হওয়ার জন্য শিক্ষার প্রয়োজনে ছেলেমেয়েদেরকে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়।

আজ স্কুল -কলেজের গন্ডিতে যাওয়ার পর তারা প্রথম যে বিষয়টা জানতে পারে তা হলো তাকে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত করা হয়েছে এবং তাকে সর্বোচ্চ জায়গাটাতে যেতে হবে নইলে তার পরিবারের এবং তার নিজের জীবন ব্যর্থ। এই যে মূল্যবোধ তার বীজ বপন করে দেওয়া হলো পরিবার এবং প্রতিষ্ঠান থেকে। এই বোধের সুদুরপ্রসারী ফল ফলতে থাকে সমাজ-রাষ্ট্র -পরিবারে।

কিভাবে?

এই শিক্ষার ফলে তার ভিতরে গড়ে ওঠে আমি আমি ভাব। জীবনের সর্বক্ষেত্র জুড়ে এই ভাবের চাষ হতে থাকে। কিছু ব্যতিক্রম যে নাই তা নয়। সফলতার ব্যর্থতার মানদন্ড তাকে নিয়ে যায় এক নিরন্তর আমিময় আকাঙ্খার ভিতর যেখানে সামাজিক দায়বোধ থাকে না, রাষ্ট্রিক দায়বোধ থাকে না, এমনকি একসময় দেখা যাবে সে বৃদ্ধাশ্রমের মত দায়হীন অমানবিক ব্যবস্থার পক্ষে কাজ করছে।

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে গুরু দ্রোণের পিতৃস্নেহের দুর্বলতা এবং পুত্রের সুখ ভাবনা থেকে যে ভুল শিক্ষা অশ্বথামা পেয়েছিল সেই শিক্ষা পরবর্তীতে পুত্রকে পিতার অবাধ্য হওয়ার ইন্ধন যুগিয়েছিল। অপরপক্ষে নিজেদের শিক্ষা গুরু শত্রু পক্ষে থাকা স্বত্ত্বেও পান্ডুপুত্রগণ শিক্ষা গুরুর প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করেছে সবসময়।

এর কারণ কি?
কারণটা হলো পান্ডবপুত্রগণ মনে করেছে যে, এটা ন্যায়ের যুদ্ধ ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য অর্থাৎ সামষ্টিক কল্যাণের জন্য এই যুদ্ধের প্রয়োজন হচ্ছে। এখানে সামষ্টিক বোধ হলো মূখ্য বিষয়।

এ কালের শিক্ষা ব্যবস্থা তো কোমলমতি শিশুদের যন্ত্র ছাড়া আর কিছু বানাতে পারছে না, সামষ্টিক বোধ নির্মাণ তো দুরাশা। আমাদের দেশে তো এখন দু-তিন বছরের শিশুকে যন্ত্র বানানোর কারখানায় নিয়ে যাওয়ার রেওয়াজ শুরু হয়েছে।

এই সময় থেকেই তার ভিতর ঢুকিয়ে দেওয়া হয় সে একা এবং জগত সংসারে তাকে সফল হতে হলে ভালো ফলাফল করে অমুক-তমুক হতে হবে। এর বাইরে যে বিশ্বপ্রকৃতি আছে, সমাজ আছে, রাষ্ট্র আছে, মানবিকতা আছে, সমাজের প্রতি রাষ্ট্রের প্রতি মানুষের প্রতি যে তার একটু হলেও দায়বোধ আছে তার কোন শিক্ষাই তো সে পায় না। এক সময় নিজের ভিতর আটকে গিয়ে এতোটাই ইগো, আত্মকেন্দ্রীকতায় ডুবে যেতে হয় - বাবা মায়ের সাথেও হিসেবী হয়ে উঠতে হয় তাকে।

বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রেণির ইউরোপীয় আলোকায়ন প্রাপ্তীর এই হলো সমাজতাত্ত্বিক ফল। এর বাইরে যে অংশটা আছে তারা তো দেশের বাইরে উড়াল দেয় আর একেবারে প্রান্তিক তাদের খাবি খাওয়া শিক্ষা দিয়ে কোনরকম উঠতি কলকারখানা গুলোয় শ্রমের যোগান দেয়।

শিশু বয়স থেকেই যে মানদন্ড একজন শিশুর মূল্যবোধে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় তখন সেটাই তার জীবনের সারৎসার হয়ে দাড়ায়। সেখানে ব্যর্থ হলে জীবনের আর কোন মানে থাকে কি?


এর বাইরে যে অংশটা থেকে যেতে চায় বা এই ব্যবস্থাকে মানতে চায় না, তারা নেশাগ্রস্ত অথবা উগ্র ধর্মীয় মৌলবাদের স্বীকার হয়। যার কোনটার জন্যই সে কোনভাবেই দায়ী নয়।

বড় মানুষ হওয়া বলতে পেশাভিত্তিকতার যে দাওয়া দেওয়া হয় তার ফল সফলতায় এবং বিফলতায় উভয়টাতেই সমাজ রাষ্ট্রের জন্য অস্বাস্থ্যকর।

বড় মানুষ মানে বড় চৈতন্যজগতের অধিকারী মানুষ। যে চেতনায় মানবিকতা-মনুষ্যত্ব বোধের শিক্ষা আসে না, সেখানে জীবনকে অতি তুচ্ছ কারণে যেমন খুব বড় বা আরামদায়ক মনে হতে সময় লাগে না আবার অতি তুচ্ছ কারণে খুব ছোট বা যন্ত্রনাদায়ক মনে হতেও সময় লাগে না।

বিগত দশ বছরে ভালো রেজাল্ট করা শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেড়েছে কিন্তু বিগত দশ বছরে সামাজিক -রাজনৈতিক মান কোন দিকে ধাবিত হয়েছে?

যেসব শিক্ষার্থীরা ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যা করে কিংবা  করছে তারা কি এই শিক্ষা-সমাজ মূল্যবোধের বলি হলো না?


 অনেকেই বলছেন টলছেন যে, ছেলেমেয়েদেরকে সময় দিন, তাদেরকে খেলাধুলা করতে দিন। সময় দেওয়া বা খেলাধুলা করতে দেওয়ার বিষয়! ভাবুন অভিভাবক হিসেবে আজকের বাবা মা-শিক্ষকদের অবস্থাটা কোন স্তরে যে একজন শিশু তার বাবা-মা'র কাছ থেকে সময় পাওয়া উচিত, তার খেলাধুলা করা উচিত, এটা জানার জন্য বা বোঝার জন্য মনরোগ বিশেজ্ঞদের কাছে যাওয়া লাগছে!

আসলে মন বিকল কাদের হয়েছে?

কিন্তু এমনটা কেউ তো বলছেন না যে সমাজের প্রতি, দেশের প্রতি, মানুষের প্রতি তার দায় আছে এবং সেই দায়ে দীপ্ত হয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সাথে সাথে মানবিকতা অর্জন করতে হবে। যে যে বিষয়ে তার আগ্রহ হয় সে বিষয় নিয়েই সে পড়ালেখা করুক মানুষকে ভালোবেসে। তো সে ভালো ফলাফল করে বড় চাকরি করে ঘুষ খাবে না, দুর্নীতি করবে না তো কি আঙুল চুষবে? আর সেখানে যদি এস এস সি বা এইচ এস সি তে সে সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে যায় পরিবার এবং সামাজিক স্ট্যাটাস অনুযায়ী তখন আত্মহত্যায় তো তার মুক্তির পথ, নাকি!

সর্বোপরি একটা কথা বলে শেষ করতে চাই
কুয়োতে যা থাকে বালতিতে তাই উঠে আসে।
কি শিখছে আজকের ছেলেমেয়েরা তা অবশ্যই অনুসন্ধান করতে হবে, তার আগে তাদেরকে পরিষ্কার করতে হবে কেন শিখবে তারা। নইলে আগামীতে আরো বিকৃত এবং অমানবিক অনেক কিছু দেখার জন্য প্রস্তত থাকতে হবে।

হয়তো এই সব ঝরে পড়া বা সমাজ ভাষায় নষ্ট হয়ে যাওয়া ছেলেমেয়ে গুলোই বিপুল সম্ভাবনাময় ছিল তাদের ক্ষেত্রজুড়ে। উপযোগী পরিচর্যা এবং প্রকাশের মাটি না পাওয়ায় তারা বিকশিত হতে পারেনি।

বিঃদ্রঃ অমুক রিকশা চালকের ছেলে, তমুক দিন মজুরের মেয়ে একবেলা দুবেলা খেয়ে এরাম ওরাম রেজাল্ট করছে এগুলো এভাবে ছাপতে আপনাদের রুচিতে বাধে না?

০৩.০৬.২০২০

Monday, June 1, 2020

রাজনীতিই বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে - মোঃ ইয়াছিন মিয়া


প্রকৃতির বিবর্তনের ফলেই মানুষের বিবর্তন এসেছে। আমার পূর্বপুরুষদের বীরত্বগাথা প্রকৃতিরই অংশ। মানুষ এক প্রাকৃতিক প্রাণী। বিবর্তনিক পথে আধুনিক মানুষ।

পূর্ব ইতিহাস ছিল শ্রমের সংগ্রামের। প্রকৃতির সেই উদয়হীন সংগ্রামের একক ছিল শক্তি-শ্রম, বুদ্ধিদীপ্ত তারুণ্যতা। সেই শক্তি সংগ্রামের মূলে ছিল জল, খাদ্য, বাতাস। জলে বিশুদ্ধতা ছিল, খাদ্যে এতোটা ভেজাল ছিল না, বাতাসে অর্থের গন্ধ ছিল না।

ক্রমিক ধারায় বিবর্তনিক মানুষ এক দারুণ দুনিয়ার জন্ম দিয়েছে। বাতাসের আদিম রূপ হারিয়ে গেছে। 'অর্থ-বাতাসে' পৃথিবীর নিশ্বাস-প্রশ্বাস চলে। অর্থ এখন প্রকৃতিটাকেও হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। বিবর্তন এখন মানুষের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, প্রকৃতির উষ্ণতা-আদ্রতা অনেকাংশে কৃত্তিমতায় চলে। একমাত্র টাকাই দরিদ্রকে উষ্ণতা দিতে পারে।

পুঁজিবাদী দুনিয়ায় প্রতীকী একটা গোলাপের কোন মূল্য নেই। সমরেশ বলেছিলেন, 'একটি গোলাপের কুড়ি যদি সুখাদ্য হতো তাহলে হয়ত আমরা কখনোই একটি ফুটন্ত গোলাপ দেখতে পেতাম না।'

বর্তমান বিশ্বের প্রাকৃতিক হুমকি অর্থনৈতিক দুঃশাসন ঢেকে রেখেছে। পুঁজিবাদী দুনিয়া ক্রমেই পরিবেশকে ভারসাম্যহীনতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

যার প্রমাণ ইতোমধ্যে আমাদের মাঝে রয়েছে।  করোনা ভাইরাসকে যদিও ভাল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার অধিকারী ব্যাক্তি প্রতিহত করতে পারে, তবুও হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে; অধিকাংশ মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এবং পাশাপাশি কোন রোগে আক্রান্ত; বরফ গলে হাজার বছরের জীবাশ্ম গলে নতুন নতুন ভাইরাসের প্রকোপ সৃষ্টি করছে; পরিবেশের ভারসাম্যহীনতার ফলে মানুষ মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হচ্ছে; মানুষের গড় আয়ু ক্রমেই কমে যাচ্ছে।

প্রকৃতির প্রতি অর্থনীতির এই নির্দয় চাহনি - সমগ্র পৃথিবীর জন্যে এক ভয়াবহ ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে।

সকল সমস্যার মূলে রয়েছে পুঁজিবাদী অর্থনীতি। বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংস্থা গুলো অর্থনীতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। পৃথিবীর প্রয়োজন নিয়ন্ত্রিত বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থা; যেহেতু পরিবেশ বৈশ্বিক ভাবে নিয়ন্ত্রিত-অনিয়ন্ত্রিত হয়। একমাত্র রাজনীতিই বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে; নিয়ন্ত্রিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থাই পরিবেশকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

১৬.০২.১৪২৭

পোস্টার - ভূবন মুন্সী


মানুষই অনুপম পোস্টার । অধিকার আদায়ের বৌদ্ধিক সংগ্রামে বৌদ্ধিক মানুষ পোস্টার হয়ে ফিরে যাক জনপদে। যাপনের জনপদ হয়ে উঠুক যথাযথ রাজপথ। ঘরে বাইরে আঙিনায়, দোকান ক্যাম্পাস স্টলে পোস্টার কথা বলুক। কাগজের পোস্টারে প্রকাশিত অক্ষর ক্ষর হোক মানুষের প্রাণে। মানুষই জীবন্ত পোস্টার, আধুনিক পোস্টার ।

কোটি কোটি পোস্টার আজ থেকে তর্জনী উঠিয়ে অনিয়ম কে থামতে বলবে। যারা মিছরির ছুরি তারা মরে যাক, বেঁচে থাক মানুষ।

কাগজের পোস্টারে প্রকাশিত বাক্য মানুষের কন্ঠ ছুঁয়ে বেরিয়ে আসুক প্রানজ হয়ে। মানুষ হয়ে উঠুক পোস্টার , প্রসব করুক আরও এক। এভাবে এক এক করে বহু পোস্টার সমস্বরে গেয়ে উঠুক গান - হাল ছেড়োনা বন্ধু।

কৃষক ও তার সন্তান জীবন্ত পোস্টার হয়ে ধানক্ষেত ও প্রবাসে যাবে। পোস্টারে প্রকাশিত বাক্য কবির কলম ছুঁয়ে কাব্য হবে। সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবী এবং নাট্যকার পোস্টার সমাচার হাতে নিয়ে টেবিলে যাবে। ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে আলোচ্য হবে পোস্টার খবর।

মানুষের মানচিত্রে মানুষই অনুপম পোস্টার। মুক্তির মিছিলে মানুষ পোস্টার হাতে, পোস্টার হয়ে ছুটবে জনপদে মানুষের কাছে।

হ-য-ব-র-ল - ভূবন মুন্সী


ভেবে ছিলাম গোয়ালে থাকবো। জাবর কাটবো। এখন দেখি কিতাবে। ঈশ্বর নিরুদ্দেশ হলেন। তারপর খোঁজতে বললেন। চোর পুলিশ ধরাধরি। ভগবান ভূত হয়ে বিরাজিত।

তারা নায়ক হবে। আমি আজন্ম ক্রীতদাস। ইবলিশ হাসছে। আমি নাকি ধর্ষিতা!
একটু বৃষ্টি হলে ভালো হয়। কিতাবের নাম টুকু মুছে যাবে। ওটা সুন্দর ছিলো। তবু আমার কলঙ্ক
তিলক।

কেন্নোর মতো গুটিয়ে যাবো। শত পর্দার আড়াল হবো।অনামীর অপমান নেই। ভুল দেখা শোনা বলা। বয়সে খায় জৈবিক চোখ। বোধের বিকলতা খেলো জেনেটিক চোখ। এখন অন্ধ সবে।

ঈশ্বরী হাসে নটীর মতো। দ্বিধা জন্ম নিলো। সে বললো আমি গিরগিটি।

চৈত্র মাস। হঠাৎই বেল পড়লো। প্রকৃতি শ্বাসরুদ্ধ ছিলো। রোদ হলো বেলের জন্য ঘুর্নিঝড়। বৃষ্টি এলেই থরে থরে জাম পড়বে। তালের দিকে কারো দৃষ্টি থাকেনা।আমরা অপ্রস্তুত ছিলাম।

রোদ ঈশ্বর দেয়। ব্যাথার মালিক নিয়ে কোন্দল আছে।
লোহার শিকল হাতে পায়ে থাকে। কখনো গলায়।অদৃশ্য শিকল হৃদে। তান্ডব লিলা। মগজে উইপোকার বাস।
ঘোৎ ঘোৎ শব্দ হচ্ছে চারপাশে।তারা কি অসন্তোষ!

ঈশ্বরময় হবার কথা ছিলো। জিবরাইলের মতো দু চারটি অহি দিয়েছে। বাদবাকি আজরাইল এর আচরন। অন্য সিফাত গঙ্গা তলে।

নাগরিক মন তৃষ্ণার্ত। কাক ডাকছে ভোর হতে। সকাল হলেই বিপদ। ক্ষত গুলো ঠিকরে বেরিয়ে আসবে।