Wednesday, December 23, 2020

ক্রান্তিকাল - ভূবন মুন্সী।

মেসেঞ্জার অব কসমোলজি

ক্রান্তিকাল  - ভূবন মুন্সী  

যখন যে দর্শন বর্তমান থাকে তাকে আধেয় করে গড়ে উঠে সমাজ কাঠামো। মানুষ ও তার সমাজের প্রত্যেকটি উপাদানের অভ্যন্তীরন চালিকা শক্তি সে দর্শন। ভালো বা মন্দ সবটা নির্মিত হয় সে দার্শনিক আগুনের আঁচে। সৎ এবং অসৎ দুটি ভিন্ন পথ হলেও এক গন্তব্যে টেনে নিয়ে চলে মানুষকে সব। আজকে যেমন টাকা - অর্থাৎ সৎ এবং অসৎ উভয়ের লক্ষ্য আত্মকে ঘুচানো, একটু আয়েশী আরাম নেয়া, অর্থাৎ ভালো বা মন্দ যাই হোক ব্যক্তিকে ভেতরে ঠেঁসে নিয়ে দৌঁড়ে চলে জীবন।


রিক্সা চালক থেকে পাইলট, ভিখারি থেকে বিল গেটস কারো চরিত্রে গন্তব্য অর্থে মৌলিক কোন পার্থক্য নেই। বস্তিপাড়া থেকে হোয়াইট হাউজে একই গল্পের আনাগোনা - ভিন্ন ভিন্ন মৌলিক কোন গল্প নেই। নৌকা থেকে রকেট সব যন্ত্র একই স্বার্থে ব্যবহৃত হয়। মোসাদ কিংবা ইউনিসেফ - একই কাজীর কেরানী। দান অনুদানে মৌলিক কোন পরিবর্তন সাধিত হয়না। বাহ্যিক উপসর্গে ভিন্নতা এলেও স্থায়ী কোন সমাধান হয়না  অর্থাৎ জীবাণু নির্মূল না হয়ে প্রকোপ বাড়ে কমে মাত্র, সুস্থতা আসেনা।


আজকে যে দস্যু, কালকে সে দরদী হয় অথবা দরদী দেউলিয়া হয়। শিকার হয় মানুষ মানুষের হাতে- ভালো মন্দের হাতে, মন্দ অতি মন্দের হাতে, অতিমন্দরা পরস্পর ডাইনোসর। ব্যক্তি স্বার্থবাদিতার প্রবল ঝোঁকে বেঁচে থাকা, ভালো থাকা হয়না আর।

ভালো থাকার প্রবল চেষ্টা বা প্রত্যাশা থাকার পরও মন্দ থাকার মূল কারণ অভ্যন্তরে আঁটালির মতোন সেঁটে থাকা কেউটে দর্শন। গতির কারণ অভ্যন্তরীন। তার পরও ভাসা ভাসা দ্রষ্টারা এমন সব উদ্ভট তত্ত্ব, এমন সব মুক্তির সওগাত পথ করে নিয়ে আসে সম্মুখে - পৃথিবীটা যেন এক পাগলা গারদ কিংবা মাতালদের কারাগার!


ইতিহাস খোলে দেখ। ইতিহাসের পথ বেয়ে বিজ্ঞান নিষ্ঠতায় যে সত্য উন্মোচিত হয়, যা মানব মুক্তির পথকে বাস্তব ভিত দেয়, যা মানবীয় মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসে পরস্পরিক সঙ্ঘবদ্ধতার পথ নিয়ে- তায় অনিবার্য বদলের পথ হয়ে প্রসারিত হবে আজ। লগি পুতে বসে থাকলে চলবেনা, ভিকটিম যেহেতু আমরা- আমরা সবাই - সবাইকে আসতে হবে গভীর প্রত্যয়ে। যাই থাকুক না কেন জীবনের সম্মুখ অগ্রযাত্রাকে আমরা থামিয়ে রাখতে পারিনা। এ যাত্রায় যাঁরা মানবীয় মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় বিরোধী নন, তাঁরা সবাই সহযাত্রী। 

২৪.১২.২০২০

বিজ্ঞাপনঃ 

দোকান



Monday, October 5, 2020

আপনি হয়ে উঠুন একবিংশের ধাত্রী - ভূবন মুন্সী।



আপনি হয়ে উঠুন একবিংশের ধাত্রী



"থাকো দেশে অথচ গীত গাও নাঙের " প্রবাদ প্রতিম বাক্যটি অধিক স্পষ্ট হয়ে উঠে যখন মগজটা স্বদেশের না হয়ে - হয়ে উঠে ভিনদেশের । আর মগজ স্বদেশের হয়ে ওঠে অর্থাৎ যথাযথ স্বকীয় স্বদেশ বোধ গড়ে ওঠে যাঁদের নিপুণ কারিগরি সংগ্রামে ও দক্ষতায় তাঁরা বুদ্ধিজীবি । তাঁদের প্রচেষ্টায় বোধের ক্রিয়াতে জাগ্রত হয় প্রতিটি মানুষ । আর একাত্তরে বিজয় নিশ্চিত জেনেও বিরোধী শক্তি সুকৌশলে নিকেষ করে এদেশের বুদ্ধিজীবি শ্রেণীকে। আমাদের তৈরি হয় চেতনাগত পুঙ্গুত্বের পথ।

একাত্তরে রক্তদামে আমরা যেন কিনেছি চশমার স্বদেশী ফ্রেম, লেন্সদ্বয় এখানো রয়ে গেছে ভিনদেশীয় । ফলে স্বদেশ কে স্বদেশের মতো করে আজও দেখা হয় নি - দেশটা হয়ে ওঠেনি দেশবাসীর ; সেই সাথে বীর সেনানী শহীদ বুদ্ধিজীবি থেকে গেছে যথাযথ স্মরণ-শ্রদ্ধা ও ইতিহাসের অন্তরালে, দেশজ চেতনাহীন দেশটাও এগিয়ে যায়নি আপন কক্ষপথে । দেশ এগিয়ে যাওয়ার শর্তে স্বদেশ বোধ যেমন জরুরী তেমনি এর শুরুটা হবে বোধ জাগানিয়া শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি রাষ্ট্রীয় দ্বায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে ।

জৈবিক চোখ থাকলেও বৌদ্ধিক চোখের অন্ধত্বে দেখা হয়ে ওঠেনি দ্রষ্টব্য। অতএব, বৌদ্ধিক চোখের ভাঁজ খোল "রাষ্ট্রীক ঠাকুর"।

বোধিবৃক্ষসম শহিদ বুদ্ধিজীবিদের শূণ্যতা পূরনে, আজকের এই বৌদ্ধিক সংকটে কান্ডারীর ভূমিকা পালনের রাজসিক প্রত্যয়ে তারুণ্যের পক্ষ থেকে আপনি হয়ে উঠুন একবিংশের ধাত্রী।

দোকান


আরও পড়ুন

Thursday, September 17, 2020

এবং সত্য কথা - এম ইকবাল।

মেসেঞ্জারঅবকসমোলজি



সত্য কথার বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে- তুমি কাউকে সবসময় খুশি রাখতে পারবে না যদি সে সত্যের অনুসন্ধানী না হয়।


আমাদের সমাজটাই যেহেতু মিথ্যা আর পঙ্কিলতায় ডুবে আছে তাই আমাদের সবার জীবনে মিথ্যা-ই প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে।

আমাদের সমাজ যে মিথ্যা, অনাচার, অন্যায় আর পঙ্কিলতায় ডুবে আছে চারপাশে তাকালে এটা যে কেউ বুঝতে পারে। তবুও আমরা সবাই মনে করি নিজে যা করছি ঠিকই তো করছি। সেটাকেই আমরা জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় ভেবে মেনে চলছি।

কোন এক সময়ে এগিয়ে যাওয়ার শর্তে পূজিবাদী দর্শনকে পৃথিবী গ্রহন করলেও তা আজ কিছু মানুষের স্বার্থ রক্ষার হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। শিল্প, প্রযুক্তি আর মুক্তবাজার অর্থনীতির বিকাশ হতে হতে আজ তা দানবে পরিনত হয়েছে। অল্প কিছু মানুষের হাতে চলে এসেছে পৃথিবীর অর্ধেক সম্পত্তি।

বলা হচ্ছে, পৃথিবীর ১ ভাগ মানুষের কাছে পৃথিবীর ৯৯ ভাগ সম্পত্তি চলে এসেছে। অন্যদিকে ৯৯ ভাগ মানুষের হাতে থাকে মোট সম্পত্তির ১ শতাংশ। আর এই ১ শতাংশের মধ্যে থেকে আমরা নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগীতায় কামড়া কামড়িতে ব্যস্ত। এদিকে আর্থিক মানদন্ডই সমাজের মুল মানদন্ড হয়ে উঠেছে। 

এই মানদন্ডে কে বড় কে ছোট হলাম এই হিসেব করতেই আমাদের জীবন কেটে যায়। একে অপরকে হেয় করতে, অন্যের উপর প্রভাব বিস্তার করতে প্রতিনিয়ত নিজেদের মধ্যে বিভেদ করে চলছি। এই বিভেদ করার কূটকৌশল ও শিক্ষানীতি সমাজে তারাই জারি রেখেছে, যাদের হাতে বেশিরভাগ সম্পত্তি বন্দি হয়ে আছে। একদিকে কাড়ি কাড়ি টাকা ঢালছে সমাজের চলমান দৃষ্টিভঙ্গি টিকিয়ে রাখতে আর অন্যদিকে শিক্ষাখাতে যথাযথ মান বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ করতে সরকারকে বাধা দিচ্ছে।

অথচ এই নীতি চলমান থাকলে পৃথিবীর ৯৯ ভাগ সম্পত্তিই অচিরেই হাতেগোনা কিছু পুজিপতিদের হাতে চলে যাওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। তারা চাইলেই এটা করতে পারে। ফলে ভূমিহীন মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকবে, ঋণগ্রস্থ মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকবে, কর্মহীন বেকারের সংখ্যা বাড়তে থাকবে, চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই বাড়তে থাকবে, সামাজিক বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করবে, পূজিপতিরা নতুন নতুন ফর্মূলা এনে দাড় করাবে মানুষের সামনে- মুখের সামনে মুলো ঝুলানোর মত, সর্বোপরি মানুষ কৃতদাসের চেয়েও মূল্যহীন হয়ে পড়বে। পূজিপতিদের দয়া, দান-খয়রাত আর ঋণকার্যক্রম হয়ে উঠবে সাধারণদের বাঁচার একমাত্র মাধ্যম।

একদিকে চলবে কিছু মানুষের বিলাসবহুল জীবনযাপন অপরদিকে দেশজুড়ে চলবে অসহায় মানুষের আর্তনাদ। এমতাবস্থায় বার বার দূর্ভিক্ষ, মহামারী হতেই থাকবে। এগুলোই মানব সৃষ্ট বা কৃত্রিম দূর্যোগ। অথচ পৃথিবীর তাবৎ রাষ্ট্রব্যবস্থা ব্যক্তির হাতে সম্পত্তি কুক্ষিগত হওয়ার এই পথ খোলা রেখেছে। এভাবে যতখুশি সম্পত্তি অর্জন করা বর্তমান ব্যবস্থায় বৈধ বলে বিবেচিত হচ্ছে।

কথাটাকে এভাবও বলা যেতে পারে, নিজ মেধা, শ্রম, যোগ্যতায় কোনো মানুষ যদি সারা পৃথিবীর সকল সম্পত্তির মালিক হয়ে যায়, আর বাকি সমস্ত মানুষ যদি ভুমিহীন, সম্পত্তিহীন, খাদ্যহীন, বস্ত্রহীন হয়ে যায়, এমনকি অসুস্থ হয়ে মারাও যায় তাতেও ভু-সম্পত্তির মালিককে দায়ী করা যাবে না। সে চাইলে তার সমস্ত সম্পত্তি অনাবাদী রাখতে পারে, তার সমস্ত অর্থ মাটির তলায় জমা করতে পারে, কোনো মানুষকেই তার সম্পত্তির ভাগ নাও দিতে পারে তবুও সে আইনত বৈধ।

পৃথিবীর বর্তমান ব্যবস্থায় তাকে দোষী বলার কোনো সুযোগ নেই। সত্যিকার অর্থেই আমরা এমন একটা ব্যবস্থার মধ্যে বাস করছি এবং এর জন্য অনেকটা আমরাই দায়ী। নিজের ঘাড়ে সমস্যার বোঝা না চাপলে এর তীব্রতা কেউ অনুভব করি না। যেন নিজে বাঁচলেই সব সমস্যা শেষ। চারপাশের সংকটকে নিজের সংকট হিসেবে ভাবতে চাই না তবে চারপাশে নিজের প্রভাব বিস্তার করতে চাই ঠিকই। আমাদের এই চরিত্রটাও চলমান ব্যবস্থার ফল। আমাদের চরিত্রটা এই চলমান ব্যবস্থার মতোই স্বার্থান্ধ, মিথ্যা আর অমানবিক।

আসলে মানুষের জন্য বর্তমান পৃথিবীর চলমান ব্যবস্থাটাই অবৈধ হয়ে পড়েছে। এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য দরকার নূতন ব্যবস্থা।

সমগ্র পৃথিবীর মানুষের জীবনের জন্য এত বড় নির্মম সত্য সামনে চলে আসলেও আমরা সত্যকে একপাশে ঠেলে ব্যক্তিস্বার্থকে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে জীবনকেই সত্য থেকে বহুদূরে ঠেলে দিয়েছি। তাই সত্যের প্রতি শ্রদ্ধা থাকলেও জীবনের সাথে সত্যের সম্পর্ক না থাকার জন্য সত্যকে ঠিকমতো চেনা হয় না, জানা হয় না, উপলব্ধি করা হয় না। তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোন কথা যদি আমার ফেবারে থাকে তবে তা আমরা সত্য বলে মেনে নেই, খুশি হই, আর ফেবারে না থাকলে তা মিথ্যা বলে ছুড়ে ফেলি, অখুশি হই।

তাই কাউকে খুশি করার উদ্দেশ্য নিয়ে সত্যের সাথে থাকা যায় না। সত্যের সাথে থাকতে হলে নির্মোহ হতে হয়। সত্যের অনুসন্ধান করতে হয় জীবন ও জগৎকে সঠিকভাবে চেনার জন্য, উপলব্ধি করার জন্য, চিন্তা, লক্ষ্য ও কর্মে জগতের সাথে জীবনের ঐক্যতা স্থাপনের জন্য, প্রকৃতির সকল উপাদানের সাথে ভারসাম্য বজায় রেখে ভালো থাকার জন্যে, নিজে ভালো থেকে সবাইকে ভালো রাখার জন্য।

আপডেট পেতে পেইজএ লাইক দিয়ে সাথে থাকুন।



Friday, August 21, 2020

মোহাম্মদ মমিনের কবিতা গুচ্ছ || ভোরের বিদ্রোহী ঠোঁট।

কবি চেয়ে দেখেন- ভালোবাসার অভাবে এখনো অপূর্ণ মানুষ কিংবা হিংসার খেয়ালে ইতিহাস আজ অনেক ছোট। কবি সেকেলে হয়ে ওঠা জাতীয়তাবাদের বাইরে গিয়ে খোঁজতে চেয়েছেন নিজেকে, পেতে চেয়েছেন নিজের ও সামগ্রিকতার মুক্তি। নিঃশ্বাসে আজ মৃত্যুর গন্ধ। তাই কবি দেবতার পায়ে চুমু, কৃষ্ণচূড়ার ঠোঁটে চুমো দিয়ে নিজের ইচ্ছাকে ব্যক্ত করেন; পেতে চান মুক্তি, শান্তি, ভালোবাসা।

উৎসর্গ    : ভূবন মুন্সী কে।
প্রকাশক : মেসেঞ্জার অব কসমোলজি।
প্রকাশ    : আগস্ট, ২০২০ খ্রিস্টাব্দ।
স্বত্ব         : মেসেঞ্জার অব কসমোলজি। 

 ভোরের বিদ্রোহী ঠোঁট

messenger of cosmology

 

সময়ের দাবি

আমাকে একটু শান্তি দাও,
দেবতার পায়ে চুমু, বলছি
আমাকে একটু শান্তি দাও।

নিঃশ্বাসে আজ মৃত্যুর গন্ধ।

অসভ্য সেই মানুষের মুখোশ
খুলে দাও তুমি
আমাকে একটু শান্তি দাও।

স্বপ্নের ঘরে ভগ্ন স্বপ্ন।

মেধা শূন্য মানচিত্র
ভেঙে দাও অচলতা
আমাকে একটু শান্তি দাও।

আকালে আজ জ্বলছে পৃথিবী,
আমাকে একটু জায়গা দাও।
দেবতার পায়ে চুমু, বলছি
আমাকে একটু শান্তি দাও।

জাতীয়তাবাদ

আজকের এই রজনীতে তুমি আমি একাকার
নবজন্ম হলো পৃথিবীর।

তবুও কি প্রয়োজন আছে
বর্ডার কিংবা কাটাতার?


আরও পড়ুন - একবিংশ শতাব্দীর দুই দশক 


২০২০

সময়ের কসম
পৃথিবী আজ অসহায়,
অসহায় আজ
যাঁরা প্রকৃত মানুষ।

রাজশ্রী

মাঝে মাঝে কলিজা পোড়ার গন্ধ পাই
সিগারেটের ধোঁয়া এখন অসহ্য লাগে

জেতার অভ্যাস ছেড়েছি সেই কবে
তাই হেরে যাবার ভয় তোমার নেই

মোহ আর মমতা জড়ানো আজ
জীবন কী কঠিন রাজশ্রী!

জাতক থেকে জন্মধাত্রী সবারই কলিজা
পুড়ছে আজ।
রাজশ্রী, তোমার কী কাজ?

আরও পড়ুন - সরকার জৈব ক্ষমতা দ্বারা জনগনকে নিয়ন্ত্রণ করে।

শুভ্রতা

ভোর বেলার বিদ্রোহী ঠোঁট
দুপুরের কড়া রোদে
সিগারেটের ধোঁয়ায় কালো
সমাপ্তি হলো জীবনের
এপাড় ওপাড়।
তবুও কি বাঁশি বাজবে
গাইবে গান পাখি নতুন সুরে
একাট্টা হয়ে সাজাবে সমাজ
পৃথিবী নতুন?
তুমি কী গাইবে ভোরের পাখি?

অভিন্ন ফটোগ্রাফ

চলোনা একে অপরের কান্না মুছে দেই
কৃষ্ণচুরার ঠোঁটে চুমো দিয়ে বলি
পৃথিবীটা আমাদের

চলোনা একই সুরে গাই গান
ভাঙা সীমান্ত প্রাচীরে মুক্ত করি পাখি
একতারাতে একতাল দেই দুজনার তর্জনীতে
দুটি তুলিতে আঁকি একটি ফটোগ্রাফ

চলোনা সামাজিক মানুষ হওয়ায় প্রত্যয়ে
কিছুটা পথ হাঁটি
দেখি আগামীটাকে একান্ত নিজের চোখে। 

আরও পড়ুন - বেকারত্ব ও পরিবর্তনীয় ভবিষ্যতের হাতছানি।

ভালোবাসা পেলে বেঁচে থাকি

পানি তুমি কোথায় একটু চোখে আসো
ভালোবাসা তুমি কোথায় একটু কাছে আসো।

ব্যক্তিক চাওয়া পাওয়ার কাছে
বৌদ্ধিক চোখ গুলো এই আকালে ঘুমিয়ে আছে
মানবতা বলে কিছু নেই, মর্যাদা বলে কিছু নেই

হিংসার খেয়ালে ইতিহাস আজ অনেক ছোট।

এক থেকে একাধিক ভাবাটাই ভুলে গেছি আমরা
বুকের খাপটা খুলে একবারও দেখিনা আজ
অথচ বুকের ক্ষত নিয়ে মাঝে মাঝে চমকে উঠি

চেয়ে দেখি

ভালোবাসার অভাবে এখনো অপূর্ণ মানুষ।

অগোছালো জীবন যাপন

দিন শেষে স্বার্থের লেজ আর বেহায়া
উন্মাদনা, আত্মহত্যার চেয়ে জঘন্য আমি বারবার
বেঁচে থাকি।
নিজের হাতে তুলে নিয়েছি ধ্বংসের মরচে পড়া অস্ত্র,
প্রতিনিয়ত মৃত্যু হয় আমার চেতনার অভাবে।

জাল্লাদি চোখে লালসার দৃষ্টি আঁচড় করে আমার গায়ে, সময়ের ব্যবধানে যুদ্ধে যাবার ছেলেটা হারিয়েছে
তার মনুষ্যত্ব।
নিজের কামনার দৃষ্টি মায়ের উপর, জন্মভুমি আজ অসহায়, অসহায় আজ কিছু নটির দালালের কাছে।

একাত্তর থেকে আজ-অব্দি পুরনো ঘেঁউ ঘেঁউ,
সন্ধ্যা হলে নেমে আসে অন্ধকার।
কোথায় পাবো মুক্তি, এই অগোছালো জীবন যাপনে
কে দেবে আমায় মুক্তি আমার?

 

আরও পড়ুন

ভূবন মুন্সীর কবিতা গুচ্ছ 

লেখা পাঠাতে যোগাযোগ করুনঃ 

মেসেঞ্জার অব কসমোলজি পেইজ এ 

মেইল করুনঃ 

shimul2016.bsm@gmail.com

Tuesday, August 18, 2020

মনরে কৃষি কাজ জানো না - মোঃ শামীম রেজা।



   

মোঃ শামীম রেজা
 

মনরে কৃষি কাজ জানো না


প্রাচীনকালে ভারতবর্ষের শিক্ষা পদ্ধতি ছিল গুরুগৃহ কেন্দ্রীক। শিক্ষার্থীরা গুরুর আশ্রমে দীর্ঘদিন থাকতো এবং গুরু শিক্ষার্থীদের জীবন-যাপন থেকে শুরু করে প্রচলিত বিশেষায়িত বিষয় সমুহের উপর অধ্যায়ন করাতেন আগ্রহ এবং মেধা অনুসারে। ঔ সময়ের শিক্ষার ভিতর কৃষিকাজ হাতে কলমে শিক্ষা করা ছিল সব শিক্ষার্থীর জন্য অক্ষরজ্ঞান অর্জন করার মতই মৌলিক এবং বাধ্যতামূলক বিষয়। অক্ষর জ্ঞান প্রদানের সাথে সাথে তাদের প্রত্যেককেই আলাদা আলাদা টুকরো জমি প্রদান করা হত এবং সেই জমিতে গুরুর নির্দেশ মত আবাদ করে ফসল ফলাতে হত।

এই শিক্ষা পদ্ধতির দরুন শিক্ষার্থীরা শিক্ষার প্রথম পর্যায়েই নিজ দেশের মাটি-জল-আবহাওয়া সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হত এবং  অধীত বিষয়ের সাথে খুব সহজে তার দেশের মাটির সংযোগ স্থাপন এবং প্রয়োগ করতে পারতো। ভারতবর্ষে অপ্রায়োগিক/অপ্রয়োজনীয় জ্ঞানের চর্চা কখনো ছিল না। এর ফলে পান্ডিত্যের অসার -অহমিকা তৈরি হওয়ারও কোন সুযোগ থাকতো না বরং অর্জিত জ্ঞান কত বেশি মানুষের কল্যাণে কাজে লাগানো যায় সেটাই ছিল শিক্ষা অর্জনের মৌলিক উদ্দেশ্যগত দিক। খুব অবাক করা বিষয় হলো এদেশের অক্ষরজ্ঞানহীন জনসমাজের ভিতর এখনও বিলুপ্ত প্রায় এরকম বিশ্বাস টিকে আছে যে এদেশের শিক্ষিত তরুণ সমাজ তাদের অন্ধকার ভাগ্যাকাশে কোন একদিন সূর্যের মত জ্বলে উঠবে। রাতের অন্ধকারে নিজের শেষ সম্বলটুকু ও বিলিয়ে দিয়ে কেউ কেউ দুঃসাহসে বলে ওঠে "আমরা ওদের প্রদ্বীপের তেল জোগাবো ওরা আমাদের আলো জোগাবে"।

শিক্ষা পদ্ধতির ধারাবাহিক ক্রম-বিবর্তন, সমাজ, রাষ্ট্র,বিজ্ঞান ইত্যাদি পরিবর্তন মারফত কালের ফেরে বর্তমানে যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে তাতে করে বাংলাদেশের মত দীর্ঘ উপনিবেশ শাসিত দেশের ছেলেমেয়েরা সেই অর্থে নিজের আগ্রহই আবিষ্কার করতে পারে না, করতে পারলেও সে বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখা করার পথ বিভিন্ন কারণে সুগম্য হয় না, পড়ালেখা করতে পারলেও অধীত বিষয়ের জ্ঞান প্রয়োগে এ দেশের মাটি খুজে পায়না।

প্রসঙ্গান্তরে একটু ভিন্নবিষয়ের অবতারনা করতে হচ্ছে...

বাংলাদেশে ষাটের দশকে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের জন্য ঘর থেকে বের হয়ে আসাদের প্রায় সবাই ছিল তৎকালিন ক্ষয়িষ্ণু সামন্ত জমিদার পরিবার থেকে উঠে আসা। ফলে বিপ্লব প্রাসঙ্গিক প্রয়োজনীয়তা তাদের বোধে যতটুকু না ছিল বাস্তবিক তার চাইতে অনেক বেশি ছিল সোভিয়েত-চীন-ভিয়েতনাম-কিউবা র তাত্ত্বিক প্রতিফলন।

সামন্ত পরিবারের এই বিপ্লবীরা পারিবারিক ভাবে স্বচ্ছল থাকার কারণে শিক্ষা-দীক্ষা, রাজনীতি এবং অর্থনীতির ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসছে একই সাথে পুজিঁর চরিত্র্য এবং মালিকানার পরিবর্তন আসছে সেটাও বুঝতে পেরেছিলেন। ক্ষমতা এবং ঐতিহ্যের পাড়ায় তারা সর্বহারার স্লোগানের ভিতর নিজেদের ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছিলেন। খুব সংকীর্নদৃষ্টিতে এমনটাই দেখা যায় অন্তত বর্তমান পরিস্থিতি দিয়ে বিচার করতে গেলে। তবে সেটা ছিল এক ঐতিহাসিক পরিস্থিতি যা ঘটা ছিল অনিবার্য।


(আরও পড়ুন - শ্রী রীতির কবিতা গুচ্ছ)

 
এসব কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের কথায় বাংলাদেশের প্রান্তিক মানুষ স্বাধীনতার পরও ঘর থেকে বের হয়ে গেছে সর্বহারাদের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য। তারা মার্ক্স, লেলিন, মাও সে তুং এর নাম মুখস্থ করতে শিখেছিল। তারা আমেরিকা, রাশিয়া, চীনের গল্প রূপকথার মত বিভোর হয়ে শুনতে শিখেছিল সে সময়।

৯০ এর দশকে এসে বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার ধরনটা পাল্টে যেতে থাকে। সচেতনভাবে দেশে বিরাজনৈতিক চেতনাকে প্রতিষ্ঠা করার আয়োজন চলে বিভিন্ন মাধ্যমে। যার ফলাফল একবিংশ শতকে এসে বাংলাদেশে তরুণদের ভিতর রাজনৈতিক এনার্কির বর্ধিত সংক্রমন।

কমিউনিস্ট নেতাদের বিপ্লবী আদর্শ এদেশের মাটি-জল-আবহাওয়া পেল না ফলে আদর্শিক শক্তির বিকৃত প্রকাশ ঘটার ইতিহাস আমাদের সবার জানা। পার্টি গুলোর ভিতর বিভাজন, শ্রেণী শত্রু খতমের নামে খুন-খারাপি বাড়তে থাকায় একসময় এদেশের মানুষের কাছে তারা গনবিচ্ছিন্ন সন্ত্রাসী দল হিসেবে পরিচিতি পেল।

শিক্ষার সীমাবদ্ধতা হলো তা জ্ঞাত অর্থে সার্বজনীন হলেও প্রয়োগ অর্থে দেশ-কাল-পাত্র শর্ত মুক্ত হতে পারে না। এই শর্তগত কারণেই শিক্ষা পদ্ধতির কাঠামো এবং বিষয় দেশ বা কালাত্তীর্ণ নয় বরং পুরোটা দেশজ ও কালিক হতে প্রয়োগগত কারণেই বাধ্য।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট বিপ্লবী বা উদার গণতান্ত্রিক ধোঁয়া তোলা শিক্ষিত সমাজের নেতারা এদেশের জনগনের উন্নয়নের জায়গাটা আদতে কোথায় তার শিকড়টাই অনুসন্ধান করার তাগিদ অনুভব করেনি বা করতে চাননি। (চাইলে নদী গুলোর এই অবস্থা হত না, বন জঙ্গল ধ্বংস করে প্রকৃতি পরিবেশের বিপর্যয় ঘটাতো না, এ দেশের কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা বিদেশী কোম্পানি গুলোর নিকট জীম্মি হয়ে যেত না।)

এদেশের গ্রামীণ সমাজ ব্যবস্থায় চলমান বিচার ব্যবস্থা, উৎপাদন-বন্টন তথা সাংস্কৃতিক বোধ সমাজকে পরিচালনা করার জন্য এবং সমাজ প্রগতিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য পরিবর্তিত বৈশ্বিক ব্যবস্থার সাথে তা সমাজ দর্শন এবং রাজনৈতিক দর্শনের নিরিখে বিচার-প্রয়োগ করার কোন দায়ই কেউ নেয়নি।

যারা এসব একটু আধটু বোঝার চেষ্টা করে এরা রাজনীতি বিমূখ দায়হীন শুকনো জ্ঞানের হম্বি-তম্বি করে বেড়ানো বুদ্ধিজীবি গোছের আর যারা এসব বোঝেনা কিন্তু এটা বোঝে যে সমাজে ক্ষমতার উপযোগিতা কতটুকু আর সেই ক্ষমতার কেন্দ্র রাজনীতি দ্বারা আচ্ছাদিত। সুতরাং তাদের যেতে হয় ক্ষমতার চর্চা করতে রাজনীতিতে। পুজিঁর সাথে ক্ষমতার সম্পর্ক যত সমান্তরাল হতে থাকে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হওয়ার সাথে সাথে পুজিঁও কেন্দ্রীভূত হতে থাকে।

এদেশের জনগন কোন রাজনৈতিক নেতাকে বিশ্বাস করতে চাই না এমনকি শিক্ষিত শ্রেণী কেও তারা বিশ্বাস এবং সম্মান কোনটাই করে না। শহুরে বেশিরভাগ শিক্ষিত মানুষগুলো যে ধড়িবাজ তা তারা এখন বুঝে ফেলেছে। এই অবিশ্বাস আর হরিলুটের যুগে দু-একজন যে কর্ম-যোগী, জ্ঞান-যোগী নেই তা সর্বতোভাবে বলা যায় না।

এদেশের জন্য সত্যি সত্যি কিছু করতে হলে এদেশের নদী, মাটি, ফসল, বীজ, বন, পাহাড় বুঝতে হবে আগে। এসব বুঝতে হলে এসবের সাথে যাদের নাড়ীর সম্পর্ক তাদের বুঝতে হবে। দুর থেকে বই পড়ে  বোঝার ফলাফল পেয়ে আসছে এদেশ।  মাঠে নামলে হয়তো চেয়ারে বসে চুরি করার ইচ্ছেটা আর নাও থাকতে পারে। চোর বা রাজনীতিবিদ বা বিপ্লবী প্রথমে ভিন্ন হয় চেতনাবোধে তারপরে ভিন্ন বা সমগোত্রীয় হয় চেতনা  প্রয়োগে।

শুভ বোধের উন্মেষ ঘটুক এবং উন্মেষিত বোধ যথাযথ প্রয়োগের দিশা/কাঠামো পাক।

 আরও পড়ুন: শামীম রেজার...

সংগ্রামটা প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে 

মোহাম্মদ ইব্রাহিম খলিলের...

দেশীয় অর্থনীতি বনাম যোগান বিধি


 লেখা পাঠাতে যোগাযোগ করুনঃ

মেসেঞ্জার অব কসমোলজি পেইজ

মোঃ শামীম রেজা

মোঃ মাসুদ মিয়া 

শ্রী রীতি 

ভূবন মুন্সী

মেইল করুনঃ 

shimul2016.bsm@gmail.com

Monday, August 17, 2020

বৈরিতা নয়, চাই প্রকৃতি ও মানুষের সখ্যতা - একেএম খাদেমুল বাসার।



    বৈরিতা নয়, চাই প্রকৃতি ও মানুষের সখ্যতা

 লেখক


যে শহর সোডিয়াম নিয়নের আলোয় আলোকিত হয় সে শহর কি করে তার মুগ্ধতা  ছড়াতে পারবে? ইট-পাথরের  শহর কখনোই প্রকৃতি দিয়ে তার মুগ্ধতা ছড়াতে পারেনি, আগামীতেও পারবে কি না সন্দেহ রয়েছে। কৃত্রিমতা দিয়ে আর কতটুকুই বা করা যেতে পারে। সেজন্য আমি সব সময় গ্রাম্য এলাকা বা প্রকৃতি পছন্দ করি। সুনসান নীরবতা আর পাখির কোলাহলে মুখর এক অপার্থিব সুখ। দিনের আলো কমে যাবার সাথে সাথে আরেক সৌন্দর্য এসে হাজির। যেখানে জোৎস্নার সাথে আবার জোনাকির মিতালী। আর যদি প্রকৃতির মাঝ দিয়ে নদী বয়ে যায় তাহলে তো পুরাই সোনায় সোহাগা একটা ব্যাপার। নদীতে ঢেউয়ের শব্দ  বাড়তিমাত্রা যোগ করে।


(রুটার ব্রিগম্যানের এটা পরিবর্তনের সময়)


শহুরে জীবন আর গ্রামীণ জীবনের যে বিস্তর ফারাক তা কিন্তু চাইলে পুরোপুরি না হোক অনেকাংশে পরিবর্তন করা যেতে পারে। এতো এতো বিশাল অট্টালিকার ভিড়ে একটু ফাঁকা জায়গা পেলেই মানুষের মন আনন্দে নেচে উঠে আরেকটা অট্টালিকা তৈরির চিন্তায়। এই চিন্তাটা যদি একটু পরিবর্তন করা যেত তাহলে এই শহুরে জীবনে প্রকৃতির ছোঁয়া পাওয়া যেত। এ শহর যেমন মানুষদের রোবট বানিয়ে রেখেছে ঠিক সমানতালে অর্থ-বিত্তের এই ভয়ডরহীন খেলায়ও মাতিয়ে রেখেছে। যে খেলায় একেকটা মানুষ নিজেই তার প্রতিযোগী। এসব ভয়ডরহীন খেলায়  বলির শিকার হচ্ছে প্রকৃতিই। যে প্রকৃতি আমাদের জলবায়ু থেকে শুরু করে নানানকাজে  অবিরত সহায়তা করেই যায় তাকেই আমরা দূরে সরিয়ে দিচ্ছি অর্থ-বিত্তের নেশায় বুঁদ হয়ে।

আমরা চাইলে পারি মানুষের সাথে প্রকৃতির আগের সে শখ্যতা ফিরিয়ে আনতে। ইট-পাথরের এ শহরে দরকার শুধু একটু চিন্তাধারার পরিবর্তন। প্রতিটা মানুষ যদি তার নিজের মতো করে প্রকৃতিকে ভালবেসে তাদের নীড়ে ঠাঁই করে দেয় তাহলে অনায়াসেই সম্ভব এই অসাধ্যকে সাধন করা। মানুষ নাকি তার স্বপ্নের সমান বড়। যে শহরে বিভিন্ন দূষণে শ্বাস নিতেই এখন কষ্টকর হয়ে গেছে  সে শহরে মানুষ কতবড় স্বপ্ন দেখে তা আসলে আমার বোধোগম্য নেই। আমার কাছে এ শহরের মানুষের স্বপ্নগুলোকে আঁষাঢে বৃষ্টির মতো মনে হয়। একজনের থেকে এক ধাপ এগিয়ে গেলেই যেন এরা খুশি। প্রকৃতির সাথে যদি সখ্যতাই গড়ে না উঠে তাহলে এসব করে কি লাভ?


(আরও পড়ুনঃ শ্রী রীতির কবিতা) 

 
শহুরের কোটি কোটি মানুষের মধ্যেও কিছু ভিন্ন ধাঁচের মানুষ রয়েছে যাদের মাধ্যমেই এই শহর প্রকৃতির ছোঁয়া পায়। তারাই হাটিঁ হাঁটি পা পা করে প্রকৃতিকে তাদের নিজের মতো করে গড়ে তুলছে। মনে হয় একজন মা যেন তার সন্তানকে যেন কোলে পিঠে মানুষ করছে। তাদের দেখেই আরো কিছু মানুষ যোগ হচ্ছে। শহুরে জীবনে তারা তাদের ঘরকে প্রকৃতির মাধ্যমে যেভাবে সাজিয়েছে তা আসলেই দেখার মতো।

আরও পড়ুনঃ পৃথিবী কোন পথে?

একটা বিল্ডিংয়ের ছাদকে অযাচিতভাবে ফেলে না রেখে সেখানে আপন মমতায় বৃক্ষরোপন করে পাখিদের অভয়ারণ্য বানানোর যে ক্ষমতা সেটা আসলেই সবাই পারেনা। শহুরে কিছু মানুষের মনে এই আইডিয়া ঠিকই বের হয়েছে। তারাই আবার ছাদেই বানিয়েছে কৃত্রিম পুকুর, খামার আরো কতো কি। যা আসলেই সেই মানুষটিকে আর বাকি আট-দশ থেকে এগিয়ে রাখবে। এভাবেই শহুরে মানুষগুলো প্রকৃতির সাথে তাদের সখ্যতা গড়ে তুলে।

অন্যদিকে গ্রামীণ জীবনে তো প্রকৃতির ছোয়া লেগেই আছে। এই জীবনে যারা বেড়ে ওঠে তাদেরকেই আমার আপন লাগে। নগরায়নের কোন ছোঁয়া নেই। প্রকৃতির সাথে মানুষের যে সখ্যতা তা সত্যিই মনোমুগ্ধকর। 
করোনাকালীন সময়ে মানুষ বুঝেছে প্রকৃতির সাথে কতোটা অবিচার করেছে মানবজাতি। প্রকৃতিকে বিলীন করে তারা যে আকাশকুসুম স্বপ্ন দেখেছিল তা যে আসল স্বপ্ন নয় সেটাও তারা বুঝেছে। অর্থ- বিত্ত দিয়েও যে প্রকৃতির অভাব পূরণ করা যায়না মানবজাতির কাছে সেটা এখন স্বচ্ছ পানির মতো পরিষ্কার। রোবট বনে যাওয়া মানুষ গুলো হাতে দিনের পুরোটাভাগ  সময় পেয়েও কেমন যেন পরিশ্রান্ত। এই সময়েও যে তাদের মনে বিদ্বেষের সৃষ্টি হয়েছে। ছোট একটা ভাইরাস কেন শুধু মানুষকেই কষ্ট দিচ্ছে , কেন অন্যকোন প্রাণীকূল কষ্ট পাচ্ছেনা সেটা নিয়েও তাদের বিস্তর সমালোচনা। প্রকৃতির সাথে যে পরিমাণ অবিচার করা হয়েছে সৃষ্টিকর্তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে মানবজাতিকে বুঝিয়ে দিয়েছে।

(আরও পড়ুনঃ বৈশ্বিক সংকট ও সমাধান ভাবনা)


এখনই সময় মানবজাতি আর প্রকৃতির প্রেমে জোড়া লাগানোর। এ সম্পর্ক গড়ে উঠলে প্রকৃতি আবার  নবরূপে সেজে উঠতে পারবে। আর মানবজাতি পাবে তার পূর্বের মতো স্বাভাবিক জীবন।

লেখা পাঠাতে যোগাযোগ করুনঃ

মেসেঞ্জার অব কসমোলজি পেইজ

মেইল - shimul2016.bsm@gmail.com

Tuesday, August 11, 2020

আমাদের স্যার এখন টিচার হয়ে গেছে - মনীষা মোহাম্মদ।

   

মেসেঞ্জার অব কসমোলজি

আমাদের স্যার এখন টিচার হয়ে গেছে

তখন প্রাইমারী। হেডস্যার কাকার সাথে দেখা করতে এসেছেন। খুব সম্ভবত স্কুলের কোন মিটিং প্রসঙ্গে। আরও দুজন মুরুব্বি পাশেই বসা। আলোচনা চলছে। স্যার এসেছে শুনে আমি দেখা করতে গেলাম। যদিও তখন স্যারদের সামনে পড়া মানে নিজে একটা ভেড়া হয়ে যাওয়া। রাস্তায় স্যারকে দেখে সাইকেল থেকে তাড়াতাড়ি নামতে গিয়ে সাইকেল পাগাড়ে গেলে হাতে পায়ে ব্যাথা, সাথে স্যারের "ওই গাধা তোরে নামতে কইছে ক্যাডা?" বলে বকাঝকা। আর সাইকেল থেকে না নেমে সালাম দিলেও " কিরে বেক্কল, সাইকেলে থেকেই সালাম দেয়?" বলে বকাঝকা খেতেই হতো। গাধা কিংবা বেক্কল সেজে মাথা নিচু রাখা ছাড়া উপায় থাকতো না। তখনকার স্যারেরা এখনকার মতোন টিচার ছিলেন না। কন্ঠ উঁচু করে বলা যেতো না, টিচার আবার বুঝান। না বুঝলে বোকা বোকা চেহারা নিয়ে স্যারের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। স্যার কাছে এসে বলতেন, কীরে বোকার দল, এখনো বুঝস নাই? সেই সব দিন গুলো অন্য রকম ছিলো। স্যারদের কথা গুলো ছিলো পবিত্র বাক্যের মতোন। এখনকার টিচারদের মতোন, স্যারদের গাঁয়ে প্রচলিত বড় ভাই, বড় ভাই গন্ধ ছিলোনা। বেশি কিছু ছিলো। অক্ষর না চেনা মা স্যারদের সম্পর্কে বলতেন- বাপ মা বানায় ভূত, স্যারে বানায় পুত। একথা শুনেছি স্কুলে যাবার আগেই। কথাটির মর্ম তখনো বুঝি না। কিন্তু কথাটা মন্ত্র বাক্য হয়ে মাথায় সেঁটে থাকতো। এখন যে কী দিন আইলো!

যা বলছিলাম। স্যার কাকার সাথে কথা বলছিলেন। আমি কাকার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। ঠিক বুঝতে পারছিলাম না, সালাম দেবোকি দেবোনা। আলাপ কালে পাশ থেকে কথা বলা ঠিক নয়। পাশে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়। আলাপের মধ্য বিরতিতে কথা শুরু করতে হয়। বাবা শিখিয়েছেন। কিন্তু স্যারকে দেখে প্রথমেই সালাম দিতে হবে এটাও বলেছিলেন। পরে বুঝেছি সেদিন যে অবস্থায় ছিলাম তার নাম উভয় সংকট। যা হোক, আমি ছোট করে সালাম দিয়ে দিলাম। কন্ঠ স্বর হয়তো কাকার কান পর্যন্তই পোঁছেছিলো। দাঁড়িয়ে আছি। একটু পর কথা থামিয়ে স্যার বললেন, এই শিখাইছি? সালাম দেওয়াও ভুলে গেছস? উত্তর করার শক্তি সে সময়ের কোন ছাত্ররই নেই। বোকা হয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলাম। টেকনিকটা কাজে লেগেছিলো সেদিন। কাকা পক্ষ নিয়ে বললেন- স্যার, ছোটতো, ঠিক বুঝতে পারেনি। তবে আস্তে করে সালাম দিয়েছে। কাকার কল্যাণে শেষ রক্ষা হলো সেদিন।

হেডস্যার মাঝে মাঝেই একটি গান বলতেন, এই দিন দিন নয় আরো দিন আছে, এই দিনেরে নিয়ে যাবো সে দিনেরও কাছে। পুরোটা মনে পড়ছেনা। খুব ভালো লাগতো স্যারের কন্ঠে। নিহিত অর্থ তখোন জানতামনা। এখনো ঠিক জানিনা। তবে বুঝি দিনকে এগিয়ে নিতে হয়। নইলে দিন ব্যাকডেটেড হয়ে যায়। ডেটএক্সপায়ার্ড।

দীর্ঘদিন হলো স্যারের সাথে দেখা নাই। দেখা হলে এবার গাধা কিংবা বোকা নয়, অপরাধী হয়ে মাথা নিচু করে রাখতে হবে। দিনকে আমরা এগিয়ে নিতে পারিনি। বরং স্যারদের যে দিন ছিলো তাকে এলোমেলো করে দিয়েছি। নষ্ট করে দিয়েছি ছাত্র শিক্ষকের পবিত্র সম্পর্ক। মোনাফেকের মতোন মুখে মুখে দিন এগিয়ে নেবার শিক্ষা গ্রহণ করেছি। দিনকে এগিয়ে না নিয়ে গিয়ে আমরা বরং স্থবির করে দিয়েছি। স্যারের পবিত্র শিক্ষাকে কলঙ্কিত করেছি।

দিন কেমন করে বদলে গেলো। চোখের সামনেই সব নষ্ট হয়ে গেলো। পুরাদমে শিক্ষাকে বাণিজ্যিকীকরণ করা হলো। নৈতিকতাকে ডাস্টার দিয়ে মুছে দেওয়া হলো। বয়সের ভারে স্যার এখন হয়তো দেশ দুনিয়ার সব খবর জানেন না। স্যার হয়তো জানেন না তাঁর ছাত্ররা পেয়েছে পশুর আকৃতি। মানুষ হয়ে ওঠেনি। জানলে স্যার কী বসে বসে কাঁদবেন? স্যার কী ফ্যাল ফ্যাল করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকবেন? আমি যদি বলি, স্যার, আপনারা এখন তথাকথিত বড় ভাই হয়ে গেছেন; স্যার কী আমার কানমলা দিবেন নাকি কোন জন্তু ভেবে চুপচাপ তাকিয়ে থাকবেন?

তখন আমি প্রাইমারী, আজ পিতা। তখন আমার মা অক্ষর চিনতো না, এখন বাবুর মা এম এ। তখন বাবা মেট্রিক, আজ আমি এম এস সি। দিন কত ভাবে বদলে গেছে! শুধু এগিয়ে যায়নি। এখনকার মায়েরা স্কুলে যাবার আগে কোন মন্ত্র বাক্য শেখান? এখনকার টিচারেরা কোন বাক্যকে জীবনের মন্ত্র ভাবেন?

সেই দিন গত হয়েছে। আজ সব কিছুই বাণিজ্যিক জলে ভেসে গেছে। পিতা মাতা, শিক্ষক শিক্ষিকা, মুরুব্বিগন সবাই বাণিজ্যিক জলে হাল ধরেছেন। সেদিনের সেই স্যারদের মুখোমুখি হলে আজ বোবা হয়ে ছাড়া ভিন্ন কোন উপায় নেই। তাঁরা জীবনাচার দিয়েই আমাদের মানুষ করতে চেয়েছিলেন। আমরা হয়ে গেছি পশু। আমাদের অনুজরা দ্রুত বর্ধনশীল পশু। পতন ফেরাবার  কেউ কী নেই?

মহান স্রষ্টা এপাড়ে ওপাড়ে স্যারদের দিন সুমহান মর্যাদা।


১২.০৮.২০২০



লেখা পাঠাতে যোগাযোগ করুনঃ

মেসেঞ্জার অব কসমোলজি পেইজ এ 

Monday, August 10, 2020

আজ বৃষ্টি হোক - আলী রীয়াজ।

 

কবির প্রত্যাশা আজ বৃষ্টি হোক। এই অস্থির সময়, কলঙ্ক কালিমা সব ধুয়ে যাক। পৃথিবীর গভীরতর অসুখে, পাথরের মতোন এই পাষাণ কালে – মমতার প্লাবন আসুক। নিপুণ কৌশলে, তুমুল তেজে সব কিছুকে পুড়িয়ে  শুদ্ধ করা যায়। সবই তো দাহ্য বস্তু। কে জ্বালাবে আগুন- এই প্রতীক্ষা শুধু। 

 

প্রকাশক : মেসেঞ্জার অব কসমোলজি।

প্রকাশ    : আগস্ট, ২০২০ খ্রিস্টাব্দ। 

                

   .            আজ বৃষ্টি হোক - আলী রীয়াজ

ali riaz sir

 

 
 

আজ বৃষ্টি হোক
 
আজ আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামুক, 
মাটি ফুঁড়ে উঠুক বৃক্ষের সম্ভাবনা, 
লতাগুল্মগুলো ধুয়ে মুছে সবুজ হয়ে তাকাক আকাশে; 
আজ আকাশ ভেঙে নামুক জলের ধারা| 
গ্রীষ্মের আগুন নিভিয়ে দিয়ে 
সন্তানহারা মায়ের অশ্রুধারার মতো 
মমতার প্লাবন আসুক,
আনন্দের ঝর্ণাধারার মতো নামুক বৃষ্টি; 
বৃষ্টি ধুয়ে দিক - 
জনপদ, অস্থির সময়, অনিশ্চিত দিনরাত্রি| 
আজ আকাশ ভেঙে নামুক করুণার ধারা| 
এই বৃষ্টিতে সবাই নামুক উঠোনে, পথে 
কলুষের কালিমা মুছুক 
মৃত্যুর ভীতি হোক অপসৃত
আলিঙ্গনে বদ্ধ হোক মানুষেরা| 
আজ আকাশ ভেঙে নামুক স্বপ্ন,
দুঃসময় দূর হোক
শিশুরা মাতুক কলহাস্যে 
কিশোরেরা জমে থাকা জলে ব্যস্ত হোক 
ক্রীড়ায়, কৌতুকে; 
সলজ্জ্ব তরুণী খুঁজুক প্রিয়জন,
তরুণের চোখের তারায় জ্বলুক স্বপ্নের রেখা, 
আজ আকাশ ভেঙে নামুক ভালোবাসার জলধারা, 
বৃষ্টি হোক - আজ বৃষ্টি হোক| 


২০ জুলাই ২০২০ খ্রিস্টাব্দ  

 
 
কোথাও কি বৃষ্টি হচ্ছে?
 
কোথাও কি বৃষ্টি হচ্ছে? 
আকাশ ভেঙে, বিস্তৃত জনপদকে ধুয়ে ফেলে 
এই যে শহর তার প্রতিটি ধুলোকণা স্পর্শ করে 
মাঠের পর মাঠ পেরিয়ে যাচ্ছে এলোমেলো বৃষ্টির বাতাস| 
আমাদের যতটা কালিমা ছিল 
তার সবটুকু মুছে দিতে
কোথাও কি বৃষ্টি হচ্ছে?
ব্যস্ততার, জীবনের, জীবিকার অন্ধ বৃত্তে 
আমাদের হয়নি দেখা এই যে প্রকৃতি 
তার কাছে কতটুকু ঋণী, 
পৃথিবীর গভীর অসুখ যখন 
যখন আমরা সবাই একাকী, দূরত্বের কুহকে বন্দী 
তখন কি আকাশ ভেঙে নামছে জলের ধারা? 
এই যে  আকাশ আমি ভাগ করি সকলের সাথে 
নিঃশ্বাসে ভাগ করি আমাদের প্রাণ 
সেখানে যতটা কালিমা ছিলো 
হিংসা ছিল, বিদ্বেষের বিষ ছিল 
সবটুকু ধুয়ে যাবে? 
এই মৃত্যু-সময় কি ধুয়ে যাবে? 
একদিন, কোনো এক বৃষ্টি সকালে 
আমরাও হাতে হাত হেটে যাবো, 
তখনও বৃষ্টি হবে অপরিচিত কোনো জনপদে| 
অপত্য স্নেহে জননী আঁকড়ে ধরে শিশুর আঙ্গুল 
ফিরে যাবে তাঁদের শৈশবে|
আজ এই বৃষ্টি ধুয়ে দিক 
সব কিছু ধুয়ে দিক| 


২৮শে এপ্রিল ২০২০ খ্রিস্টাব্দ  

 
 
সব কিছু দাহ্য বস্তু 


সব কিছু দাহ্য বস্তু যদি জানো জ্বালাতে আগুন,
জলেও আগুন জ্বলে
অশ্রুতে বারুদ থাকে
পোড়াতে পারে রাজ সিংহাসন। 
 
বৃক্ষে-বৃক্ষে আলিঙ্গনে অকস্মাৎ পুড়ে যায় বন,
অগ্নিগিরি মাটি শুধু, পদতলে
যতক্ষণ লাভাস্রোত তাকে না দীর্ণ করে;
লাভার আগুন কাকে গ্রাহ্য করেছে?
একখানা বিস্মৃত দেশলাই তৈরি করে আগুনের 
লেলিহান শিখা;
 
সবকিছুই দাহ্য বস্তু, 
যদি কেউ জ্বালায় আগুন। 


১১ই অক্টোবর ২০১৯ খ্রিস্টাব্দ  

 

আরও পড়ুন -

শ্রী রীতির কবিতা গুচ্ছ - লাল রঙ 

ভূবন মুন্সীর কবিতা গুচ্ছ - ইস্পাতের ঠোঁট

 

লেখা পাঠাতে যোগাযোগ করুনঃ 

মেসেঞ্জার অব কসমোলজি পেইজ

ভূবন মুন্সী 

মেইলে পাঠাতে -

shimul2016.bsm@gmail.com

Sunday, August 9, 2020

ভূবন মুন্সীর কবিতা গুচ্ছ || ইস্পাতের ঠোঁট।

মেসেঞ্জার অব কসমোলজি থেকে ভূবন মুন্সীর কবিতা গুচ্ছ "ইস্পাতের ঠোঁট" প্রকাশিত হলো। আশাকরি পাঠকদের ভালো লাগবে। যখন চেয়ে দেখি একগলা নোংরা জলে ডোবে আছে মানচিত্র তোমার আমার, তখন প্রবল ঝাঁকুনিতে রাষ্ট্র ও তার পিঠে বসে থাকা মানুষদের জাগতে হয়, জাগাতে হয়, আর জাগতে ও জাগাতে সে প্রবল ঝাঁকুনির নামই 'ইস্পাতের ঠোঁট'। ঘুমে ঢুলুঢুলু চোখের খোয়াব ভাঙতে প্রবল ঝাঁকুনির নামই 'ইস্পাতের ঠোঁট'

প্রকাশনা : মেসেঞ্জার অব কসমোলজি।
প্রকাশ    : আগস্ট, ২০২০ খ্রিস্টাব্দ।
স্বত্ব         : মেসেঞ্জার অব কসমোলজি।


উৎসর্গ : পথশিশু ; যাদের মা বাংলাদেশ, রাষ্ট্র একান্ত অভিভাবক। মা বাকরুদ্ধ, উদাসীন অভিবাবকের তুমুল অবহেলা পেয়ে নষ্ট হয়ে গেলো তারা। একটি শিশুও নক্ষত্র হয়ে জ্বলে উঠলো না। অথচ জ্বলতো।

 

                 ইস্পাতের ঠোঁট - ভূবন মুন্সী 

messenger of cosmology

ভূবন মুন্সীর আরও লিখা

রাষ্ট্র তোমাকে বলছি

মাননীয় রাষ্ট্র মহোদয় তোমাকে বলছি
তুমি কান পেতে শোন
তোমার দুটি কান
যৌক্তিক নিরিখে তোমাকে শুনতে হবে দ্বিগুণ
তোমার বুকের স্লেটে হিজিবিজি অক্ষর
বাঁকাত্যাড়া অর্থহীন ব্যর্থ অক্ষর
আঁতুড় ঘর থেকেই তোমার শিশু
অবোধ হয়ে পেরিয়ে যাচ্ছে দোয়াড়
তারপর ঘুরছে গ্রাম গঞ্জ আর
শহর নগর।
রাষ্ট্র তুমি চোখ মেলে দেখো
তোমার দুটি চোখ
রোবটিক নয়, প্রাণজ দুটি চোখ – সরল
তোমাকে নিয়ে খেলছে কিছু লম্পট
দেখো ধর্ষিতা বোনের শরীর
কেমন কাতর
চেয়ে দেখো পাড় ভেঙে বেয়ে পড়া
থরো থরো কম্পিত ঘৃণার জল।
রাষ্ট্র তুমি কিছু একটা করো
পুরনোকে নষ্ট করো
গড়ো সৃষ্টির নতুন বলয়
তোমার দুটি হাত
বিকল নয়, অবিকল ঈশ্বরের হাত
যৌক্তিক নিরিখে তোমাকে করতে হবে দ্বিগুণ।
রাষ্ট্র তোমার একটি মাথা
প্লিজ, একটু উর্ধ্বে তোল
পাহাড়ের মতোন আসমান বরাবর
তুমি তর্জনীতে টোকা দিলেই
জমি হবে উর্বর
থমকে যাওয়া মেঘের বর্ষণে।
রাষ্ট্র মহোদয়  তুমি হাঁটো
তোমার দুটি পা
যৌক্তিক নিরিখে তোমাকে হাঁটতে হবে দ্বিগুণ
প্রত্যেক জনপদে
তোমার পায়ের ছাপ
বদলের স্বাক্ষর হয়ে জেগে থাক রাত দিন।
রাষ্ট্র তোমার একটি বুক
কাকে ঠাঁই দেবে
প্রেমিক নাকি লম্পট?
মাননীয় রাষ্ট্র তোমার একটি মুখ
মুখ্যত তুমি বলবে কম
যদি বুকের জমিনে জেগে থাকে আবাদী প্রেম বাগান
এইতো সময়
স্পষ্ট করে বলো – দূর হ লম্পট।

সোনামুখী হাঙ্গর

সোনা খাও সোনামুখী,
টনকে টন কয়লা আর গুপ্তধন
রাস্তার বিটুমিন, ইট - পাথর
তুমি সবটা গিলে নাও সোনামুখী হাঙ্গর।

লিমনের খোঁজ নেই-
তার পা টা খাও,
ফেলানীর রক্তমাখা শরীর,
রিজার্ভের টাকা, পদ্মার পাইলস, রানা প্লাজার পিলার,
বসুন্ধরার আগুনে পুড়ে পুড়ে খাও।

কলম খাও; পত্রিকার পাতা আর সাংবাদিক।
সাগর-রুনি তোমাদের কে খেয়েছে গিলে?
ইলিয়াসের এখন কী খবর?
আজ হাজার ফেলানী বলে- বাবা দেশটা কার?

এত এত অফিসার! শাকিলের ছিন্ন ভিন্ন লাশ,
কে যেন খেয়ে গেছে রক্ত চুষে।
উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে,
কার কী অপরাধ, কোথায় বিচার?
সব নথি গিলে নিলো সোনামুখী হাঙ্গর।

ট্রেন গুলো এত অসহায়!
বৃদ্ধার মতো ঠেকে ঠেকে পথ হাঁটে,
সব চাকরি কি নিয়ে গেছে উড়ন্ত গাঙচিলে!
ওরা এত বেকার কেন?

হলমার্ক এর পিছনে কোন্ হুলুটা ছিলো?
কী লাভ, কে পেলো লাভের অধিকার?
হলি আর্টিজান এর যুবকটি চিৎকার করে বলে-
দেশটা কার?

ভোট তো গিলে খেয়েছো কবেই,
খেয়েছো স্বস্থির সবুজ ঘাস,
অস্থির করেছো নিরাপত্তার ঘর,
বুকের ভিতর বুলেট নিয়ে একরামুল কেঁদে বলে-
এবার শান্ত হও সোনামুখী হাঙ্গর।

সমরেশ বিএসসি

যে কথা বলার ছিলো
শুরু করার পূর্বেই ঝরে গেছে সে কথার ফুল;
ব্যর্থ বকুল।

অনুচ্চারিত অক্ষর
অনুজের মতোন বায়না ধরেছিলো;
তাকে যেন পাঠ করি সুধী সমাবেশে।

মিছিল চেয়েছিলো
সমাবেশ থেকে সে মার্চ করবে বৃক্ষ তলায়;
কৃষ্ণচুড়ার ঝরা পাপড়ি যেখানে বিছিয়ে দিয়েছে
রেড কার্পেট।

বেকার বি.এস.সি
রাষ্ট্রের কাছে ঘর চেয়েছিলো,
চেয়েছিলো অষ্টাদশী বউ।
ভেবেছিলো তার দাবী পেশ করবে কেউ,
কোন একজন সুধী।

স্বার্থের ক্যাওয়াজে স্থগিত হয়েছে আহুত সমাবেশ।

একা পথে প্রতিবাদে আজ নিহত সমরেশ!

বস্তি পাড়ার মাইক

ছিনাল সময়, দিকে দিকে বেহায়াপনা, খানকীর দুনিয়া!
পতিত পৃথিবীতে,মাগীদের ভীড় ঠেলে, মদের দোকান-
পাশ কেটে দেশে যেতে চাই- বৃক্ষের নিচে, মাটির বিছনায়;
গায়ে লেগে যায় মদের গন্ধ, শৃঙ্গার রস, টাটানো বীর্য-
এখানে সেখানে।
জন্মের পরে যাদেরকে জেনেছি মানুষ- মানুষ আজ
কথা বলে পশুর ভাষায়।
ইশারা পাই-
কিছু মানুষ শকুনের মতোন
কিছু শিয়াল কুকুর হাঙর
কেউ বিধাতার বরে অসুরের মতোন, কেউ বা
বিষধর সাপ, কেউ চতুর স্রষ্টার অভিশপ্ত জীব।
জন্মান্তরে মানুষ হয়তো প্রাণি হয়ে ফিরে- কিছু কিছু প্রাণিতে
কিঞ্চিত মানুষের সাঁজ; আবার প্রাণিরা মানুষ হয়ে ফিরে,
ফিরে আসে পালক ফেলে, দন্ত নখ আর লেজ কেটে; তবু
আমরা জেনে ফেলি- আমরা বলি-
শালা বানচোৎ এক মস্ত হায়েনা, বিরাট হাঙর,
চতুর শিয়াল আর বাদ বাকি
সব শালা জোকার বানর, নিরীহ বিড়াল।
পৃথিবীর আবর্তনের মতোন নাপাক ফিরে ফিরে আসে
ঘিরে রাখে আমাদের কুগন্ধ বায়ু
ঘিরে রাখে আমাদের খুন-হত্যা-গুম, নিষিদ্ধ প্রণয়
ঘিরে রাখে ব্যক্তিক লকারে সম্পদ সঞ্চয়ের প্রচন্ড অন্যায়।
ছাই চাপা, গোবর চাপা এক মাটির প্রদীপ সন্তান প্রসবের
মতোন কাঁটা কাঁটা কষ্ট নিয়ে, কচ্ছপের মতোন
মাথা উঁচিয়ে সূর্য হতে চায়;
যদি কেটে যায় পাপের কাল,
কেটে যায় অন্ধকার, বাতাসের বুক থেকে মদ, বীর্যের গন্ধ।
নটিরা হাসে, খিল খিলিয়ে হেসে ওঠে বেহায়া সময়!
জানি তবু, অন্ধকার ধ্রুপদী নয়।
বসুমতী, কবে তুই পোয়াতী হবি? কবে?
এক দেশ মানুষ দে।

টেলিভিশন

এই কি তবে ছিনালপনা!
আজ আমি নির্বিচারে সয়ে যাই,
বৃক্ষের মতো, জল-মাটি-কাদার মতো
মিসরীয় দাসের মতো ঘাড় নামিয়ে
নিশ্চুপ নির্বিচারে সয়ে যাই,
পাড়ারের মতো কুম্ভক করে বসে থাকি
আগত সকল অনাচারে।
আমি ভুলে যাই জন্ম ও জননীর কথা
পূর্বজ পিতার কথা; অথচ
তীব্র শীত,হায়েনার হিংস্রতা আর অরণ্যের অন্ধকার আমি মাড়িয়ে এসেছি,
ইবলিসীয় তীর-তরবারী আর সামন্তের হুংকার ও জিঞ্জির ছিন্ন করে এসেছি,
সহস্র ব্যর্থ প্রত্যয়ের পরও আগুন জ্বালিয়েছি সরু গুহার কঠিন অন্ধকারে-
বৈদ্যুতিক প্রদীপে রাতকে করেছি দিনের মতো সমুজ্জ্বল, সাগর জলের বুক
চিড়ে চষে বেড়িয়েছি আমার আস্ত পৃথিবী, বুকের পাঁজরকে কুঠার করে
ছিন্ন করেছি শত্রুর মস্তক, অযাচিত আগুন্তক তাড়িয়ে, কুরুক্ষেত্র-কারবালা
পেরিয়ে উড্ডীন করেছি ন্যায়ের শুভ্র নিশান।
তবু অন্ধকার আপাং কাঁটা হয়ে সেঁটে থাকে
তবু মিথ্যা মস্তকে তাজ হয়ে উর্বর জ্বলে
তবু জাহেলিয়াত জারি থাকে এখানে সেখানে
আর আমিও নাক্ষত্রিক প্রত্যয়ে
বায়ান্ন থেকে একাত্তর পেরিয়ে
তখনও তরুন
সদ্য স্বাধীন।
কিন্তু আজকের এই ভিন্ন কালে নতুন আকালে আজন্ম দাসী পুত্রের মতো
আমি নির্বিকার, বৃক্ষের মতো দাঁড়িয়ে থাকা আমার নয়া অভ্যাস,
এ কেমন বেহায়াপনা!
কেন আজ আমি দাসানুদাস?

চকবাজারের কন্ঠে আগুন

গোপন ভিলেনের মতো লুকিয়ে ছিলো
তারপর ঠা ঠা হাসিতে হঠাৎ আত্মপ্রকাশ
ওর ঠোঁটে মৃত্যু ছিলো
আগুন ঠোঁটে কেড়ে নিলো জন্ম এখন,
একাশি হয়েও অমীমাংসিত
সংখ্যার প্রকৃত হিসাব হয়তো জানবেনা কেউ।

দ্রষ্টব্যঃ যথারীতি উড়ে এলো
ফায়ার সার্ভিস- আগুনে জল সেচার কাজে,
সিআইডি- তদন্তের কাজে,
ক্যামেরা- লাইভ টেলিকাস্ট হবে,
জানিয়ে দেবে সব, কিন্তু
এটা মৃত্যু নাকি মার্ডার?
মৃত্যু কি এতই সহজ!
কে ঢেলে দিলো এত সহজ মৃত্যু?
অভাগা দেশ হয়তো জানবে একদিন।

এদেশে মৃত্যু ও মার্ডারে শোকের প্রকাশ
স্যরি বলার মতোই মামুলি ব্যাপার,
দেখুন, চকবাজারের দিকে ধেয়ে আসছে
শোক শব্দমালা।

দুই বর্ণের শোক
তুমি কি মৃত্যুকে ঠেকাতে পারো,
পারো কি মুছে দিতে বিয়োগ ব্যাথা?
ওরা কি আসবে,
আবার ঠোঁট রাখবে কি প্রিয় ঠোঁটে?
ওরা কি জাগবে?

হে মৃত, তোমরা জেগে ওঠ-
রাষ্ট্রীক শোক এসে গেছে,
দল, বিরোধীদলের শোক ডাকছে,
সুশীলদের কোমল কন্ঠ শোক
ঘুর ঘুর করছে তোমাদের পাশে,
মানবাধিকার, দুদকের শোক
দেশীয় মাতব্বর আর বাণিজ্যিক নাগরের শোক
ডাকছে তোমাদের।

ওরা জাগছেনা
ওরা জাগবেনা
তোমাদের লাম্পট্যে ওদের আস্থা হারিয়ে গেছে;
তোমরা চুরি করো ব্যালট ও ভোট
দাও মিথ্যে আশ্বাস
কেড়ে নাও শস্য ও শ্রম, প্রয়োজনে
একদিন একমাত্র জনম।

কোথা হতে আসে
কেন বারবার আসে বেহায়া আগুন
কেন জন্ম মরে যায় আগুনে পুড়ে!

নিমতলী থেকে চকবাজার
এত এত মৃত্যুর দায় কে নেবে?
দ্বায়িত্বে কে ছিলো
লাইফ সেফের দ্বায়িত্ব কার
তোমার নাকি আমার?
               

অপহরণ

এটা এক উদ্ভট গল্প!
রংহীন অদৃশ্য বাজপাখি
অথবা রকমারি রংধারী গিরগিটির মতোন
বহুরূপী বাজ
চঞ্চু ও নোখে ছু মেরে
পালকের তলে লুকিয়ে রাখে সূর্য সকাল
তারপর হাওয়া!
তন্ন তন্ন  করে তালাশে ফিরে
পরিচিত তস্করের ঘর
প্রহর দশ পেরিয়ে গেলে
মাকালিক সরকারের নিপুণ কৌশলে
উদ্ধার!
বুড়িগঙ্গার পাড়ে
পড়ে আছে মৃত সূর্য সকাল;
সূর্যের আধবোঝা চোখ
সকালের গলাতে ছুরির আঘাত!
এটা এক উদ্ভট গল্প!
প্রত্যাহ খুন হয় সূর্য সকাল
মৌলিক তস্কর হাওয়া!
আমরা তো জেনে গেছি,
খুনীকে বাঁচিয়ে রাখে তক্তের ছায়া।

ভেসে আসা শব্দবীজ

আমি সুবর্ণচর থেকে বলছি
ডাকনাম মাটি
মানচিত্রও বলতে পারো
আভিধানিক অর্থে বাংলাদেশ।
আমার কথা যারা শুনছো
তোমরা যারা শুনছোনা
সকলের চরিত্র নিয়ে আমার সন্দেহ আছে।
সন্দেহ চারিত্রিক সনদ নিয়ে
চারিত্রিক সনদে স্বাক্ষর করেছে যে প্রথম শ্রেণীর অফিসার
তার চরিত্র নিয়েও সন্দেহ আছে।
প্রথম শ্রেণীর অফিসার পড়েছে পাঠশালায়
পাঠদান করেছে যে শিক্ষক
সম্পৃক্ত যতো আমলা-কামলা, মন্ত্রী-মেম্বার, অফিসার ও কেরানী
সকলের চরিত্র নিয়ে সংশয়-দ্বিধা-সন্দেহ
বৈধতার লাইসেন্সধারী সতেরোকোটি
নাগরিকের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন আজ
সত্যিই কি ওরা বৈধ?
নাকি অবৈধ গর্ভঘরে কোলে পিঠে বড়ো হয়ে
নষ্ট কাল নিরিখে
ন্যাংটো হয়েও সভ্য নায়ক!
সন্দেহ-দ্বিধা-সংশয়!
শংকা-ভয়-ত্রাসে
ধর্ষন-গন ধর্ষন- ভয়ংকর সন্ত্রাসে
কন্ঠের কথা কেঁপে কেঁপে উঠে।
কতগুলো গন্ডার
কতজন লম্পট
কয়টি শুয়োরের বাচ্চা জন্ম নিলো সাতচল্লিশ বছরে?
জানি, পরিসংখ্যান নেই তোমাদের।
দেশের বুকে কতজন সুবোধ আছে
তোমাদের জানা নেই মূর্খের দল!
কথিত উন্নয়নের পৃষ্ঠাজুড়ে তোমাদের চোখ
লেখচিত্রে, সূচক রেখা আর রকমারি পাইচিত্রে।
দিবসের মেকি উৎসবে তোমাদের মন।
অথচ আমি আজও শুনতে পাই
পরাধীনতার শব্দ
শুয়োর, গন্ডার, বন্য প্রাণীদের দেখি
অবাধ বিচরন
দেখি নটির মতোন খিল খিল করে হাসছে
হায়েনার হিংস্র দাঁত।
তোমরা যারা বধির
অন্ধ যারা
যারা বিশ্বাসঘাতক বেহায়ার সন্তান
কিছুই দেখোনা
শুনতে পাওনা কিছুই।
অথচ মানুষের চোখে যদি দেখতে সে
বীভৎস দৃশ্য
যদি মানুষের কানে শুনতে সে
আর্তনাদ
মরে যেতে চাইতে সবাই।
কিন্তু, তোমরাতো মৃত।

 
মৌলিক পতন

আমি আজও পতনের শব্দ শুনি
বিকট শব্দ, একদম ঊষর ;
গাঁজাতে যাদের চোখ ঢুলুঢুলু
যারা স্বার্থের সিসাতে ভরে নিয়েছে শব্দ পথ
তারা শুনছেনা।
শোনা যাচ্ছে পতনের মৌলিক ধ্বনি,
সুধী বৃন্দ, আপনারা কেউ কী শুনছেন?
সুশীল সমাজ তুমুল তর্কে মগ্ন আছে
গোলটেবিলে উত্তেজিত থাপ্পরের শব্দ;
তারা শুনছেনা।
জাতীয় সংসদে দারুণ শব্দ
হ্যা বলুন, হ্যা বলুন, হ্যা বলুন;
হ্যা শব্দে তলিয়ে গেছে পতনের ধ্বনি;
তারা শুনছেনা।
ডাক্তারের আরদে রুগীর মিছিল
সিফিলিস গনোরিয়া সাইক্রেটিয়া করোনা;
রুগ্নরা শুনেনা কিছু।
ডাক্তার ও শিক্ষক মৌলিক ব্যবসায়ী আজ
বেনিয়া বাজার চেনে, পতনের শব্দ শুনেনা।
ডিজিটাল ক্যামারা বড়ো বড়ো চোখ করে তাকিয়ে আছে
সামনে উখিয়া ক্যাম্প – মানবতা
সামনে ব-সাগর – সমুদ্র জয়
ক্যামারার পিছনে সুবর্ণচর – ধর্ষণ
সম্মুখ দরোজাতে খিল এঁটেছে স্বার্থের চোখ
পশ্চাৎগামী দরোজাই খোলা। কে ফেরাবে পতন?
ভয়ে কম্পিত বাংলাদেশের বুক।


আরও পড়ুন -

এম ইকবালের কবিতা গুচ্ছ - ভালোবাসাহীন মানচিত্র

 
শামীম রেজার কবিতা গুচ্ছ - যে পথে আলো আসে 

 
নব শওকতের কবিতা গুচ্ছ - ক্রুশবিদ্ধ কবি 

 
শ্রী রীতির কবিতা গুচ্ছ - লাল রঙ|রেড সিগনাল 

 
মুরশীদ সেলিনের কবিতা গুচ্ছ - পরস্পরের ইতিবৃত্ত 

 
যারিন তাসনীমের কবিতা গুচ্ছ - ইশক

লেখা পাঠাতে যোগাযোগ করুনঃ

মেসেঞ্জার অব কসমোলজি পেইজ
মোঃ শামীম রেজা
মোঃ মাসুদ মিয়া
রিয়া মাইতি
ভূবন মুন্সী

মেইল করুনঃ

shimul2016.bsm@gmail.com
mdmominali.bsm@gmail.com

কবি মুরশীদ সেলিনের কবিতা গুচ্ছ || পরস্পরের ইতিবৃত্ত।

কবি মুরশীদ সেলিন বর্তমান দেশ দুনিয়াকে দেখতে চেয়েছেন তাঁর কবিতায়। তিনি খোঁজতে চেষ্টা করেছেন বহমান সংস্কৃতি, জীবন যাপন। শহর ও গ্রাম, প্রকৃতি ও পরিবেশ, রাষ্ট্র ও রাজনীতি তাঁর কবিতা ও প্রবন্ধে বারবার ফিরে আসে। নিচের "পরস্পরের ইতিবৃত্ত" কবিতা গুচ্ছেও তিনি সমাজের নষ্টকে খোঁচা দিয়েছেন, স্বপ্ন দেখেছেন নতুন প্রভাতের।

প্রকাশনা : মেসেঞ্জার অব কসমোলজি।
প্রকাশ    : আগস্ট, ২০২০ খ্রিস্টাব্দ।
উৎস্বর্গ    : 'মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক' কে।

 

              পরস্পরের ইতিবৃত্ত - মুরশীদ সেলিন

picture lovers
 



এখানে জীবন


এখানে জীবন ফুটপাতহীন রাজপথে হেঁটে চলা,
মিথ্যের পাশে মিথ্যে বসিয়ে সত্যের মত বলা।

এখানে জীবন আনাচে কানাচে মরে পরে থাকা লাশ,
বাঁচার আশায় প্রতি দমে দমে দূষনের হাসফাস।

এখানে জীবন বিত্ত বিলাসে বেড়ে ওঠা যত লোভ,
অসহায় শত বঞ্চিত মনে তিলে তিলে জমা ক্ষোভ।

এখানে জীবন সব মেনে নিয়ে মুখ বুজে বসে থাকা,
সাদাকালো রঙে নিত্য নতুন রঙ্গীন স্বপ্ন আঁকা।

এখানে জীবন রবি, নজরুল, লালনের গান শোনা,
কল্পিত কোন মহানায়কের পথ চেয়ে দিন গোনা।

ইতিবৃত্ত

আমরা চিরকাল উলঙ্গ থাকবো না,
একদিন আমাদের পরনে চুড়িদার পায়জামা হবে,
গায়ে শোভা পাবে রেশমি গরদের পাঞ্জাবী,
কারুকার্য খচিত কলাপুরী চটি পায়ে
আমরা রাজপথে হেঁটে যাবো
নতুন কোন প্রভাতফেরীর গানে সুর মিলিয়ে।
শুধু একপাল বৃদ্ধ কুকুরের লেজের দোলাচল,
গুপ্তাঙ্গের অবিন্যস্ত সফেদ কেশরাশি,
আর লকলকে জিভে ফোটা ফোটা রস
কালের সাক্ষ্য দিতে ইতিহাস হবে।
শতাব্দী থেকে শতাব্দী ধরে বলে যাবে
উলঙ্গ যুগে অশ্লীল নৃত্যের ইতিবৃত্ত।

এই শহরে

আমি থাকব না ভাই এই শহরে থাকব না,
ম্যানহোলের ঐ ঢাকনা ছাড়া ফুটপাতে আর হাঁটবো না।

হেথায়,
সকাল বেলায় পাখির গানের নেইকো কোরাস,
যন্ত্র দানব পিষ্ট করে নতুন বধু,
রক্ত ধারায় ঝরছে সকল জীবন মধু,
রুক্ষ হাতে পড়ছে তালি চড়াস চড়াস।

নাক দিয়ে যায় কয়লা গুড়ো,
বক্ষে আমার যক্ষ্মা ধরায় ময়লা বাতাস,
আবর্জনার গন্ধে সবাই দারুণ হতাশ,
অল্প দিনেই হচ্ছি বুড়ো।

ভণ্ড সকল মিছিল মিটিং,
মুক্ত মনের নেইকো প্রকাশ,
শুধুই বাহাস, ঘৃণার বিকাশ,
রাজনীতিতে চলছে চিটিং।

অন্ধ গলির অনাথ শিশু,
বন্দি সবাই,
লোড শেডিং এ অন্ধ সবাই,
হচ্ছে জবাই
বুদ্ধ ও রাম, মুস্তফা আর যীশু।

থাকব না ভাই এই শহরে থাকব না,
এই শহরকে আর এমন করে রাখবো না।

এক তুড়িতে উড়িয়ে দেব বন্দি আকাশ,
পুড়িয়ে দেব মুখোশ গুলো,
সরিয়ে দেব চোখের ধুলো,
মুক্ত স্বাধীন মনের হবে বহিঃপ্রকাশ।

পরস্পর

তোমরা কেউ ভালবাসা ভেবে ভুল করোনা,
আসলে সব দেনা পাওনার খেলা।
পৃথিবীটা এক বিরাট হাটবাজার,
এখানে শুধুই বিকিকিনির মেলা।

এখানে সবাই ক্রেতা,
এখানে সবাই পণ্য,
সভ্যতা সেতো মেকী,
আসলে সবাই বন্য।

তোমরা কেউ দুঃখ ভেবে ভুল করোনা,
আসলে সব সুখের মূল্য পরিশোধ।
অল্প অধিক সবাই বিত্তবান,
মূলধন শুধু জীবনের মূল্যবোধ।

এখানে সবাই দুঃখী,
এখানে সবাই সুখী,
হাসি কান্নার ছলে,
প্রাণেপ্রাণে মাখামাখি।

ভালবাসা আর দুঃখ পাবার ছলে,
অসীমের পানে ছুটে চলা,
প্রতিদিন, প্রতিক্ষন, প্রতিপলে।

শিরোনামহীন

পুষ্প সুশোভিত আলোকোজ্জ্বল মঞ্চে
ক্ষয় রোগাক্রান্ত বিগতযৌবনা শিল্পী
বেসুরো গান ধরে।

অন্তরা আর সঞ্চারী জুড়ে খুশখুশে কাশি,
তবলায় তাল নেই,
হারমোনিয়ামে হাওয়া নেই,
ঝংকার নেই সেতারের তারে।

মুদিত নয়নে বেতালের মুগ্ধতা নিয়ে
বিদগ্ধ শ্রোতা মাথা নাড়ে হেলে দুলে,
যেন রাতের আধার শেষে
কোনদিন আসবে না ভোর।

উল্লাস নাচানাচি, মুহুর্মুহু করতালি
বাজখাঁই গলা ছেড়ে
সমস্বরে সীৎকারে,
ওয়ান মোর, ওয়ান মোর, ওয়ান মোর।

 

আরও পড়ুন  

 এম ইকবালের কবিতা গুচ্ছ 

শামীম রেজার কবিতা গুচ্ছ 

শ্রী রীতির কবিতা গুচ্ছ 

নব শওকতের কবিতা গুচ্ছ


Tuesday, August 4, 2020

সংবাদ ও সাংবাদিকতা - ভূবন মুন্সী।

 


   সংবাদ ও সাংবাদিকতা

সংবাদ ও সাংবাদিকতা


[ লেখা পাঠাতে যোগাযোগ করুনঃ মেসেঞ্জার অব কসমোলজি পেইজ এ]



আপনাদের সাংবাদিকতার রূপ দেখে অন্যরা কিছু ভাবছে কিনা জানিনা। তবে আমি বিভ্রান্ত। নিউজ পোর্টাল গুলোর নিউজ দেখে বুঝাই মুশকিল, কোনটা সংবাদ আর কোনটা সংবাদ নয়। হ্যা এবং না মিলেমিশে একাকার। আসলে আপনাদের আইডোলজিটা কি? কোন শেকড়ে দায়বদ্ধতা আপনাদের? আপনাদের নিউজ গুলো কোন দায়বদ্ধতায় প্রকাশ করেন? সবটাই কি বাজারের শর্তে?

অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে আজকের পৃথিবীতে মিডিয়ার ভূমিকা ব্যাপক বিস্তৃত। ন্যায় প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে আজকের সাংবাদিকতা অধিক গুরুত্বপূর্ণ। যাঁরা এখনো এই সংগ্রামে সম্পৃক্ত- স্যালুট।

যতটুকু বুঝি, কে জল খেতে চেয়েছিলো, কে আনমনে হোঁচট খেলো, কে অভিনয় করতে গিয়ে অজ্ঞান হলো, কার ডিভোর্স হলো, তারপর কাকে বিয়ে করলো আর কে কে চাকরি পেলো সবটাই যথাযোগ্য সংবাদ নয়। সবটাই কি জানার দরকার আছে? কি লাভ জেনে? জানিয়ে বাণিজ্য করা ছাড়া আরও কি কোন প্রশান্তি আছে? এগুলো মগজের জঞ্জাল ছাড়া আর কি!

রাষ্ট্র ও রাজনীতি সম্পর্কে বিষোদগার প্রকাশ বা নেতিবাচক তথ্য প্রকাশই মন্দের বিরোধিতা করা বা সে অর্থেই সাংবাদিকতার শেষ কথা নয়। আরও কিছু দায়বদ্ধতা থাকে, আছে। নেতিবাচকই যদি সংবাদ হয়, সচেতন সংগ্রামের কথা বা দিশা না থাকলে তা তো আপামর জনসাধারণের বোধকেই নেতিবাচকতায় রূপান্তর করবে। আর এটা আগামী পৃথিবীর জন্য, মানচিত্রের জন্য গভীর শঙ্কার।

সাংবাদিকতা আজ মানব মুক্তির সাথে জড়িত। মিডিয়া যেন মুক্তির সমার্থক রূপ হয়ে উঠেছে তার ভূমিকা রাখার যোগ্যতায়।

তবে হ্যা এবং না পৃথক রাখি
মানুষ থেকে মুছে দিই পশুর আকৃতি।


১৬.০৭.২০২০

Monday, August 3, 2020

কবি যারিন তাসনীম এর কবিতা গুচ্ছ - ইশক

কবি যারিন তাসনীম প্রচলিত অচলতা ভেঙে প্রেমের চিরায়ত স্বরূপ অন্বেষণ করেছেন। প্রত্যেকটি কবিতাই জীবনের গভীরতর উপলব্ধিতে নির্মিত। প্রশ্ন গুলো যেন ভাসমান প্রেমিক কে এক ধাক্কায় প্রেমের সাম্পান থেকে ফেলে দেয় নিম্নতম স্তরে। কবি ইশকের গভীর সমুদ্র হাতড়ে তুলে এনেছেন - ইশক।

প্রকাশক: মেসেঞ্জার অব কসমোলজি।
প্রকাশ   : আগস্ট, ২০২০ খ্রিস্টাব্দ।
উৎসর্গ  : পৃথিবীর সমস্ত প্রেমিকদের।

   কবি যারিন তাসনীম এর কবিতা গুচ্ছ - ইশক
কবি যেরিন তাসনিম




প্রেমিক

গুটিকয়েক বসন্ত পেরিয়ে,
অম্লান বদনে,যেই তোমার দরজায় কড়া নেড়ে ছিলাম,
অমনি তোমার উড়ো প্রশ্নের আঘাত,
ক্ষুরের মত হৃদয় ছিন্নভিন্ন করেছিলো।
অবশ্য তা আমি বুঝতে দেয়নি,
হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলাম,
এই আশায়,হয়তো দীর্ঘদিন পরে দেখা হবার
আনন্দে বুকে টেনে নিবে !
কিন্তু তুমি তো
বুক পকেট থেকে টুপ করে ৫ টাকার আধুলি দিয়ে বলেছিলে
বিদেয় হওতো বাপু ।
তবে এমন তো কথা ছিল না,
তুমি তো প্রেমিক, শত শত জনম পেরিয়ে,,,
তোমার দ্বারে যে রুপেই দাড়ায় না কেনো?
তোমার তো এক পলকে চিনে নেবার কথা,,
তাহলে কি, আমার জানা প্রেমিকের সংজ্ঞাটা ভুল ছিল?

 শ্রী রীতির কবিতা গুচ্ছ

এখানে ক্লিক করুন 

অপেক্ষা

তোমাকে যে বহুবার ছুঁয়েছি, এমন কিন্তু নয়, তবুও
আমার পিপাসিত আত্মা ঘুরে ফিরে শুধু তোমাকেই
খোঁজে,
এই খোঁজ অনন্তকাল ধরে চলছে,এ যেন মহা সমুদ্র
ছেঁচে গভীর থেকে এক অদৃশ্য খাজনার বাক্স খোঁজার
মত,
কত শত বছর পেরিয়ে কত সহস্র প্রেমিকের ওষ্ঠাদেশ ছুঁয়েও মেলেনি সেই পিপাসা মেটানোর উৎস
হাজারো রজনী স্বার্থবাদী প্রেমিকের বাহুডোরে কাটানোর পরে মনে হলো, উফফ তুমি হীন তৃষ্ণার্ত জীবন আর কত জন্মে আমি পাবো?

তুমি জানো বিছানার পর বিছানা পাল্টেছি,,সঙ্গী ও পাল্টে দেখেছি, তোমাকে পাওয়া যায় কিনা,?
নাহ আমি প্রতিবারই হতাশ বদনে উল্টো রথের বৃষ্টি বিলাস করেছি,

আর আশায় বুক বেঁধেছি এবার না হলেও ফের পরের রথে আমার জগন্নাথ ঠিক আসবে।


রহস্য

আমিই সকল ক্লান্তি তোমার
আবার শরীরজুড়ে  শান্তি,
ঠোঁটের কোণে হাসির কারণ
মিছে মায়ার ভুল-ভ্রান্তি
আমিই তোমার দেহ-তরী
রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে আছি
যন্ত্রণা হয়ে হৃদয়ে ঢুকে
সুখের মলম লাগিয়ে রাখি
আমিই তোমার বুকের ব্যামো
পথ্য রুপে আমিই আছি
দেহের মাঝে রুহ আমি,
দুরে থেকেও কাছে থাকি,
আমিই তোমার রাগ হয়ে
অভিমানে প্রেম ছড়ায়
আমি তোমার ঘৃণা হয়ে 
 লোভের ভেলা ভাসায়
আমিই তো দুঃখের কারণ
 তোমার  সুখের প্রলোভন
জীবন নামের মায়া নদীতে
বেঁচে থাকার একমাত্র কারণ
বন্ধুর পথে চলার সাহস
আমিই তোমার আশা,শেষ ভরসা বটেও
আমি পুণ্য,আমিই পাপ
অভিশাপ ও আমি,
আমিই তোমার আশীর্বাদ
আমি কর্ম,আমিই ফল
চোখের কোণে বিন্দু বিন্দু জল,
ভোরের সূর্য, পাখির ডাক,নির্মল হাওয়া,
দুপুর বেলা প্রখর তাপে অস্থিরতা
দুপুর গড়িয়ে বিকেল যেনো স্বস্তির হাতছানি,
গোধূলি লগ্নে সূর্য্যি ডোবার বিদায় বেলাও আমি,
নদীর টলমল জল,নৌকো ভরা জেলের দল,
নদীর মাছ,পেটের ক্ষুধা
ক্ষুধা মেটানোর রাস্তা যে সব,
ঘুর্ণিঝড়ে উথাল পাথাল ঢেউ 
উদাস দুপুরের ঘরহীনের হাহাকার
শেষ বিকেলে বটের ছায়ায় আশ্রয়
বড্ড অট্টালিকায় উঠে মুখ ফিরিয়ে রই,
আমি পাহাড়, আমি ফসল,
আমিই ধ্বংস, আবার আমিই সৃষ্টি
আমি প্রেম, আমিই প্রেমিক,
আমিই চিরকাল বিপ্লবী
আবার আমিই রক্ষণশীল,
একদিকে আমি গড়ি,অন্য দিকে নষ্ট করি,
আমি তোমার অস্তিত্ব , তোমার অনুভুতি
আমি  যন্ত্রণা দানকারী,
সেই আমিই তো উপশমকারী,
আমি উপকারী হয়ে উপকার করি,
আমিই সব কেড়ে নিয়ে নিঃস্ব করি,
আবার আমিই মহা দানবীর,
তোমাকে জ্বালায় আমি,আবার আমি নিজেও জ্বলি,
পঞ্চমী তে করি প্রেম নিবেদন
ষষ্ঠী তে তার বোধন,
সপ্তমী তে যায় ছেড়ে
আমিই এসে অষ্টমী তে ধরি হাত,
নবমী তে ঘুরবো বলে
দশমি তে যায় বিসর্জন
আবার আমি লক্ষ্মী হয়ে আসি ফিরে
কখনও বা সরস্বতী
কলিযুগের রাধা আমি
কলির কেষ্ট সেও আমি,
তোমার বুকে আমারই তো বসবাস,
রক্ত হয়ে শিরায় উপশিরা চলাচল,
আমিই তোমার মুখের বুলি,
প্রতিবাদী আন্দোলন
রাজপথে লাশের মিছিলে,মানবতার আত্মহনন
আমিই তাল সুর ছন্দ মিলিয়ে
দেয় তোমায় আনন্দ
আমিই অনুভূতি হয়ে কবিতায় পাই ঠাঁই,
আমি শিল্পী, আমি আঁকি জীবনের সব চিত্র
অভিনয়ে মাতিয়ে রাখি মর্ত,
আমিই করি ভেদাভেদ, আবার বুক ফুলিয়ে বলি আনো সমতা,
আমি ধর্ম, ধর্মের নিয়মে অধর্ম দেখে বিস্মিত হয়ে বলি
আমার সৃষ্টি কত বোকা???
আমি বহুরূপী, আমি শুধু ধরা দেয় প্রেমিকের চোখে,
আমি থাকি তোমাদের মাঝেই,
কেনো খোঁজ দিগ্বিদিকে??

জীবন

পূর্নিমার আলোয় চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে রুপন্তির অভিকের কথা মনে পড়ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলোর খুনসুটি আজও ওর একাকিত্বের সঙ্গী।
ঠিক সে সময় প্রত্যয় এসে বললো, মাম্মা মাম্মা পাত্তা পাত্তা(পাস্তা,পাস্তা) খাবো,
আচ্ছা মামনি চলো বানিয়ে দিচ্ছি,
যে মেয়েটা কখন রান্নাঘরে পা রাখেনি,কখনও ইচ্ছে করেও চুলার ধারে যায়নি,আজ তাকে সব করতে হচ্ছে,
চুন থেকে পান খসলেয় মহাবিপদ, রুপন্তিও সব যেনো মিষ্টি হাসি দিয়ে মেনে নিতে শিখেছে।
যে মেয়েটা ওজন বেড়ে যাবে তা জেনেও খাওয়াতে কখনও ধ্যান দেয়নি,
আজ সেই মেয়েকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কোমড়ের ভাজ টা ঠিক আছে কিনা দেখতে হয়,কারণ ওখানে যদি চর্বিরা বাসা বাঁধে তাহলে স্বামীর কটুক্তির থেকে বাঁচা মুশকিল,
আজ মেকাপ করে নিজেকে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখতে হয়,
কিন্তু এইতো সেদিনের কথা পড়াশোনার চাপে কালো দাগ পড়া চোখ নিয়েও অভিকের সামনে দাঁড়ালে অভিকের কাছে মা দুর্গার চেয়ে কম কিছু মনে হত না,

আচ্ছা ভালবাসা আর সুখ টা একসাথে কেনো থাকতে পারেনা??
সবাই জানে রুপন্তি খুব সুখে আছে,স্বামীর মোটা টাকার মাইনে হাতে নিয়ে থাকে, আগের চেয়ে সুন্দরী হয়েছে, মেয়ে স্বামী নিয়ে সুখে ঘর করছে,

কিন্তু রুপন্তির মনের খবর কেউ রাখছেনা, অভিকের মত তার স্বামী তার শরীর খারাপ নিয়ে উতলা হয়না,
ওসব নাকি ঢং, এই তো বিয়ের আগের কথা সামান্য ব্যাথা হলেও, অভিক কত উতলা হত, বারবার জানতে চাইতো এখন কেমন আছো, ব্যাথা কমেছে, ওষুধ খেয়েছো,
আর যদি কোন রকমে জানতে পারতো অনিয়মের জন্য ব্যাথা বেড়েছে, তাহলেই মুখ ফুলিয়ে আরও অনিয়ম করতে বলতো,

সেই অভিমান টাও কত যে ভালো লাগতো রুপন্তির, ভালবাসার মানুষ টা এত ভালবাসে যে অন্য কারোর কাছ থেকে সামান্য অবহেলাও সহ্য হয়না।

সারাজীবন যখন পাশে থাকার অনুমতি দাওনি ঠাকুর, তাইলে ভালবাসার জন্য অনুমতি কেনো দিলে, আজ অন্তত সংসার টা নিয়ম করে করতে পারতাম।

এই সব প্রশ্নই রুপন্তির মনে ঘোরপাক খেতে থাকে,
বিয়ের পর রুপন্তির স্বামী বলেই দিয়েছিল, লেখাপড়া করেছো ভালো কথা,চাকরি -বাকরি করা চলবেনা।
আমাদের পরিবারের মেয়ে বউরা চাকরি করেনা,
রুপন্তিও মাথা নিচু করে মেনে নিয়েছিল
কারণ ও জানতো যেদিন ও নিজের হাতে ওর জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন গলা টিপে হত্যা করেছিল,

স্বামীর সাথে তার সম্পর্ক শুধু মাত্র রাতে বিছানায় পরিপাটি হয়ে মনোরঞ্জন করা পর্যন্ত,
স্বামী তো পরমদেব, তাঁকে আরাধ্য দেবতার মত অঞ্জলি দিয়ে পুঁজো দিতে হয়,
কিন্তু রুপন্তির তা মনে হয়না, রুপন্তি তার স্বামীর মধ্যে আপাদমস্তক স্বার্থপর রক্তমাংসের অমানুষ খুঁজে পায়,
তাকে সে কি করে আরাধ্য করবে?

তবে রুপন্তি যেনো সব খারাপ সব অনিয়ম মেনে নিতে শিখেছে এক মাত্র প্রত্যয় এর জন্যই বেঁচে আছে।

লেখা পাঠাতে যোগাযোগ করুনঃ

মেসেঞ্জার অব কসমোলজি পেইজ
shimul2016.bsm@gmail.com

Saturday, August 1, 2020

রোবটিক সভ্যতা || ভূবন মুন্সী।




যন্ত্রের কটকট শব্দে ঘুম থেকে জেগে উঠি। চেয়ে দেখি কৃত্রিম সূর্যটা প্যাঁচার মতোন অনুভবহীন চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। সরল প্রযুক্তি দিয়ে দাঁত ঝকঝকে করে বেরিয়ে পড়ি রাস্তায়। একবিংশের নতুন সকাল। শতাব্দীর আকীকাটা জরুরী। কোন ডাকনাম যুৎসই?

যন্ত্র নিয়ত নিজেকে বিকাশ করে দখলে নিচ্ছে মানুষের স্থান। নির্মল প্রকৃতি নির্বাসিত, তাই যান্ত্রিক প্রকৃতিতে মানুষের বোধে অটো নেমে এল রোবটিক প্রেম। যান্ত্রিক সংসারে মানুষ গুলো জৈবিক রোবট। জন্মানো শিশুরা স্মল টয়।

জৈবিক রোবট গুলো টয়দের শিক্ষা দিতে খুলে বসে স্কুল নামের ডিজিটাল মার্কেট। প্রশিক্ষত সিনিয়র জৈবিক রোবট গুলো স্মার্ট টয়দের ট্যাকনিক্যালি কোয়ালিফাইড করে গড়ে তুলে। টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরির দুই দশকেই রোবটিক স্বরূপে ডানা মেলে মানুষের সভ্যতা, মূখ্যত আজ ডাকনাম রোবটিক সভ্যতা।

নিকাহ শব্দটা বিলুপ্ত হয়ে ওঠে আসে লিভ টুগ্যাদার। খাদ্য গ্রহন এখন এনার্জি চার্জিং, সেক্স ইজ ওয়ান কাইন্ড অব গেমিং। চোখটা রোবটিক লেন্স আর বোধ এক প্রকার সেটাপ প্রোগ্রামিং।

যন্ত্র আপন বৈশিষ্ট্যেই বোধহীন, মৃত। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় যা কিছু করে তা পূর্ব নির্দিষ্ট বিধায় তা অভিনয়। শব্দ বা দৃশ্য গ্রহণের পর স্পন্দন জাগেনা বলেই মৃত কিংবা ডাকনাম রোবট।

আজ জৈবিক রোবট গুলো নিয়ে পৃথিবীতে বিদ্যমান রোবটিক সোসাইটি। ভাব বিনিময় নেই, আছে সিগন্যাল  সেন্ডিং রিসিভিং। কথা শব্দ নেই, আছে যান্ত্রিক সাউন্ড। সব মত পথ হ্যাঙ হয়ে যায় যান্ত্রিক সভ্যতার টাচ পেলে। সব ব্যার্থ হয়ে যায়।

রোবটিক পথে টার্ন করা এ প্যারালাইজড সভ্যতাকে ইউটার্ন করতে শুরুতেই প্রয়োজন- মানুষ তুমি মানুষ হও। জৈবিক মগজে যে মানবিক আর্তির বসবাস, তাকে যান্ত্রিক জটিলতা মুক্ত করতেই প্রয়োজন সাংস্কৃতিক সংগ্রাম।

আপন হৃদয়ের কম্পন যে বুঝে, সে অবশ্যই বুঝবে অন্য বুক। যে শুনতে পায় নিজ হৃৎপিন্ডের গমগমা ধ্বনি, সে অবশ্যই কালীক আর্তি শুনতে পাবে। আর যারা বধির, জনমান্ধ নয় তারা অবশ্যই রোবটিক বুক চিড়ে বেরিয়ে আসবে মানব প্রেমের সওগাত হাতে।

জন্তু-জানোয়ার বা যান্ত্রিকতার ফাঁদ হতে বেরিয়ে আসাই এ শতাব্দীর প্রধান চ্যালেন্জ।

৩০.০৭.১৯


 
রোবটিক সভ্যতা


Friday, July 31, 2020

রেমিট্যান্সের দেশে বেওয়ারিশ প্রবাসীরা - মিরান।

মতামত


রেমিট্যান্সের দেশে বেওয়ারিশ প্রবাসীরা



মিরান
শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ,
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

কহতব্য ডটকম থেকে পড়ুন

জুলাই মাসে বাংলাদেশে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স নতুন মাইলফলক ছুঁয়েছে, যার পরিমাণ 'দুই বিলিয়ন' ডলারের অধিক। নতুন (জুলাই মাসে) আসা রেমিট্যান্সের ফলে 'বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মূদ্রার রিজার্ভ'ও নতুন মাইলফলক ছুঁয়েছে, বর্তমানে বৈদেশিক মূদ্রার রিজার্ভ '৩৭ বিলিয়ন' ডলারেরও অধিক। এ নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহ, অর্থনৈতিক-বিশ্লেষক, সচেতন নাগরিক সমাজ, সর্বোপরি সবাই আনন্দিত ও উৎফুল্ল। সরকারের কর্তা-ব্যক্তিরা রেমিট্যান্সের এ প্রবাহকে নিজেদের সফলতা বলেও দাবি করেছে। অথচ কভিড-১৯ মহামারির কারণে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মহামন্দার এ দুঃসময়ে যারা (রেমিট্যান্স যোদ্ধরা) মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, নিজেদের সুখ-শান্তিকে বিসর্জন দিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে প্রধান ভূমিকা পালন করছেন, রাষ্ট্র তাঁদেরকে প্রবাসে ন্যুনতম নিরাপত্তা ও মানবিক সহযোগিতা দিতে অপারগ বা অনিচ্ছুক।

মালেশিয়ায় গ্রেফতারকৃত বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিক রায়হান কবিরের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের 'প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী' ইমরান আহমেদ যে মন্তব্য করেছেন, তা অযাচিত, অগ্রহনযোগ্য, অদূরদর্শি ও সংবিধান বিরোধী। একজন নাগরিকের বিদেশে আইনি সহায়তার প্রয়োজন হলে, রাষ্ট্র তাঁকে সার্বিক সহায়তা দিতে বাধ্য, তাঁকে তা দেয়া হয়নি। রায়হন কবীরের ভাষ্যমতে, "আমি তো সত্য কথা বলেছি, কভিড মৌসুমে আমরা যে যে সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হয়েছি, তাই বলেছি। আমি তো কোনো অপরাধ করিনি।" অথচ তাঁর কথাগুলো বলা দরকার ছিল রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের, কারণ, কভিড মৌসুমে মালেশিয়ায় ৮-৯ লক্ষ বাংলাদেশি প্রবাসী শ্রমিকের অনিশ্চিত ও দুর্দশাগস্ত জীবন কেটেছে, যাদের যাবতীয় নিরাপত্তার দায়ভার আইনানুযায়ী স্বীয়-রাষ্ট্রের উপরই বর্তায়।

মালেশিয়ায় বাংলাদেশের প্রায় '৬ লক্ষ' বৈধ ও '২-৩ লক্ষ' অবৈধ অভিবাসী শ্রমিক রয়েছে। কভিড-১৯ মৌসুমে মালেশিয়া সরকারের পক্ষ থেকে তাঁদেরকে ন্যুনতম মানবিক সহায়তা দেয়া হয়নি। উক্ত মৌসুমে মালেশিয়া সরকার বিদেশি অভিবাসী শ্রমিকদের সাথে যে বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে, তা বিশ্বব্যাপী সমালোচিত হয়েছে। ঐ দেশে প্রবাসীদের অমানবিক পরিস্থিতি নিয়ে কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম 'আল জাজিরায়' একটি প্রতিবেদন তৈরি করার সময় বাংলাদেশি প্রবাসী শ্রমিক রায়হান কবিরের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে। উক্ত সাক্ষাৎকারে রায়হান কবির মালেশিয়ায় (কভিড মৌসুমে) প্রবাসী শ্রমিকদের বাস্তবিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরেছে, তাঁদেরকে যে ন্যুনতম মানবিক সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়নি তার বর্ণনা দিয়েছে। এ কারণে মালেশিয়া পুলিশ রায়হান কবীরকে রাষ্ট্র-বিরোধী ষড়যন্ত্র ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার দায়ে গ্রেফতার করেছে।

রায়হান কবীরকে গ্রেফতারের বিরুদ্ধে ও অবিলম্বে মুক্তির দাবীতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, আল জারিরা, প্রবাসী শ্রমিক সংগঠন ও দেশের নাগরিক সমাজ প্রতিবাদ করলেও বাংলাদেশ সরকার এ ব্যাপারে নিশ্চুপ ছিল, বরং সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী বিবিসি বাংলাকে বলেছে, "এতে কোনো সন্দেহ নেই যে সে বাংলাদেশের নাগরিক। তার প্রতি আমাদের দায়িত্ব রয়েছে। কিন্তু দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা আরও বেশি। সেখানে লাখ লাখ শ্রমিক কাজ করে। ফলে, একজন ব্যক্তির কী হলো তা আমাদের চিন্তার বিষয় নয়।"


কথা হলো, সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কি সত্যিই প্রবাসীদের সার্বিক স্বার্থের বিষয় নিয়ে আন্তরিক নাকি মালেশিয়া সরকারের সাথে এ ব্যাপারে দরকষাকষি করতে অপারগ? তারা যদি সত্যিই প্রবাসীদের কল্যান নিয়ে এত আন্তরিক হন, তাহলে কভিড মৌসুমে মালেশিয়ায় ৮-৯ লাখ প্রবাসী শ্রমিকের অমানবিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় কোনো পদক্ষেপ নেয়নি কেন? প্রবাসীরা রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠালে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায়, রেমিট্যান্সের উক্ত প্রবাহকে নিজেদের সফলতা বলে দাবি করে, অথচ প্রবাসে শ্রমিকদের অমানবিক পরিস্থিতিতে নিজ দেশ থেকে মানবিক নিরাপত্তা ও সহায়তা পাওয়ার সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতে পারেনা। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী রায়হান কবীর যে কনস্যুলেট সুবিধা পাওয়ার কথা, ন্যুনতম সে আইনি সহায়তাও রাষ্ট্র তাঁকে দেয়নি, কিংবা দিতে অপারগ।

এপ্রিল-মে মাসে লেবাননের মুদ্রা 'লিরা'র মান কমে যাওয়াতে বেতন বৈষম্যের স্বীকার হয়েছিল প্রবাসী শ্রমিকেরা, স্থানীয়দের বেতন স্কেল আগের মত থাকলেও প্রবাসী শ্রমিকদের বেতন কমানো হয় ৪০%-৫০%। ফলে, সে দেশে কর্মরত প্রায় '২ লক্ষ বাংলাদেশি'সহ প্রবাসী শ্রমিকদের আয়-রোজগার বৃহদাকারে কমে যাওয়াতে তাঁদের জীবনযাপন হয়ে উঠেছিল দুর্বিষহ। দেশে রেমিট্যান্স পাঠানো তো দূরে থাক, থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্ত করতে না-পেরে প্রবাসী শ্রমিকেরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছিল। উক্ত বিক্ষোভে একজন বাংলাদেশি শ্রমিকের মৃত্যু নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের সংবাদ মাধ্যমগুলো (মিডলইষ্ট মনিটর, আনাদোলু এজেন্সি, আল জাজিরা ইত্যাদি) বিভিন্ন প্রতিবেদন করলেও বাংলাদেশি সংবাদ মাধ্যমগুলো নিরব ছিল। অথচ, এক্ষেত্রে বাংলাদেশি সংবাদ মাধ্যমগুলোর দায়বদ্ধতা সবচেয়ে বেশি ছিল, যেহেতু লেবাননে উক্ত বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিয়েছিল বাংলাদেশি শ্রমিকেরাই। ঐ সময়ে প্রায় '২ লক্ষ' প্রবাসীদের জীবিকা হুমকির মুখে পড়লেও বাংলাদেশ সরকার সে ব্যাপারে চিন্তা করার সময় পায়নি। বেশ কয়েকজন বাংলাদেশিদের আটক ও একজনকে হত্যা করা হলেও বাংলাদেশি দূতাবাস থেকে কোনো সহযোগিতা তো পায়নি, বরং বিক্ষোভকারীদের দোষারোপ করা হয়েছিল। তারপরও 'রেমিট্যান্সের প্রবাহ বৃদ্ধি'কে নিজেদের সফলতা বলেই দাবি করে আমাদের কর্তা-ব্যক্তিরা।


কভিড-১৯ মহামারী সবচেয়ে ভয়ানক রুপ নিয়েছিল সিঙ্গাপুরের প্রবাসী শ্রমিকদের 'ডর্মিটরিগুলোতে'। ঐ দেশে বাংলাদেশি শ্রমিকদের অধিকাংশই 'জাহাজ নির্মাণ শিল্প ও অবকাঠামো নির্মাণ' খাতে কর্মরত। অতি-অল্প রুজিতে অতি-নিন্মমানের ডর্মিটরিতে থাকে বাংলাদেশি শ্রমিকেরা। কভিড সংক্রমণ রোধে সিঙ্গাপুরে লকডাউন চলাকালে বাংলাদেশি (অতি ঘনবসতিপূর্ণ) ডর্মিটরিগুলোতে কোনো মানবিক সুরক্ষার ব্যবস্থা গ্রহন করেনি সে দেশের সরকার। ফলে, সিঙ্গাপুরে কভিড সংক্রমণের 'হট স্পট' হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশি শ্রমিকদের ডর্মিটরিগুলো। ঐ সময়ে সিঙ্গাপুরে মোট কভিড আক্রান্তের প্রায় ৫০% ছিল বাংলাদেশি শ্রমিক। স্বাস্থ্য-বীমা না-থাকাতে সে দেশের সরকার আক্রান্ত শ্রমিকদেরকে কোনোরকম চিকিৎসা সুবিধা দেয়নি। মৃত্যুও হয়েছে সমান তালে। আন্তর্জাতিক শ্রম আইনে শ্রমিকদের নিরাপত্তা বিষয়ক কোনো ধারাই মানেনি সিঙ্গাপুর। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার এ ব্যাপারে সিঙ্গাপুর সরকারকে আন্তর্জাতিক আইনের উদ্ধৃতি দিয়ে শ্রমিকদের জীবনের নিরাপত্তার জন্য চাপ প্রয়োগ করা তো দূরে থাক, বরং ব্যস্ত ছিল কীভাবে উক্ত বিষয়টি (শ্রমিকদের নিরাপত্তা) এড়িয়ে চলা যায় তা নিয়ে।

মাতৃভূমি মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল। জীবনের নিরাপত্তার জন্য কভিডের হটস্পট ইটালিসহ ইউরোপের দেশগুলো থেকে যখন প্রবাসীরা দেশে ফিরে আসছিল, তাঁদেরকে সরকারিভাবে কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হওয়ায় স্বাস্থ্য, পররাষ্ট্র, প্রবাসী কল্যানসহ কয়েকটি মন্ত্রণালয় সমালোচনার স্বীকার হয়েছিল। তখন প্রবাসীদেরকে 'লাটসাহেব' বলে ব্যঙ্গ করেছিল পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন। বস্তুত, তারা কি মনের খায়েশ মেটাতে দেশে ফিরে এসেছিল? না। কারণ, ইটালি ঐ সময়ে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিল, যে পরিস্থিতিতে ইটালি সরকারের পক্ষে নিজেদের নাগরিকদেরকে চিকিৎসা সেবা না-দিয়ে প্রবাসীদেরকে চিকিৎসা দেয়াটা অসম্ভব ছিল। তাছাড়া 'এক্সচুয়াল লকডাউন' কার্যকর হওয়ার কারণে মারাত্মক খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছিল দেশটিতে। মিলান, ভেরোনাসহ উত্তর ইটালির বেশ কয়েকটি বড় শহরে খাবারের দোকান ও সুপারশপ লুটপাট হয়েছিল। সেদেশের নেটিভরা যেখানে নানামুখী সংকটে জর্জরিত, বেতন বন্ধ থাকা বাংলাদেশি প্রবাসীরা, যাদের অনেকেরই স্বাস্থ্য-বীমাও নাই, নিজ দেশে চলে আসাটাই কি স্বাভাবিক নয়? "I fuck this country-system" বাক্যটির মর্মার্থ আমরা তখন না-বুঝলেও এখন হাড়ে হাড়ে বুঝতেছি।

লক্ষীপুর-২ আসনের সাংসদ পাপুল (এশিয়ার মানবপাচারকারী চক্রের প্রধান হোতা) কাণ্ডের পর কুয়েত সরকার সে দেশের ভিসা বাংলাদেশিদের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে, বাংলাদেশিদের জন্য কঠোর নীতিমালা যুক্ত করার ঘোষণাও দিয়েছে। বেশকিছু শ্রমিককে দেশে পাঠিয়ে দেয়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছে। উল্লেখ্য, মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি-জোটের দেশগুলোতেই বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি শ্রম রপ্তানি করে থাকে। সৌদি-জোটের (সৌদি, বাহরাইন, কুয়েত,মিশর,আরব আমিরাত) দেশগুলো পররাষ্ট্র নীতি, শ্রম নীতি, বাণিজ্য নীতি প্রণয়নে নির্দিষ্ট নীতিমালা অনুসরণ করে থাকে, অর্থাৎ একই নীতিমালা অনুসরণ করে। ফলে, কুয়েতের পাশাপাশি সৌদি-জোটের অন্যান্য দেশগুলোতেও বাংলাদের শ্রম বাজার হুমকির মুখে পড়ে গেছে বলে ধারণা করছেন অর্থনীতিবিদ ও পররাষ্ট্র নীতি বিশ্লেষকেরা। বলে রাখা ভালো, বাংলাদেশে রেমিট্যান্সের মূল প্রবাহটা আসে এসব দেশ থেকেই।


প্রবাসে বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য একটি আতঙ্কের নাম হলো 'বাংলাদেশ দূতাবাস'। প্রবাসী শ্রমিকেরা দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি হলেও বিদেশে বাংলাদেশি দূতাবাসগুলোতে তাঁদের সাথে আচরণ করা হয় অমানবিক। তাঁদের কোনো অভিযোগ তেমন আমলে নেয়া হয়না। আইনি সহায়তা পাওয়াও দুষ্কর। অবৈধভাবে মানব পাচার থেকে শুরু করে, ঘুষ, নির্যাতন, কাগজপত্র আটকে রেখে টাকা আদায়সহ অভিযোগের শেষ নেই দূতাবাসগুলোর বিরুদ্ধে। গতবছর ব্রুনাইয়ের বাংলাদেশ দূতাবাসে একজনকে বেধড়ক মারধরের ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল যা আমাদেরকে দূতাবাসগুলোতে প্রবাসীদের সাথে কেমন আচরণ করা হয়, তার একটি ধারণা দিয়েছে।
সৌদি থেকে প্রতিবছর অসংখ্য নারী-শ্রমিক ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের স্বীকার হয়ে দেশে ফিরে আসে, শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়। তাঁরা দূতবাসে অভিযোগ জানিয়ে কোনো ফল পায়না। দুই বছর আগে একই কারণে (ধর্ষণ, নারী নির্যাতন) কুয়েতের সাথে ফিলিপাইন সরকারের চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে ফিলিপাইন প্রেসিডেন্ট 'রড্রিগো দুতার্তে' কুয়েত সরকারের উদ্দেশ্যে বলেছিল, "Is there any problem in your culture? Is there any problem in your values?" আমাদের পক্ষ থেকে এরকম কঠিন বাক্য প্রয়োগ করার সাহস কেউ রাখেনা, যা আমাদের জন্য একটি 'মাইনাস পয়েন্ট' বটে।

প্রতিবছর ব্যাপক পরিমাণে (বিদেশে) অর্থপাচার হয়ে থাকে। এ অর্থপাচারের মূল হোতা হলো "অনৈতিক সুবিধাভোগী রাজনীতিবিদ, ঋণ-খেলাপি ব্যবসায়ী, দুর্নীতিবাজ আমলা ও বিভিন্ন স্তরের সরকারি কর্মচারি।" এত অর্থপাচার হওয়া সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ মাইলফলকে পৌঁছানোর পেছনে একটাই কারণ, তা হলো, ব্যাপক পরিমাণ 'প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স'। ক্বুরবানির কারণে হঠাৎ রেমিট্যান্সের প্রবাহ বাড়লেও সামনের দিনগুলোতে রেমিট্যান্সের প্রবাহ কমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আশংকা করছেন অর্থনীতিবিদরা।

অনেক প্রবাসী শ্রমিক কভিড মৌসুমে দেশে এসে এখনও আটকে আছে। কঠোর ইমিগ্রেশন প্রসেসিংয়ের কারণে যেতে পারছেনা। তার উপর "মরার উপর খাঁড়ার ঘা" হয়ে দেখা দিচ্ছে "কভিডের ভুয়া নেগেটিভ সার্টিফিকেট জালিয়াতির কারণে বিদেশে বাংলাদেশিদের ভাবমূর্তি সংকট"। উল্লেখ্য, সম্প্রতি ইটালি, দ. কোরিয়া, জাপানসহ কয়েকটি দেশে কভিডের ভুয়া নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে (পরবর্তীতে পজিটিভ সনাক্ত হয়) বাংলাদেশিদের ভ্রমণের কারণে সারাবিশ্বে বাংলাদেশিদের ভ্রমণ নিয়ে আতংক সৃষ্টি হয়েছে। কভিডের আচমকা ধাক্কা খাওয়া উন্নত বিশ্বের দেশগুলো কখনোই চাইবেনা যে, অন্যান্য দেশ থেকে কভিড পজিটিভ নিয়ে কেউ ভ্রমণ করুক। কথায় আছে, "ন্যাড়া একবার বেল তলায় যায়"। ইতোপূর্বে ইটালির কয়েকটি শহরে বাংলাদেশি অভিবাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভও হয়েছে। অন্যদিকে, কভিড সার্টিফিকেট না-থাকার কারণে অনেক প্রবাসী শ্রমিক ফ্লাইট ক্যানসেল করতে বাধ্য হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে প্রবাসী যারা দেশে আটকে আছে, চাকরিতে যোগ দিতে পারছেনা, তাঁদেরকে অতিদ্রুত কর্মস্থলে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা।

সীমিত ভূখন্ডে বিপুল সংখ্যক মানুষের বসবাস আমাদের এ সোনার বাংলাদেশে। স্রষ্টা-প্রদত্ত প্রাকৃতিক সম্পদ শ্রমই আমাদের অন্যতম মূলধন। কোটি কোটি মানুষের ঘামই এদেশের অর্থনীতির মূল জালানি। এ জালানি (ঘাম) রপ্তানি করেই আমরা দু'বেলা দুমুঠো খেতে পাই।
কভিড-১৯ মহামারির কারণে এমনিতেই দেশে বেকারত্ব সংকট ঘনীভূত হয়ে আসছে, যারা চাকরি হারিয়েছে কিংবা চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে তাঁদের সংখ্যা প্রায় 'দেড় কোটি'। তার উপর প্রবাসীদের যারা দেশে আটকে আছে, তাঁরা যদি কর্মক্ষেত্রে ফিরে যেতে না-পারে; মধ্যপ্রাচ্যসহ বাংলাদেশের শ্রম বাজারগুলো থেকে শ্রমিকরা কাজ হারিয়ে দেশে ফিরে আসে; তাহলে, আমাদের অর্থনীতির 'তাসের ঘর' ধ্বসে পড়বে নিঃসন্দেহে। তাই, সরকারের উচিত প্রবাসী শ্রমিকদের প্রতি আরও আন্তরিক হওয়া এবং আমাদের শ্রম বাজারগুলোকে টিকিয়ে রাখতে যথাযথ, বিচক্ষণ ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত গ্রহন করা। সবসময়ের মত এক্ষেত্রেও যেন "চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে" দশা না-হয়।


লেখা পাঠাতে যোগাযোগ করুনঃ

ভূবন মুন্সী 
 shimul2016.bsm@gmail.com

Wednesday, July 29, 2020

বিশ্বায়ন,অর্থনীতি ও রাজনীতি এবং আমার ভাবনা || মেহেদী হাসান।

মেহেদী হাসানের কলমে মেসেঞ্জার অব কসমোলজিতে উঠে এসেছে বিশ্বায়ন, রাজনীতি ও অর্থনীতির ভাবনা সমূহ। বদলে যাওয়া বিশ্বের নতুন রূপ আবিস্কারের প্রয়াস আর্টিকেলের পুরোটা জুড়ে। পুড়োটা পড়ুন। মেসেঞ্জার অব কসমোলজির সাথে থাকুন।




বিশ্বায়ন,অর্থনীতি ও রাজনীতি এবং আমার ভাবনা



বিশ্বায়ন

বিশ্বায়ন বিংশ শতকের শেষভাগে উদ্ভূত এমন একটি আন্তর্জাতিক অবস্থা যাতে পৃথিবীর বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থা দৈশিক গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তঃদেশীয় পরিসরে পরিব্যাপ্তি লাভ করেছে। এর ফলে সারা বিশ্ব একটি পরিব্যাপ্ত সমাজে পরিণত হয়েছে এবং অভিন্ন বিনিয়োগ,কর্মসংস্থান,উৎপাদন ও বিপণন প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন দেশ যুগপৎ অংশ গ্রহণ করছে।

এটি পারষ্পরিক ক্রিয়া এবং আন্তঃসংযোগ সৃষ্টিকারী এমন একটি পদ্ধতি যা বিভিন্ন জাতির সরকার, প্রতিষ্ঠান এবং জনগণের মধ্যে সমন্বয় ও মিথস্ক্রিয়ার সূচনা করে। এই পদ্ধতির চালিকাশক্তি হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ আর এর প্রধান চালিকাশক্তি হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তি।

বিশ্বায়ন শব্দটি বতর্মান সময়েবহুল ব‍্যবহৃত শব্দ।আমরা সকলেই কম বেশি এই শব্দটি ব‍্যবহার করে থাকি।তবে ১৯৬০ সালের আগে বিশ্বায়ন শব্দটি খুব একটা ব‍্যবহৃত না হলেও ১৯৬০ সালের পর থেকে ব‍্যাপক হারে ব‍্যবহৃত হতে থাকে এবং বতর্মানে এটি ব‍্যবহারের পাশাপাশি  ব‍্যাপকভাবে প্রয়োগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।সুতরাং প্রাচীনকাল ও মধ্যযুগে বিশ্বায়নের প্রয়োগ  ইউটোপিয়া হলেও বতর্মানে এর প্রয়োগকে আর ইউটোপিয়া বলা যাবে না। কেননা বতর্মান পৃথিবীর বাস্তবতায় কোন মানুষই বিশ্বায়নের বাইরে থাকতে পারবে না। বিশ্বায়ন আমাদের জীবনে কতটুকু প্রভাব বিস্তার করছে সেটা বুঝতে হলে আমাদেরকে বুঝতে হবে প্রযুক্তি আমাদের জীবনে কতটুকু প্রভাব বিস্তার করছে। কারণ প্রযুক্তিগত উত্তরণের সায‍্যুতায় পৃথিবী আজ গ্রামের থেকেও ছোট। পৃথিবীর কোথায় কি ঘটছে সেই খবর মিডিয়া বা সোস্যাল মিডিয়া মারফত আমাদের কাছে (না চাইলেও) খুব দ্রুতই পৌঁছে যাচ্ছে যেটা পূর্বে সম্ভব ছিল না।

বর্তমানে বিশ্বায়ন আর প্রযুক্তির প্রভাব  আমাদের উপর কতটুকু সেটা বুঝার উৎকৃষ্ট উদাহরণ কোভিড-19 ভাইরাস। এই ভাইরাসের  উৎপত্তি যেখানেই ঘটুক না কেন এর প্রভাব বা ভয়াবহতার হাত থেকে পৃথিবীর কোন রাষ্ট্রই রক্ষা পাচ্ছে না। উল্লেখ্য যে পৃথিবীর ইতিহাসে পূর্বের কোন সংকটই সমগ্র পৃথিবীর মানুষকে এভাবে তটস্থ করতে পারে নাই। আবার এই বিশ্বায়নের ফলে আজ এটা সত‍্য হয়ে দাঁড়িয়েছে পৃথিবীর সমস্ত কাঁটাতার থাকবে কি থাকবে না।

অর্থনীতি ও রাজনীতি

বিশ্বায়নের সাথে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সকল কিছুই অঙ্গাঅঙ্গি ভাবে জড়িত। সুতরাং অর্থনীতি ও রাজনীতিও এর বাইরে নয়। বিশ্বায়নের অর্থনীতি ও রাজনীতিকে আমরা গ্লোবাল অর্থনীতি ও গ্লোবাল রাজনীতি বলতে পারিণ(তবে এই দুই বিষয় নিয়ে এখনও অনেক গবেষণার প্রয়োজন থাকতে পারে)। এই গ্লোবাল অর্থনীতি ও রাজনীতি সম্পর্কে জানতে হলে আমাদেরকে পূর্বের অর্থনীতি ও রাজনীতি সম্পর্কে কিছুটা ধারনা রাখা প্রয়োজন।

আধুনিক কালে অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ভাবে বিশ্বের শাসনকার্য পরিচালনা করার জন্য অর্থনীতি ও রাজনীতিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়।( অর্থনীতি ও রাজনীতি কে একত্রে করে আলোচনার কারণ সেই প্রাচীনকাল থেকে এই দুইটা পৃথিবীর ইতিহাসে পাশাপাশি অবস্থান করে চলছে)।

1. কলোনিজম বা কলোনি কালীন অর্থনীতি ও রাজনীতি

এই কলোনি কালীন অর্থনীতি ও রাজনীতির সূচনা ঘটে 1492 সালে কলম্বাসের আমেরিকা দখলের মাধ্যমে এবং পরিসমাপ্তি ঘটে 1941 সালের আগষ্ট মাসে তৎকালীন গ্রেট বৃটেনের সাথে আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট এর একটি গোপন চুক্তির মাধ্যমে। যে চুক্তির কথা 90% মানুষ জানে না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলার যখন ইংলিশ চ‍্যানেল পাড়ি দিয়ে বৃটেন দখল করতে আসে তখন বৃটেনের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল রুজভেল্ট এর কাছে সাহায্য চাইলে রুজভেল্ট এই চুক্তির মাধ্যমে বৃটেনকে সাহায্য করতে রাজি হয়। চুক্তিতে উল্লেখ ছিল যদি মিত্র শক্তি জয়ী হয় তবে বৃটেন কলোনী প্রথা বিলোপ বা নিষিদ্ধ করবে এবং পরবর্তীকালে 1945 সালে নিষিদ্ধ হয়। আর 1945 থেকে 1949 সালের মধ্যে সমস্ত কলোনি বিলুপ্ত ঘোষণা করে। কলোনি কালীন অর্থনীতি ও রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ ছিল বৃটেন, হল‍্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, পর্তুগাল, স্পেন এই ছয়টি দেশের হাতে।

2. নয়া সাম্রাজ্যবাদ অর্থনীতি ও রাজনীতি

নয়া সাম্রাজ্যবাদ অর্থনীতি ও রাজনীতির সূচনা ঘটে 1945 সালে রুজভেল্ট এর হাত ধরে জাতিসংঘ, আই এম এফ+বিশ্বব‍্যাক, এবং WBO প‍্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে এবং পরিসমাপ্তি ঘটে 2009 সালে(2008 সালের অর্থনৈতিক মন্দার মধ্য দিয়ে )। এই নয়া সাম্রাজ্যবাদ অর্থনীতি ও রাজনীতি  প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ছয় পান্ডবের হাত থেকে একক আমেরিকার হাতে পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণ চলে আসে। এছাড়া ডলারকে একক বৈশ্বিক মুদ্রা হিসেবে প্রচলন সহ একাধিক বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলো পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নেয়। এছাড়াও মুক্ত বাজার অর্থনৈতিক ব‍্যবস্থা প্রচলন করে পৃথিবীর অর্থনীতি মুষ্টিমেয় কিছু ব‍্যক্তির হতে গোচ্ছিত হয়।

3. গ্লোবালাইজেশন বা গ্লোবাল অর্থনীতি ও রাজনীতি

গ্লোবাল অর্থনীতি ও রাজনীতির সূচনা ঘটে 2009 এবং এটি এখন পযর্ন্ত চলমান আছে।
গ্লোবাল অর্থনীতি ও রাজনীতির মধ্য দিয়ে পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা আমেরিকার হাত থেকে চীনের হাতে চলে আসবে। আমেরিকা আর চীনের বাণিজ্য যুদ্ধ যার প্রথম প্রমাণ। চীনের হাতে কেন আসবে তার স্পষ্ট প্রমাণ চীন-ইরান সমোঝতা চুক্তি যা মধ্যপ‍্রাচ‍্য সহ ইউরোপের সকল দেশ সমূহের  চীনের দিকে ঝুকে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

তবে এখানে একটা বিষয় উল্লেখ্য যে যেসকল দেশ বা রাষ্ট্রপ্রধান গ্লোবাল অর্থনীতি ও রাজনীতিকে ধারণ না করে কলোনি অর্থনীতি ও রাজনীতি আর নয়া সাম্রাজ্য অর্থনীতি ও রাজনীতিকে আকড়ে থাকবে সেই দেশ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক  দিক থেকে পেছনে পড়ে যাবে।আর যারা বুঝতে পারবে তারা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দিক থেকে চীনকে অতিক্রম করতে না পারলেও সম অবস্থানে থাকবে।

এখানে একটা বিষয়ে ধারণা থাকা দরকার গ্লোবাল অর্থনীতি ও রাজনীতির পথটা কিন্তু আমেরিকা তৈরি করে দিয়েছে যেমন করে কলোনি অর্থনীতি ও রাজনীতি  সাম্রাজ্যবাদ অর্থনীতি ও রাজনীতির পথ তৈরি করে দিয়েছিল।

আবার আমেরিকা যদি এই গ্লোবাল অর্থনীতি ও রাজনীতিকে ঠেকিয়ে রাখতে চায় তা যেমন তারা পারবে না তেমনি গ্লোবাল অর্থনীতি ও রাজনীতির সম্পূর্ণ বিষয় যদি ধারণ  করে সেই অনুযায়ী চলেও তবুও সে তার হারানো জায়গা ফিরে পাবে না। ইতিহাস কথা কয়।

সুতরাং এই নয়া অর্থনীতি ও রাজনীতিকে প্রতিটি রাষ্ট্রের মেনে নেওয়াই শ্রেয় আখের পৃথিবী ও তার নিজ দেশের মঙ্গলের প্রশ্নে। আর মেনে না নেওয়া মানে পৃথিবী ও পৃথিবীতে বসবাসকারী সকল প্রাণীর জন্য অশান্তির বাহক।

কেননা সন্তান প্রসবের যখন সময় হয় তখন কেউ যেমন তাকে ঠেকিয়ে রাখতে পারে না বা জোর করে ঠেকিয়ে রাখলে যেমন মা সন্তান দুইজনকেই হারানোর সম্ভাবনা থাকে তেমনি নতুন এই অর্থনীতি ও রাজনীতিকে ঠেকানোর চেষ্টা করা মানে পৃথিবী আর অর্থনীতির দুই টাই ধ্বংসের চেষ্টার সামিল,যা অর্থনৈতিক মন্দা আর বিশ্বযুদ্ধের সম্ভবনা জাগিয়ে তুলে।আর বাস্তবতাকে মেনে নেওয়া মানে পৃথিবীতে জান্নাতের সুবাস অনুভব করা।

সবার শুভবুদ্ধির উদয় হোক। ধরিত্রের বুকে শান্তি নেমে আসুক।