Tuesday, May 26, 2020

মানুষের মানচিত্র - এম. ইকবাল


মানুষ শব্দটার সাথে মান-সম্মানবোধের একটা নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। যে মানুষটার নিজের মান-সম্মানবোধ আছে সে তুচ্ছ কারনে কাউকে অপমান করতে পারে না। বিশেষ করে মানুষটি যখন বৃদ্ধ, বাবার বয়সী, তার অসচেতনতাকে শাস্তিযোগ্য ভাবাটাই একটা অপরাধ।

Google করে জানতে পারলাম-

১. মানুষ শব্দটি এসেছে হিন্দু পুরানে বর্নিত মানু শব্দ থেকে। মানু শব্দের অর্থ প্রত্নতাত্ত্বিক পুরুষ বা প্রথম পুরুষ। মানু একটি বিশেষন। পুরানে অনেক মহাপুরুষকে মানু বলা হয়েছে। সংস্কৃত শব্দ মানব বলতে বুঝায় মানুর সন্তান। মানু থেকে মানুষ শব্দের উৎপত্তি।

আসলে 'মানুষ' শব্দের উৎপত্তি হয় 'মান' ও 'হুশ' শব্দদ্বয় যুক্ত হয়ে। (ভাবার্থ: 'মান' তথা 'আত্মসম্মানবোধ' এবং 'হুশ' তথা 'বিবেক' যার আছে সেই মানুষ।

২. হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি মতে− ব্রহ্মার মন থেকে উদ্ভূত হয়েছিলেন মনু । আর মনু থেকে মানুষ জাতির উৎপত্তি হয়েছিল।

৩. মানুষ শব্দটির মূল আরবী ধাতু হচ্ছে 'উনসুনম্ব, আর উনসুন মানে হচ্ছে স্নেহ ভালোবাসা। যার মধ্যে এই স্নেহ ভালোবাসা দিয়ে দেয়া হয়েছে আরবীতে তাকে বলা হয় 'মানুষম্ব।

প্রচলিত অর্থে যার মধ্যে যথার্থ মান-সম্মানবোধ, বিবেকবোধ (বিচার-বিশ্লেষন-বিবেচনা করার ক্ষমতা), স্নেহ-ভালোবাসা আছে সেই মানুষ।

যদিও এই আধুনিক সময়ে ‘মানুষ’ বলতে শুধু ‘মনুষ্যত্ব’ সম্পন্ন মানুষকেই বোঝায়। আর মনুষ্যত্ব বলতে সমাজগত পরম্পরা আর পারস্পারিকতায় অর্জিত সংস্কৃতিকে বোঝায়। অবিরত সংগ্রামের মধ্যে দিয়েই যা এগিয়ে নিতে হয়।

জংগলে বেড়ে উঠা একটা মানবশিশুর আচরন জংলীর মতই হয়। এজন্য একটা মানব শিশু ও জানোয়ারের বাচ্চার মধ্যে খুব বেশি  পার্থক্য নেই। পার্থক্য তৈরী হয় যখন মানবশিশু সমাজ থেকে শিক্ষা গ্রহন করে মানবীয় গুনাবলী অর্থাৎ মনুষ্যত্ব অর্জন করে।

প্রশ্ন হলো,

আজকের সমাজ কি মানবীয় গুনসম্পন্ন মানুষ গড়ে তুলতে সক্ষম? 

আজকের শিক্ষাব্যবস্থা কি আমাদের যথার্থ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়ক?  

আজকের রাষ্ট্রব্যবস্থা কি চায় আমরা যথার্থ মানুষ হয়ে উঠি? 

তাহলে আমরা কি করে আশা করি যে ডিগ্রি অর্জন করলেই কারো মধ্যে বিবেকবোধ থাকবে? 

এরপরও আমরা যতটুকু মানুষ হতে পেরেছি তা আমাদের বাবা-মা চেয়েছেন বলে।

জন্মের পর থেকে আমরা যা শিখেছি মা-বাবার কাছ থেকে, ততটুকুই মানুষ হতে পেরেছি। মানুষ হিসেবে আরো উন্নত হয়ে গড়ে উঠবার বাকি দায়িত্বটুকু ছিল রাষ্টের শিক্ষাব্যবস্থার হাতে। রাষ্ট্র সেখানে ব্যর্থ। অথচ আমরা সেখানে সরব না হয়ে তথাকথিত শিক্ষায় উচ্চশিক্ষিত একজন ব্যক্তি যখন কোথাও বিবেকবর্জিত, দায়িত্বহীন কর্তৃত্ববাদী আচরণ প্রকাশ করছে তখন সবাই তার বিরুদ্ধে বিষোধগার প্রকাশ করছি।

কি করে আমরা একটা অন্তঃসারশূন্য শিক্ষাব্যবস্থা দ্বারা গড়ে উঠা প্রজন্মের কাছ থেকে মর্যাদাপূর্ণ আচরণ আশা করছি? 

নিঃসন্দেহে দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার দায়িত্বজ্ঞানহীন ( মাস্ক না পরার কারনে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রেখে ছবি তুলে) খবরদারি করেছে। আমাদের দেশে ব্যপক মানুষের মধ্যে যেমন সচেতনতার অভাব রয়েছে তেমনি বিশাল জনগোষ্ঠীর ঘরে দিন আনি দিন খাই অবস্থা। একদিন কাজে না বেরুলে ঘরের সদস্যদের মুখে খাবার জুটবে না। এ ধরনের মানুষের জন্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে শাস্তির বদলে মুখের মাস্ক সরবরাহ করা উচিৎ ছিল।

খেটে খাওয়া অসচেতন মানুষগুলোর প্রতি কোনো দায়িত্ব পালন না করেই কি করে তাদের কাছ থেকে সচেতনতা আশা করে? দায়িত্ব ও কর্তব্যহীন কোনো দাবিই কি বৈধ? 

কথা হলো, আম গাছ থেকে কাঁঠাল আশা করা কি যৌক্তিক?
অথবা বিড়ালের ঘরে কি বাঘের জন্ম হয়?

মার্চ, ২৮, ২০২০

No comments:

Post a Comment