আজ ২৫ এপ্রিল পহেলা রমজান, মা সন্ধায় ফোন দিয়ে জানিয়েছেন যেন ভুলে না যায়। আজকাল আর বেশি কিছু মনে রাখতে পাড়িনা, যেমন আজকেই মাগরীবের নামাজ পড়ে মার সাথে কথা বলে পড়তে বসেছি, মাথাটা ঝিমঝিম করছিল তাই ভাবলাম একটু বিছানায় রেস্ট নিই। অমনি ঘুম। যথারীতি মা ফোন দিল। কারন মাকে আগেই বলা আছে আমারে যেন ফোন দেয়, তা নাহলে আমার খাওয়া দাওয়া কিছুই হবেনা। ফোন ধরলাম বললাম আমারে মাগরিবের আগে ফোন দেওনাই কেন নামাজটা পড়তে পাড়লাম না? মা হাসছে।
আমি: হাসছো কেন?
মা: তুমিই না মাগরিবের নামাজ পড়ে আমারে ফোন দিলা! তোমার আব্বার সাথে কথা বলে পড়তে বসতেছো বলে ফোন রাখলা!
আমি: একটু জোড় দিয়ে বললাম ,আমি ভুলে যায় মানে কি সব ভুলে যায় নাকি?
মা: আচ্ছা ঠিক আছে, এখন সেহেরী খাওয়ার ব্যাবস্থা কিছু করছো নাকি ঘুমাইলেই চলবে?
আমি: সবি আছে শুধু কাঁচা মরিচ নাই।
মা: তাইলে এখন?
আমি: মরিচের গুরা আর শুকনা মরিচ আছে চালিয়ে নেওয়া যাবে আজকে।
মা: উঠে তারাবি পড়ে রান্না বান্না করে খেয়ে দেয়ে তাহলে ঘুমাও আমি আবার সেহেরির সময় ফোন দিবো।
বললাম আচ্ছা, খানিক পরেই মনে পড়লো তাইতো, আজকে প্রথম রোজা আব্বার সাথে তো কথা বলাই হইছে কারন মাস খানিক আগে মার সাথে কথোপকথন টা এমন ছিলো যে...
আমি: একটা কথা বললে বিশ্বাস করবে মা?
মা: বলো দেখি কথাটা কি?
আমি: তুমি যে আমাকে একদিন বলেছিলে "তুই শুধু পান খাস,তুই এইটাওইডা সবি খাস" মনে আছে?
মা: থাকবোনা কেন?
আমি: আমি না মা, ঐ এইটাওইডা খাওয়া বাদ দিছি।
মা: ভালো করছো ।
এইটাওইডার কাহিনী আরেক দিন লিখবো আপাতত এইটুকো জাইনা রাখেন যে এইটাওইডার মানে হচ্ছে সিগারেট।
মা: তুমি তো ছাড়লা তুমার বাপেরে কি করবা আমি: একিদিন সময় করে মাইনকার চিপায় ফেলতে হবো।
মা:দেখ কি কই?
তার সুত্র ধরে গত তিনদিন আগে বাপরে ফেললাম মাইনকার চিপায়..
আমি: মা কিছু বলছে আপনেরে,?
বাপে: বললো হুম
আমি: কি কইছে?
বাপে: আমি তুমারে যেদিন ধরছিলাম, ওই দিনই বলছে, রাতে যে ছেলেরে কেউ সামনাসামনি বলে? তোমার মা নাকি পড়ে তুমারে বুঝাই বলবে।
আমার বাপেও আমার মতো চাছাছুলা যা বলার সামনাসামনি...
আমি: অইটা পুড়ান কাহিনী নতুন কি কইছে?
বাপে: তুমি নাকি ছাইড়া দিছো..
আমি: তাইলে আপনি কি করবেন নিয়ত করলেন?
বাপে: আমি .আম..আমিই..
আমি: হ.হ.আপনি তো বুজলাম, কি করবেন? বাপে: হুম আমি..
আমি: আচ্ছা তাইলে থাক, আমিও বাসার নিচে যায় দুই পেকেট নিয়া আসি একটা আপনার জন্য জমায় রাখমো আর আরেকটা আমি খাইতে থাকি, কি কন?
বাপে:রোজার শুরুতে বাদ দিমু।
তাই আজকে মাগরিবের পরেই ফোনে বাপকে চাইলাম, আব্বা কি জানি বলছিলেন মনে আছে? ফোন লাউড স্পিকারে ছিল মনে হয়, মা বলে উঠলো পাশথেকে, আজকে বিকালেও নিয়া আসলো এক প্যাকেট।
আমি: আব্বা তাইলে?
বাপে: এইটাই শেষ আর খাবো না।
আমি,আচ্ছা বলে ফোন রেখে পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম এগুলাই মনে করতে করতে আবার ঘুম।
ভাংলো এক শুভাকাঙ্ক্ষীর ফোনে তাকে একটা ধন্যবাদ দিতে কার্পণ্য না করে কিছুক্ষণ কথা বলে এই সেই করতে করতেই দেখি ১১টা বেজে গেছে। ভাবলাম তারাতারি রান্না করতে হবে। আগে ডিম আর আলু সিদ্ধ বসিয়ে দিয়ে নামাজ পড়ে ফেলবো, নামাজের দোয়া গেছি ভুলে মাকে ফোন দিলাম মা বলে দিয়ে বললো খাইছি রান্না করছি কিনা? বললাম হ্যা.
ফোন রেখে দিয়ে ভাবলাম মিথ্যা বললাম, মাঝেমাঝে আপনজনের দুঃশ্চিন্তা মুক্ত রাখার জন্য দুই একটা মিথ্যা বলা যায়, কি বলেন?
নামাজ পড়াশেষ করে দেখি দুপুর বারোটা বিশ। তখনো খাওয়া হইনি, মজার ব্যাপার হচ্ছে, যেদিন আপনার এলোমেলো যাবে কেমন যেন সব বিষয় এলোমেলো হবে, এই আজ দুপুরে ভাত রান্না করছি, শুকনো মরিচ তেলেভেজে আলুভর্তা করছি, ভাতেরমার গালতে গিয়ে বেশিরভাগ গেলোপড়ে অথচ এর আগে কখনো এই বয়সে কোনদিন এরকম হইনাই। বললাম আজ এই টুকোই রিজিকে আছে তাছাড়া বিকাল হতে বেশি দেরী নেই নাস্তা করে নিয়া যাবে বলে খেয়ে ঘুম।
ঘুমের পরের কাহিনী তো এতোক্ষন বক বক করলাম।
রান্না করলাম কাঁচা টমেটো আর সিদ্ধ আলু দিয়ে ডিম তরকারি, আর দুপুরের আলোভর্তা দিয়ে খেয়ে শেষ করে দেখি দেড়টা, ১.৩০ এএম।
ভাবলাম একটু পরেই তো আবার উঠতে হবে তার চেয়ে বরং একবারে সেহেরী খেয়েই ঘুমায় বলে গিয়ে বসলাম বেলকনিটাতে। কুকুর গুলো খুব বেশি চিল্লাচ্ছে আজ কিন্তু কাক টা আর কিচ্ছু বলে না কারন হয়তো বুঝে গেছে যে এই প্রাণীটি তার অস্তিত্বে ভাগবসানোর কেউনা নইতোবা আজ দিনের বেলায় বৃষ্টি হইছে ,কয়েক দিন থেকে দেখছি, সে ডিমে তা দিচ্ছে , হয়তো ঠান্ডাতে তার আগত সন্তানদের বেড়ে উঠায় বিঘ্নিত না হয় এ জন্য সে নাড়াচাড়া বা শব্দ কিছুই করছে না।
আমি ভাবতেছি বাহ কত কষ্ট করেই না কাকটা তার সন্তানদের এই অসুস্থ পৃথিবীতে নিয়ে আসতে আগ্রহী অথচ প্রতিনিয়তো দেখি দুই পাওয়ালা মানুষ গুলো, তাদের আগত সন্তানদের , রাস্তার পাশে ডাস্টবিনে,পলেথিন ব্যাগে বা ময়লার ঝুরিতে ভরে. বাসার ছাদ থেকে নিচে কোন বস্তিঘর এর চালে , হাই কমোটের ফ্লাস মেশিনের চলন্ত পানির ধারায়...আরো অনেক অনেক..
তা হলে কি মানুষ আজ কাকের থেকেও নিচে?
আপনারা বলবেন সব মানুষ তো আর তা করছে না। তাহলে যারা করছে তারা, তাদের কি পা দুইটা না? চোখ দুইটা না? হাত কয়টা? তাদের মস্তিষ্কের ওজন কোন স্বাভাবিক মানুষের মস্তিষ্কের চেয়ে কম? নাকি তাদের মস্তিষ্কের ওজন কাকের মস্তিষ্কের চেয়েও কম? তাহলে তারা কারা কোন গ্রহের বাসিন্দা??????
হ্যা ভালো মানুষও আছে, এই মুহুর্তে যে মা গর্ভবতী, হয়তো ডাক্তার দিনক্ষন সবি বলে দিয়েছেন যে, অমুক মাসের তমুক সপ্তাহে আপনার সন্তান এই পৃথিবীতে আসতে যাচ্ছে। সেই মা নিজেও হয়তো মিনতি করছে ঈশ্বরের কাছে যে আজকের এই অসুস্থ পৃথীবিতে যেন তার আগত সন্তানটা না আসে। সে হয়তো চাচ্ছে পৃথীবি সুস্থ হোক তার পর না হয় তার সন্তান আসুক। হাহাহা.....কিন্তু সে জানেনা যে এই পৃথীবি কখনই সুস্থ হবে না কারন এখানে অস্তিত্বের লড়াইয়ে লিপ্ত অসুস্থ এক জাতি নাম মানুষ বসবাস করে, আর একটা অসুস্থ জাতির আবাসভূমি কখনই সুস্থ হতে পাড়েনা।
ভাবতে ছিলাম বেলকনিতে চেয়ারটায় বসে বসে মাথাটা আরো বেশি ঝিমঝিম করে চোখ দুটো বন্ধ হয়ে আসছে.....
হঠাৎ তন্দ্রা কেটে গেলো, কেউ একজন ডাকছে বুঝতেছিলাম না কোন দিক থেকে, চেয়ার থেকে উঠে ঘরের ভিতররে দিকে যাবো এই মুহুর্তে আবার ডাক..খেয়াল করলাম নিচে রাস্তা থেকে ডাক দিচ্ছে, বললাম কে?
পাঞ্জাবী দেখে চিনতে পাড়ছেন না?
আমি: ল্যাম্পপোস্ট এর লাইট তো বন্ধ দেখা যাচ্ছেনা ঠিক মতো.
একটু ভালো করে দেখুন.
আমি নিচু হয়ে খেয়াল করে দেখলাম আশরাফ সাহেবের মতোই দেখতে...
আমি: এতোরাতে এই লকডাওন এর সময় আপনি কি করছেন অন্ধকার রাস্তায়?
সিগারেট খেতে মন চাচ্ছিলো কিন্তু কারও কাছে পেলাম না একটা সিগারেট দিবেন জনাব?
আমি: আমিতো ওটা খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি।
ওহহো... ..
আমি: আচ্ছা আপনি আসলেন কোথা হতে? হসপিটাল থেকে।
আমি: কেন?
কিছুদিন আগে নহণ্যতে নামে এক ভদ্রলোক বুকের এক্সরে করতে গিয়েছিলো মিরপুর পপুলার ডায়াগনস্টিকে।
আমি চমকে গেলাম, আমার এক্সরের খবর এ জানলো কি করে?
বললো আপনার রিপোর্ট টা আনতে ভুলে গিয়েছিলেন আপনিতো এখন অনেক কিছুই ভুলে যান।
আমি: নাহ, আমার রিপোর্ট তো আমার কাছেই।
ওটা ভুল, অন্যজনের।
আমি: কেমনে?
হা..হা...হাসতে হাসতে বললো আপনি যেটার জন্য এক্সরে করিয়েছেন ডাক্তার সাহেব সেটা ভুল বুঝেছে। কিন্তু আমার চোখে তা ধরা পড়তে বাধ্য..
আমি থতমত খেয়ে বললাম, আপনি দেখি সবি জানেন তো এতদিন কোথায় ছিলেন , আসেন নাই কেন?
বললো আপনি যেমন অসময়ে যতি বিহীন ইতি টানেন তেমনি আমিও ইতির পরে আবার শুরু করি যতি চিহ্ন দিয়ে ইতি টানবো বলে।
আমি: রিপোর্ট টা দিবেন কেমনে, মেইন গেইট তো বন্ধ?
বললো ব্যাপার না আমি রিপোর্ট দেখেছি আপনি যা ভাবছেন ঠিক তাই আছে একদম গুনে গুনে দেখেছি।
আমি: মানে?
হাহাহা..
আপনার বাম পাঁজর আর ডান পাঁজর কোন পাঁজরেই হাড়ের সংখ্যা কম বেশী নেই।
আমি: বিজ্ঞান কি সব কিছুর ব্যাখ্যা দিতে পারবে? ?
বললো এতদিন ধরে দিয়ে আসছে
আমি: এই যে আপনি আমার সাথে কথা বলছেন এই মাঝ রাতে এটা কিভাবে ব্যাখ্যা দিবে বিজ্ঞান?
কিছুক্ষন চুপ করে বললো আজকে কুকুর গুলো বেশি ঘেউ ঘেউ করছে তাই না?
আমি: হ্যা অন্যান্য দিনের তুলনায় একটু বেশিই মনে হচ্ছে।
বললো এটার কি ব্যাখ্যা দিবেন?
আমি: ভাবতে হবে..
বললো ভাবেন রিপোর্ট টা ততোদিন আমার কাছেই থাকলো আবার দেখা হবে অসময়ে..আমি ভাবছি তাইতো কুকুর গুলিতো এতো রাত অব্দি চিল্লায় না তাহলে আজকে এতো চিল্লাছে কেন তাহলে তারা কি??
মনে পড়তেই ডাকলাম....জনাব..?
নিচে তাকিয়ে দেখি কেউ নেই আরো কয়েক বার ডাকলাম কুকুরগুলিও কেন জানি শান্ত হয়ে গেলো নিরবতা আবার চেপে বসলো মোবাইলের ঘড়িতে দেখি রাত ২.১৬.
ভাবলাম ভিতরে গিয়ে তাহাজ্জুদ নামাজ টা পড়েই ফেলি অজু করতে গেলাম ওয়াশরুমে শব্দ শুনলাম মোবাইল বাজে ফিরে এসে দেখি মা এর মধ্যে তিনবার ফোন দিয়ে ফেলেছে।
ফোন দিয়ে বললাম ঘুমাইনি খেয়েদেয়ে একবারে ঘুমাবো। মা বললো আমি আরো ভাবলাম ঘুম থেকে উঠতে পাড়লে কিনা?
আমি মুচকি হাসি দিয়ে মনে মনে বললাম চাইলেই কি ঘুমানো যায়..?
ঘুমকে আমার কাছে আসতে হয় অনেকটা পথ পারি দিয়ে পায়ে হেটে এই লকডাওনের রাতে...খাওয়া শেষ করে নামাজ পড়ে শুয়ে শুয়ে ভাবছি ব্যাখ্যা দিবো কিভাবে...??
২৫.০৪.২০২০
No comments:
Post a Comment