Friday, July 31, 2020

রেমিট্যান্সের দেশে বেওয়ারিশ প্রবাসীরা - মিরান।

মতামত


রেমিট্যান্সের দেশে বেওয়ারিশ প্রবাসীরা



মিরান
শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ,
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

কহতব্য ডটকম থেকে পড়ুন

জুলাই মাসে বাংলাদেশে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স নতুন মাইলফলক ছুঁয়েছে, যার পরিমাণ 'দুই বিলিয়ন' ডলারের অধিক। নতুন (জুলাই মাসে) আসা রেমিট্যান্সের ফলে 'বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মূদ্রার রিজার্ভ'ও নতুন মাইলফলক ছুঁয়েছে, বর্তমানে বৈদেশিক মূদ্রার রিজার্ভ '৩৭ বিলিয়ন' ডলারেরও অধিক। এ নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহ, অর্থনৈতিক-বিশ্লেষক, সচেতন নাগরিক সমাজ, সর্বোপরি সবাই আনন্দিত ও উৎফুল্ল। সরকারের কর্তা-ব্যক্তিরা রেমিট্যান্সের এ প্রবাহকে নিজেদের সফলতা বলেও দাবি করেছে। অথচ কভিড-১৯ মহামারির কারণে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মহামন্দার এ দুঃসময়ে যারা (রেমিট্যান্স যোদ্ধরা) মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, নিজেদের সুখ-শান্তিকে বিসর্জন দিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে প্রধান ভূমিকা পালন করছেন, রাষ্ট্র তাঁদেরকে প্রবাসে ন্যুনতম নিরাপত্তা ও মানবিক সহযোগিতা দিতে অপারগ বা অনিচ্ছুক।

মালেশিয়ায় গ্রেফতারকৃত বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিক রায়হান কবিরের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের 'প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী' ইমরান আহমেদ যে মন্তব্য করেছেন, তা অযাচিত, অগ্রহনযোগ্য, অদূরদর্শি ও সংবিধান বিরোধী। একজন নাগরিকের বিদেশে আইনি সহায়তার প্রয়োজন হলে, রাষ্ট্র তাঁকে সার্বিক সহায়তা দিতে বাধ্য, তাঁকে তা দেয়া হয়নি। রায়হন কবীরের ভাষ্যমতে, "আমি তো সত্য কথা বলেছি, কভিড মৌসুমে আমরা যে যে সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হয়েছি, তাই বলেছি। আমি তো কোনো অপরাধ করিনি।" অথচ তাঁর কথাগুলো বলা দরকার ছিল রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের, কারণ, কভিড মৌসুমে মালেশিয়ায় ৮-৯ লক্ষ বাংলাদেশি প্রবাসী শ্রমিকের অনিশ্চিত ও দুর্দশাগস্ত জীবন কেটেছে, যাদের যাবতীয় নিরাপত্তার দায়ভার আইনানুযায়ী স্বীয়-রাষ্ট্রের উপরই বর্তায়।

মালেশিয়ায় বাংলাদেশের প্রায় '৬ লক্ষ' বৈধ ও '২-৩ লক্ষ' অবৈধ অভিবাসী শ্রমিক রয়েছে। কভিড-১৯ মৌসুমে মালেশিয়া সরকারের পক্ষ থেকে তাঁদেরকে ন্যুনতম মানবিক সহায়তা দেয়া হয়নি। উক্ত মৌসুমে মালেশিয়া সরকার বিদেশি অভিবাসী শ্রমিকদের সাথে যে বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে, তা বিশ্বব্যাপী সমালোচিত হয়েছে। ঐ দেশে প্রবাসীদের অমানবিক পরিস্থিতি নিয়ে কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম 'আল জাজিরায়' একটি প্রতিবেদন তৈরি করার সময় বাংলাদেশি প্রবাসী শ্রমিক রায়হান কবিরের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে। উক্ত সাক্ষাৎকারে রায়হান কবির মালেশিয়ায় (কভিড মৌসুমে) প্রবাসী শ্রমিকদের বাস্তবিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরেছে, তাঁদেরকে যে ন্যুনতম মানবিক সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়নি তার বর্ণনা দিয়েছে। এ কারণে মালেশিয়া পুলিশ রায়হান কবীরকে রাষ্ট্র-বিরোধী ষড়যন্ত্র ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার দায়ে গ্রেফতার করেছে।

রায়হান কবীরকে গ্রেফতারের বিরুদ্ধে ও অবিলম্বে মুক্তির দাবীতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, আল জারিরা, প্রবাসী শ্রমিক সংগঠন ও দেশের নাগরিক সমাজ প্রতিবাদ করলেও বাংলাদেশ সরকার এ ব্যাপারে নিশ্চুপ ছিল, বরং সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী বিবিসি বাংলাকে বলেছে, "এতে কোনো সন্দেহ নেই যে সে বাংলাদেশের নাগরিক। তার প্রতি আমাদের দায়িত্ব রয়েছে। কিন্তু দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা আরও বেশি। সেখানে লাখ লাখ শ্রমিক কাজ করে। ফলে, একজন ব্যক্তির কী হলো তা আমাদের চিন্তার বিষয় নয়।"


কথা হলো, সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কি সত্যিই প্রবাসীদের সার্বিক স্বার্থের বিষয় নিয়ে আন্তরিক নাকি মালেশিয়া সরকারের সাথে এ ব্যাপারে দরকষাকষি করতে অপারগ? তারা যদি সত্যিই প্রবাসীদের কল্যান নিয়ে এত আন্তরিক হন, তাহলে কভিড মৌসুমে মালেশিয়ায় ৮-৯ লাখ প্রবাসী শ্রমিকের অমানবিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় কোনো পদক্ষেপ নেয়নি কেন? প্রবাসীরা রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠালে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায়, রেমিট্যান্সের উক্ত প্রবাহকে নিজেদের সফলতা বলে দাবি করে, অথচ প্রবাসে শ্রমিকদের অমানবিক পরিস্থিতিতে নিজ দেশ থেকে মানবিক নিরাপত্তা ও সহায়তা পাওয়ার সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতে পারেনা। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী রায়হান কবীর যে কনস্যুলেট সুবিধা পাওয়ার কথা, ন্যুনতম সে আইনি সহায়তাও রাষ্ট্র তাঁকে দেয়নি, কিংবা দিতে অপারগ।

এপ্রিল-মে মাসে লেবাননের মুদ্রা 'লিরা'র মান কমে যাওয়াতে বেতন বৈষম্যের স্বীকার হয়েছিল প্রবাসী শ্রমিকেরা, স্থানীয়দের বেতন স্কেল আগের মত থাকলেও প্রবাসী শ্রমিকদের বেতন কমানো হয় ৪০%-৫০%। ফলে, সে দেশে কর্মরত প্রায় '২ লক্ষ বাংলাদেশি'সহ প্রবাসী শ্রমিকদের আয়-রোজগার বৃহদাকারে কমে যাওয়াতে তাঁদের জীবনযাপন হয়ে উঠেছিল দুর্বিষহ। দেশে রেমিট্যান্স পাঠানো তো দূরে থাক, থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্ত করতে না-পেরে প্রবাসী শ্রমিকেরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছিল। উক্ত বিক্ষোভে একজন বাংলাদেশি শ্রমিকের মৃত্যু নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের সংবাদ মাধ্যমগুলো (মিডলইষ্ট মনিটর, আনাদোলু এজেন্সি, আল জাজিরা ইত্যাদি) বিভিন্ন প্রতিবেদন করলেও বাংলাদেশি সংবাদ মাধ্যমগুলো নিরব ছিল। অথচ, এক্ষেত্রে বাংলাদেশি সংবাদ মাধ্যমগুলোর দায়বদ্ধতা সবচেয়ে বেশি ছিল, যেহেতু লেবাননে উক্ত বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিয়েছিল বাংলাদেশি শ্রমিকেরাই। ঐ সময়ে প্রায় '২ লক্ষ' প্রবাসীদের জীবিকা হুমকির মুখে পড়লেও বাংলাদেশ সরকার সে ব্যাপারে চিন্তা করার সময় পায়নি। বেশ কয়েকজন বাংলাদেশিদের আটক ও একজনকে হত্যা করা হলেও বাংলাদেশি দূতাবাস থেকে কোনো সহযোগিতা তো পায়নি, বরং বিক্ষোভকারীদের দোষারোপ করা হয়েছিল। তারপরও 'রেমিট্যান্সের প্রবাহ বৃদ্ধি'কে নিজেদের সফলতা বলেই দাবি করে আমাদের কর্তা-ব্যক্তিরা।


কভিড-১৯ মহামারী সবচেয়ে ভয়ানক রুপ নিয়েছিল সিঙ্গাপুরের প্রবাসী শ্রমিকদের 'ডর্মিটরিগুলোতে'। ঐ দেশে বাংলাদেশি শ্রমিকদের অধিকাংশই 'জাহাজ নির্মাণ শিল্প ও অবকাঠামো নির্মাণ' খাতে কর্মরত। অতি-অল্প রুজিতে অতি-নিন্মমানের ডর্মিটরিতে থাকে বাংলাদেশি শ্রমিকেরা। কভিড সংক্রমণ রোধে সিঙ্গাপুরে লকডাউন চলাকালে বাংলাদেশি (অতি ঘনবসতিপূর্ণ) ডর্মিটরিগুলোতে কোনো মানবিক সুরক্ষার ব্যবস্থা গ্রহন করেনি সে দেশের সরকার। ফলে, সিঙ্গাপুরে কভিড সংক্রমণের 'হট স্পট' হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশি শ্রমিকদের ডর্মিটরিগুলো। ঐ সময়ে সিঙ্গাপুরে মোট কভিড আক্রান্তের প্রায় ৫০% ছিল বাংলাদেশি শ্রমিক। স্বাস্থ্য-বীমা না-থাকাতে সে দেশের সরকার আক্রান্ত শ্রমিকদেরকে কোনোরকম চিকিৎসা সুবিধা দেয়নি। মৃত্যুও হয়েছে সমান তালে। আন্তর্জাতিক শ্রম আইনে শ্রমিকদের নিরাপত্তা বিষয়ক কোনো ধারাই মানেনি সিঙ্গাপুর। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার এ ব্যাপারে সিঙ্গাপুর সরকারকে আন্তর্জাতিক আইনের উদ্ধৃতি দিয়ে শ্রমিকদের জীবনের নিরাপত্তার জন্য চাপ প্রয়োগ করা তো দূরে থাক, বরং ব্যস্ত ছিল কীভাবে উক্ত বিষয়টি (শ্রমিকদের নিরাপত্তা) এড়িয়ে চলা যায় তা নিয়ে।

মাতৃভূমি মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল। জীবনের নিরাপত্তার জন্য কভিডের হটস্পট ইটালিসহ ইউরোপের দেশগুলো থেকে যখন প্রবাসীরা দেশে ফিরে আসছিল, তাঁদেরকে সরকারিভাবে কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হওয়ায় স্বাস্থ্য, পররাষ্ট্র, প্রবাসী কল্যানসহ কয়েকটি মন্ত্রণালয় সমালোচনার স্বীকার হয়েছিল। তখন প্রবাসীদেরকে 'লাটসাহেব' বলে ব্যঙ্গ করেছিল পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন। বস্তুত, তারা কি মনের খায়েশ মেটাতে দেশে ফিরে এসেছিল? না। কারণ, ইটালি ঐ সময়ে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিল, যে পরিস্থিতিতে ইটালি সরকারের পক্ষে নিজেদের নাগরিকদেরকে চিকিৎসা সেবা না-দিয়ে প্রবাসীদেরকে চিকিৎসা দেয়াটা অসম্ভব ছিল। তাছাড়া 'এক্সচুয়াল লকডাউন' কার্যকর হওয়ার কারণে মারাত্মক খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছিল দেশটিতে। মিলান, ভেরোনাসহ উত্তর ইটালির বেশ কয়েকটি বড় শহরে খাবারের দোকান ও সুপারশপ লুটপাট হয়েছিল। সেদেশের নেটিভরা যেখানে নানামুখী সংকটে জর্জরিত, বেতন বন্ধ থাকা বাংলাদেশি প্রবাসীরা, যাদের অনেকেরই স্বাস্থ্য-বীমাও নাই, নিজ দেশে চলে আসাটাই কি স্বাভাবিক নয়? "I fuck this country-system" বাক্যটির মর্মার্থ আমরা তখন না-বুঝলেও এখন হাড়ে হাড়ে বুঝতেছি।

লক্ষীপুর-২ আসনের সাংসদ পাপুল (এশিয়ার মানবপাচারকারী চক্রের প্রধান হোতা) কাণ্ডের পর কুয়েত সরকার সে দেশের ভিসা বাংলাদেশিদের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে, বাংলাদেশিদের জন্য কঠোর নীতিমালা যুক্ত করার ঘোষণাও দিয়েছে। বেশকিছু শ্রমিককে দেশে পাঠিয়ে দেয়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছে। উল্লেখ্য, মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি-জোটের দেশগুলোতেই বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি শ্রম রপ্তানি করে থাকে। সৌদি-জোটের (সৌদি, বাহরাইন, কুয়েত,মিশর,আরব আমিরাত) দেশগুলো পররাষ্ট্র নীতি, শ্রম নীতি, বাণিজ্য নীতি প্রণয়নে নির্দিষ্ট নীতিমালা অনুসরণ করে থাকে, অর্থাৎ একই নীতিমালা অনুসরণ করে। ফলে, কুয়েতের পাশাপাশি সৌদি-জোটের অন্যান্য দেশগুলোতেও বাংলাদের শ্রম বাজার হুমকির মুখে পড়ে গেছে বলে ধারণা করছেন অর্থনীতিবিদ ও পররাষ্ট্র নীতি বিশ্লেষকেরা। বলে রাখা ভালো, বাংলাদেশে রেমিট্যান্সের মূল প্রবাহটা আসে এসব দেশ থেকেই।


প্রবাসে বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য একটি আতঙ্কের নাম হলো 'বাংলাদেশ দূতাবাস'। প্রবাসী শ্রমিকেরা দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি হলেও বিদেশে বাংলাদেশি দূতাবাসগুলোতে তাঁদের সাথে আচরণ করা হয় অমানবিক। তাঁদের কোনো অভিযোগ তেমন আমলে নেয়া হয়না। আইনি সহায়তা পাওয়াও দুষ্কর। অবৈধভাবে মানব পাচার থেকে শুরু করে, ঘুষ, নির্যাতন, কাগজপত্র আটকে রেখে টাকা আদায়সহ অভিযোগের শেষ নেই দূতাবাসগুলোর বিরুদ্ধে। গতবছর ব্রুনাইয়ের বাংলাদেশ দূতাবাসে একজনকে বেধড়ক মারধরের ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল যা আমাদেরকে দূতাবাসগুলোতে প্রবাসীদের সাথে কেমন আচরণ করা হয়, তার একটি ধারণা দিয়েছে।
সৌদি থেকে প্রতিবছর অসংখ্য নারী-শ্রমিক ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের স্বীকার হয়ে দেশে ফিরে আসে, শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়। তাঁরা দূতবাসে অভিযোগ জানিয়ে কোনো ফল পায়না। দুই বছর আগে একই কারণে (ধর্ষণ, নারী নির্যাতন) কুয়েতের সাথে ফিলিপাইন সরকারের চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে ফিলিপাইন প্রেসিডেন্ট 'রড্রিগো দুতার্তে' কুয়েত সরকারের উদ্দেশ্যে বলেছিল, "Is there any problem in your culture? Is there any problem in your values?" আমাদের পক্ষ থেকে এরকম কঠিন বাক্য প্রয়োগ করার সাহস কেউ রাখেনা, যা আমাদের জন্য একটি 'মাইনাস পয়েন্ট' বটে।

প্রতিবছর ব্যাপক পরিমাণে (বিদেশে) অর্থপাচার হয়ে থাকে। এ অর্থপাচারের মূল হোতা হলো "অনৈতিক সুবিধাভোগী রাজনীতিবিদ, ঋণ-খেলাপি ব্যবসায়ী, দুর্নীতিবাজ আমলা ও বিভিন্ন স্তরের সরকারি কর্মচারি।" এত অর্থপাচার হওয়া সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ মাইলফলকে পৌঁছানোর পেছনে একটাই কারণ, তা হলো, ব্যাপক পরিমাণ 'প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স'। ক্বুরবানির কারণে হঠাৎ রেমিট্যান্সের প্রবাহ বাড়লেও সামনের দিনগুলোতে রেমিট্যান্সের প্রবাহ কমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আশংকা করছেন অর্থনীতিবিদরা।

অনেক প্রবাসী শ্রমিক কভিড মৌসুমে দেশে এসে এখনও আটকে আছে। কঠোর ইমিগ্রেশন প্রসেসিংয়ের কারণে যেতে পারছেনা। তার উপর "মরার উপর খাঁড়ার ঘা" হয়ে দেখা দিচ্ছে "কভিডের ভুয়া নেগেটিভ সার্টিফিকেট জালিয়াতির কারণে বিদেশে বাংলাদেশিদের ভাবমূর্তি সংকট"। উল্লেখ্য, সম্প্রতি ইটালি, দ. কোরিয়া, জাপানসহ কয়েকটি দেশে কভিডের ভুয়া নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে (পরবর্তীতে পজিটিভ সনাক্ত হয়) বাংলাদেশিদের ভ্রমণের কারণে সারাবিশ্বে বাংলাদেশিদের ভ্রমণ নিয়ে আতংক সৃষ্টি হয়েছে। কভিডের আচমকা ধাক্কা খাওয়া উন্নত বিশ্বের দেশগুলো কখনোই চাইবেনা যে, অন্যান্য দেশ থেকে কভিড পজিটিভ নিয়ে কেউ ভ্রমণ করুক। কথায় আছে, "ন্যাড়া একবার বেল তলায় যায়"। ইতোপূর্বে ইটালির কয়েকটি শহরে বাংলাদেশি অভিবাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভও হয়েছে। অন্যদিকে, কভিড সার্টিফিকেট না-থাকার কারণে অনেক প্রবাসী শ্রমিক ফ্লাইট ক্যানসেল করতে বাধ্য হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে প্রবাসী যারা দেশে আটকে আছে, চাকরিতে যোগ দিতে পারছেনা, তাঁদেরকে অতিদ্রুত কর্মস্থলে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা।

সীমিত ভূখন্ডে বিপুল সংখ্যক মানুষের বসবাস আমাদের এ সোনার বাংলাদেশে। স্রষ্টা-প্রদত্ত প্রাকৃতিক সম্পদ শ্রমই আমাদের অন্যতম মূলধন। কোটি কোটি মানুষের ঘামই এদেশের অর্থনীতির মূল জালানি। এ জালানি (ঘাম) রপ্তানি করেই আমরা দু'বেলা দুমুঠো খেতে পাই।
কভিড-১৯ মহামারির কারণে এমনিতেই দেশে বেকারত্ব সংকট ঘনীভূত হয়ে আসছে, যারা চাকরি হারিয়েছে কিংবা চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে তাঁদের সংখ্যা প্রায় 'দেড় কোটি'। তার উপর প্রবাসীদের যারা দেশে আটকে আছে, তাঁরা যদি কর্মক্ষেত্রে ফিরে যেতে না-পারে; মধ্যপ্রাচ্যসহ বাংলাদেশের শ্রম বাজারগুলো থেকে শ্রমিকরা কাজ হারিয়ে দেশে ফিরে আসে; তাহলে, আমাদের অর্থনীতির 'তাসের ঘর' ধ্বসে পড়বে নিঃসন্দেহে। তাই, সরকারের উচিত প্রবাসী শ্রমিকদের প্রতি আরও আন্তরিক হওয়া এবং আমাদের শ্রম বাজারগুলোকে টিকিয়ে রাখতে যথাযথ, বিচক্ষণ ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত গ্রহন করা। সবসময়ের মত এক্ষেত্রেও যেন "চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে" দশা না-হয়।


লেখা পাঠাতে যোগাযোগ করুনঃ

ভূবন মুন্সী 
 shimul2016.bsm@gmail.com

Wednesday, July 29, 2020

বিশ্বায়ন,অর্থনীতি ও রাজনীতি এবং আমার ভাবনা || মেহেদী হাসান।

মেহেদী হাসানের কলমে মেসেঞ্জার অব কসমোলজিতে উঠে এসেছে বিশ্বায়ন, রাজনীতি ও অর্থনীতির ভাবনা সমূহ। বদলে যাওয়া বিশ্বের নতুন রূপ আবিস্কারের প্রয়াস আর্টিকেলের পুরোটা জুড়ে। পুড়োটা পড়ুন। মেসেঞ্জার অব কসমোলজির সাথে থাকুন।




বিশ্বায়ন,অর্থনীতি ও রাজনীতি এবং আমার ভাবনা



বিশ্বায়ন

বিশ্বায়ন বিংশ শতকের শেষভাগে উদ্ভূত এমন একটি আন্তর্জাতিক অবস্থা যাতে পৃথিবীর বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থা দৈশিক গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তঃদেশীয় পরিসরে পরিব্যাপ্তি লাভ করেছে। এর ফলে সারা বিশ্ব একটি পরিব্যাপ্ত সমাজে পরিণত হয়েছে এবং অভিন্ন বিনিয়োগ,কর্মসংস্থান,উৎপাদন ও বিপণন প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন দেশ যুগপৎ অংশ গ্রহণ করছে।

এটি পারষ্পরিক ক্রিয়া এবং আন্তঃসংযোগ সৃষ্টিকারী এমন একটি পদ্ধতি যা বিভিন্ন জাতির সরকার, প্রতিষ্ঠান এবং জনগণের মধ্যে সমন্বয় ও মিথস্ক্রিয়ার সূচনা করে। এই পদ্ধতির চালিকাশক্তি হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ আর এর প্রধান চালিকাশক্তি হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তি।

বিশ্বায়ন শব্দটি বতর্মান সময়েবহুল ব‍্যবহৃত শব্দ।আমরা সকলেই কম বেশি এই শব্দটি ব‍্যবহার করে থাকি।তবে ১৯৬০ সালের আগে বিশ্বায়ন শব্দটি খুব একটা ব‍্যবহৃত না হলেও ১৯৬০ সালের পর থেকে ব‍্যাপক হারে ব‍্যবহৃত হতে থাকে এবং বতর্মানে এটি ব‍্যবহারের পাশাপাশি  ব‍্যাপকভাবে প্রয়োগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।সুতরাং প্রাচীনকাল ও মধ্যযুগে বিশ্বায়নের প্রয়োগ  ইউটোপিয়া হলেও বতর্মানে এর প্রয়োগকে আর ইউটোপিয়া বলা যাবে না। কেননা বতর্মান পৃথিবীর বাস্তবতায় কোন মানুষই বিশ্বায়নের বাইরে থাকতে পারবে না। বিশ্বায়ন আমাদের জীবনে কতটুকু প্রভাব বিস্তার করছে সেটা বুঝতে হলে আমাদেরকে বুঝতে হবে প্রযুক্তি আমাদের জীবনে কতটুকু প্রভাব বিস্তার করছে। কারণ প্রযুক্তিগত উত্তরণের সায‍্যুতায় পৃথিবী আজ গ্রামের থেকেও ছোট। পৃথিবীর কোথায় কি ঘটছে সেই খবর মিডিয়া বা সোস্যাল মিডিয়া মারফত আমাদের কাছে (না চাইলেও) খুব দ্রুতই পৌঁছে যাচ্ছে যেটা পূর্বে সম্ভব ছিল না।

বর্তমানে বিশ্বায়ন আর প্রযুক্তির প্রভাব  আমাদের উপর কতটুকু সেটা বুঝার উৎকৃষ্ট উদাহরণ কোভিড-19 ভাইরাস। এই ভাইরাসের  উৎপত্তি যেখানেই ঘটুক না কেন এর প্রভাব বা ভয়াবহতার হাত থেকে পৃথিবীর কোন রাষ্ট্রই রক্ষা পাচ্ছে না। উল্লেখ্য যে পৃথিবীর ইতিহাসে পূর্বের কোন সংকটই সমগ্র পৃথিবীর মানুষকে এভাবে তটস্থ করতে পারে নাই। আবার এই বিশ্বায়নের ফলে আজ এটা সত‍্য হয়ে দাঁড়িয়েছে পৃথিবীর সমস্ত কাঁটাতার থাকবে কি থাকবে না।

অর্থনীতি ও রাজনীতি

বিশ্বায়নের সাথে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সকল কিছুই অঙ্গাঅঙ্গি ভাবে জড়িত। সুতরাং অর্থনীতি ও রাজনীতিও এর বাইরে নয়। বিশ্বায়নের অর্থনীতি ও রাজনীতিকে আমরা গ্লোবাল অর্থনীতি ও গ্লোবাল রাজনীতি বলতে পারিণ(তবে এই দুই বিষয় নিয়ে এখনও অনেক গবেষণার প্রয়োজন থাকতে পারে)। এই গ্লোবাল অর্থনীতি ও রাজনীতি সম্পর্কে জানতে হলে আমাদেরকে পূর্বের অর্থনীতি ও রাজনীতি সম্পর্কে কিছুটা ধারনা রাখা প্রয়োজন।

আধুনিক কালে অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ভাবে বিশ্বের শাসনকার্য পরিচালনা করার জন্য অর্থনীতি ও রাজনীতিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়।( অর্থনীতি ও রাজনীতি কে একত্রে করে আলোচনার কারণ সেই প্রাচীনকাল থেকে এই দুইটা পৃথিবীর ইতিহাসে পাশাপাশি অবস্থান করে চলছে)।

1. কলোনিজম বা কলোনি কালীন অর্থনীতি ও রাজনীতি

এই কলোনি কালীন অর্থনীতি ও রাজনীতির সূচনা ঘটে 1492 সালে কলম্বাসের আমেরিকা দখলের মাধ্যমে এবং পরিসমাপ্তি ঘটে 1941 সালের আগষ্ট মাসে তৎকালীন গ্রেট বৃটেনের সাথে আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট এর একটি গোপন চুক্তির মাধ্যমে। যে চুক্তির কথা 90% মানুষ জানে না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলার যখন ইংলিশ চ‍্যানেল পাড়ি দিয়ে বৃটেন দখল করতে আসে তখন বৃটেনের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল রুজভেল্ট এর কাছে সাহায্য চাইলে রুজভেল্ট এই চুক্তির মাধ্যমে বৃটেনকে সাহায্য করতে রাজি হয়। চুক্তিতে উল্লেখ ছিল যদি মিত্র শক্তি জয়ী হয় তবে বৃটেন কলোনী প্রথা বিলোপ বা নিষিদ্ধ করবে এবং পরবর্তীকালে 1945 সালে নিষিদ্ধ হয়। আর 1945 থেকে 1949 সালের মধ্যে সমস্ত কলোনি বিলুপ্ত ঘোষণা করে। কলোনি কালীন অর্থনীতি ও রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ ছিল বৃটেন, হল‍্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, পর্তুগাল, স্পেন এই ছয়টি দেশের হাতে।

2. নয়া সাম্রাজ্যবাদ অর্থনীতি ও রাজনীতি

নয়া সাম্রাজ্যবাদ অর্থনীতি ও রাজনীতির সূচনা ঘটে 1945 সালে রুজভেল্ট এর হাত ধরে জাতিসংঘ, আই এম এফ+বিশ্বব‍্যাক, এবং WBO প‍্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে এবং পরিসমাপ্তি ঘটে 2009 সালে(2008 সালের অর্থনৈতিক মন্দার মধ্য দিয়ে )। এই নয়া সাম্রাজ্যবাদ অর্থনীতি ও রাজনীতি  প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ছয় পান্ডবের হাত থেকে একক আমেরিকার হাতে পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণ চলে আসে। এছাড়া ডলারকে একক বৈশ্বিক মুদ্রা হিসেবে প্রচলন সহ একাধিক বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলো পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নেয়। এছাড়াও মুক্ত বাজার অর্থনৈতিক ব‍্যবস্থা প্রচলন করে পৃথিবীর অর্থনীতি মুষ্টিমেয় কিছু ব‍্যক্তির হতে গোচ্ছিত হয়।

3. গ্লোবালাইজেশন বা গ্লোবাল অর্থনীতি ও রাজনীতি

গ্লোবাল অর্থনীতি ও রাজনীতির সূচনা ঘটে 2009 এবং এটি এখন পযর্ন্ত চলমান আছে।
গ্লোবাল অর্থনীতি ও রাজনীতির মধ্য দিয়ে পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা আমেরিকার হাত থেকে চীনের হাতে চলে আসবে। আমেরিকা আর চীনের বাণিজ্য যুদ্ধ যার প্রথম প্রমাণ। চীনের হাতে কেন আসবে তার স্পষ্ট প্রমাণ চীন-ইরান সমোঝতা চুক্তি যা মধ্যপ‍্রাচ‍্য সহ ইউরোপের সকল দেশ সমূহের  চীনের দিকে ঝুকে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

তবে এখানে একটা বিষয় উল্লেখ্য যে যেসকল দেশ বা রাষ্ট্রপ্রধান গ্লোবাল অর্থনীতি ও রাজনীতিকে ধারণ না করে কলোনি অর্থনীতি ও রাজনীতি আর নয়া সাম্রাজ্য অর্থনীতি ও রাজনীতিকে আকড়ে থাকবে সেই দেশ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক  দিক থেকে পেছনে পড়ে যাবে।আর যারা বুঝতে পারবে তারা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দিক থেকে চীনকে অতিক্রম করতে না পারলেও সম অবস্থানে থাকবে।

এখানে একটা বিষয়ে ধারণা থাকা দরকার গ্লোবাল অর্থনীতি ও রাজনীতির পথটা কিন্তু আমেরিকা তৈরি করে দিয়েছে যেমন করে কলোনি অর্থনীতি ও রাজনীতি  সাম্রাজ্যবাদ অর্থনীতি ও রাজনীতির পথ তৈরি করে দিয়েছিল।

আবার আমেরিকা যদি এই গ্লোবাল অর্থনীতি ও রাজনীতিকে ঠেকিয়ে রাখতে চায় তা যেমন তারা পারবে না তেমনি গ্লোবাল অর্থনীতি ও রাজনীতির সম্পূর্ণ বিষয় যদি ধারণ  করে সেই অনুযায়ী চলেও তবুও সে তার হারানো জায়গা ফিরে পাবে না। ইতিহাস কথা কয়।

সুতরাং এই নয়া অর্থনীতি ও রাজনীতিকে প্রতিটি রাষ্ট্রের মেনে নেওয়াই শ্রেয় আখের পৃথিবী ও তার নিজ দেশের মঙ্গলের প্রশ্নে। আর মেনে না নেওয়া মানে পৃথিবী ও পৃথিবীতে বসবাসকারী সকল প্রাণীর জন্য অশান্তির বাহক।

কেননা সন্তান প্রসবের যখন সময় হয় তখন কেউ যেমন তাকে ঠেকিয়ে রাখতে পারে না বা জোর করে ঠেকিয়ে রাখলে যেমন মা সন্তান দুইজনকেই হারানোর সম্ভাবনা থাকে তেমনি নতুন এই অর্থনীতি ও রাজনীতিকে ঠেকানোর চেষ্টা করা মানে পৃথিবী আর অর্থনীতির দুই টাই ধ্বংসের চেষ্টার সামিল,যা অর্থনৈতিক মন্দা আর বিশ্বযুদ্ধের সম্ভবনা জাগিয়ে তুলে।আর বাস্তবতাকে মেনে নেওয়া মানে পৃথিবীতে জান্নাতের সুবাস অনুভব করা।

সবার শুভবুদ্ধির উদয় হোক। ধরিত্রের বুকে শান্তি নেমে আসুক।

Monday, July 27, 2020

নব শওকত এর কবিতা গুচ্ছ || ক্রুশবিদ্ধ কবি।

অতীত যেন কবির বুকে ক্রুশবিদ্ধ হয়ে আছে। ক্রুশ কী আর কবির কষ্ট বুঝে? না বুঝুক। তাতে কবির আপত্তি নেই। মূলত কোন কিছুরই তোয়াক্কা করেন না কবি। তিনি বরং কষ্ট ও মৃত্যু এসবের ঠোঁটে চুমো দিয়ে সৃষ্টির আনন্দে মেতে উঠতে চান। যদি কলম বাজেয়াপ্ত হয়ে যায় তবু কবি আঙুলে, রক্তের কালিতে লিখে যাবেন আপন কথা কবিতা রূপে। কবি তার মগজের ক্যানভাসে এঁকেছেন লেলিন, মার্কস আর প্রেমিকার গোলাপের সাথে কিনেছেন সুকান্ত, তাকে বুলেট/মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। কবির কাছে বাঁচা ও বিপ্লব সমার্থক। 

প্রকাশক : মেসেঞ্জার অব কসমোলজি।
প্রকাশ    : জুলাই, ২০২০ খ্রিস্টাব্দ। 
উৎসর্গ    : ভবিতব্য বিপ্লব কে।







ক্রুশবিদ্ধ কবি 


 
ছবিঃ মেসেঞ্জার অব কসমোলজি।


ক্রুশ

সব কথা বলা শেষ জানি
তবুও শেষের শরীরে
ক্রুশের মতো লেগে থাকে কিছু স্মৃতি
গত শীতের শিশির,
মেঠোপথ, একটা পরিচিত আকাশ
স্কুলের ঝং ধরা টিনের উপর বসে থাকা নিঃসঙ্গ শালিক
একটা সবুজ চাদর, কুয়াশায় ভিজে থাকা দুটো চোখ,
মনে পড়ে?
থাক, পড়লেই বা কি?
ক্রুশ কি আর জানে যিশুর কি কষ্ট?

তবে জানো নাকি এখন
অন্ধকারের দেয়ালে কান পাতলেই শুনতে পাই
অদূর অতীতের শুদ্ধতম ভুল এর চিৎকার
চোখ খুলে দেখতে পাই নিজ হাতে নিজেকে খুন করার স্বচ্ছ ছবি
হাত নাড়লেই ছুঁতে পাই এক ছিন্নভিন্ন লাশ
যার পাশে শুয়ে থেকে এখনো হুহু করে কাঁদি
যেইভাবে কাঁদতাম অবুঝ শৈশবে একটা নীল সাইকেল এর স্বপ্নে
আহারে, আমি অন্তত এভাবে মরে যেতে চাই নি।

কবি

কবি কী তোমায় ছাড়া জন্ম দিতে পারে না কবিতা?
তবে জানো,
কবি কখনো চায় না সে তার কবিতার কাঙ্ক্ষিত নারীকে স্পর্শ করুক,
কবি কখনো চায় না তার প্রণয় সত্যি হোক,
কবি কখনো চায় না প্রেয়সীর লাল ঠোঁট তার ঠোঁটে আমর্শ হোক ,
কবি কখনো চায় না প্রিয়া বাসন্তী শাড়িতে এক সন্ধ্যায় তার হাত ধরুক৷
কবি কখনো চায় না প্রিয়তমার কাজল হোক তার নামে,
কবি কখনো চায় না কেউ তার অপেক্ষায় থাকুক,
কবি কখনো চায় না কেউ তার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করুক।
কবির চাই ক্ষত, একান্ত ব্যাক্তিগত কিছু ক্ষত ;
কবির চাই অন্ধকার, যে অন্ধকারে নিজেকে চেনা যায় ;
কবির চাই শব্দ, যে শব্দ দিয়ে জীবন লিখা যায় ;
কবির চাই মৃত্যুর ঠোঁট, যে ঠোঁটে চুমু দিয়ে কবিতা জন্ম দেয়া যায়।

কবিতা

দেখো আবার নেমেছে বিকেল একই শব্দে, একই রঙ নিয়ে আকাশ ;
হায় আলো? সন্ধ্যা হয়ে হয়ে এলো !
নদীর পাড়, দূ.....রে জোনাকের মতো সভ্যতার আলো,
ইচ্ছে করে নদীর হাওয়ায় মাতাল হয়ে উড়ে যেতে তোমার গাঢ় চুলে!

দেখো আকাশ! একটা নক্ষত্র তোমার লাজুক চোখে চেয়েছে
মেঘের ঘোমটা তুলে।
পাখি হয়ে উড়তে থাকি তোমার কাছে,
জানি এখনি আকাশে অন্ধকার নিবিড় হয়ে উঠবে,
রহস্যময়ী নক্ষত্রও মুছে যাবে, মুছে যাবে তুমি
মুছে যাবে স্মৃতি, হাওয়া, ক্লান্ত নদী, মুছে যাবে পাখি।
কেবল থেকে যাবে, যায় কালের মরুতে পথ হারিয়ে যাওয়া
পোড়া কপালের এক কবিতা।

বিপ্লব

যদি পৃথিবীর সব কলম বাজেয়াপ্ত করে নাও
তবুও আঙুল-রক্তে লিখে যাবো বিপ্লব ;
স্লোগানে স্লোগানে মুছে দিবো কালের বুকে বইতে থাকা
তোমাদের নষ্ট সমাজ নদীর গতি।
আর বুলেট?
যে মগজে ঝুলিয়েছে লেলিন, মার্কস আর
প্রেমিকার গোলাপের সাথে কিনেছে সুকান্ত 
তাকে বুলেট/মৃত্যুর ভয় দেখাও?

 জীবন

জীবনরে কইলাম জীবন লও একলগে ঘুমাইতে যাই? 
তহন জীবন আমারে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়া কইলো
কর্তা আমার মেলা কাম বাকি,
চুলার উপ্রে দুঃখ বসাইয়া আসছি, এদিকে ঘরে নাই সুখ ;
সুখ আনতে অনিশ্চিত অন্ধকারে যাওয়া লাগবো।

খানিক পরেই জীবন আমারে বিরাট ব্যস্ততার লগে
কিছুটা করুণা কইরা কইলো
কর্তা চুলার উপ্রে যে দুঃখ বসাইছি
ঐনে একটু পুরান স্মৃতি ছিটাইয়া নাড়াইতে থাকেন
আর বেশি শুকাইয়া গেলে তিন ফোঁটা চোক্ষের পানি দিয়েন ;
আমি ব্যাগ নিয়া অন্ধকারের দিকে যাই
দেখি সুখ পাওয়া যায় কিনা,
আইজ কাইল-
সব সুখ নাকি নষ্টারা বেজায় দামে খরিদ কইরা ফেলে।


লেখা পাঠাতে যোগাযোগ করুনঃ 
মেসেঞ্জার অব কসমোলজি পেইজ 
মোঃ শামীম রেজা 
মোঃ মাসুদ মিয়া 
তানজিল আহমেদ আকাশ

Sunday, July 26, 2020

শামীম রেজার কবিতা গুচ্ছ - যে পথে আলো আসে।

বৌদ্ধিক ডুবারু কবি একদম ডুব দিয়েছেন বোধের অতল গহ্বরে। তুলে এনেছেন মণিমুক্তা, পান্না সব। এ সমস্ত মূল্যবান পাথর গুলোই যেন এক একটি শব্দ। আর কবি নিজে সে সমস্ত শব্দ জুড়ো দিয়ে গেঁথেছেন বৌদ্ধিক প্রতিমা। মূলত সে প্রতিমাই কবিতা গুলো। একবার চোখ মেলে তাকালে, তাকিয়ে থাকলে, যেন খোঁজে পাবেন আলো; প্রতিমার গাত্র নিঃসৃত। আলোর ঝলকানিতে আপনার চিরায়ত অন্ধত্ব বিদূরিত হবে। ভাবনার নতুন দিগন্তে খোঁজে পাবেন আপনাকে।
 
 

প্রকাশক : মেসেঞ্জার অব কসমোলজি। 
প্রকাশ    : জুলাই, ২০২০ খ্রিস্টাব্দ।
উৎসর্গ    : তাকে।

যে পথে আলো আসে


প্রশ্ন থেকে আলো


আছড়ে পড়ে শব্দগুলো
মস্তিষ্কের কোষে কোষে
টের পাই মস্তিষ্কজীবী
বুক তার এখনও বেচে আছে
পালসগুলোকে অস্বীকার করে তৃতীয় স্বত্ত্বা
মুচকি হেসে বলে
আয়নায় চোখ রাখ

আশ্চর্য আয়নার কোথাও কোন ক্ষত নাই
দাত নখের ছাপ আছে
মধ্যরাতে নিজেকে খুলে-পাল্টেছে-সাজিয়েছে-রাঙিয়েছে
কত বেসাতি পোষ্য-অপোষ্য গৃহস্থালি।

চে শার্টের কলার থেকে ঘাম রক্ত রক্ত
সেই রক্তে নিজের ছবি আকতে গিয়ে আতকে উঠি
দেখি খন্ড-বিখন্ড ছায়া ক্ষরিত আদিম উপত্যকা
লালন মঞ্চে বিজিত কলিঙ্গ সম্রাট
দ্বন্দ্বমুলক বস্তুবাদ গুনতে চাই
অথচ ক্রুশেড কেন হতে পারে
তখনও জানে না হাড়িরাম সম্প্রদায়।

প্রতিফলনের সামনে একটা ঘোমটা পড়া কলাগাছ দেখি
কলাগাছটা দেখছে একজোড়া গজদন্ত।

প্রথম পুরুষ প্রশ্ন করতে ভুলে যায়
দ্বিতীয় পুরুষ ভুলে যাওয়ায় অভ্যস্ত হয়ে ওঠে
প্রকৃতির অংশজ আবিষ্কার হেতু প্রশ্ন করতে উদ্যত তৃতীয়জন
এবং অবশ্যই প্রশ্ন থেমে গেলে সুখি হয় মানুষ

উত্তর জন্মের প্রেতাত্মা হয়ে ঘোষণা করি ভালো আছি
সমাজ রাষ্ট্র আর কতটুকুই বা বাস্তুক।

বোধের তৃতীয় নয়ন আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে যা দেখেছে
তাকে নিত্য অবিনশ্বর বলে।
বস্তুত আলো কখনই প্রবঞ্চক হতে পারে না
প্রশ্নের গর্ভজাত আধারের বুক ফেড়ে নিজ স্বরুপ উন্মোচন করে।

ভালো থাকার শর্ত প্রশ্নের পাটাতন থেকে উৎসারিত হয়
সমগ্র চরাচরে।
এবং নির্লিপ্ত ভালো থাকা
নিজেকে নির্লজ্জের মত বলে ফেলে ভালো আছি
বেহায়ার মত কপটতা করে বলে
আপনি কেমন আছেন।

যেভাবে খুন হয় আমাদের মায়ের ভোর পাখি

আমি আগুন হতে পারিনি বলে আমার পিতা হাপড়  হতে পারিনি
ব্যক্তিগত পরিসংখ্যানে
অনুমিতি মান হিসেবে
পিতাকে ক্ষুদ্রশিল্পী  ধরা হয়েছে বার বার।
অতিশুক্ষ্ম হৃদয় কোণে ঠিকই
তাকে পুরুষের বিজয় কেতন
উড়াতে দেখেছি পরাজিত সভ্য ভাগাড়ের উপর।

দেখো জুলিয়াস সিজার
আমাদের বুক তবুও কয়লা শিল্পে কেমন রাঙা হয়ে ওঠে দিনান্তে

কিন্তু খুব অদ্ভুতভাবে আমাদের মা শীতল জলের ন্যায় পড়ে থাকে
গৃহস্থালির কায়কারবারের আপাদমস্তক জুড়ে
আমাদের মা কে কখনও বেহুলা হতে দেখিনি
কিন্তু তাকে ভাসতে দেখেছি
ভাসতেই দেখে যাচ্ছি।

ক্লিওপেট্রা একে আপনি ক্ষুদ্র মহান লৌহ শিল্প বলতে পারেন।
লোহার ডাল সিদ্ধের কাজটা আপনি কখনও করেছেন?
জানেন কোন ছিদ্র বন্ধ করলে ফুটো কলসিতেও জল বয়ে আনা সম্ভব?

আমাদের যৌবনকালে বাবা লাল রঙা নরম লোহার গল্প শুনিয়েছেন
আর মা শুনিয়েছেন ভোরের পাখিদের নীড় ছেড়ে যাওয়ার শব্দ।
পাখিদের শব্দে আমাদের হৃদয় ক্ষণিক ব্যাকুল, মোহিত থাকলেও
আমাদের চোখে থাকে ছিটকে পড়া আগুনের ফুলকি,
হাত শাসিত থাকে কোন পূর্ব-নির্ধারিত আদলে,
ফলে মায়ের শোনানো ভোরের পাখি আত্মহত্যা করে
নীড় থেকে বের হয়ে যাওয়ার পরপর।
প্রতিদিনই এমন হত্যা দিয়ে শুরু হয় পৃথিবীর ভোর।

আমাদের মা বুকের হাড় পুড়িয়ে জীবনের জ্বালানি হয় রোজ
আর আমরা হয়ে উঠি বাবার হাতের সান দেওয়া অস্ত্র
যা দিয়ে আমাদের পুরুষ বাবা খুণ করে আমাদের
মায়ের ভোরের পাখি।

বিপ্লব ও কবিতা 

আজ অব্দী একটা প্রেমের কবিতা লেখা হলো না।
বিপ্লবের স্বপ্নে বিভোর থাকা মানুষ অপ্রেমে থাকতে পারে?
কেমন বিপ্লবী তুমি কবি?
ঘাতকের মতো কেবল ওতপেতে বসে আছো
সুযোগে সওয়ার হয়ে খুণ করবে অপ্রেম যাপনকে
তাতে উল্লাস মিলবে
প্রেম ধারা দিবে কি?
ঔ শোন ধরাশায়ী জীবনের প্রলাপসমূহ যারা প্রেমের নামে জীবনকে চিনতে গিয়েছিল
ছদ্মবেশী বিপ্লব যাদের প্রেমকে ছুতে পারিনি
একবার জীবন থেকে বিচ্যূত হয় তো আরেকবার প্রেম থেকে।
আধুনিকতার ঘোর তোমার  এখনও কাটেনি কবি
তাই ব্যাক্তিস্বাতন্ত্র্য র নোংড়া ঘুলঘুলিতে হারিয়ে ফেলছো গন্তব্যের খেই
এ মাটি তো প্রেমের কথা বিপ্লবের মুখে বলে
শিকড় পৃথকীকরণ বিদ্যা নিয়ে তুমি গাছ বাচানোর বিদ্যা ফলাতো এসেছো কবি!
কিন্তু অনায়াসে বৃক্ষদের দুঃখ নিয়ে রচে যেত পারো দিস্তার পর দিস্তা কবিতা
তাতে কি বৃক্ষের প্রেম থাকে?
বিপ্লব থাকে?
প্রেমহীন বিপ্লব আর বিপ্লবহীন প্রেমের প্রয়াস
উচ্ছিষ্ট সম্পর্কের ছিনালীপনা ছাড়া আরকি?
ওতে সাময়িক তুষ্টি মেলে বৈকি
স্বস্তির হদিস মেলে কি?
এর বাইরে আসেন ঘাস-লতা-পাতার কীর্তনে কাটায় জীবের বাদবাকি আর্তি।
প্রেমের কবিতা মেলে না
মেলে না বিপ্লবের কবিতা
অথচ দুনিয়াতে প্রেমের বিপ্লব খুব প্রয়োজন
বিপ্লবে প্রেম খুব দরকার
আমরা কেবলই বিভক্ত হচ্ছি
আমি কেবলই বিভক্ত হচ্ছি প্রেম থেকে বিপ্লবে
বিপ্লব থেকে প্রেমে
অথচ তারা অবিচ্ছেদ্য শর্তে থাকে জগতের আগামীর প্রশ্নে
কবি তুমি কোন শর্তে?

প্রতিবিম্বে এক চক্র

আমাদেরই মারা গিটগুলো যখন ফাস হয়ে টান দেয় আমাদের গলা
অবশ্য যাদের গলা নেই আছে জিহ্বা আর আছে অদৃশ্য বন্দিত্বের স্বাধীনতা
বিপক্ষে গেছে তারা
এই যে গিট আর তারা মিলে হয়ে গেছে অবিনশ্বর

সংখ্যাগরিষ্ঠ শক্তি র বলয় বিভক্তের মোহে হয়ে গেছে দীর্ন
প্রেম অথবা প্রার্থনা অজস্র বলয়ে হয়েছে বিচ্ছিন্ন
ফলত অখন্ড পাটাতন পায়নি আমাদের দ্রোহ অথবা ভালোবাসার ক্ষেত্র
কি এক মহা বিরহের সারথী হয়ে ক্ষুধা আর অন্যয্যতার চক্রে আবর্তিত হয়েছে
আমাদের পবিত্র রক্তের বলি
এ যে মহাকাল থেকে মুক্তি না পাওয়া তাদের
অর্থাৎ সেই সব ঈশ্বরীয় হল্লার রক্তজ হোলি
শরীর থেকে শুষে যাওয়া রক্তের উপর দাঁড়িয়ে প্রজন্মান্তর
স্বপ্নের ভিতর  হারিয়ে ফেলা পুনরাবৃত্তিক পথে

সভ্যতা বুননের ঊষাকালে তুমি আমি আমরা
প্রত্যয়ের কেন্দ্র নির্মাণ করেছিলাম
অনাগত ভবিষ্যৎকে চুম্বন করে
আমাদের ঠোটে পেরেক ঠুকে দিয়ে সে
আজ অঞ্জলি হয়ে গেছে প্রেতপুরী র
আমাদের ভাষা হারিয়েছে প্রকাশ ক্ষমতা এবং অর্থবহতা
দীর্ঘ অমানিশার ভিতর জাপটে ধরতে গিয়ে দেখি
বহুপথ ঘুরেফিরে কত শত অনুসন্ধান শেষে
ধুকছে তোমাদের ছায়া
এই ঐতিহাসিক চক্র থেকে বের না হতে পারা তুমি তোমরা
অথবা আমি আমরা
দ্বিপক্ষীয় হয়ে যায় বারবার
অভীষ্ঠতার শর্তে আমাদের তৃষিত লক্ষ্য
প্রশ্নবিদ্ধ হয়নি
কেবল যোজন দ্বিধা আর ঐতিহাসিক ভ্রুকুটি
শাসন করে আমাদের দুরত্ব
ব্যবধানের গৌরবে আমরা হয়ে উঠি
একেকজন তপস্যাস্নাত শয়তান। 

নিশিতা

জন্মের বিহ্বলতাই জেরবার হয়েছি বারংবার
অসংখ্য ঘুম ভাঙা রাত ফুপরে খুজেছে হাসনাহেনার ঝরেপড়ার সঙ্গ
বিভঙ্গের দহনে মুখ গুমড়ে পড়ে থাকে অপেক্ষার সকাল
তারপর ভোরের স্বপ্ন ডানা মেলে উড়ে গেছে নীল পাহাড়ের দেশে।
পাথুরে পাহাড়ের বুক ভেঙে বের হয়ে আসা জলের স্ফটিক বলে গেছে
নিঃসঙ্গতার কি স্বচ্ছ শান্ত আর্তনাদ থাকতে পারে।
দ্বিধায় উথলে ওঠা অভিমানের বলক
ভীরু সংশয়ের পাড় ভাঙতে পারিনি
বরং গন্ধকের চূর্ণ হয়ে মিশে গেছে বহ্নিমান হৃদয়ের শোণিতে।

এইবার বুঝি রাতজাগা ফসলের গান গাইবে ঘুমিয়ে থাকা অনাবাদী নিস্ফল ভুমি

জন্মের অর্থ কি জানো নিশিতা?
দ্রোহ, প্রেম আর বিপ্লবে
রাতের সংশয় আর বিহ্বলতা পেরিয়ে নিশ্চয়
আমরা একটা ভোর পাবো পেয়ে যাবো
মনে রেখ এ পৃথিবী মানুষের হবে।
আর আমরা সেই স্বপ্নে চলো বাকিটা রাত পেরিয়ে
যাই মহাকালের আহ্বানে। 


লেখা পাঠাতে যোগাযোগ করুনঃ 
 পেইজ : মেসেঞ্জার অব কসমোলজি
মেইল : shimul2016.bsm@gmail.com

এম ইকবাল এর কবিতা গুচ্ছ - "ভালোবাসাহীন মানচিত্র"।

সময়ের প্রবাহ অনন্ত। এ অনন্ত যাত্রায় পৃথিবীতে কখনো আসে শুভ্র ভোর, কখনো জাহেলিয়াতের অন্ধকার। জাহেলিয়াতের কালে নর্দমার কীট ধেয়ে আসে আর কুটিল কলম আঁকে নরকের ছবি। এ কীট মূলত মানুষেই থাকে, মানুষের বোধে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকে। কবি এ কুটিল অবস্থা থেকে মানুষকে বেরিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন। কোরবানী করতে বলেছেন নিজের ভিতরে লুকিয়ে থাকা পাশবিক বৈশিষ্ট্যকে। সভ্যতার গায়ে লেপ্টে থাকা কলঙ্ক যেন মুছে যায়, শুদ্ধ পাটাতনে মানুষ যেন হয়ে ওঠে চিরায়ত সৌন্দর্যের প্রতীক গোলাপ প্রস্ফুটনকারী বৃক্ষ গোলাপ, এই কবির প্রর্থনা।


প্রকাশক : মেসেঞ্জার অব কসমোলজি।
প্রকাশ    : জুলাই, ২০২০ খ্রিস্টাব্দ। 



উৎসর্গ    : 'মানুষ' কে।


ভালোবাসাহীন মানচিত্র 



প্রার্থনা

সময়ের নেই কোন পাড়
তার অনন্ত প্রবাহে
ধুয়ে যাক সব কলংক
এই অসভ্য সভ্যতার।

কবর অথবা জন্মভূমি

ঘুম নেই, তাই বেঁচে থাকা
নতুন ভোরের অপেক্ষায়...।
রাত্রির দাফন শেষে
শুভ্রবসনে নিজেকে জড়িয়ে
ভিখিরির মতো করে দাঁড়াবো একদিন...
তোমার আঙিনায়।
পাথরের মতো কঠিন তুমিও
ফেরাবে না জানি
ফেরানো যাবে না আমাকেও-
তবুও দুহাত তুলে
আমার স্বপ্নকে আশির্বাদ করবে
এটাও জানি...।
শুধু জানবে না কেউ
আমার স্বপ্নে তুমিও ছিলে
দূঃসময়ে রোদ্দুর হয়ে।
আমিও ভিখিরি ছিলাম
একটা কবিতার-
একটা গোলাপের-
একটা পরিপূর্ন অন্ধকারের...
যা শুধু তুমিই পারো দিতে।

আলেয়া

প্রিয়তমা, আলো হতে চেয়ে মানুষের পৃথিবীতে
এখনো রয়ে গেলে প্রাগৈতিহাসিক অন্ধকারে?
এখনো তোমার দু'চোখ জুড়ে পরাবাস্তব দৃশ্যাবলী
অভিশাপ হয়ে শুধুই নরকের ছবি আঁকে ।
অবিরত ধেয়ে আসা নর্দমার কীটেরা
এখনো তোমার আধুনিক হৃদয় কুড়ে কুড়ে খায়,
এখনো তোমার রক্তিম বুকে আঁকা-
ভালাবাসাহীন শ্বেত মানচিত্র।
অথচ তুমি ভালোবেসেই রক্তাক্ত হয়েছিলে
ক্ষতঃবিক্ষত ঝাঁঝরা করেছিলে আপন বুকের পাজর
তবুও তোমার স্বপ্নজুড়ে হাতছানি দেয়
আলেয়ার অদ্ভুত সব গল্প।

অথচ তুমি প্রত্যুষে জেনেছিলে
আলেয়ারা রোজ ভুল ছবি আঁকে
প্রতিটি নাগরিক চোখে।

মানুষের মৃত্যু নেই

মৃত্যুহীন মানুষ হতে
নিজের মধ্যে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকা পশুত্বকে কোরবানীর বিকল্প নেই।

পশুকে নাশ করার মধ্যে দিয়েই
জন্ম হয় মানুষের-
তাই তো আজীবন চলে পশু কোরবানীর উৎসব।
কতটুকু মানুষ হোলে...?
কতটুকুই বা কোরবানী হোলো...?

শেষ নিঃশ্বাস ফেলেই
জবাব দিতে হয় অমূল্য সব প্রশ্নের।
শেষ নিঃশ্বাস ফেললেই
উন্মোচিত হয় মানুষের পরিচয়।

কতটুকু কোরবানী হোলো...?
আর কতটুকুই বা মানুষ হোলে...?
জবাব আছে-
যতটুকু থাকবে বেঁচে পরকালে।

বৃক্ষগোলাপ

এত যে কাঁদা মাখামাখি
জল ছোড়াছুড়ি 
এও কি ভালোবাসারই আরেক রূপ
অনেক মূল্য দিয়ে কেনা হীরার টুকরোর মতো?

মুষল ধারার বর্ষণ হতেও
গর্জন লাগে কিছু
তারপর সব নির্মল হয় প্রকৃতির শুদ্ধতায়-
আবির্ভূত হয় সব সৌন্দর্য্য।

তবুও এই বর্ষণে ঝরে যায় কিছু পাপড়ি
যা পৃথিবীকে সৌন্দর্য্যের স্বপ্ন দেখিয়েছিল
আর চিরায়ত সৌন্দর্য্যের সেই পূর্ণ গোলাপ
স্নিগ্ধতা নিয়ে ফোটে নতুন ডালে। 

তবুও আমি কসম করে বলতে পারি
যে গোলাপ ফোঁটেছিল একদিন
ঝরে গেছে আজ
তার সৌন্দর্য্য ম্লান হয়না এতটুকু প্রেমিকের কাছে
প্রেমের পরশ হয়ে চিরদিন বেঁচে থাকে
প্রতিটি প্রেমিকের বুকপকেটে।

গোলাপ ফুটিয়েছিলো যে বৃক্ষ
তার আগেই ফুটিয়েছিলো বৃক্ষের কাঁটা
পৃথিবীকে পরিপূর্ণ সৌন্দর্য্য উপহার দেবে বলে।

তুমি বৃক্ষগোলাপ-
ফোটাও শত ফুল
বুকে নিয়ে সহস্র কাঁটা।

লেখা পাঠাতে যোগাযোগ করুনঃ 


ইমেইল :  shimul2016.bsm@gmail.

Saturday, July 25, 2020

সরকার জৈব ক্ষমতা দ্বারা জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করে - মোঃ আশরাফুল ইসলাম।






বাস্তুসংস্থানের উপর নির্ভর করে একটা এলাকার সংস্কৃতি গড়ে ওঠে। রাজনীতি যেহেতু সংস্কৃতি থেকে উদ্ভূত বা বিকশিত হয়, তাই নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকার বাসিন্দাদের জৈবনিক ক্রিয়াকলাপ থেকে রাজনীতি বিচ্ছিন্ন থাকতে পারে না বা বিচ্ছিন্নতায় রাজনৈতিক নিয়মাবলি প্রয়োগ হতে পারে না। সেক্ষেত্রে জৈবিক প্রবৃত্তি তথা রাগ, ক্ষোভ, ভালবাসা এগুলো রাজনীতি মারফত সবসময়ই মানুষ বা অন্য জীবের উপর প্রয়োগ হয়ে আসছে।

নাৎসি নেতা হান্স রাইটার জাতি রাষ্ট্র ও চূড়ান্তভাবে তাদের জাতিগত নীতিকে জীববিজ্ঞান ভিত্তিক বলে উল্লেখ করেন।

সরকার জৈব ক্ষমতা দ্বারা জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করে। এক্ষেত্রে জৈব ক্ষমতা হল মানুষের জীবনের সকল ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রয়োগ ও ব্যবহার। আদিম কিংবা কিছুদিন পূর্বের সমাজের দিকে তাকালেই দেখা যায় লাঠিয়াল সর্দার বা মোড়লের পাশে শারীরিকভাবে শক্তিশালী মানুষ থাকতো অর্থাৎ এই শারীরিক শক্তিকে রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহার করা হতো। অনেকে জীবন ও শক্তিকে অস্ত্র হিসেবেও দেখিয়েছেন যেমন আত্মঘাতী জঙ্গিবাদ। সাধারণত মানুষের রাজনৈতিক আচরণ বিভিন্ন জীববিজ্ঞানগত প্রদর্শনযোগ্য নিয়ামকের দ্বারা নির্ণীত হয়।

মোটকথা জীবনীতি শাস্ত্র অনেক আগে থেকেই রাজনৈতিকভাবে প্রয়োগ হয়ে আসছে। কিন্তু জৈব প্রযুক্তির বিপ্লব আজ সমাজ রাজনীতির এক নতুন দিকের উন্মোচন করেছে। অর্থাৎ জৈব প্রযুক্তির বিভিন্ন প্রয়োগের মাধ্যমে জননীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে ব্যাপক আলোচনা আজ অনিবার্য।

আমরা কী এই জৈব প্রযুক্তি সামাজিক উন্নয়নে তথা সকল ধরনের জীবনের কল্যাণে বা তারা কীভাবে পরস্পর নিজেদের চালিত করবে তা নির্ধারণে ব্যবহার করব? অর্থাৎ এমন কোন কাঠামোর কথা ভাববো, যা সমস্ত জীবনকে ঘিরে আবর্তিত হবে এবং সেটা অবশ্যই স্ব স্ব ভৌগোলিক বংশগতি ও বৈচিত্র্যকে সমুন্নত রেখে সকল জীবনকে ছুয়ে যাবে? যেটা নীতিমালা, শিক্ষা, শিল্প, সরকার, বিজ্ঞান সবকিছুকে অন্তর্ভুক্ত করবে।

অথবা এটাকে কি নিছক ক্ষমতার এক নতুন প্রযুক্তি হিসাবে দেখব, যা পূর্বের বিভিন্ন প্রযুক্তির ন্যায় আশীর্বাদ না হয়ে মানব জীবনের অভিশাপ হয়ে দাঁড়াবে।

পরমাণু শক্তি যতটুকু মানব সভ্যতার অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রেখেছে বা তথাকথিত ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরি করেছে তার চেয়ে ঢের বেশি বিশ্ব রাজনীতিকে অন্তঃসারশূন্য করেছে। বিশ্ব রাজনীতির দৃশ্যপট সামনে আসলেই যেন মনে হয় এই দুচারটা পরমাণু শক্তিধর দেশের ঝগড়াঝাটিটাই বিশ্বরাজনীতি। অথচ বিশ্বরাজনীতির পরিসর কত ব্যাপক! এদের এই শিশুসুলভ ঝগড়াঝাটির মাঝে পৃথিবী পরিবেশ বিপর্যয় থেকে শুরু করে চরম ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রতিরক্ষা খাতের এসব অনিয়ন্ত্রিত বাজেট দিয়ে অনেক আগেই ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও জলবায়ুগত সমস্যা নির্মূল করা যেত। দুঃখের বিষয় এগুলো রাজনীতিবিদদের কাজ নয়, গ্রেটা থুনবার্গের মতো বাচ্চাদের কাজ!

জীব বিজ্ঞান ও রাজনীতির সমন্বয়ে গঠিত এই নতুন টার্ম জীবনকে কী নিশ্চিত, টেকসই ও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাবে নাকি পশ্চাদপসরণ করবে? তা নিয়ে বিস্তর ভাবার সময় এসেছে বিশ্ব মোড়লদের, সেই সাথে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকেও নিজেদের স্বকীয়তা নিয়ে এর বিরুদ্ধে দাড়াতে হবে জীবনের তাগিদে।

ইতোমধ্যে বর্তমান মহামারী সৃষ্টির জন্য এক দেশ আরেক দেশকে দোষারোপের কাঁদা ছোড়াছুড়ি শুরু করেছে। এই পরিস্থিতি যেমন সম্ভাব্য আগামীর বিভীষিকাময় সময়কে ইঙ্গিত করছে, ঠিক তার বিপরীতে এই গাঁয়ের থেকেও ছোট বিশ্ব-সমাজকে আলোর দিশা দেখাচ্ছে।

এখন এই পৃথিবীর মানুষকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা কি সভ্যতার বিনাশ চাইবে নাকি নতুন সূর্যের প্রত্যাশায় দিগন্তের দিকে চোখ মেলে তাকাবে।

লেখা পাঠাতে যোগাযোগ করুনঃ
মেসেঞ্জার অব কসমোলজি পেইজ 

Thursday, July 23, 2020

যৌবন যেন যৌনতার ডাকনাম - মনীষা মোহাম্মদ।




জোনাক হয়ে যে আগুন জ্বেলেছি বুকে
সূর্যের মতোন তা বিকশিত হোক।

এক গভীর অনিশ্চয়তা আর গলিত অন্ধকারে টালমাটাল পৃথিবী। রোবটিক চোখ মেলে যখন ন্যাংটোপনা সহ যৎযাবতীয় বাটপারি ও নোংরামি স্বাভাবিক ঠেকছে আজ, তখন বুঝতে বাকি নেই এক কৃষ্ণ ঈগল ঠুকরে খাচ্ছে পৃথিবীর সফেদ বুক।

ফ্লাশ দিলেই ক্যামেরা মুচকি হাসে
সে জেনে যায় তোমার বুকের ক্ষত

পোদ্দারের হাতে জীবন বিক্রি হচ্ছে সিটিসেল রেটে। বণিক ধর্মই ক্রমশ গ্রাস করছে ঘর-সংসার-বন্দর। কী এক গভীর ক্ষত বৃত্তাকারে ছড়িয়ে যাচ্ছে বুক-দেশে, চুমু খাওয়ার এক টুকরো মানচিত্রও খোঁজে পাচ্ছি না আজ। কিতাবের সেই সমস্ত অগ্রিম বয়ান যেন সত্য হয়ে উঠছে অথচ তা ঠেকানোই মানুষের যোগ্যতার সনদ।

বিবি মাহিতন, মনটা নষ্ট হলে
কী দিয়ে ফেরাবে পতন?

বৈজ্ঞানিক নাম সেপিয়েন্স বা জ্ঞানী হিসেবে খ্যাতি কিংবা পরিচিতি সৃষ্টির সেরা হিসেবে - তা তো একমাত্র বোধগত শর্তে। অথচ বোধ লুপ্তির আন্দোলন চলছে যেন আজ বা জোয়ার এসেছে নষ্টামির। বেদ, কোরান, বাইবেল যেন পিরিয়ডিক পঠিতব্য- দিন শেষে বা প্রভাতে। আর বাদ বাকি নষ্টামির কাল। কিংবা ইতিহাস যেন ছেলে ভুলানোর গল্প কোন। ঐতিহাসিক চরিত্রগুলোকে অসাধারণ তকমা দিয়ে আসমানে তোলার হিড়িক পড়ে গেছে, সাথে সাথে নিজেদের সাধারণ ঘোষণা দিয়ে মেতে উঠছে ভোগানন্দে।
 
ক্লিক করুন

বোধ শেকড় হারিয়েছে, ভেসে যাচ্ছে পানার মতোন
যৌবন যেন যৌনতার ডাকনাম, ন্যাংটো আগুন।

প্রচলিত পাপকর্মীদের দেখে ঘেন্না ধরেছে সেই কবে, আজ তীর্থ যাত্রীগনও নাম লিখিয়াছে সে লিস্টে। অসাড় বার্ধক্যই যেন ধর্ম কাল। কোটরাগত সে ভাঙা চোখেই যেন বোধের প্রদীপ জ্বালতে হবে। অথচ তখন এক পা নরকে। বার্ধক্যের সে জীর্ণ বোধ প্রদীপ সারাতে পারবে কী নরকের অন্ধকার? যৌবন হারাচ্ছে নষ্টামির আগুনে পুড়ে আর বার্ধক্যে এসে উপদেশ বাণী? কে শুনতে চায় সে সমস্ত পিতার বাণী? মানছে ক'জন?

হাঁসের মতোন গিলছে ইতিহাস
তারা গুম করে নিলো
শত বিপ্লবী, পূর্ব পুরুষের লাশ।

পৃথিবীর ক্রম মুক্তির পথ কী? কোন পথে মানুষের মুক্তি হবে? অচল সময়ের প্রাচীর ভেঙে বারবার উঁকি দিয়েছে ভোর। ভোরের সে পাটাতনে উদ্ভিদের মতোন মাথা তুলেছে কমরেড। প্রাচীর ভাঙার সে বৈপ্লবিক কুঠার ঐতিহাসিক পরশুরাম। কিন্তু পরশুরাম যেন আজ পৌরাণিক গল্প শুধু। ইতিহাস যেন গল্পের, সঙের কিতাব আর ঐতিহাসিক চরিত্র গুলো পৌরাণিক যুগের অলৌকিক নায়ক। কাট, কপি, পেস্ট করে, ইচ্ছেমতো এডিট করে খুন, জখম ও গুম করা হচ্ছে তাঁদের। প্রদীপ জ্বালবার প্রেরণা কোথায় পাই?

মুক্তির মন্ত্র পাঠে জেগে উঠুক দ্রোম শহর।

পিঠ যখন দেয়ালে ঠেকছে, কোথায় পালাবেন আর? সরু গলিতে দৌঁড়ে এসে, যখন সম্মুখে সমুদ্র কিনার, আর কোনদিকে দৌঁড়াবেন? কোথায় গিয়ে ভিড়াবেন আপনার তরী- বাংলাদেশ হতে কানাডা, চিলি হতে চায়না- কোথায়? সম-অন্ধকারে, রুগ্নতায় ও অস্থিরতায় কম্পমান পৃথিবী। ছত্রাকের মতোন বৃত্তিক পথে ক্ষত ছড়িয়ে পড়েছে বুকে। ঠোঁট চুম্বনের এক টুকরো মানচিত্র নেই। কোথায় ফিরবেন? ফেরার সকল পথ বন্ধ হয়েছে সেই কবে। এখন তো মন্ত্র পাঠের কাল। উদ্ভিদের মতোন উঁকি দেবার ক্ষণ। বয়ে যাচ্ছে জেগে উঠার সূর্য সন। কমরেড, জেগে আছো?
লেখা পাঠাতে যোগাযোগ করুনঃ

Wednesday, July 22, 2020

রাজনীতি নেই || ভূবন মুন্সী।

ভূবন মুন্সী


ওয়ার্কাস পার্টির রাশেদ খান মেনন বলেছেন- রাজনীতিটা রাজনীতিকদের হাতে নেই। (বাংলাদেশ প্রতিদিন - ৬/৭/২০১৯)।

রাজনীতি যদি রাজনীতিকদের হাতে না থাকে, রাজনীতি কি আর রাজনীতি থাকে? অবশ্যই না। হয়ে উঠে দুর্নীতি।

রাজনীতি তখন হয়ে উঠে ভয়ংকর তান্ডবের, খুন হত্যা গুম ধর্ষন শোষনে নারকী রূপ পায় অরাজনৈতিকদদের হাতে থাকা রাজনৈতিক মানচিত্র।

সাপ যদি সাপুরের হাত থেকে ফসকে যায় বা অবাধ্য হয়ে বেরিয়ে আসে বাক্স থেকে বা তস্করের করতলগত হয়, তবে ঐ সাপ আনন্দের যোগান না দিয়ে হয়ে উঠে লুন্ঠের হাতিয়ার, তুমুল ধোকা দেবার, ভয় দেখাবার জ্যান্ত ভূত।

বর্ষীয়ান রাজনীতিক যাঁরা আছেন, যাঁরা যৌবনের শৈশবকাল হতে রাজপথে, রাজপথ হতে যাতায়াত সংসদে, যাঁরা রাজনীতিটাকে বশীভূত সাপের মতোই হাতে রেখেছিলেন মানুষের কল্যাণে- তাঁদের চোখের সামনে রাজনীতি হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে, চলে যাচ্ছে ভিন্ন হাতে- তবে তাঁরা কী অসহায়! মানুষকে ভালোবেসেই এতোদিন ধরে রাজনীতি করে আসছেন, সেই ভালোবাসার দায়বদ্ধতা থেকেই যথার্থ রাজনৈতিক অনুশীলনটা জরুরি ছিলো, আর যথার্থ রাজনৈতিক অনুশীলন থাকলে রাজনীতি অরাজনৈতিকদদের হাতে চলে যাবার কথা ছিলো না। তবে গলদটা কোথায়, কাদের ভিতর?

বেশ ক'দিন আগে ধানের দাম সংক্রান্ত সংকটে মন্ত্রী মহোদয় বললেন রাজনৈতিক কারনেই তা নিয়ন্ত্রন করা যাচ্ছে না, তবে রাজনীতি কৃষকের কল্যাণের জন্য নয় বা কল্যান করার অক্ষমতায় বর্তমান, তবে ঘরের চেয়ে কোন একটি ঘটি বড় হয়ে উঠেছে আজ, নাকি 'পথ জানা নাই' এর আবুলের শাসনকাল!

এবার আসি স্থানীয় নির্বাচনে প্রতীক প্রসঙ্গে-
স্থানীয় রাজনীতি যদি জাতীয় রাজনীতি হতে পৃথক সত্ত্বা হয়, তবে এটা নিয়ে জাতীয় নেতাদের মাথা ঘামানোর কারণ থাকতো না। আছে বলেই স্থানীয় নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে লম্ফ জম্ফ হয়।

দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন অভিন্ন রাজনৈতিক চর্চাকে রুট থেকে সেন্টার পর্যন্ত করেছে, সাতচল্লিশ বছর ধরে বঞ্চিত থাকা রাজনৈতিক দলের মর্যাদা সমুন্নত করেছে, আর রাজনৈতিক দল মানেই অসংখ্য মানুষ।

কিন্তু অসুরের দেশে লক্ষীকে পায়ে ঠেলা হয়- তেমনই ঘটছে আজ। দেশের বৃহৎ দুটি রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন আ'লীগ আর এককালে ক্ষমতায় থাকা বিএনপি উভয়ের কাছ থেকে প্রতীক দেওয়ার পরবর্তী প্রতিক্রিয়া নেতিবাচক হয়ে উঠে এসেছে এবং ইদিনিং উভয়ের কাছ থেকে আসছে। স্থানিকে প্রতীক না রাখার মনোভাব নিয়ে উনারা কী বুঝাতে চাচ্ছেন যে, জাতীয় নেতারা দলীয় মার্কার ওয়ারিশ, আর যাঁরা দিন রাতত প্রত্যক্ষ জনসম্পৃক্ত থেকে, শ্রম ঘাম দিয়ে ইউনিয়ন ওয়ার্ডে দলীয় কার্যক্রম সচল রাখেন তাঁরা দলীয় মার্কায় বেওয়ারিশ? স্থানিক নেতারা আপন রাজনৈতিক মর্যাদায় সচেতন হয়ে প্রশ্ন তুললে কী জবাব দিবেন বর্ষীয়ানগন? যৌক্তিক কোন উত্তর আমার কাছে নেই।

মেনন সাহেবের কথায় ফিরে আসি, রাজনীতিটা আসলেই আজ রাজনীতিকদের হাতে নেই। দেশের দিকে তাকালে, পত্রিকায় চোখ রাখলে অন্তত তা স্পষ্ট।  স্বাধীন দেশে আমরা রাজনৈতিক চর্চাহীনতায় যোগ্য নেতা কর্মীর জন্ম দিতে পারি নাই।

একাত্তর হতে খুঁড়িয়ে চলতে থাকা এদেশে দুটি বিষয় সত্য আজ- ২য় সত্য রাজনীতিটা রাজনীতিকদের হাতে নেই, ১ম সত্য রাজনীতিবিদ শূন্যতায় ভুগছে বাংলাদেশ।


০৬.০৭.১৯

দেশীয় অর্থনীতি বনাম যোগান বিধি - মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল।

মাটির বৈশিষ্ট্য সংস্কৃতি হয়ে যাপনে ফিরে। অথচ স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি সর্বক্ষেত্রে মাটির বৈশিষ্ট্যই যেন অধরা থেকে গেছে। আপন ভূপ্রকৃতি ও তার বৈশিষ্ট্য বুঝে এমন চোখ যেন অমাবস্যার চাঁদ। ফলে অর্ধশতাব্দী পেরিয়ে গেলেও দেশের উন্নয়নের শর্তে শিল্পায়ন যেভাবে গুরুত্ব পেয়েছে, ঠিক ততটুকুই অবহেলার দৃষ্টিতে থেকেছে কৃষিখাত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক
মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল এর কলমে মেসেঞ্জার অব কসমোলজিতে উঠে এসেছে সেই সব সমস্যা ও সমাধানিক দিশা।

দেশীয় অর্থনীতি বনাম যোগান বিধি 


মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল, গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


এদেশের শতকরা প্রায় ৭০ জন লোক গ্রামে বাস করে। অদ্যবধি জাতীয় অর্থনীতির সিংহভাগ আসে গ্রামীণ অর্থনীতি থেকে। তাই, গ্রামীণ অর্থনীতির আয়তন বৃদ্ধি কল্পে- কৃষি খাতে বেসরকারি বিনিয়োগ নিশ্চিত করা জরুরি। কারণ বিনিয়োগ ব্যতিত অর্থনীতির আয়তন বৃদ্ধি পায় না। আবার অর্থনীতির আয়তন না বাড়লে জিডিপি এবং প্রবৃদ্ধিও বাড়ে না। অর্থাৎ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে- বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধির সাথে- জিডিপি বৃদ্ধির এক ঊর্ধ্বমুখি সম্পর্ক বিদ্যমান। বর্তমানে, বৃহৎ আয়তনের জাতীয় অর্থনীতি এবং জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার- বেসরকারি বিনিয়োগকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই গ্রহণ করেছে। কারণ পূর্বেই জেনেছি, বিনিয়োগ না বাড়লে অর্থনীতিও এগোয় না। অতীতের যে কোনো সময় কে ছাপিয়ে বিনিয়োগ সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচনে সরকার ইতোমধ্যে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।

এদেশে বেসরকারি বিনিয়োগের সিংহভাগই আসে মূলত সেবা খাতে তৎপরবর্তী শিল্প ও কৃষি খাতে। প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে এদেশীয় অর্থনীতি কৃষি নির্ভরশীল।  ‘Based on Ecology’ তথা ভূ-প্রকৃতি অনুসারে এদেশ কৃষি নির্ভর, কৃষি প্রধান দেশ। সে অনুযায়ি বেসরকারি বিনিয়োগের পরিমাণ কৃষিতে বাড়ার কথা থাকলেও তা আশানুরূপভাবে হচ্ছে না। বরং, শিল্প-অর্থনীতির (artificial-Economi) উপর বিনিয়োগ বাড়ছে দিনকে দিন।

অথচ, ‘বাংলাদেশের গ্রামীণ প্রবৃদ্ধি গতিশক্তি- টেকসই দারিদ্র বিমোচন’ শীর্ষক প্রতিবেদনে, বিশ্বব্যাংক বহুকাল পরে- ফলদ, পশুপালন, মৎস চাষের মতো উচ্চমূল্যের কৃষি খাতের দিকে মনোযোগী হতে বলেছে বাংলাদেশকে। এতে একদিকে কৃষকের আয় বাড়বে, অন্যদিকে পূরণ হবে পরিবারের পুষ্টি চাহিদা। এছাড়া কৃষি খাতে ১০ শতাংশ আয় বাড়লে অকৃষি খাতে আয় বাড়ে ৬ শতাংশ। জমি, শ্রম, সারসহ কৃষি খাতের উপকরণ ব্যবহার করে প্রতিদান বা ফল যা পাওয়া যায় তাকে বলা হয়- টিএফপি (টোটাল ফ্যাক্টর প্রডাকটিভিটি)। দেড় দশকের (১৯৯৫-২০১০) পরিসংখ্যান অনুযায়ী দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে কৃষি খাতে মোট উৎপাদিকা শক্তি তথা টিএফপি সবচাইতে বেশি বাংলাদেশে- ২ দশমিক ৭ শতাংশ। গত এক দশকের ব্যবধানে কৃষি খাত থেকে গ্রামীণ পরিবারগুলোর আয় বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। এ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে- গ্রামাঞ্চলে কর্মসংস্থানে এখনো কৃষিই প্রধান খাত। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য শামসুল আলম বলেন- আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি যদি ৩ দশমিক ০৫ থেকে বাড়িয়ে ৪ শতাংশে উন্নীত করা যায় তাহলে অনায়াসেই ৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব (সূত্র: প্রথম আলো, ১৮ মে, ২০১৬)।

বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে বাংলাদেশের ৮৭ শতাংশ গ্রামীণ পরিবারের আয়ের উৎস হলো কৃষি। কৃষি খাতই দেশের দারিদ্র বিমোচনে মূল ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু কৃষিকে আরো উচ্চপ্রবৃদ্ধিশীল করার জন্য বাংলাদেশ এখনো খুব বেশী অগ্রসর হতে পারেনি।

ক্ষুদ্র আয়তনের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর দেশ হওয়া সত্ত্বেও আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আর্থিক মন্দার কবলে পড়ে উন্নত বিশ্ব যখন দিগ্বিদিক ছোটার উপক্রম তখন তার ছিঁটেফোটাও লাগেনি আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ বিরূপাক্ষ পাল ৩০ জুন, ২০১৬ খ্রিঃ বিনিয়োগ বোর্ডের সেমিনারে ব্রেক্সিট ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রসঙ্গ এবং বাংলাদেশে এর প্রভাব বিশ্লেষণে বলেন- ব্রেক্সিট, এ মুহূর্তে বাংলাদেশের জন্য কিছুটা চ্যালেঞ্জ হলেও অর্থনীতিতে তেমন কোনো প্রভাব যে ফেলবে না, তার উদহরণ স্বরূপ তিনি বলেন- ২০০৭ এবং ২০০৮ সালে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার সময় বাংলাদেশের রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে রেকর্ড পরিমাণ (সূত্র: সমকাল, ৩০ জুন, ২০১৬)। অর্থাৎ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, বিভিন্ন অর্থনৈতিক ‘জোট বা ভোট’ এর হেরফেরগত বৈশ্বিক মন্দা বা অচলাবস্থা- এদেশীয় অর্থনীতির অভ্যন্তরে তেমন কোন রেখাপাত ঘটাতেই পারে না। আর এর কারণ শিল্প অর্থনীতি নয়- এদেশীয় অর্থনীতির মূলে রয়ে গেছে কৃষি ব্যবস্থাপনা।

বৈশ্বিক অর্থনীতির সাথে এদেশীয় অর্থনীতির কোথায় যেন রয়ে গেছে অল্প বিস্তরে ব্যাপক পার্থক্য। গত ১৭’ই মে, এনসিসি ব্যাংকের ২৩ বছরপূর্তী উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে, বিনিয়োগ ও শেয়ার মার্কেট প্রাসঙ্গিকতায়- ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক- এ জেড এম সালেহ, তাঁর ভাষায়- ‘অদ্ভুত অর্থনীতি আমাদের’ (সূত্র: বিডি নিউজ ২৪ ডটকম, ১৭.০৫.২০১৬)।

আর এ অদ্ভুত অর্থনীতির স্বরূপ’ই বা কিরূপ? তা অনুসন্ধানে- ‘এডাম স্মিথিয়’ বা ‘স্যামুয়েল্সীয়’ ধারার দেশি-বিদেশি অর্থনীতিবিদদের দৃষ্টিতে এদেশীয় অর্থনীতির মূল বৈশিষ্ট্য বা মোজেজাটাই ‘উদ্ভট’ বা ‘অদ্ভুত’ অর্থে প্রতিফলিত হয়েছে। হিমালয়ের স্বচ্ছ জলপ্রবাহ, পলি ও অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদান বঙ্গ তথা এদেশীয় ভূ-বৈশিষ্ট্য কে দিয়েছে এক অনন্য উর্বরা শক্তি। অর্থাৎ ভূমি বৈশিষ্ট্য ও ভূমি ব্যবস্থাপনা (চাষ-বাস)’ই যে এদেশীয় অর্থনীতি ও উৎপাদনের মূল চালিকাশক্তি তা পাশ্চাত্য তথা ‘এডাম স্মিথিয়’ বা ‘স্যামুয়েল্সীয়’ ধারার অর্থনীতিতে উপেক্ষিত। তাই এদেশীয় অর্থনীতির মোজেজা- চাষা-ভূষা তথা সর্ব সাধারণের কাছে বোধোদয় হলেও, অধরা থেকে যায় অর্থনীতির বিজ্ঞজনদের কাছে।

এদেশীয় উৎপাদন ব্যবস্থা ও অর্থনীতি প্রাথমিক ধারনা বা অর্থনীতির মোজেজা- অর্থনীতির বিজ্ঞজনদের কে হাতে-কলমে বোঝানোর জন্য ‘যোগান বিধির’ আশ্রয় নিলে বিষয়টি সহজে বোধোদয় হয়ে ওঠবে। যোগান বিধি অনুসারে- দাম বাড়লে, যোগানের পরিমান বাড়ে। এখানে দামের ক্ষেত্রে উলম্ব রেখায় ‘কৃষি উৎপাদন’ আর যোগানের ক্ষেত্রে ভূমিজ রেখায় ‘এদেশীয় অর্থনীতি’ কল্পনা করলে দাড়ায়- ‘কৃষি উৎপাদন’ বাড়লে, ‘এদেশীয় অর্থনীতি’ বাড়ে অর্থাৎ সমৃদ্ধ হয়। এটাই এদেশীয় অর্থনীতি।


লেখচিত্র : কৃষি উৎপাদন বনাম এদেশীয় অর্থনীতি।


যোগান বিধি অনুসারে- এদেশীয় অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি কৃষি উৎপাদনের ওপর নির্ভরশীল। কৃষি উৎপাদনের পরিবর্তন হলে এদেশীয় অর্থনীতির পরিবর্তন হয়। অর্থাৎ কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে এদেশীয় অর্থনীতির উর্ধ্বমুখি সম্পর্ক বিদ্যমান। অন্যান্য বিশেষ অবস্থা (প্রাকৃতিক দূর্যোগ, বন্যা-খরা ইত্যাদি) ব্যতিরেকে,
স্বাভাবিক অবস্থায় কৃষি উৎপাদন বাড়লে এদেশীয় অর্থনীতি সমৃদ্ধ হয় এবং কৃষি উৎপাদন কমলে এদেশীয় অর্থনীতির সমৃদ্ধি ব্যহত হয়। এটাই এদেশীয় অর্থনীতির মোজেজা- আর বাকি সব খুচড়া-খাচড়া।

ভূ-প্রকৃতি ও বাস্তুসংস্থান (Ecology) তথা প্রকৃতিগত নৈব্যর্তিক শর্তেই- এদেশে প্রাধান্যে চলে আসে কৃষি। আর প্রকৃতিগত নৈব্যর্তিক শর্ত কে কাজে লাগিয়ে প্রকৃতি ও পরিবেশ অনুবর্তিতায় গঠনমূলক উন্নয়ন’ই ‘টেকসই উন্নয়ন’ যা প্রকৃতি-পরিবেশ অর্থে (Ecology) বা বাস্তুসংস্থান কে রক্ষা করে এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। তাই কৃষি ভিত্ত্বিক অর্থনীতির এদেশে- অর্থনীতির সূচকের উন্নতি ঠিক ততটাই সম্ভব যতটা সম্ভব- কৃষি ব্যাবস্থাপনা, কৃষি বিনিয়োগ, কৃষির আধুনিকায়ন ও কৃষি উন্নয়ন। ‘Based on Ecology’ তথা ভূ-প্রকৃতি অনুবর্তি উৎপাদন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে- ভূমির ব্যবহার। অর্থাৎ চাষ-বাস সংশ্লিষ্টতায়- প্রকৃতি-পরিবেশ অনুবর্তিতায় বিনিয়োগ বান্ধব ‘কৃষি ব্যবস্থাপনার’ টেকসই উন্নয়ন।

সুতরাং ভূ-বৈচিত্র্যকে আমলে নিয়ে বিনিয়োগ বান্ধব "কৃষি উৎপাদনের" স্বপ্ন ভূমি  হয়ে উঠুক আগামির বাংলাদেশ।

উপস্থাপক ও গবেষকঃ

মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল
E-Mail: smibrahim1986@gmail.com

লেখা পাঠাতে যোগাযোগ করুনঃ
মেসেঞ্জার অব কসমোলজি পেইজ
মেইলঃ shimul2016.bsm@gmail.com

Sunday, July 19, 2020

মেসেঞ্জার অব কসমোলজি'র খোলা চিঠি।



Messenger Of Cosmology



Messenger Of Cosmology এখনো অঙ্কুরিত চারার মতোন। দৈর্ঘ্যে- নাতিদীর্ঘ, ব্যাপ্তিতে- লোকাল, গ্লোবাল পরিচিতিতে- আননোন। সামুদ্রিক বিস্তার এখনো অনেক দূর। গত মাস দুই অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের সাথে যুক্ত হয়েছেন-

জাতীয় পরিসরে-
শেরপুর, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, চুয়াডাঙ্গা, চট্টগ্রাম, নীলফামারী

আন্তর্জাতিক পরিসরে-
যুক্তরাষ্ট্র, জ্যামাইকা ও পশ্চিম বঙ্গ থেকে তরুণ চিন্তাবিদ, কবি ও কমরেডগন।

প্রকাশের পাল্টা সড়কে দৃঢ় পথ চলার এ প্রস্তুতি লগ্নে যাঁরা আমাদের সাথে আছেন, শুধু মুখ নয়, বুক নিঃসৃত ভালোবাসা এবং অভিনন্দন আপনাদের।

সবে পথচলা শুরু। পদক্ষেপের প্রথম পা টি উর্দ্ধে উঠেছে মাত্র। শুধু আর্টিকেল নয়, যাঁরা বেসামাল বিশ্বকে সামাল দেবার আয়োজক হতে চায়- হররোজ প্রতীক্ষায় থাকি।

যাঁরা সাথে থেকে এ প্ল্যাটফর্মটির পরিচর্যায় আছেন- মূলত বৃক্ষের শেকড়ে জলের মতোন, যাঁরা প্রত্যহ মেসেঞ্জার অব কসমোলজি   পাঠের সাথে সম্পৃক্ত, যাঁরা এ প্রয়াসকে বৃত্তিক পথে ছড়িয়ে দিচ্ছেন- সবাইকে হৃদ স্পন্দিত শুভেচ্ছা।

শুভেচ্ছান্তে
মেসেঞ্জার অব কসমোলজি'র পক্ষে
ভূবন মুন্সী

এ পর্যন্ত আমাদের সাথে সম্পৃক্ত মেসেঞ্জারগণঃ-
  
১. ড. আলী রীয়াজ - যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতির অধ্যাপক এবং গবেষণা সংস্থা আটলান্টিক কাউন্সিলের সিনিয়র ফেলো।


২. এম ইকবাল - কলামিস্ট ও রাজনীতিবিদ।


৩. মুরশীদ সেলিন - রাষ্ট্র ও রাজনীতি বিশ্লেষক।


৪. শামীম রেজা - কলামিস্ট ও রাজনীতিবিদ।


৫. হাসান রাকিব - কবি ও ছোট গল্পকার।


৬. মিরান - শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।


৭. একেএম খাদেমুল বাশার - লেখক ও পর্যটক।


৮. তানজিল আহমেদ আকাশ - কলামিস্ট ও স্টুডেন্ট লিডার।


৯. মোঃ ইয়াছিন মিয়া - কলামিস্ট ও স্টুডেন্ট লিডার।


১০. মিঞা ভাই - কলামিস্ট ও স্টুডেন্ট লিডার।


১১. শ্রী রীতি - স্টুডেন্ট লিডার


১২.  মোঃ শামীম মিয়া - কলামিস্ট ও স্টুডেন্ট লিডার।


১৩. মোঃ মমিন আলী - রাজনীতিবিদ।


১৪. আব্দুল আলীম - কলামিস্ট ও রাজনীতিবিদ।


১৫. সোহানুর রহমান - শিক্ষক ও মানবাধিকার কর্মী।


১৬. ন-হন্যতে - লেখক ও ফার্মাসিস্ট।

যোগাযোগঃ-
email: shimul2016.bsm@gmail.com
Messenger Of Cosmology page

Saturday, July 18, 2020

আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী : গারো, হাজং এবং কোচ || সোহানুর রহমান।







সোহানুর রহমান, শিক্ষক ও মানবাধিকারকর্মী।


 বাংলাদেশ আমাদের প্রিয় জন্মভূমি। আমাদের প্রিয় এই দেশের প্রধান জনগোষ্ঠী বাঙালি হলেও এখানে বসবাস করে নানা জাতি, নানা ভাষা ও নানান সংস্কৃতির মানুষ। বাংলাদেশে রয়েছে অনেকগুলো আদিবাসী জনগোষ্ঠী। ‘আদিবাসী’ শব্দটি নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। আদিবাসীদের অনেকেই উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নামেও অভিহিত করে থাকেন। ২০১১ সালের আদমশুমারি ও গৃহগণনা প্রতিবেদনে আদিবাসীদের জন্য ‘এথনিক পপুলেশন’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। বাংলাদেশে বসবাসরত আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সংখা নিয়ে রয়েছে ভিন্নভিন্ন মত। উইকিপিডিয়াতে এই সংখ্যা ৪৫টি থাকলেও বিবিএস রিপোর্ট ১৯৮৪ ও ১৯৯১ সালে এই সংখ্যা যথাক্রমে ২৪ ও ২৯টি। জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব মতে এই সংখ্যা ২৭টি।

বাংলাদেশে বসবাসরত আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকাংশই সমতল অঞ্চলে বসবাস করে। পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ১৪। পার্বত্য চট্টগ্রামের পর ময়মনসিংহে রয়েছে ৯টি। শেরপুর জেলাতে ৯টি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস। শেরপুরে যেসব আদিবাসী জাতিসত্তার মানুষ রয়েছে- গারো, কোচ, হাজং, বানাই, রাজবংশী, বর্মন, ডালু, হদি এবং হরিজন। চলতি রচনাটি শেরপুরে বসবাসরত দুইটি প্রধান আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা ও সংস্কৃতি সম্পর্কিত বিষয়াদি সংক্ষেপে তুলে ধরার প্রয়াস মাত্র।


গারো

গারো দম্পতি 

 


মঙ্গোলিয় মানবধারার অন্তর্গত গারো জনগোষ্ঠীর বসবাস প্রধানত ময়মনসিংহ, শেরপুর, জামালপুর, টাঙ্গাইল ও সিলেট অঞ্চলে। গারো জনগোষ্ঠী মাতৃপ্রধান। মেয়েরাই সম্পত্তির উত্তরাধিকারীনি। বিয়ের পর বর স্ত্রীর বাড়িতে বসবাস করে। সন্তানেরা মায়ের পদবী ধারণ করে। তবে মাতৃপ্রধান হলেও কি হবে পরিবার ও সমাজ পরিচালনায় গারো পুরুষেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

গারো সমাজে একই গোত্রে বিবাহ নিষিদ্ধ। গারোদের নিজস্ব ধর্ম রয়েছে। সেই ধর্মের নাম সাংসারেক। তবে আজকাল সিংহভাগ গারো খ্রিষ্টধর্ম পালন করে থাকে। তাদের প্রধান দেবতা ‘তাতারা রাবুগা’। অন্যান্য দেবতাদের মধ্যে গয়রা, মিসি সালজং উল্লেখযোগ্য।

গারোরা বিভিন্ন উৎসব পালন করে থাকে। ‘ওয়ানগালা’ গারোদের প্রধান উৎসব। পুরোহিতকে তারা কামাল বা খামাল বলে।

গারোরা মান্দি বা আচিক ভাষায় কথা বললেও এদের নিজস্ব বর্ণমালা নেই। গারোরা প্রধানত কৃষিজীবী। আগে এরা জুমচাষ করতো। এদের প্রধান খাদ্য ভাত, মাছ, শাকসবজি ও পশুপাখির মাংস। নিজেদের তৈরি এক ধরনের পানীয় গারো সমাজে প্রচলিত। এটাকে চু বলে। এটি গারো সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান উপাদান। পুরুষেরা গান্দো, পান্ত্রা, খুতুপ আর মেয়েরা দকমান্দা, দকশাড়ি ইত্যাদি পরিধান করে। গারোদের নিজস্ব বর্ষপঞ্জি রয়েছে।

হাজং

হাজং সম্প্রদায়

 


মঙ্গোলিয় জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্গত হাজংদের বসবাস প্রধানত শেরপুর জেলার শ্রীবর্দী, ঝিনাইগাতী,­­ নালিতাবাড়ি। ময়মনসিংহের ধোবাউড়া, হালুয়াঘাট এবং নেত্রকোনা জেলার বিরিশিরি, সুসং দূর্গাপুর ও কলমাকান্দায়। এছাড়াও সিলেট, সুনামগঞ্জেও এদের বসবাস রয়েছে।

হাজংদের আদি নিবাস বার্মায়। আবার কেউ কেউ মনে করেন আসামের হাজো নামক স্থানে বাস করতো বলে এদের নাম হাজং। হাজং শব্দের অর্থ মাটির পোকা। হাজংদের নিজস্ব ভাষা থাকলেও কোন বর্ণমালা নেই। এরা অসমিয়া বর্ণমালা ব্যবহার করে। হাজংরা প্রধানত কৃষিজীবী। ভাত মাছ, শাক সবজি ও বিভিন্ন পশুপাখির মাংস এদের প্রিয় খাবার। নিজেদের তৈরি মদও এরা খেয়ে থাকে। মহিলারা নিজেদের তাঁতে তৈরি কাপড়, আর্গন নামের এক প্রকার চাদর এবং পুরুষেরা লুঙ্গি ,ধূতি ও জামা পরিধান করে।

পিতৃপ্রধান হাজং সমাজে ছেলেরাই সম্পত্তির উত্তরাধিকারী। হাজং সমাজ ৪ ভাগে বিভক্ত।
যথা- পাড়া, গাঁও, চাকলা এবং পুরাগাঁও বা পরগনা। গ্রামপ্রধানকে গাঁওবুড়া এবং চাকলা প্রধানকে গড়ে মোড়ল বলা হয়। এরা ১৭টি গোত্রে বিভক্ত। গোত্রকে এরা নিকনি বলে। হাজং সমাজে একই গোত্রে বিবাহ নিষিদ্ধ।

কোচ

কোচ সম্প্রদায়

 


বাংলাদেশের প্রাচীন আদিবাসীদের মধ্যে অন্যতম হল কোচ জাতিগোষ্ঠী। কোচদের আদি নিবাস ভারতের কোচ বিহারে। বর্তমানে এদের বসবাস শেরপুর জেলার শ্রীবর্দী, ঝিনাইগাতি ও নালিতাবাড়ির পাহাড়ি এলাকায়। গত শতাব্দীতে এদের সংখ্যা বেশি থাকলেও বর্তমানে এরা সংখ্যায় অনেক কম। কোচরা আটটি দলে বিভক্ত। যথা- হরিগাইয়া, সাতপাড়ি, ওয়ানাং, দশগাইয়া, চাপ্রা, তিনতিকিয়া, শংকর ও মরগান। প্রতিটি দলের আবার একাধিক গোত্র বা নিকিনি রয়েছে। কোচরা পিতৃপ্রধান হলেও সন্তানেরা মায়ের পদবি ধারণ করে। সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয় পুত্র সন্তান। একই গোত্রে বিবাহ কোচ সমাজে নিষিদ্ধ। কোচ মেয়েরা বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে চলে যায়।

কোচ পুরুষেরা সাধারণত ধূতি লুঙ্গি ও জামা পরিধান করে। মহিলারা পড়ে নিজেদের তাঁতে তৈরি লেফেন বা লৈফানেক। কোচদের নিজস্ব ভাষা থাকলেও কোনো বর্ণমালা নেই। নিজের মধ্যে এরা নিজস্ব ভাষা ব্যবহার করলেও বাংলাতেই বেশি কথা বলে। কোচদের প্রধান খাবার ভাত। এছাড়াও শাকসবজি, ডাল, ডিম, মাছ ও মাংস খেয়ে থাকে। শূকর, খরগোশ, শজারুর মাংস এদের অতি প্রিয়। কুইচা, কচ্ছপসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণির মাংসও এরা খেয়ে থাকে। বিভিন্ন উৎসবে এরা পিঠা, ক্ষীর, পায়েস, মিষ্টি ও নিজেদের তৈরি মদ পান করে থাকে।