Wednesday, May 20, 2020

মার্কেটিং এর যুগ : প্রচারেই প্রসার - ভূবন মুন্সী



জীবন হলো অল্প তাপের আগুন। এতো অল্প তাপের অধিকারী হয়েও যারা দাবানল সৃষ্টি করতে পারে বা পারমাণবিক আগুনে হিরোশিমা নাগাসাকি ছাই করে দিতে পারে তারাই মানুষ। কেমন মানুষ? ভালো না মন্দ?

যে জীববিজ্ঞান জীবনকে অল্প তাপের আগুন বলে জানে তার কাছে ভালো বা মন্দ বলে কোন মানুষ নেই। কারণ চোর ডাকাত ঠগ প্রতারক বা দাতা ত্রাতা দেবতাদের  DNA নকশায় এমন কোন কোড নেই যার কারনে তারা বদমাস ইতর বা দেবত্বের তকমা পেতে পারে। এ বিষয়ে সমাজবিজ্ঞান আমাদের সাহায্য করে। যুগ বাস্তবতা বা সময়ের নিক্তিতে সে তার ইথিক্স মোরালিটি আউটলুক দিয়ে বা দর্শনগত সীমারেখা টেনে ভালো বা মন্দের বাটখারা নির্মান করে থাকে।

বর্তমান সভ্যতা বাজারী সভ্যতা: সমাজ এখন বাজার আর ব্যাক্তি হচ্ছে  ভোক্তা। মুনাফা অর্জনই অর্থনীতির একমাত্র সুর। প্রাণের চেয়ে পুঁজির গুরুত্ব বেশি।

আমরা যদি মার্কেটিং এর যুগ থেকে একটু পিছনে যাই- কলোনিয়াল যুগে: মানুষের হাতে মৃত্যু প্রাপ্ত হয়েছে অগণিত মানুষ, বাজার দখলের তাড়নায় তাদেরকে দেখেছি গেঁয়ো কুত্তার মতোন কামড়া-কামড়ি, বৈশ্বিক যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ- খোদ ভারত বর্ষেই কোটি কোটি মানুষের মৃত্যু।

প্রযুক্তিগত উত্তরণ কলোনির রূপটাকে বদলে দিয়েছে, একদম হ্রাস করেছে পারমানবিক যুদ্ধের শঙ্কা ত্রাস। নয়া বাস্তবতায় বিজ্ঞাপন দখল করেছে যুদ্ধের কাজ। বিজ্ঞাপন মারফত মনন তৈরি করে, অতপর তৈরি হয় নতুন চাহিদা, তদানুযায়ী যোগান; অধিক চাহিদা, অধিক বিক্রি, অধিক মুনাফা অর্জন।

মার্কেটিং এর এই যুগে মানবতা কিন্তু দৌড়ে পালিয়েছে। যেমনটা শুনি- সুবোধ তুই দৌড়ে পালা কিংবা এখন তোর সময় না। আসলে সময়টাই মার্কেটিং এর। মানুষ মেতে আছে প্রচারেই প্রসার স্লোগানে। জ্ঞান এখন দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ। নগদ টাকা আসবেনা এমন কাজ গুলো অর্থহীন হয়ে উঠেছে। সব চলছে ডিম্যান্ড এন্ড সাপ্লাইয়ের ভিত্তিতে। যে ডিম্যান্ডই হোক না কেন - অস্ত্রপাতি কিংবা পর্ণোগ্রাফি আপত্তি নেই।

ন্যায়সঙ্গত এবং পরিবেশ বিজ্ঞান সম্মত নতুন অর্থনৈতিক কাঠামো আমাদের খোঁজতে হবে। শুধু মুনাফা কেন্দ্রীকতায় আমরা জন্ম দিয়েছি 'আজাইরা কাজ' আর 'বেহুদা পণ্য'। ধর্ম, মাতৃত্ব, সুবোধ, দেশ প্রেম কিংবা মানবতা সবকিছুই বাজারে তুলেছি বিজ্ঞাপন মারফত পণ্য বিক্রির উদ্দেশ্য; ঐতিহাসিক আদর্শিক চরিত্র, এমনকি প্রফেটদেরকেও বাদ রাখিনি। সমাজটাই বাজার আর সব মানুষ খদ্দের।

ভালো বা মন্দের তুলাদণ্ড এখন টাকা। দান ত্রাণ যা কিছুই করিনা কেন সব কিছুতেই বিজ্ঞাপনের ছোঁয়া, প্রচারেই প্রসার। ধান কাটার দৃশ্যকে বাজারী বিজ্ঞাপন স্টাইলে প্রচার ব্যাবসা বৃত্তিক মনোভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে কিংবা উল্টা পাল্টা ওয়াজ নসিহত বা বক্তব্য প্রদান করে ভাইরাল হবার চেষ্টা মূলত বাজার দখলের চেষ্টা বা প্রচারেই প্রসার নীতির অনুকরণ।

ডান হাত দান করলে বাম হাত না জানার কথা অথচ তাদের ভঙ্গিমা... প্রফেট বর্তমান থাকলে বিস্মিত হতেন শান্তির অনুসারীদের দেখে। ডান গালে চড় মারলে বাম গাল পেতে দেওয়ার কথা থাকলেও অর্থের জন্য অস্ত্র নির্মাণ, বাজার দখলের নামে যুদ্ধ- যিশু বেঁচে থাকলে অভিসম্পাত করতেন। পুরনো পরম্পরার শৃঙ্খল দেখে বাসুদেব পুনরায় 'যুদ্ধ' আরম্ভ করতেন।

'নতুন যুগ' সমাগত। 'পুরাতন' বিদায় না নিয়ে শৃঙ্খলার বেড়ি হয়ে সেঁটে আছে সভ্যতার গলায়, জোয়াল হয়ে দাবিয়ে রেখেছে সমাজের স্কন্ধ।

রাত ক্ত্ত হইলো? উত্তর মেলেনা। রাত পোহাবার কত দেরী? উত্তর মেলেনা। মাঝি বেঘোরে ঘুমায়া থাকে। কিন্তু সময়তো থেমে নেই। 'নতুন' প্রসবের প্রাণান্ত চেষ্টা সময় নিজেই করছে: জলবায়ুর পরিবর্তন কিংবা ঘন ঘন ভাইরাসের প্রকোপ, অতপর বারবার প্যানডেমিক, এসব কিছু ভিন্ন কোন অর্থ বহন করে কী?


০৫.০৫.২০২০

No comments:

Post a Comment