Wednesday, May 20, 2020
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও স্থানীয় শাসন প্রসঙ্গে - আব্দুল আলীম
ভারত উপমহাদেশে বাংলা ছিলো প্রদেশ। ১৮৮৫ সালে বৃটিশ শাসক গোষ্ঠীর সহায়তায় কংগ্রেস নামে রাজনৈতিক দলের উদ্ভব হয়, যা হিন্দু জনগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার্থে ব্যবহৃত হয়। যার ফলশ্রুতিতে মুসলমানগন তাদের স্বার্থরক্ষার্থে ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ নামে রাজনৈতিক দল গঠন করে। এভাবে গোটা ভারতবর্ষের জনগণ এ দুটো রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে বিভক্ত হয়ে যায়।
(এ দুটো রাজনৈতিক দল তৈরির ন্যাপথ্য নায়কের ভূমিকা ছিল বৃটিশ শাসকগোষ্ঠীর। বৃটিশ শাসকগোষ্ঠী নিজেদের শাসন কার্য যথাযথ পরিচালনা করার জন্যই উল্লিখিত রাজনৈতিক দল দুটি গঠন করেছিল। যা মূলত তাদের স্বার্থে তাদের জন্য গড়া।এদের জনসমাজ তথা এদেশের মানুষের স্বার্থের বিপরীতে ছিল।)
তখন থেকেই হিন্দু মুসলিম নিজেদেরকে দুটি আলাদা জাতি হিসেবে ভাবতে থাকে এবং দাবি আদায়ের প্রশ্নে আন্দোলন সংগ্রাম করতে থাকে। এভাবে বৃটিশ শাসকগোষ্ঠী ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষকে দুইভাগে ভাগ করে পাকিস্তানের দায়িত্ব অর্পণ করে মুসলিম লীগের হাতে এবং ভারতের দায়িত্ব অর্পিত হয় কংগ্রেসের ওপর।
তখন থেকেই ভারত উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিষবৃক্ষ রোপিত হয়। যে বিষবৃক্ষের ফল এ দেশের জনসাধারণ এখনো ভোগ করছে।
আমার আলোচনা এখানে নয়, আলোচনা হচ্ছে বৃটিশ শাসন সাপেক্ষে ভারতবর্ষ ছিল প্রদেশ আর এদেশের জনসাধারণ ছিল সাধারণ প্রজা। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর পাকিস্তান সাপেক্ষে বাংলা ছিল প্রদেশ। সেই বৃটিশ শাসনামলে এ ভারতবর্ষের জনগণের প্রধান দাবি ছিল প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন। এ দাবি আদায়ের প্রশ্নে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ সম্মিলিত ভাবে আন্দোলন সংগ্রাম করেন। এ কারনে বৃটিশ শাসক ১৯৩৫,১৯৪৬ ও ১৯৪৭ সালের ভারত শাসন আইনের মাধ্যমে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের প্রতিশ্রুতি প্রদান করলেও মূলত বাস্তবায়িত হয়নি।
পাকিস্তান সাপেক্ষে বাংলা তথা পূর্ব বাংলা,পাঞ্জাব,সিন্ধু,বেলুচিস্তান ইত্যাদি ছিল প্রদেশ।
তখন বাংলার জনগণের প্রধান দাবি ছিল পূর্ব বাংলা তথা বাংলার স্বায়ত্তশাসন। যে কারনে বাংলার জনগন ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যত্থান, ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন, সর্বোপরি ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলা প্রদেশ আলাদা একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। শেখ মুজিবের নেতৃত্বে ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলনের দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম দাবি ছিল প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন এবং বাংলার জন্য আলাদা অর্থনৈতিক ফান্ড গঠন। তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি ১৯৭১ সাল পর্যন্ত এ দেশের মালিক ছিল বিদেশি শাসকগোষ্ঠী। কিন্তু ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এ দেশের জনগণ তার স্বত্তাধিকারী ফিরে পেলেও বাংলা এখনো বাংলার হয়ে ওঠেনি।
বাংলার জনগনের সেই কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন তথা মনোবাসনা অপূরিত থেকে গেছে।
তাহলে প্রশ্ন থেকে যায়, কেন সেই স্বপন অপূরিত রয়ে গেল? বাংলাদেশ পরিচালনার দায়িত্বে যারা ছিল বা আছেন ঐতিহাসিক বাস্তবতায় স্বাধীন বাংলার রাজনীতি কেমন হওয়ার কথা ছিল তথা কি ধরনের শাসন ব্যবস্থা হওয়ার কথা ছিল। ধর্মের জন্য ধর্মীয়গ্রন্থ তেমনি রাজনীতির জন্য ইতিহাস। আমরা ইতিহাস থেকে দেখতে পাই বৃটিশ শাসন ও পাকিস্তান শাসনামলে এদেশের জনগনের মুক্তির প্রধান দাবি ছিল প্রাদেশিক স্বায়ত্ত্বশাসন। প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন বলতে প্রদেশের জনগন দ্বারা প্রদেশ পরিচালিত হবে। মূলত প্রদেশের অর্থ দিয়ে প্রদেশ চালিত হবে। একটা অংশ কেন্দ্রে যাবে কেন্দ্র তথা গোটাদেশ পরিচালনার জন্য। আজকের স্বাধীন বাংলায় প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের সমার্থক হয়ে দাড়িয়েছে স্থানীয় শাসন।মূলত পূর্ব থেকেই মানুষ স্থানীয় ক্ষমতা তথা স্থানীয় শাসন বাস্তবায়নের জন্যই সংগ্রাম করেছেন। কিন্তু ক্ষমতা পেয়ে জনগনের এ দাবিটি অন্তরালে থেকেছে না হয় শাসকগোষ্ঠী জেনে বোঝেই জনমনের এ দাবিটি অন্তরাল করেছে।
স্থানীয় শাসন বাস্তবায়নই হবে স্বাধীন বাংলার রাজনীতি তথা এদেশের মানুষের ঐতিহাসিক দাবি। স্থানীয় শাসন তথা সংবিধানের ৬০ ধারা বাস্তবায়নই হবে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে স্বাধীন বাংলার বর্তমান রাজনীতি।
২০.০৫.২০২০
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment