Thursday, September 17, 2020

এবং সত্য কথা - এম ইকবাল।

মেসেঞ্জারঅবকসমোলজি



সত্য কথার বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে- তুমি কাউকে সবসময় খুশি রাখতে পারবে না যদি সে সত্যের অনুসন্ধানী না হয়।


আমাদের সমাজটাই যেহেতু মিথ্যা আর পঙ্কিলতায় ডুবে আছে তাই আমাদের সবার জীবনে মিথ্যা-ই প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে।

আমাদের সমাজ যে মিথ্যা, অনাচার, অন্যায় আর পঙ্কিলতায় ডুবে আছে চারপাশে তাকালে এটা যে কেউ বুঝতে পারে। তবুও আমরা সবাই মনে করি নিজে যা করছি ঠিকই তো করছি। সেটাকেই আমরা জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় ভেবে মেনে চলছি।

কোন এক সময়ে এগিয়ে যাওয়ার শর্তে পূজিবাদী দর্শনকে পৃথিবী গ্রহন করলেও তা আজ কিছু মানুষের স্বার্থ রক্ষার হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। শিল্প, প্রযুক্তি আর মুক্তবাজার অর্থনীতির বিকাশ হতে হতে আজ তা দানবে পরিনত হয়েছে। অল্প কিছু মানুষের হাতে চলে এসেছে পৃথিবীর অর্ধেক সম্পত্তি।

বলা হচ্ছে, পৃথিবীর ১ ভাগ মানুষের কাছে পৃথিবীর ৯৯ ভাগ সম্পত্তি চলে এসেছে। অন্যদিকে ৯৯ ভাগ মানুষের হাতে থাকে মোট সম্পত্তির ১ শতাংশ। আর এই ১ শতাংশের মধ্যে থেকে আমরা নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগীতায় কামড়া কামড়িতে ব্যস্ত। এদিকে আর্থিক মানদন্ডই সমাজের মুল মানদন্ড হয়ে উঠেছে। 

এই মানদন্ডে কে বড় কে ছোট হলাম এই হিসেব করতেই আমাদের জীবন কেটে যায়। একে অপরকে হেয় করতে, অন্যের উপর প্রভাব বিস্তার করতে প্রতিনিয়ত নিজেদের মধ্যে বিভেদ করে চলছি। এই বিভেদ করার কূটকৌশল ও শিক্ষানীতি সমাজে তারাই জারি রেখেছে, যাদের হাতে বেশিরভাগ সম্পত্তি বন্দি হয়ে আছে। একদিকে কাড়ি কাড়ি টাকা ঢালছে সমাজের চলমান দৃষ্টিভঙ্গি টিকিয়ে রাখতে আর অন্যদিকে শিক্ষাখাতে যথাযথ মান বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ করতে সরকারকে বাধা দিচ্ছে।

অথচ এই নীতি চলমান থাকলে পৃথিবীর ৯৯ ভাগ সম্পত্তিই অচিরেই হাতেগোনা কিছু পুজিপতিদের হাতে চলে যাওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। তারা চাইলেই এটা করতে পারে। ফলে ভূমিহীন মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকবে, ঋণগ্রস্থ মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকবে, কর্মহীন বেকারের সংখ্যা বাড়তে থাকবে, চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই বাড়তে থাকবে, সামাজিক বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করবে, পূজিপতিরা নতুন নতুন ফর্মূলা এনে দাড় করাবে মানুষের সামনে- মুখের সামনে মুলো ঝুলানোর মত, সর্বোপরি মানুষ কৃতদাসের চেয়েও মূল্যহীন হয়ে পড়বে। পূজিপতিদের দয়া, দান-খয়রাত আর ঋণকার্যক্রম হয়ে উঠবে সাধারণদের বাঁচার একমাত্র মাধ্যম।

একদিকে চলবে কিছু মানুষের বিলাসবহুল জীবনযাপন অপরদিকে দেশজুড়ে চলবে অসহায় মানুষের আর্তনাদ। এমতাবস্থায় বার বার দূর্ভিক্ষ, মহামারী হতেই থাকবে। এগুলোই মানব সৃষ্ট বা কৃত্রিম দূর্যোগ। অথচ পৃথিবীর তাবৎ রাষ্ট্রব্যবস্থা ব্যক্তির হাতে সম্পত্তি কুক্ষিগত হওয়ার এই পথ খোলা রেখেছে। এভাবে যতখুশি সম্পত্তি অর্জন করা বর্তমান ব্যবস্থায় বৈধ বলে বিবেচিত হচ্ছে।

কথাটাকে এভাবও বলা যেতে পারে, নিজ মেধা, শ্রম, যোগ্যতায় কোনো মানুষ যদি সারা পৃথিবীর সকল সম্পত্তির মালিক হয়ে যায়, আর বাকি সমস্ত মানুষ যদি ভুমিহীন, সম্পত্তিহীন, খাদ্যহীন, বস্ত্রহীন হয়ে যায়, এমনকি অসুস্থ হয়ে মারাও যায় তাতেও ভু-সম্পত্তির মালিককে দায়ী করা যাবে না। সে চাইলে তার সমস্ত সম্পত্তি অনাবাদী রাখতে পারে, তার সমস্ত অর্থ মাটির তলায় জমা করতে পারে, কোনো মানুষকেই তার সম্পত্তির ভাগ নাও দিতে পারে তবুও সে আইনত বৈধ।

পৃথিবীর বর্তমান ব্যবস্থায় তাকে দোষী বলার কোনো সুযোগ নেই। সত্যিকার অর্থেই আমরা এমন একটা ব্যবস্থার মধ্যে বাস করছি এবং এর জন্য অনেকটা আমরাই দায়ী। নিজের ঘাড়ে সমস্যার বোঝা না চাপলে এর তীব্রতা কেউ অনুভব করি না। যেন নিজে বাঁচলেই সব সমস্যা শেষ। চারপাশের সংকটকে নিজের সংকট হিসেবে ভাবতে চাই না তবে চারপাশে নিজের প্রভাব বিস্তার করতে চাই ঠিকই। আমাদের এই চরিত্রটাও চলমান ব্যবস্থার ফল। আমাদের চরিত্রটা এই চলমান ব্যবস্থার মতোই স্বার্থান্ধ, মিথ্যা আর অমানবিক।

আসলে মানুষের জন্য বর্তমান পৃথিবীর চলমান ব্যবস্থাটাই অবৈধ হয়ে পড়েছে। এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য দরকার নূতন ব্যবস্থা।

সমগ্র পৃথিবীর মানুষের জীবনের জন্য এত বড় নির্মম সত্য সামনে চলে আসলেও আমরা সত্যকে একপাশে ঠেলে ব্যক্তিস্বার্থকে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে জীবনকেই সত্য থেকে বহুদূরে ঠেলে দিয়েছি। তাই সত্যের প্রতি শ্রদ্ধা থাকলেও জীবনের সাথে সত্যের সম্পর্ক না থাকার জন্য সত্যকে ঠিকমতো চেনা হয় না, জানা হয় না, উপলব্ধি করা হয় না। তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোন কথা যদি আমার ফেবারে থাকে তবে তা আমরা সত্য বলে মেনে নেই, খুশি হই, আর ফেবারে না থাকলে তা মিথ্যা বলে ছুড়ে ফেলি, অখুশি হই।

তাই কাউকে খুশি করার উদ্দেশ্য নিয়ে সত্যের সাথে থাকা যায় না। সত্যের সাথে থাকতে হলে নির্মোহ হতে হয়। সত্যের অনুসন্ধান করতে হয় জীবন ও জগৎকে সঠিকভাবে চেনার জন্য, উপলব্ধি করার জন্য, চিন্তা, লক্ষ্য ও কর্মে জগতের সাথে জীবনের ঐক্যতা স্থাপনের জন্য, প্রকৃতির সকল উপাদানের সাথে ভারসাম্য বজায় রেখে ভালো থাকার জন্যে, নিজে ভালো থেকে সবাইকে ভালো রাখার জন্য।

আপডেট পেতে পেইজএ লাইক দিয়ে সাথে থাকুন।