Friday, May 22, 2020

কাশ্মীর এবং অন্যান্য মৃত্যুপুরী - ভূবন মুন্সী



"সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই" এ বঙ্গীয় বোধ-বাক্য ধারন, বাস্তবায়ন আজ পৃথিবীর অনিবার্য দাবী হয়ে উঠেছে। দীর্ঘ পথ চলায় প্রাযুক্তিক সভ্যতা যে জায়গাটাতে খুব পশ্চাৎপদ হয়ে আছে তা মানুষ প্রসঙ্গ।

রাজনৈতিক মানচিত্র, জাতিগত মর্যাদা, গোষ্ঠীগত ও ব্যাক্তিগত মুনাফাকে সামনে রেখে চালিত সভ্যতা প্রতিনিয়ত পিঁপড়ের মতো পিষে ফেলছে মানুষ। যাঁদেরকে ঘিরে পৃথিবী সবুজ হয়ে উঠলো, সভ্যতা খোঁজে পেল টিকে থাকার যৌক্তিক সংজ্ঞা, তাঁরাই এক পর্যায়ে হয়ে উঠলো 'এক্সপেরিমেন্টাল ব্যাঙ', লেপ্টে গেলো দর্শনের কালো পৃষ্ঠায়।

আজ কাশ্মীর, কাল ফিলিস্তিন, পরশু রাখাইন; এভাবে চলতেই থাকে আফগান, ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া; এভাবে চলতেই থাকবে আর মরতেই থাকবে বোধ শ্রেষ্ঠ মানুষ।

বোধ শ্রেষ্ঠ হয়েও কেন এ বেহাল দশা?

মানুষ চাঁদে যায়, প্রতিবেশী আর বাড়ির লোক অনাহারে  মরে; মানুষ মঙ্গলে যায়, ঘরের লোক আত্মহত্যা করে; মানুষ সূর্যের দিকে ক্যাসিনো পাঠায়, সিরিয়া অনলে পুড়ে, পুড়ে যায় কাশ্মীর।

কেন এতো বৈপরীত্যে ঠাঁসা এক পৃথিবীর বুক?

সিরিয় শিশু আইলান কুর্দির জন্য, কঁচুকাটা হওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য, ফিলিস্তিনিদের জন্য, ইরাক,আফগান আর কাশ্মীরের জন্য সেই কবে থেকে মানবিক আর্তি! কিন্তু মৃত্যু থামছেনা। যমদূত ক্লান্ত হলেই কেবল কিছুদিন মৃত্যু ঘুমিয়ে থাকে। বখাটে কুকুর গুলো প্রহরায় রাখে মানুষকে; মানুষ যেন না পালায়, যমদূত যেন পুনসংহারে মত্ত হতে পারে তান্ডব লীলায়।

সমস্যা কোথায়, সমাধান কোন দ্বীপে?

হাজারো ইতিহাস, দর্শন, সাহিত্য নির্মিত ও বিশ্লেষিত হয়ে মুদ্রিত ও পঠিত হলেও, মানুষ ও মানবীয় মর্যাদা থেকে গেছে অবেহেলায় কিংবা ভাসা ভাসা গুরুত্বে, কোন 'মানুষ সংবিধান' স্বাতন্ত্রিক মর্যাদায় মুদ্রিত, পাঠ্য ও পঠিত এবং চর্চিত হয়নি আজো; যতটুকু হয়েছে তা অন্য প্রসঙ্গের সাথে রিলেট করে, যেমন ব্যাক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানেও মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার, অধিকার ও মর্যাদা আলোচ্য ও চর্চিত হয়, মূখ্যত তা কোন ভাবেই মানুষের সাথে নয়, তা ভোক্তা ও ক্রেতার সাথে; এক্ষেত্রে মানুষ না হয়ে গরু যদি ক্রেতা বা ভোক্তা হতো, তাহলে তাদের সাথেও অনুরূপ ব্যবহার হতো।

জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে মানুষ শুধুই মানুষ, মানুষ প্রাসঙ্গিকতায় মানচিত্রও অতিশয় তুচ্ছ বিষয়। মূলত একটি সজীব মানচিত্রই বর্তমান, আর তা মানুষের মানচিত্র। এ সাড়েতিন হাত মানচিত্রের মর্যাদার, তথা যৌক্তিক অধিকার বাস্তবায়নে প্রয়োজন হয়ে পরেছে আধুনিক বিজ্ঞাননিষ্ঠ সংবিধান এবং মানুষ  শব্দটা যেহেতু স্থানিক সীমা অতিক্রম করে বৈশ্বিক,  সেহেতু মানুষ অর্থেই সমগ্র পৃথিবীর জন্য প্রয়োজন মৌলিক একক সংবিধান। স্থানিক বাস্তবতার ভিন্নতা, তথা বৈচিত্র্য প্রকৃতিগত শর্ত, তাই সংবিধানও হতে হবে প্রকৃতি উন্মোচিত জ্ঞান তথা বিজ্ঞানকে আধেয় করে মৌলিক পথে। প্রচলিত জ্ঞান, বিজ্ঞান, দর্শন বা ভাগের সাগরে স্নান করা পন্ডিতের পথ ও মত ক্যানভাসারের মলমের মতে গুণবতী শোনা গেলেও, বাস্তব ক্ষেত্রে তা ব্যার্থতায় পর্যবসিত হতে বাধ্য।

০৬.০৮.১৯

No comments:

Post a Comment