Tuesday, November 30, 2021

মানুষ ও প্রফেশনাল ম্যান - মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল।

অ্যাবস্যুলেটলি ইউ আর নট এ ম্যান! আর ইউ ম্যান? অনারেবল ম্যান?  শিওর?
messenger of cosmology


আপনি কি জানেন সমাজে কেন আপনি সম্মান পান? কি এমন আছে যার জন্য লোকে আপনাকে সম্মান দেখায়? সত্যিই কি?...মানুষ হিসেবে আপনি সমাজে সম্মানিত!!
সমাজে আপনার প্রথম পরিচয় প্রফেশন। দ্বিতীয় পরিচয় অর্থবান বা ক্ষমতাবানের বাপ, ভাই, ছেলে অথবা শালা। অর্থাৎ তৃতীয় বা চতুর্থ স্টেজে আপনি "মানুষ"। সুতরাং লোকে যে কারণে আপনাকে সম্মান করে তা মানুষ হিসেবে না। আপনি----

* রাজনৈতিক নেতা
* ডাক্তার
* ইঞ্জিনিয়ার
* এ্যাডভোকেট
* বিসিএস ক্যাডার
* সরকারী কর্মকর্তা
* এসপি/ডিসি
* পুলিশ, ডিবি, 
* ব্যাংকার
*হুঙ্কার
*মহাজন
* জজ সাহেবের বাপ অথবা ছেলে।
* ওমুকের জামাই
* তমুকের শালা হিসেবেই আপনি সম্মানী।

হ্যাঁ, প্রফেশন, ক্ষমতা, আর টাকার মানদন্ডেই লোকে আপনাকে সম্মান প্রদর্শন করে থাকে।
অর্থাৎ সম্মান, সৃষ্টির সেরা জীব 'মানুষ' হিসেবে নয় বরং লাভে, লোভে বা ভয়ে লোকে আপনাকে যতটুকুন করে তা স্রেফ 'মহাজন' হিসেবে?
বিষয়টা আপনাদের জন্য লিখতেছিনা। নিজে স্পষ্ট হবার তাড়নায় কলম ধরছি।

এবার একটা উদাহরণ দিই পরিস্কার হবে। কিন্তু পরিস্কার জলেও অনেকেই তাকাতে চায়না। কারণ নিজের আসল রূপটা যদি নিজের কাছে ধরা পড়ে যায়!! আমার অবশ্য নর্সিসাস আছে। আত্মপ্রেমে মগ্ন হয়ে রোজই স্বচ্ছ জল কিংবা আয়নায় তাকিয়ে থাকি। দেখার চেষ্টা করি কেমন আমি।

এখন মূল প্রসঙ্গে আসি- আপনি সম্মানী লোক, কারন আপনি এ্যাডভোকেট, ডাক্তার বা মন্ত্রী। এখন আপনার পরিচয় থেকে এ্যাডভোকেট, ডাক্তার বা মন্ত্রী পদবী তুলে দিলাম (সদ্য বহিষ্কৃত গাজীপুর সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর)। আপনার কোটি টাকা নিয়ে অর্থশূন্য করে দিলাম। আপনার বংশগৌরব মুছে দিলাম,,,,,পরক্ষণেই  কতটুকু সম্মান প্রাপ্তি হবে আপনার! হবে কি-- সিনহা?

"আমিও মানুষ তুমিও মানুষ" বোধে
যে সম্মান প্রাপ্তি হয় বা হবে ততটুকুই আপনার মানব সত্বা বা মনুষ্যত্ব। আর যতটুকু  মনুষ্যত্ব- আপনি ততটুকুই মানুষ। বাকি সবটুকু জুড়েই আপনি প্রফেশনিস্ট বা প্রফেশনাল জীব 'কীট' হিসেবে অমানুষ। তাই 'আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে- আপনি তৃতীয় বা চতুর্থ স্টেজে মানুষ।  আপনাকে প্রফেশনালি মান দেওয়া হচ্ছে,  মানুষ হিসেবে নয়। আপনি মানুষ হিসেবে নিজেকে সামনে আনেননি, মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটিয়ে আপামর মানুষের হয়ে উঠতে পারেননি। সত্যি বলছি- আপনি মানুষ হয়ে উঠতে পারেননি।

Saturday, November 20, 2021

ধন্যবাদ, নতুন দলকে সুযোগ দেবার জন্য - মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল সুমন।

"ধন্যবাদ, নতুন দলকে সুযোগ দেবার জন্য"


মেসেঞ্জার অব কসমোলজি
Messenger Of Cosmology 




রাজনীতির ক্ষেত্রে জনগণ ও জনপদ ধ্রুব সত্য হলেও, রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে কাঠামোগত দিকটা গুরুত্বপূর্ণ আর কাঠামোগত দিকটা সময়ের সাথে বিবর্তিত হয়, বদলে যায়, বদলে নিতে হয়। কাঠামো এখানে যন্ত্র সদৃশ। বদলটাই অনিবার্য। স্বাধীনতা পূর্ববর্তী ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রিক কাঠামো আর স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রিক কাঠামো অভিন্ন রেখে আমরা যখন দেশ পরিচালনার জন্য সরকার গঠন করি, চেতনাগত দিক থেকে স্বাধীনতা ও পরাধীনতার পার্থক্য বুঝলেও কেবল বিগত পঞ্চাশ বছরে অধরা থেকে গেছে রাষ্ট্রীক কাঠামোর বিষয়টা। অর্থনৈতিক শোষণ ও নিপীড়নের জন্য বিদেশিদের হাতে গড়া রাষ্ট্র কাঠামোয় স্বাধীন দেশের সরকার বসা মাত্রই ব্যর্থতার শিকল গলায় জড়িয়ে যাচ্ছে। 'পান থেকে চুন আর তেল থেকে নুন' এর ব্যবস্থাপনায় জনপ্রিয়তায় তুঙ্গে থাকা সরকার প্রায় সর্বত্রই বারংবার গনবিরোধীর তকমা নিয়ে হাজির হচ্ছে। যেন যে লংকায় যাচ্ছে, সেই রাবণ!

দেশের ভালোর সাথে সবার ভালোটা জড়িয়ে থাকে বলেই-

হাজার বছরের ইতিহাস বিশ্লেষণ পূর্বক,
আমরা বলেছিলাম- বৃটিশ সৃষ্ট আইন, আদালত, আমলা, প্রশাসনে সাজানো রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনায় ডান বামের যত- আদর্শিক, দেশপ্রেমিক, যোগ্য, দক্ষ ও সৎ নেতৃত্বই আসুক না কেন তিনি ব্যর্থ হতে বাধ্য। 

রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনায় থাকা সরকার কে ব্যর্থতার 'দ্বায়' মুক্তির ঐতিহাসিক পথ ও পদ্ধতি নিয়ে ২০১৯ এর নির্বাচনের পূর্বে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বাক্ষাত ছিল অতীব জরুরী। গণভবনে স্বাক্ষাত সিডিউলের জন্য আওয়ামী ঘরানার বহু রথী-মহারথী-সারথীর শরণাপন্ন হলাম, বিম্বিসার-অশোকের ধূসর জগতে,,,, অনেক ঘুরলাম।

কিন্তু ! না সাক্ষাৎ পেলাম, না পেলাম সিডিউল, বুঝলাম মক্কা বহুদূর!

দেশে যত বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা তার জন্য দ্বায়ী বিরোধী দল আর যা কিছু ভালো তা আওয়ামী লীগ এর! অর্থাৎ দেশের ভালো একমাত্র আওয়ামী লীগই চায় বা চাইবে। অন্য কেহ চাইতে পারে না কিংবা দেশ মানুষের জন্য ভালো কিছু নিয়ে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত যাওয়ার কোনো রাস্তা অন্তত আওয়ামী লীগে নেই। 

বি:দ্র: সরকার প্রধান কিংবা প্রধানমন্ত্রী কে নিয়ে স্পর্শকাতর, অরুচিকর বা নেগেটিভ না বলা পর্যন্ত (প্রশাসন বা সরকারী বাহিনীর কান খাড়াই হয় না) আর মিডিয়া তো অন্য জিনিস,,,, শুধু কুকুর কামড়ালেই নিউজ হয়, ভালো কিছু এদের নজরেই আসে না। সত্যিকার অর্থে নেগেটিভ বা কামড়া-কামড়ির সংস্কৃতিতে নিমজ্জিত হতে পারিনি বলেই হয়তো সরকার প্রধান আমাদের দিকে দৃষ্টি ক্ষেপণ করেননি। যাক সে সব কথা...

সাধারণ হিসেবে আমরাও এটাই চাই, রাষ্ট্রীয় মসনদে যে সরকারই থাকুক, সবার ভালো করুক, সবাই কে ভালো রাখুক। স্বাধীনতা নিঃসন্দেহে বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন। কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী এমন একটি সরকার দেখাতে পারেন? যে সরকার জনগণের সরকার! 

ব্যপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করলেও ২/৩ বছরের মধ্যে জনমনে যাকে নিয়ে বিরূপ, বিদ্বেষ বা অসন্তোষ দেখা যায় নি? 

রাষ্ট্র তথা দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে যাঁরা ব্যর্থ হননি?

পরিচালকের আসনে বসা মাত্র সবার সব ঐতিহ্য, অর্জন, উন্নয়ন তলানিতে ঠেকেনি?

আগামীতে আরো ঠেকবে, আরো পঁচবে- যে যত ভালোই হন না কেন। কারণ এটাই রাষ্ট্রতত্ত্ব বা সাইন্স।

ডান বাম নয়, আশু সমস্যা সমাধানের জন্য- হাঁটতে হবে 'দেশ' বরাবর।... এর বাইরে যে যত বেশি গা দোলাবে, চোরাবালিতে সে তত দ্রুত ডুববে।

রাজনীতি, রাজনীতির পথ বেয়েই বর্তমানে এমন পর্যায়ে চলে এসেছে,,,, যার দরুন ষোল কোটি বাঙালির হৃদয়ে গেথে থাকা 'নৌকা আর ধান' এর মধ্যে থেকে যেকোনো একটি চিরতরে বিদায় নিতে যাচ্ছে,,,, অদূর ভবিষ্যতে। ডু অর ডাই। 

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি অভয় দিলে মনের অব্যক্ত কথাগুলো  বলতে চাই, বাঁচতে চাই, সাথে সমগ্র দেশকে নিয়ে। 


লেখক-
মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল সুমন
গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।



Wednesday, November 10, 2021

ছোটগল্প - ভাঙচুর - ভূবন মুন্সী।

ভাঙচুর

messenger of cosmology
ভূবন মুন্সী



সুবোধ চুরুট টানতে টানতে ঘরে প্রবেশ করলো। ডান হাতে স্মার্ট ফোন। ফোনটা টেবিলে ধাক্কা দিয়ে রেখে বললো- বাল ছাল মিটিং টিটিং আর ভাল্লাগেনা। দেশ টেশ গোল্লায় যাক, সবাই মারা দিক, আমার কী? তাড়াতাড়ি মিটিং শেষ করবেন।

প্রগতি পার্টির অগ্রজ নেতা উত্তম আগে থেকেই বসা। রুষ্ট চোখে তাকালো সুবোধের দিকে- তুমি এতো স্ল্যাং ল্যাঙ্গুয়েজ কোথায় শিখলা?

ক্যান, আপনার দেশ থাইকা শিখলাম। যা শেখানো হইলো তায় শিখলাম।

তোমার মাথা বন্ধক দিছো?- উত্তম বললো। 'সব ব্যাপারে সিলি মুড বন্ধ কর।'

সুবোধ এবার মনে মনে কথা বলছে- শালা! খালি উপদেশ। কী বাল ফালান সারাদিন, জানি।

সকাল আর মাগরিব একসাথে ঘরে ঢুকলো। দুজনের সখ্যতা খুব। সবার জানা মতে ইটিস পিটিস চলে। তবে সকালের প্রেম বিরহের কাব্যগ্রন্থ বেশ সাড়া পেয়েছিলো। মারজুক রাসেলের দেহবন্টনবিষয়ক দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর কাব্য গ্রন্থটিও বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছিলো তরুন ও বুদ্ধিজীবী মহলে। 

সুবোধ বাঁকা চোখে তাকিয়ে আছে, সকালকে তার খানকি খানকি লাগে। যদিও সকাল ওতো খারাপ না। মাগরিব ছেলেটার মধ্যে লাম্পট্যের জ্বিন আছড় করে আছে। 'শালা, মালটারে ঠিক ঝুটিয়ে নিছে।'

বিপ্লব, স্লোগান, উদ্যম আর মেধা একসাথে এলো। বিপ্লব বললো- সবাই এসে গেছে? সুবোধ বললো- হ্যাঁ। উত্তম বললো- দাদা, সাহস আর দৃষ্টি এখনো আসেনি। বাদবাকি আমরা সবাই আছি। 'সাহস অসুস্থ দাদা, ও আজ আসতে পারবেনা। দৃষ্টিও আসবেনা। দৃষ্টি গতকাল শ্বশুর বাড়ি গেছে।'

উত্তম ভাবে সুবোধ ছেলেটা বেশি সুবিধার না হলেও কাজে পারদর্শী। সবার দিকে নজর তার।

সবাই গোল টেবিলে বসে গেলো। মিটিং শুরু। "দেশের চলমান সংকট ও সমাধান শীর্ষক আলোচনা" - প্যানাটা দেয়ালে সাঁটা। এয়ার ফ্রেশার লেমন গন্ধ ছড়াচ্ছে। মাগরিব কথা বললো দ্রব্য মূল্যের উর্ধগতি নিয়ে। 'এটা একটা কূটনৈতিক ব্যাধি', 'মন্ত্রী ও দোকানদারদের স্বার্থগত সন্ধি বারবার এ ব্যাধি বাড়িয়ে দিচ্ছে। '

সকাল সাহিত্যের আকাল নিয়ে কথা তুললো। 'নপুংসক পিরিয়ড পার করছি আমরা।'

স্লোগান, উদ্যম, মেধা জনগণকে দেশের সংকট নিরসনে কি করে এক করা  যায় তায় ভাবছে।

উত্তম সুশীল সমাজের নিরব ভূমিকার নিন্দা জানিয়ে বলতে থাকলো- দেশটা কে দেখবে তবে? কে আর্ত মানুষ নিয়ে ব্রিফ করবে? আমাদের রোজ সংবাদ সম্মেলন করা দরকার।

সবাই সবার কথাকে যৌক্তিক ও যুগসত্য মনে করে তালি বাজাচ্ছে। কথার ফাঁকে ফাঁকে তালি পড়া এদেশের বংশগত রেওয়াজ।

সুবোধ লাইটার বের করে চুরুট ধরাতে যাচ্ছে... 'মিটিং শেষ?' সবাই ক্রোধ ঝাড়লো। কুল হতে বললো।

'থামুন সুধীবৃন্দ'- সুবোধ বললো। 'দাদা, সংযত গত বছর গুম হলো, এখনো খবর নাই। আমরা যদি অর্গানাইজড থাকি, তবে সংযতকে নিয়ে কোন পদক্ষেপ কেন নেইনি? সভ্যকে মেরে ফেলা হলো! কি হলো? মাঝে মাঝে গোল টেবিলে আসলাম, কন্ঠ খিঁচলাম, চলে গেলাম- কিছু হবে? আমরা সমাজ ও রাষ্ট্রের কোন বালই ছিড়তে পারবোনা। এটাকে না বলে সংগঠন, না সাংগঠনিক চরিত্র। যার যার, তার তার- কী সংগঠন? সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির কোন পদক্ষেপ আমাদের আছে? নাই। ক্যামনে! ক্যামনে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব!'

বিপ্লব বললো, উত্তম কিছু বলবা? 'দাদা, আমরা হুট করে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারিনা। আবেগীয় সিদ্ধান্ত নিলেও এগিয়ে যেতে পারবোনা।' কাউন্টার টক! সুবোধ কথার পা ঠেঁলে দিলো উত্তমের কথায়। 'হুট করেনা মানে কী আঠারো মাসে বছর গোনা! আবেগের রস ছাড়া ছোবড়া বুক নিয়ে বদল চাচ্ছি? বাহ্! "I love my country" এটা আবেগীয় নয়!'

'প্লিজ সাইলেন্ট' বিপ্লব সবার উদ্দেশ্যে বললেন। 'পরস্পরকে ভালোবাসি, রেসপেক্ট করি। নিজেরা এতো কথার বিভেদে জড়ালে হবে? কথার হাত ধরেই মনের বিরোধ আসে।'

সুবোধ বললো- দাদা, এটাতো ব্যক্তি বিরোধ নয়, মতের দ্বন্ধ। এটা ছাড়া পরিকল্পনার স্বচ্ছতা আসবে কোথা থেকে? একেক জন আমরা একেক প্ল্যাটফর্ম থেকে এসেছি। নয়া উদ্যোগে, নয়া প্ল্যাটফর্মের চুলচেরা স্বচ্ছতা দরকার, চরিত্রের ভঙচুর দরকার।

বিপ্লব, উত্তমরা এখন যে যার মতো। মাগরিব আর সকাল সংসার করছে। স্লোগান কন্ঠ ক্যান্সারে ভূগছে।উদ্যম, মেধা বিদেশ পাড়ি জমিয়েছে। 

সেদিনের সেই বৈঠকটাকে রাষ্ট্র পক্ষ দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র মূলক বৈঠক হিসেবে চিহ্নিত করেছিলো। জঙ্গিবাদের কিছু আলামতও নাকি বৈঠক স্থলে পাওয়া গিয়েছিলো। মিডিয়া দারুণ উদ্বেগে কলম চালিয়ে দু চার দিন পর থেকেই আরেক উদ্বেগে ব্যস্ত হয়ে গেছে। সময় দা পত্রিকার নাম পাল্টে ফেলেছে। বিপ্লবদের সাথে সংযোগ থাকার ব্যাপারে কোন ডকুমেন্ট না থাকায় উনি পর্দার আড়ালেই রয়ে গেলেন।

সুবোধ এখনো কারাগারে। সময় দা তার জামিনের দাবিতে নিরপেক্ষ মহল থেকে কথা বলছেন।

Monday, November 1, 2021

ছোটগল্প - আড্ডা- ভূবন মুন্সী

 আড্ডা

Messenger of cosmology
ভূবন মুন্সীর ছোটগল্প- আড্ডা




বাহিরে তুমুল বৃষ্টি। শৈশবের আকাশ ভাঙা দিন যেনো ফিরে এলো ফের। উৎসব আয়োজনে মগ্ন মানুষ। ধোঁয়া সরিয়ে দেখে নিই মানুষের আনাগোনা।
আমার চোখ প্যারালাল দৃষ্টি ফেলে বসে থাকে। ধোঁয়ারা স্পাইরাল হয়ে উর্দ্ধমুখী।
বাউল বলেছিলো,
সত্ত্বা যদি স্পাইরাল হয়ে উর্দ্ধে উঠে, অতপর ছুঁয়ে ফেলে সহস্রার তবেই মুক্তি; কথাটি মনে পড়তেই অন্তর্মুখী হলাম।শামসুদ্দিন আবুল কালামের মতো পথ জানা নাই ভাবে বসে আছি। বাউল বাক্য যেন অচিন ক্রিপ্টোগ্রাফ।
'কি খবর?' শব্দ শুনে হুঁশ হলাম; কবি আরও কিছু বলেছে কি-না শুনি নাই।


চোখে তাকালাম। অপোজিট চোখ থেকে জিজ্ঞাসা এলো, কেমন আছেন?
কিছু উত্তর এলোনা কন্ঠ ছুঁয়ে।
তবু বললাম আড়ষ্ট আছি, বুঝা যাচ্ছে না কিছু। তবে প্রবলেম আছে।
কেমন?
কন্ট্রাডিকশন।
যেমন?
ভাবগত।
এক্সপ্লেইন্যাবল?
নো, আনএ্যাবল।
হোয়াই আনএ্যাবল! আই'ম এক্সপ্লেইন ইট। মি. সাধু বলে উঠলো।
কবি থামিয়ে দিয়ে বললো, আপনি সবটা শোনেননি!
'অজান খবর না জানিলে কিসের ফকিরি' বলে সাধু ভাবে গেলো।
স্টপ কবি, উনাকে বলতে দিন, আমি বললাম।
'এই আমরা বহির্মুখে ব্যাস্ত,
কী করে জানবো অন্তরের খবর!
কে আছে সেখানে
কি চায়
কেনো চায়
কখনো কি জানা হয়েছে আমাদের!
আত্মতত্ত্ব জানিনা
কি করে জানবো আত্মার খবর!' সাধু বলতে থাকলো।
'একবার একূলে 
আরেকবার গোকূলে,
ইহাই কন্ট্রাডিকশনের মূল কারণ।'


ভাই খেলার কি খবর? অর্থ এসে জিগ্যেস করলো।
মুড পাল্টে গেলো সবার।
মি. সাধু ঠা ঠা হাসি থামিয়ে বললো, কার খেলা কে খেলায় জানিনাতো ছোট ভাই।
বাংলাদেশ জিতবে,
আমি শিওর,
আই লাভ বাংলাদেশ।
ভাই আমি কি একটা চা খেতে পারি?
তবে জিততে কষ্ট হবে- অর্থ বললো।
আমি বললাম, হ্যা।
সে বললো, ভাই আপনারা কি প্রাইমারি এক্সাম দিয়েছেন?
আমি বুঝলাম আড্ডার পাশা এবার উল্টালো।
'ভাই কেমন দিলেন? যারা টিকবে তারা কিন্তু প্লেয়ার। প্রশ্ন কিন্তু স্ট্যানডার্ড হয়েছে।'
কবি বললো, 'প্লেয়ার তো ভাই সবাই। টিকা না টিকা দিয়ে যোগ্যতা ম্যাজার হয়না। এটা পরীক্ষা নাকি প্রহসন!এটা সেটা কত কোটা! প্রশ্ন আউট! মাজা আর কোস্তের জোর!২৪লক্ষ এপ্লিকান্টের বিপরীতে ১২সহস্র চেয়ার! ফাকিং সিস্টেম!'


ধোঁয়া টানছে সবাই। গিঞ্জি ঘরে ছড়িয়ে আছে সাড়ে চার হাজার রাসায়নিক পদার্থ। শিরায় শিরায় ওদের স্রোত। বুক চেম্বারে নিকোটিনের চলাচল। একদিন সে কাবু করবে সচল চেম্বার। তবু টানছি। এখানে সবাই টানছে। কারণ জিগ্যেস করলে হয়তো বলবে এমনিই টানি; সেই মেয়েটির মতো করে 'এমনিই সাঁজি'।
অবশ্য ঢাকা'র অবস্থা আরও দিগম্বর। মল- মূত্র- ধোঁয়া একাকার।
রূপম গুনগুনিয়ে গান গাইছে, 
রাত জাগা চোখ নষ্ট বাতাস 
পাশে কেউ নেই একলা হতাশ 
আর ভূল দর্শন গিলে গিলে তোমার আমার 
বাড়ছে বিসুখ।
সাধু উঠে দাঁড়ালো।
'সবাই থাকুন।
আসি আমি' বলে বেরিয়ে গেলো।
 বাহিরে এখনো বৃষ্টি হচ্ছে। ততোটা তুমুল নয়। সবাই বেরিয়ে যাবার সময় এখন।
ওয়াটার ক্যালকুলাসে আমরা কেউ দক্ষ নই। কথার ক্যালকুলাস কারো জানা নেই। এতোক্ষণে বৃষ্টিকণা, কন্ঠকথা কোন পথে কোন গন্তব্যে গেলো হিসেব কষা হলোনা কারও। সবাই ছুটলাম ঘরে, প্রাত্যহিক অভ্যাসের পথে।

০৩.০৬.১৯