Sunday, October 31, 2021

সুস্থ পৃথিবী মানুষের জন্মগত অধিকার - ভূবন মুন্সী

"সুস্থ পৃথিবী মানুষের জন্মগত অধিকার"

মেসেঞ্জার অব কসমোলজি 


ইলন মাস্কের কার্বন নির্গমন না করা car project কে সাধুবাদ দিয়েছিলাম। তার ইচ্ছে  দূষণ মুক্ত পৃথিবী টিকে থাক বহু বছর। বলেছিলাম, এ ইচ্ছা ছেঁড়া চুলে খোঁপা বাঁধার সাধ। 

বহু রাষ্ট্র, জাতি, বহুজাতিক বহু কোম্পানি নিয়ে আমাদের এই পৃথিবী। এরা নিজেরা পরস্পর প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত। ব্যক্তি টেক্কা দিচ্ছে ব্যক্তিকে, এক জাতি আারেক জাতিকে, রাষ্ট্র রাষ্ট্রকে আর কোম্পানিগুলো ন্যাংটো হয়ে টেক্কা দিচ্ছে আরেক কোম্পানিকে। এগিয়ে যেতে চাইছে। উন্নতি চাইছে।

এই এগিয়ে যাওয়া বা উন্নতি লাভ করা বলতে কী বুঝি? 

ধনতান্ত্রিক বিশ্বে ব্যক্তি, জাতি, রাষ্ট্র এবং কোম্পানি সমূহ ব্যক্তিগত আচরণ করে চলছে। সামষ্টিক কোন নীতি বা অখন্ড সঙ্ঘবদ্ধতার অনুপস্থিতিই এর কারণ। 




ব্যক্তিগত আচরণ করতে গিয়ে আমরা যেমন যাচ্ছেতাই কাজ করি- চুরি করি, ঘুষ খাই, চাকু বানাই, বন্দুক কিনি, বিঘায় বিঘায় জমি কিনি, টাকা দিয়ে ব্যাংকের লকার ভরি, মারামারি করি, গুলি করি - জাতি, রাষ্ট্র এবং কোম্পানি সমূহ একই কাজ করে। একক ভাবে পৃথিবীর মালিক হচ্ছে। আপাতত আমাদের মনে মগজে এটিই উন্নতি।

ব্যক্তিকে লাগাম পড়ানোর দ্বায়িত্বটা পালন করে রাষ্ট্র। রাষ্ট্রকে লাগাম কে পড়ায়? পুরো পৃথিবীতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কোম্পানি সমূহ এদের লাগাম কে পড়াবে? 

আন্তর্জাতিক কোন সমস্যা সমাধানে কোন রাষ্ট্র না আসলে তাকে বাধ্য কে করবে? উন্নত দেশ সমূহ পরিবেশের পাছা মারছে, কে তাদের রুখে দেবে?

পৃথিবীর পরিবেশ অখন্ড। কোন প্রান্তে কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠী, জাতি, রাষ্ট্র, কোম্পানি পরিবেশের সঙ্গে ব্যবিচার করলে গোঙাতে হয় পৃথিবীর সমগ্র মানুষকে। 


পরিবেশ আন্দোলন তাই পুরো পৃথিবীর সাথে সম্পৃক্ত।

স্লোগান হলো, পৃথিবীতে বাস করার লাইসেন্স আছে?
না থাকলে বহিষ্কার। অর্থাৎ পৃথিবীতে বাস করার জন্য সে অযোগ্য। তাকে জরিমানা গুনতে হবে।

রাষ্ট্র সমূহ চলে রাজনীতি মারফত। রাষ্ট্র তার অভ্যন্তরে অনেক বিধি নিষেধ আরোপ করতে পারে। অন্য রাষ্ট্রকে মিনতি করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারেনা।

পৃথিবীটা যেভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, আপনার কী মনে হয় মিনতি কোন ফল দেবে?


যদি না দেয় তবে ভেতর থেকে ভাবতে হবে। সমাধান প্রয়োজন? আর এটাতো ঠিক প্রয়োজন যত দূরেই থাক তাকে হস্তগত করতে আমাদের জন্মের সমস্ত আয়োজন।

অখন্ড পৃথিবীতে অখন্ড রাজনৈতিক কাঠামো, অখন্ড সংবিধান ছাড়া কিভাবে গোল টেবিল বৈঠক হতে সমাধান বেরিয়ে আসতে পারে?

এই মহাবিশ্বে মানুষের বাঁচার জন্য আজ অবধি একটিই গ্রহ- পৃথিবী। পৃথিবীটা সকলের। সুস্থ পৃথিবী মানুষের জন্মগত অধিকার।


আপাতত বৈশ্বিক রাজনৈতিক কাঠামো না আসা পর্যন্ত আমাদের প্রচেষ্টা চলতে থাকুক। ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সংগঠন, মিডিয়া সবাই মিলে সচেতন হই বসুমাতার সুস্থতা নিয়ে। পরিবেশ বিপর্যয় রুখে দিতে গড়ে তুলি সচেতন আন্দোলন। 

৩১-১০-২০২১

Wednesday, October 27, 2021

প্রয়োজন শক্তিশালী স্থানীয় সরকার - মুরশীদ সেলিন।

প্রয়োজন শক্তিশালী স্থানীয় সরকার - মুরশীদ সেলিন

মেসেঞ্জার অব কসমোলজি 



প্রথম কথা হচ্ছে সংবিধানের যেকোন বিধানের সমালোচনা, বিরোধিতা ও তা পরিবর্তনের দাবী করা সকল নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। এতে করে  কোন আইন অমান্য করা হয় না এবং কেউ তাতে রাষ্ট্রদ্রোহী হয়ে যায় না। গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সংবিধান সংশোধনের সুযোগ এবং প্রক্রিয়া তাই সংবিধানের মধ্যেই লিপিবদ্ধ থাকে। 

একটি আদর্শ পরিস্থিতিতে সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম এবং বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ দুটোই একসঙ্গে বিলোপ করা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ভবিষ্যতের জন্য মঙ্গলজনক হবে। এদুটো বিষয়ের কোন প্রায়োগিক মূল্য না থাকলেও এর মনোস্তাত্বিক অভিঘাত ব্যপক ও সুদূরপ্রসারী। রাষ্ট্রধর্মের কারনে অমুসলিমরা যেমন দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হবার হীনমন্যতায় ভোগেন তেমনি বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের কারনে অবাঙ্গালীদের মধ্যে উপেক্ষিত হয়ে থাকার মনোবেদনার উদ্ভব ঘটে। এগুলো আমাদের অগ্রযাত্রার পথে বড় অন্তরায়। 

কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বাংলাদেশ রাষ্ট্র এখন সংবিধান অনুসরন করে চলে না। এখানে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ইচ্ছার শাসন কায়েম হয়েছে অনেক আগেই। বিগত পঞ্চাশ বছরে সংবিধানে যতগুলো পরিবর্তন হয়েছে তার হাতেগোনা দু’একটি বাদে বাকী সবগুলোই হয়েছে ব্যক্তি বা গোষ্টীর স্বার্থে। এসব ক্ষেত্রে জনগনের ইচ্ছা, মতামত কিংবা স্বার্থের প্রতি বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা করা হয়নি। 

বংলাদেশ বর্তমানে যে পরিস্থিতিতে দাড়িয়ে তাতে বিদ্যমান সংবিধান সংশোধন, সংযোজন, পরিমার্জন, পরিবর্ধন করে একে গনতান্ত্রিক রূপায়ন সম্ভব কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। সেক্ষেত্রে একটি নতুন সংবিধানের অধীনে দ্বিতীয় রিপাবলিকের পথে হাটাই সবচেয়ে বাস্তবসম্মত বলে মনে হয়। 

গত তিন দশকের অভিজ্ঞতায় এটা স্পস্ট যে সংসদীয় গনতন্ত্র বাংলাদেশে চরমভাবে অকার্যকর ও ব্যর্থ হয়েছে। সংসদীয় গনতন্ত্রে জন্য যে মাপের রাজনৈতিক সংগঠন এবং নেতৃত্বের মধ্যে যে ধরনের উন্নত নৈতিক দৃঢ়তার প্রয়োজন তা এখানে ভয়ানকভাবে অনুপস্থিত। 

এককেন্দ্রীক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের উচিত রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারপদ্ধতিতে ফিরে যাওয়া। বিচারবিভাগ ও আইনবিভাগকে সম্পূর্ণরূপে নির্বাহী কর্তৃত্ব থেকে পৃথক ও স্বাধীন করার মাধ্যমে নির্বাহী বিভাগের জবাবদিহীতা নিশ্চিত করা। সতেরো কোটি মানুষের দেশে কেন্দ্রীয় সরকারের আকার ও ক্ষমতা ছোট করে জেলা কিংবা বিভাগীয় পর্যায়কে একক হিসেবে কেন্দ্র করে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরনের মাধ্যমে শক্তিশালী স্থানীয় সরকার গড়ে তুলতে না পারলে মানুষের অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। 

পুনশ্চ বলে রাখা দরকার যে এ সবকিছুই একটি আদর্শ ও মুক্ত পরিবেশ ও পরিস্থিতির আলোচনা। এখন আমরা যারপরনাই বিভ্রান্ত ও বিক্ষিপ্ত। ফলে এসব কথা অনেকেরই ভাল নাও লাগতে পারে।

ফ্রানৎস কাফকা - হাসান রাকিব - মেসেঞ্জার অব কসমোলজি।





ফ্রানৎস কাফকা বিংশ শতাব্দীর বিশ্বসাহিত্যের সবচেয়ে পভাবশালী লেখক।

এ পর্যন্ত নোবেল বিজয়ী ১০৯ জন লেখকের মধ্যে ৩২ জনই তাঁদের লেখায় কাফকার সরাসরি প্রভাব আছে বলে স্বীকার করেছেন। উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের পরে আর কেনো লেখককে নিয়ে এতটা লেখালেখি বা গবেষণা হয়নি, যা হয়েছে কাফকাকে নিয়ে। গত শতকের মধ্য-নব্বইয়ের আগেই, মৃত্যুর সত্তর বছরের মধ্যে, তাঁকে নিয়ে লেখা হয়ে গেছে ১০ হাজার বই; আর ১৯৯৬ থেকে ২০১০ এর ভেতরে প্রতি ১০ দিনে তাঁর ওপর বের হয়েছে একটি করে নতুন গবেষণা- গ্রন্থ। 

কাফকার সাথে আমার পরিচয় অনেকদিন আগের, তাঁর লেখা মেটামরফোসিস গল্পের মাধ্যমে অসাধারন গল্প;
মধ্যবিত্ত পরিবারের উপার্জনকারী যুবক গ্রেগর সামসা একজন বিক্রয়কর্মী। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে সে একটা আড়শোলা হয়ে গেছে, এরপর'ই গল্পটি মোড় নিতে থাকে বিভিন্ন দিকে যে মা তার এতো কাছের তিনি তাকে দেখতে আসতে চাচ্ছেন না যে বোনকে তিনি এতো ভালোবাসতেন গানের স্কুলে ভর্তি করে দিতে চেয়েছিলেন তার কাছেও তিনি অসহ্য হয়ে উঠছেন। বাবা তাকে আপেল ছুড়ে মারছেন যার আঘাতে তার শরীরে ক্ষত তৈরি হয়, তাকে পঁচা উচ্ছিষ্ট খাবার দেওয়া হয় কাজের মহিলা এসে খাবার দিয়ে যায় মারে কাজের মহিলা তাকে আঘাত করতে চায়। গ্রেগর সামসা যে এখন আড়শোলায় পরিনত হয়েছে সে মাঝেমাঝে  তার ঘরের দরজা দিয়ে মাথা বের করে দেখতে চায় বসার ঘরে সবাই কি করছে?
 কি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে? তারপর এক সময় তার ঘরের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয় মাঝে মাঝে খাবারও দেওয়া বন্ধ করা হয়।
বন্ধ ঘরে সামসা দেয়াল বেয়ে বেয়ে হাঁটে ঘরের সিলিংএ দুই পাশের দেয়ালে,মাঝে মাঝে দেখতে চায় বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে কিনা, সে সবার সাথে কথা বলতে চান বোঝাতে চান যে সে হয়তো আরশোলা হয়ে গেছে কিন্তু সে এখনো সে তাদের গ্রেগর সামসা'ই রয়ে গেছে সে সব আগের মতোই উপলব্ধি করতে পারে কিন্তু তার কথা কেউ বুঝতে পারে না।
তারপর একদিন গ্রেগর আহত হয় ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায় তার নড়াচড়া অতঃপর ক্ষুধার্ত অবস্থায় চলতে থাকে তার দিনযাপন এদিকে তার বাবার ছূড়ে মারা আপেলের পিঠের ক্ষতটাও বাড়তে থাকে এবং একদিন পরিবারটি আবিষ্কার করে যে আরশোলাটা মারা গেছে। আর গল্পের শেষটায় দেখা যায় গ্রেগরের মৃত্যুতে পরিবারটা সস্থি পায় এবং সবাই মিলে কোথাও বাস ভ্রমনে বের হয়।

এক অদ্ভুত ও আশ্চর্য রকমের গল্প মেটামরফোসিস, কাফকা এখানে গল্পে একজন মানুষকে আরশোলাতে রুপান্তরিত করেছেন কিন্তু বাস্তব জীবনে একজন মানুষের পক্ষে কখনো আরশোলা হওয়া সম্ভব নয়। তাহলে এখানে এই রুপান্তরটা কি মানুষের মনোজগতের নাকি মানুষের সম্পর্কের এমন একটা প্রশ্ন ফ্রানৎস কাকাকে করা যেতেই পারে, কিন্তু হয়তো কাফকা এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে চাননি তাই গল্পটায় লিখে গেছেন।

- হাসান রাকিব

পৃথিবী তুমি প্রেমিক খোঁজ



পৃথিবী তুমি প্রেমিক খোঁজ

ইয়াসিন আরাফাত



সভ্যতার নিগুঢ়ে বাণিজ্য, যান্ত্রিকতার দাপট ছাড়িয়ে যাচ্ছে মানুষ। সভ্যতার বাণিজ্যদশা চলছে যন্ত্রের সাথে মানুষের বিবর্তন।
রাষ্ট্রিক শিক্ষা বোধের চক্ষু বেধে রাখে আক্ষরিক শিক্ষায়।
আর শিক্ষা শুধু শিক্ষা নয় কিছুটা প্রমত্তরসও বটে। রসের গলাধঃকরণে পালকের মত টালমাটাল নাগরিক। 
নেশার ঘোর যেন এক সরলরেখা :
জন্ম-পারিবারিক যন্ত্রে পদার্পণ-মেকি সমাজে পদার্পণ-শিক্ষা ব্যবস্থায়(প্রমত্তরস) প্রবেশ-ক্যারিয়ার কপচানো-বিবাহ-প্রজনন ক্রিয়া-মৃত্যু।

আর সব মাতাল।

রাষ্ট্রের জন্মচোখ খেয়ে নিচ্ছে শকুন। স্বাধীনতা আর চোখে ভাসে না।
যান্ত্রিকতার দাপট পুঁজিনীতি যেন মানুষ যন্ত্রের এক অদৃশ্য রিমোট। জীবনের যাপন হয়ে উঠেছে যাপন।
মানুষ যেন একটা ব্যান্ড। জন্মের সতিত্ব হারিয়ে পরিণত হচ্ছে পতিতায়। 

শুধু একটা চুমো বিপ্লব এনে দিতে পারত কিন্তু তা বেছে নিয়েছে ভোগবাদী ঠোঁট। তাই এখন পুঁজিবাদী দুনিয়ার মানুষ ব্যাক্তিক ঠোঁটকে ভোগের শস্য ভাবে।
আর প্রেম তার লিঙ্গের সীমানাকে ছাড়িয়ে উঠতেই পারে না।

পৃথিবী তুমি প্রেমিক খোঁজ!

২৩.০৬.১৪২৭

ইমোশন বনাম রিয়েলিটি - ভূবন মুন্সী।



ইমোশন বনাম রিয়েলিটি




আপনি দেশ মানুষ নিয়া ভাবতে এলেন কেন ভাই? 
দেশ দুনিয়া জাহান্নামে যাক, আপনার কি? বিপ্লবের জন্য, বদলের জন্য কেউ কী আপনাকে ভাড়া করেছে? জোর করেছে স্লোগান দিতে? মিছিলে যেতে?

পৃথিবী যে গতিতে পাগলা হয়ে যাচ্ছে - একে লাগাম পড়ানো চাট্টিখানি কথা না! আপনার ইমোশন, রিয়েলিটি, ক্যাপাবিলিটি, নলেজ আর দম লাগবে বিপ্লব করতে। ধৈর্য লাগবে।

কী, আপনার অনেক ইমোশন? কত রাত মানুষের কথা ভেবেছেন? কেন মানুষের কথা ভেবেছেন? মানুষের মুক্তির জন্য, শান্তির জন্য? নাকি বেহুদা ইমোশন?

ইমোশন দিয়া কিচ্ছু হবেনা? তবে ভাই, আপনি গতি আনবেন কোত্থেকে? অন্যের দুঃখে ব্যাথিত হবেন কি করে?

রিয়েলিটি? হ্যা, এটা লাগবে। থাকতে হবে। কিন্তু আপনে রিয়েলিটি রিয়েলিটি কইরা চিল্লাইতাছেন ক্যান! বাস্তবতায় আপনি বেকার, দূব্বল, বাপ চাচা কেউ এমপি মন্ত্রী না। ভাই, এতো রিয়েলিটি নিয়া মানুষের কথা ভাবোন যায়? কার্ল মার্ক্সের রিয়েলিটি কী ছিলো? বঙ্গবন্ধুর রিয়েলিটি?

এতো রিয়েলিটি নিয়া মনুষ গুনতে আইছেন? দেশ দুনিয়ার মানুষ হিসাব করতেছেন? আরে আপনার পরিবারে কয়টা মাথা কনতো! কী চারটা? পাঁচটা? আরেকবার হিসেব করুন। দেখুন তো আপনার বাপ ভাইয়ের মাথাটা বাদ পড়লো কিনা! অতি বাস্তবতায় বুঁদ থাকা ব্যাটারা বউ সন্তান ছাড়া কারো মাথা গুনতে পারেনা। আপনার দ্বারা বিপ্লব, বদল, সঙ্ঘবদ্ধতা? সম্ভব না ভাই।

ধৈর্য? কতদিন ধরছেন ভাই? কী, হিসাব নাই! হ্যা ভাই, এটাইতো ঠিক। আপনি জীবন পুড়িয়ে মানুষের কথা ভাবছেন, এখানে তো হিসাব থাকবোই না। শুধু মানুষের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। যতদিন বাঁচবেন, ততদিনই সংগ্রাম করে যাবেন।

আপনি কী পাইলেন? না, আপনি কিচ্ছু পাননি। পাবেনও না! সত্যি বলতে কী, আপনি কী ডিমান্ড রাখেন? কী প্রত্যাশা আপনার? দেশ দুনিয়া যদি আপনার সংগ্রামের মূল্য তাৎক্ষণিকভাবে বুঝতে পারে, তবে তো সব মানুষ সুবোধ! সুবোধ সমাজের জন্য আপনি এতো ঘাম ঝরাচ্ছেন কেন?

আর যদি সমাজে সুবোধ না থাকে, তবে আপনি কারো কাছে কিছু, এমনকি সম্মান প্রাপ্তিও আশা করতে পারেন না। আদম হতে মুহাম্মদ (সঃ), সক্রেটিস হতে চে, গৌতম হতে  লালন তাঁরা কী প্রত্যাশা করেছিল?

দেখুন, আপনার চোখের সামনেই আদালত আড়াই হাজার বছর পরে সক্রেটিসকে নির্দোষ ঘোষণা করলো। এইতো গত কাল কিংবা পরশু বঙ্গবন্ধুকে ঢাবি তার ছাত্রত্ত্ব ফিরিয়ে দিলো।

সমস্ত সাজানো অপরাধ আর অপবাদ কাঁধে নিয়া তাঁরা একটা জিনিসই প্রত্যাশা করতেন, তা হলো দেশ দুনিয়া মানুষের মুক্তি। তাই না?

তাঁদের আক্ষেপ ছিলোনা, ব্যক্তিগত প্রত্যাশা ছিলোনা। ছিলোনা, কারণ তাঁরা বন্দীদের জন্য লড়ছেন- কারাগারে, কাঁটাতারে, লোভে মোহে বন্দী মানুষ মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত কিছু কী দিতে পারে?

ভাই, দমটা তো লাগবে। তেজ বিকাইলে চলবো? যতদিন দম টানতে পারবেন, ততদিন দম রাখবেন। দম না থাকলে আপনার সব কিছুতেই ভয়, দ্বিধা জাগবে। 

ঝিলাম নদীর তীরে পুরুর কথা আপনার মনে আছে? ব্যাটার দম ছিলো। স্বামীজীর কথা মনে করুন, ক্যামন দম! সেই সময় জাত ধর্ম নিয়া কথা কইতে লালনের দম লাগেনি? 

আপনি এইসব ঐতিহাসিক ঘটনা গুলা পৌরাণিক বইলা চালায়া দিয়েন না। ঐতিহাসিক সত্য, রিয়েলিটিকে নাটক ফটক বা ইমোশনালি আলাপ পাড়া ভাইবেন না। সবটাই রিয়েলিটি।

ইতিহাস তো থেমে যায়নি। ইতিহাস রচিত হচ্ছে। হতেই থাকবে। আপনার ইতিহাস। আপনি সিরাজ নাকি মীরজাফর? আপনার নাম আপনি নিজেই লিখবেন ইতিহাসের পাতায়।

ভূবন মুন্সী

Tuesday, October 26, 2021

শব্দের রাজনীতি এবং গণমাধ্যম - মুরশীদ সেলিন।



শব্দের রাজনীতি এবং গণমাধ্যম
messenger of cosmology



‘ভোটের অধিকার’ আদায়ে আ.লীগের পথেই হাঁটবে নুরুলদের দল - এটা ২৬ অক্টোবর ২০২১ এ প্রকাশিত দৈনিক প্রথম আলোর একটি সংবাদ শিরোনাম। 

লক্ষ্য করার বিষয় যে প্রথম আলোর কাছে দলটি অধিকার পরিষদ নয়, বরং নুরুলদের দল। এরা কিন্তু আওয়ামীলীগকে হাসিনাদের দল, বিএনপিকে খালেদাদের দল, জাসদকে ইনুদের দল কিংবা সিপিবিকে সেলিমদের দল বলে পরিচয় করিয়ে দেয় না। প্রথম দিনেই অধিকার পরিষদকে নুরুলদের দল বলে চিহ্নিত করার মধ্য দিয়ে যে বার্তাটি পাঠকের কাছে যায় তা হলো ‘ওটা আসলে কোন রাজনৈতিক দল নয়, বরং নুরুলদের মত কয়েকজনের একটা গ্রুপ মাত্র’। 

এবার শিরোনামের মূল খবরে আসা যাক। প্রথম আলো বলছে ভোটের অধিকার আদায়ে আওয়ামীলীগের পথেই হাটবে অধিকার পরিষদ। আপাতদৃষ্টিতে পাঠকের কাছে বিভ্রান্তিকর মনে হতে পারে বিষয়টা, অনেকের কাছে হাস্যকরও ঠেকাতে পারে। কিন্তু এ প্রসঙ্গে প্রতিবেদনের অংশটি পড়লে এর প্রেক্ষাপট সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যায়। 

প্রথম আলো বলছে, “মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তির সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে দলের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘আমরা এ ব্যাপারে এখন যে প্রধানমন্ত্রী আছেন, ওনার শিক্ষা নেব। উনি যেভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ১৯৯১ সালে কাজ করেছেন, আমরা সেভাবে অগ্রসর হওয়ার চিন্তা করছি। যাঁরা বাংলাদেশের জনগণের ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করতে রাজি আছেন, আমরা তাঁদের সঙ্গে কথা বলব, তাঁদের সঙ্গে কাজ করব। এ ব্যাপারে কারও আপত্তি থাকলে থাকতে পারে, তাতে আমাদের কিচ্ছু করার নেই।”

১৯৯১ থেকে ২০২১ - ৩০ বছর খুব লম্বা সময় নয়। বিশেষত আমাদের যাদের বয়স পঞ্চাশ থেকে ষাটের মধ্যে তাদের স্মৃতি এত কম সময়ে ফিকে হওয়ার সম্ভাবনা কম। কিন্তু নতুন প্রজন্ম যাদের বয়স ২০ থেকে ৩০ এর মধ্যে তাদের অনেকেই হয়তো জানেন না ১৯৯১ এ কী হয়েছিলো। ফলে তাদের মধ্যে কিছুটা বিভ্রান্তি সৃষ্টির সুযোগ থেকেই যায়। 

এরশাদ পতনের পর ১৯৯১ সনের ২৮ শে ফেব্রুয়ারীর প্রথম নির্বাচনে অপ্রত্যাশিতভাবে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে বিএনপি। সংসদে আওয়ামীলীগ, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামিসহ সবগুলো ছিলো বিরোধী দল এবং সেই সুবাদে শেখ হাসিনা ছিলেন বিরোধী দলীয় নেতা। মাগুড়া উপনির্বাচনে কারচুপির পর ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে বিরোধী দলগুলো যে আন্দোলন শুরু করে, প্রধান ও বৃহত্তম বিরোধী দল হিসেবে আওয়ামী লীগের নেতা শেখ হাসিনাই ছিলেন সে আন্দোলনের নেতা এবং সেই আন্দোলনে জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামের সক্রিয় সমর্থন ও অংশগ্রহন ছিলো। জোটবদ্ধভাবে না হলেও নিজেদের মধ্যে লিয়াজো করেই  আন্দোলনের কর্মসূচী পালিত হয়েছে এবং পরবর্তীতে সংবিধান সংশোধন করে তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। 

তো সেই সময়ে ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে জামায়াতের অংশগ্রহনে কোন সমস্যা না থাকলে এখন কেন তা বড় সমস্যা হিসেবে হাজির হচ্ছে সেই প্রশ্নটি অনুচ্চারিত থেকে যাচ্ছে। 

বিভ্রান্তির এই কালে ইতিহাসের এই সত্যকে মাথায় রেখে গনমাধ্যম পাঠ করলে পাঠকরা কিছুটা হলেও রাজনীতির পাঠ উদ্ধার করতে সমর্থ হবেন বলে আশা করা যায়। কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষে সাফাই গাইতে না চাইলেও গনমাধ্যমের মতলবি রাজনীতির বিষয়টি উপেক্ষা করে থাকা কঠিন।

মুরশীদ সেলিন
রাজনীতি বিশ্লেষক