Friday, July 31, 2020

রেমিট্যান্সের দেশে বেওয়ারিশ প্রবাসীরা - মিরান।

মতামত


রেমিট্যান্সের দেশে বেওয়ারিশ প্রবাসীরা



মিরান
শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ,
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

কহতব্য ডটকম থেকে পড়ুন

জুলাই মাসে বাংলাদেশে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স নতুন মাইলফলক ছুঁয়েছে, যার পরিমাণ 'দুই বিলিয়ন' ডলারের অধিক। নতুন (জুলাই মাসে) আসা রেমিট্যান্সের ফলে 'বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মূদ্রার রিজার্ভ'ও নতুন মাইলফলক ছুঁয়েছে, বর্তমানে বৈদেশিক মূদ্রার রিজার্ভ '৩৭ বিলিয়ন' ডলারেরও অধিক। এ নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহ, অর্থনৈতিক-বিশ্লেষক, সচেতন নাগরিক সমাজ, সর্বোপরি সবাই আনন্দিত ও উৎফুল্ল। সরকারের কর্তা-ব্যক্তিরা রেমিট্যান্সের এ প্রবাহকে নিজেদের সফলতা বলেও দাবি করেছে। অথচ কভিড-১৯ মহামারির কারণে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মহামন্দার এ দুঃসময়ে যারা (রেমিট্যান্স যোদ্ধরা) মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, নিজেদের সুখ-শান্তিকে বিসর্জন দিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে প্রধান ভূমিকা পালন করছেন, রাষ্ট্র তাঁদেরকে প্রবাসে ন্যুনতম নিরাপত্তা ও মানবিক সহযোগিতা দিতে অপারগ বা অনিচ্ছুক।

মালেশিয়ায় গ্রেফতারকৃত বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিক রায়হান কবিরের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের 'প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী' ইমরান আহমেদ যে মন্তব্য করেছেন, তা অযাচিত, অগ্রহনযোগ্য, অদূরদর্শি ও সংবিধান বিরোধী। একজন নাগরিকের বিদেশে আইনি সহায়তার প্রয়োজন হলে, রাষ্ট্র তাঁকে সার্বিক সহায়তা দিতে বাধ্য, তাঁকে তা দেয়া হয়নি। রায়হন কবীরের ভাষ্যমতে, "আমি তো সত্য কথা বলেছি, কভিড মৌসুমে আমরা যে যে সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হয়েছি, তাই বলেছি। আমি তো কোনো অপরাধ করিনি।" অথচ তাঁর কথাগুলো বলা দরকার ছিল রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের, কারণ, কভিড মৌসুমে মালেশিয়ায় ৮-৯ লক্ষ বাংলাদেশি প্রবাসী শ্রমিকের অনিশ্চিত ও দুর্দশাগস্ত জীবন কেটেছে, যাদের যাবতীয় নিরাপত্তার দায়ভার আইনানুযায়ী স্বীয়-রাষ্ট্রের উপরই বর্তায়।

মালেশিয়ায় বাংলাদেশের প্রায় '৬ লক্ষ' বৈধ ও '২-৩ লক্ষ' অবৈধ অভিবাসী শ্রমিক রয়েছে। কভিড-১৯ মৌসুমে মালেশিয়া সরকারের পক্ষ থেকে তাঁদেরকে ন্যুনতম মানবিক সহায়তা দেয়া হয়নি। উক্ত মৌসুমে মালেশিয়া সরকার বিদেশি অভিবাসী শ্রমিকদের সাথে যে বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে, তা বিশ্বব্যাপী সমালোচিত হয়েছে। ঐ দেশে প্রবাসীদের অমানবিক পরিস্থিতি নিয়ে কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম 'আল জাজিরায়' একটি প্রতিবেদন তৈরি করার সময় বাংলাদেশি প্রবাসী শ্রমিক রায়হান কবিরের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে। উক্ত সাক্ষাৎকারে রায়হান কবির মালেশিয়ায় (কভিড মৌসুমে) প্রবাসী শ্রমিকদের বাস্তবিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরেছে, তাঁদেরকে যে ন্যুনতম মানবিক সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়নি তার বর্ণনা দিয়েছে। এ কারণে মালেশিয়া পুলিশ রায়হান কবীরকে রাষ্ট্র-বিরোধী ষড়যন্ত্র ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার দায়ে গ্রেফতার করেছে।

রায়হান কবীরকে গ্রেফতারের বিরুদ্ধে ও অবিলম্বে মুক্তির দাবীতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, আল জারিরা, প্রবাসী শ্রমিক সংগঠন ও দেশের নাগরিক সমাজ প্রতিবাদ করলেও বাংলাদেশ সরকার এ ব্যাপারে নিশ্চুপ ছিল, বরং সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী বিবিসি বাংলাকে বলেছে, "এতে কোনো সন্দেহ নেই যে সে বাংলাদেশের নাগরিক। তার প্রতি আমাদের দায়িত্ব রয়েছে। কিন্তু দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা আরও বেশি। সেখানে লাখ লাখ শ্রমিক কাজ করে। ফলে, একজন ব্যক্তির কী হলো তা আমাদের চিন্তার বিষয় নয়।"


কথা হলো, সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কি সত্যিই প্রবাসীদের সার্বিক স্বার্থের বিষয় নিয়ে আন্তরিক নাকি মালেশিয়া সরকারের সাথে এ ব্যাপারে দরকষাকষি করতে অপারগ? তারা যদি সত্যিই প্রবাসীদের কল্যান নিয়ে এত আন্তরিক হন, তাহলে কভিড মৌসুমে মালেশিয়ায় ৮-৯ লাখ প্রবাসী শ্রমিকের অমানবিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় কোনো পদক্ষেপ নেয়নি কেন? প্রবাসীরা রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠালে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায়, রেমিট্যান্সের উক্ত প্রবাহকে নিজেদের সফলতা বলে দাবি করে, অথচ প্রবাসে শ্রমিকদের অমানবিক পরিস্থিতিতে নিজ দেশ থেকে মানবিক নিরাপত্তা ও সহায়তা পাওয়ার সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতে পারেনা। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী রায়হান কবীর যে কনস্যুলেট সুবিধা পাওয়ার কথা, ন্যুনতম সে আইনি সহায়তাও রাষ্ট্র তাঁকে দেয়নি, কিংবা দিতে অপারগ।

এপ্রিল-মে মাসে লেবাননের মুদ্রা 'লিরা'র মান কমে যাওয়াতে বেতন বৈষম্যের স্বীকার হয়েছিল প্রবাসী শ্রমিকেরা, স্থানীয়দের বেতন স্কেল আগের মত থাকলেও প্রবাসী শ্রমিকদের বেতন কমানো হয় ৪০%-৫০%। ফলে, সে দেশে কর্মরত প্রায় '২ লক্ষ বাংলাদেশি'সহ প্রবাসী শ্রমিকদের আয়-রোজগার বৃহদাকারে কমে যাওয়াতে তাঁদের জীবনযাপন হয়ে উঠেছিল দুর্বিষহ। দেশে রেমিট্যান্স পাঠানো তো দূরে থাক, থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্ত করতে না-পেরে প্রবাসী শ্রমিকেরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছিল। উক্ত বিক্ষোভে একজন বাংলাদেশি শ্রমিকের মৃত্যু নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের সংবাদ মাধ্যমগুলো (মিডলইষ্ট মনিটর, আনাদোলু এজেন্সি, আল জাজিরা ইত্যাদি) বিভিন্ন প্রতিবেদন করলেও বাংলাদেশি সংবাদ মাধ্যমগুলো নিরব ছিল। অথচ, এক্ষেত্রে বাংলাদেশি সংবাদ মাধ্যমগুলোর দায়বদ্ধতা সবচেয়ে বেশি ছিল, যেহেতু লেবাননে উক্ত বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিয়েছিল বাংলাদেশি শ্রমিকেরাই। ঐ সময়ে প্রায় '২ লক্ষ' প্রবাসীদের জীবিকা হুমকির মুখে পড়লেও বাংলাদেশ সরকার সে ব্যাপারে চিন্তা করার সময় পায়নি। বেশ কয়েকজন বাংলাদেশিদের আটক ও একজনকে হত্যা করা হলেও বাংলাদেশি দূতাবাস থেকে কোনো সহযোগিতা তো পায়নি, বরং বিক্ষোভকারীদের দোষারোপ করা হয়েছিল। তারপরও 'রেমিট্যান্সের প্রবাহ বৃদ্ধি'কে নিজেদের সফলতা বলেই দাবি করে আমাদের কর্তা-ব্যক্তিরা।


কভিড-১৯ মহামারী সবচেয়ে ভয়ানক রুপ নিয়েছিল সিঙ্গাপুরের প্রবাসী শ্রমিকদের 'ডর্মিটরিগুলোতে'। ঐ দেশে বাংলাদেশি শ্রমিকদের অধিকাংশই 'জাহাজ নির্মাণ শিল্প ও অবকাঠামো নির্মাণ' খাতে কর্মরত। অতি-অল্প রুজিতে অতি-নিন্মমানের ডর্মিটরিতে থাকে বাংলাদেশি শ্রমিকেরা। কভিড সংক্রমণ রোধে সিঙ্গাপুরে লকডাউন চলাকালে বাংলাদেশি (অতি ঘনবসতিপূর্ণ) ডর্মিটরিগুলোতে কোনো মানবিক সুরক্ষার ব্যবস্থা গ্রহন করেনি সে দেশের সরকার। ফলে, সিঙ্গাপুরে কভিড সংক্রমণের 'হট স্পট' হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশি শ্রমিকদের ডর্মিটরিগুলো। ঐ সময়ে সিঙ্গাপুরে মোট কভিড আক্রান্তের প্রায় ৫০% ছিল বাংলাদেশি শ্রমিক। স্বাস্থ্য-বীমা না-থাকাতে সে দেশের সরকার আক্রান্ত শ্রমিকদেরকে কোনোরকম চিকিৎসা সুবিধা দেয়নি। মৃত্যুও হয়েছে সমান তালে। আন্তর্জাতিক শ্রম আইনে শ্রমিকদের নিরাপত্তা বিষয়ক কোনো ধারাই মানেনি সিঙ্গাপুর। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার এ ব্যাপারে সিঙ্গাপুর সরকারকে আন্তর্জাতিক আইনের উদ্ধৃতি দিয়ে শ্রমিকদের জীবনের নিরাপত্তার জন্য চাপ প্রয়োগ করা তো দূরে থাক, বরং ব্যস্ত ছিল কীভাবে উক্ত বিষয়টি (শ্রমিকদের নিরাপত্তা) এড়িয়ে চলা যায় তা নিয়ে।

মাতৃভূমি মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল। জীবনের নিরাপত্তার জন্য কভিডের হটস্পট ইটালিসহ ইউরোপের দেশগুলো থেকে যখন প্রবাসীরা দেশে ফিরে আসছিল, তাঁদেরকে সরকারিভাবে কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হওয়ায় স্বাস্থ্য, পররাষ্ট্র, প্রবাসী কল্যানসহ কয়েকটি মন্ত্রণালয় সমালোচনার স্বীকার হয়েছিল। তখন প্রবাসীদেরকে 'লাটসাহেব' বলে ব্যঙ্গ করেছিল পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন। বস্তুত, তারা কি মনের খায়েশ মেটাতে দেশে ফিরে এসেছিল? না। কারণ, ইটালি ঐ সময়ে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিল, যে পরিস্থিতিতে ইটালি সরকারের পক্ষে নিজেদের নাগরিকদেরকে চিকিৎসা সেবা না-দিয়ে প্রবাসীদেরকে চিকিৎসা দেয়াটা অসম্ভব ছিল। তাছাড়া 'এক্সচুয়াল লকডাউন' কার্যকর হওয়ার কারণে মারাত্মক খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছিল দেশটিতে। মিলান, ভেরোনাসহ উত্তর ইটালির বেশ কয়েকটি বড় শহরে খাবারের দোকান ও সুপারশপ লুটপাট হয়েছিল। সেদেশের নেটিভরা যেখানে নানামুখী সংকটে জর্জরিত, বেতন বন্ধ থাকা বাংলাদেশি প্রবাসীরা, যাদের অনেকেরই স্বাস্থ্য-বীমাও নাই, নিজ দেশে চলে আসাটাই কি স্বাভাবিক নয়? "I fuck this country-system" বাক্যটির মর্মার্থ আমরা তখন না-বুঝলেও এখন হাড়ে হাড়ে বুঝতেছি।

লক্ষীপুর-২ আসনের সাংসদ পাপুল (এশিয়ার মানবপাচারকারী চক্রের প্রধান হোতা) কাণ্ডের পর কুয়েত সরকার সে দেশের ভিসা বাংলাদেশিদের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে, বাংলাদেশিদের জন্য কঠোর নীতিমালা যুক্ত করার ঘোষণাও দিয়েছে। বেশকিছু শ্রমিককে দেশে পাঠিয়ে দেয়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছে। উল্লেখ্য, মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি-জোটের দেশগুলোতেই বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি শ্রম রপ্তানি করে থাকে। সৌদি-জোটের (সৌদি, বাহরাইন, কুয়েত,মিশর,আরব আমিরাত) দেশগুলো পররাষ্ট্র নীতি, শ্রম নীতি, বাণিজ্য নীতি প্রণয়নে নির্দিষ্ট নীতিমালা অনুসরণ করে থাকে, অর্থাৎ একই নীতিমালা অনুসরণ করে। ফলে, কুয়েতের পাশাপাশি সৌদি-জোটের অন্যান্য দেশগুলোতেও বাংলাদের শ্রম বাজার হুমকির মুখে পড়ে গেছে বলে ধারণা করছেন অর্থনীতিবিদ ও পররাষ্ট্র নীতি বিশ্লেষকেরা। বলে রাখা ভালো, বাংলাদেশে রেমিট্যান্সের মূল প্রবাহটা আসে এসব দেশ থেকেই।


প্রবাসে বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য একটি আতঙ্কের নাম হলো 'বাংলাদেশ দূতাবাস'। প্রবাসী শ্রমিকেরা দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি হলেও বিদেশে বাংলাদেশি দূতাবাসগুলোতে তাঁদের সাথে আচরণ করা হয় অমানবিক। তাঁদের কোনো অভিযোগ তেমন আমলে নেয়া হয়না। আইনি সহায়তা পাওয়াও দুষ্কর। অবৈধভাবে মানব পাচার থেকে শুরু করে, ঘুষ, নির্যাতন, কাগজপত্র আটকে রেখে টাকা আদায়সহ অভিযোগের শেষ নেই দূতাবাসগুলোর বিরুদ্ধে। গতবছর ব্রুনাইয়ের বাংলাদেশ দূতাবাসে একজনকে বেধড়ক মারধরের ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল যা আমাদেরকে দূতাবাসগুলোতে প্রবাসীদের সাথে কেমন আচরণ করা হয়, তার একটি ধারণা দিয়েছে।
সৌদি থেকে প্রতিবছর অসংখ্য নারী-শ্রমিক ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের স্বীকার হয়ে দেশে ফিরে আসে, শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়। তাঁরা দূতবাসে অভিযোগ জানিয়ে কোনো ফল পায়না। দুই বছর আগে একই কারণে (ধর্ষণ, নারী নির্যাতন) কুয়েতের সাথে ফিলিপাইন সরকারের চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে ফিলিপাইন প্রেসিডেন্ট 'রড্রিগো দুতার্তে' কুয়েত সরকারের উদ্দেশ্যে বলেছিল, "Is there any problem in your culture? Is there any problem in your values?" আমাদের পক্ষ থেকে এরকম কঠিন বাক্য প্রয়োগ করার সাহস কেউ রাখেনা, যা আমাদের জন্য একটি 'মাইনাস পয়েন্ট' বটে।

প্রতিবছর ব্যাপক পরিমাণে (বিদেশে) অর্থপাচার হয়ে থাকে। এ অর্থপাচারের মূল হোতা হলো "অনৈতিক সুবিধাভোগী রাজনীতিবিদ, ঋণ-খেলাপি ব্যবসায়ী, দুর্নীতিবাজ আমলা ও বিভিন্ন স্তরের সরকারি কর্মচারি।" এত অর্থপাচার হওয়া সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ মাইলফলকে পৌঁছানোর পেছনে একটাই কারণ, তা হলো, ব্যাপক পরিমাণ 'প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স'। ক্বুরবানির কারণে হঠাৎ রেমিট্যান্সের প্রবাহ বাড়লেও সামনের দিনগুলোতে রেমিট্যান্সের প্রবাহ কমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আশংকা করছেন অর্থনীতিবিদরা।

অনেক প্রবাসী শ্রমিক কভিড মৌসুমে দেশে এসে এখনও আটকে আছে। কঠোর ইমিগ্রেশন প্রসেসিংয়ের কারণে যেতে পারছেনা। তার উপর "মরার উপর খাঁড়ার ঘা" হয়ে দেখা দিচ্ছে "কভিডের ভুয়া নেগেটিভ সার্টিফিকেট জালিয়াতির কারণে বিদেশে বাংলাদেশিদের ভাবমূর্তি সংকট"। উল্লেখ্য, সম্প্রতি ইটালি, দ. কোরিয়া, জাপানসহ কয়েকটি দেশে কভিডের ভুয়া নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে (পরবর্তীতে পজিটিভ সনাক্ত হয়) বাংলাদেশিদের ভ্রমণের কারণে সারাবিশ্বে বাংলাদেশিদের ভ্রমণ নিয়ে আতংক সৃষ্টি হয়েছে। কভিডের আচমকা ধাক্কা খাওয়া উন্নত বিশ্বের দেশগুলো কখনোই চাইবেনা যে, অন্যান্য দেশ থেকে কভিড পজিটিভ নিয়ে কেউ ভ্রমণ করুক। কথায় আছে, "ন্যাড়া একবার বেল তলায় যায়"। ইতোপূর্বে ইটালির কয়েকটি শহরে বাংলাদেশি অভিবাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভও হয়েছে। অন্যদিকে, কভিড সার্টিফিকেট না-থাকার কারণে অনেক প্রবাসী শ্রমিক ফ্লাইট ক্যানসেল করতে বাধ্য হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে প্রবাসী যারা দেশে আটকে আছে, চাকরিতে যোগ দিতে পারছেনা, তাঁদেরকে অতিদ্রুত কর্মস্থলে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা।

সীমিত ভূখন্ডে বিপুল সংখ্যক মানুষের বসবাস আমাদের এ সোনার বাংলাদেশে। স্রষ্টা-প্রদত্ত প্রাকৃতিক সম্পদ শ্রমই আমাদের অন্যতম মূলধন। কোটি কোটি মানুষের ঘামই এদেশের অর্থনীতির মূল জালানি। এ জালানি (ঘাম) রপ্তানি করেই আমরা দু'বেলা দুমুঠো খেতে পাই।
কভিড-১৯ মহামারির কারণে এমনিতেই দেশে বেকারত্ব সংকট ঘনীভূত হয়ে আসছে, যারা চাকরি হারিয়েছে কিংবা চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে তাঁদের সংখ্যা প্রায় 'দেড় কোটি'। তার উপর প্রবাসীদের যারা দেশে আটকে আছে, তাঁরা যদি কর্মক্ষেত্রে ফিরে যেতে না-পারে; মধ্যপ্রাচ্যসহ বাংলাদেশের শ্রম বাজারগুলো থেকে শ্রমিকরা কাজ হারিয়ে দেশে ফিরে আসে; তাহলে, আমাদের অর্থনীতির 'তাসের ঘর' ধ্বসে পড়বে নিঃসন্দেহে। তাই, সরকারের উচিত প্রবাসী শ্রমিকদের প্রতি আরও আন্তরিক হওয়া এবং আমাদের শ্রম বাজারগুলোকে টিকিয়ে রাখতে যথাযথ, বিচক্ষণ ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত গ্রহন করা। সবসময়ের মত এক্ষেত্রেও যেন "চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে" দশা না-হয়।


লেখা পাঠাতে যোগাযোগ করুনঃ

ভূবন মুন্সী 
 shimul2016.bsm@gmail.com

No comments:

Post a Comment