Wednesday, July 29, 2020

বিশ্বায়ন,অর্থনীতি ও রাজনীতি এবং আমার ভাবনা || মেহেদী হাসান।

মেহেদী হাসানের কলমে মেসেঞ্জার অব কসমোলজিতে উঠে এসেছে বিশ্বায়ন, রাজনীতি ও অর্থনীতির ভাবনা সমূহ। বদলে যাওয়া বিশ্বের নতুন রূপ আবিস্কারের প্রয়াস আর্টিকেলের পুরোটা জুড়ে। পুড়োটা পড়ুন। মেসেঞ্জার অব কসমোলজির সাথে থাকুন।




বিশ্বায়ন,অর্থনীতি ও রাজনীতি এবং আমার ভাবনা



বিশ্বায়ন

বিশ্বায়ন বিংশ শতকের শেষভাগে উদ্ভূত এমন একটি আন্তর্জাতিক অবস্থা যাতে পৃথিবীর বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থা দৈশিক গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তঃদেশীয় পরিসরে পরিব্যাপ্তি লাভ করেছে। এর ফলে সারা বিশ্ব একটি পরিব্যাপ্ত সমাজে পরিণত হয়েছে এবং অভিন্ন বিনিয়োগ,কর্মসংস্থান,উৎপাদন ও বিপণন প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন দেশ যুগপৎ অংশ গ্রহণ করছে।

এটি পারষ্পরিক ক্রিয়া এবং আন্তঃসংযোগ সৃষ্টিকারী এমন একটি পদ্ধতি যা বিভিন্ন জাতির সরকার, প্রতিষ্ঠান এবং জনগণের মধ্যে সমন্বয় ও মিথস্ক্রিয়ার সূচনা করে। এই পদ্ধতির চালিকাশক্তি হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ আর এর প্রধান চালিকাশক্তি হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তি।

বিশ্বায়ন শব্দটি বতর্মান সময়েবহুল ব‍্যবহৃত শব্দ।আমরা সকলেই কম বেশি এই শব্দটি ব‍্যবহার করে থাকি।তবে ১৯৬০ সালের আগে বিশ্বায়ন শব্দটি খুব একটা ব‍্যবহৃত না হলেও ১৯৬০ সালের পর থেকে ব‍্যাপক হারে ব‍্যবহৃত হতে থাকে এবং বতর্মানে এটি ব‍্যবহারের পাশাপাশি  ব‍্যাপকভাবে প্রয়োগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।সুতরাং প্রাচীনকাল ও মধ্যযুগে বিশ্বায়নের প্রয়োগ  ইউটোপিয়া হলেও বতর্মানে এর প্রয়োগকে আর ইউটোপিয়া বলা যাবে না। কেননা বতর্মান পৃথিবীর বাস্তবতায় কোন মানুষই বিশ্বায়নের বাইরে থাকতে পারবে না। বিশ্বায়ন আমাদের জীবনে কতটুকু প্রভাব বিস্তার করছে সেটা বুঝতে হলে আমাদেরকে বুঝতে হবে প্রযুক্তি আমাদের জীবনে কতটুকু প্রভাব বিস্তার করছে। কারণ প্রযুক্তিগত উত্তরণের সায‍্যুতায় পৃথিবী আজ গ্রামের থেকেও ছোট। পৃথিবীর কোথায় কি ঘটছে সেই খবর মিডিয়া বা সোস্যাল মিডিয়া মারফত আমাদের কাছে (না চাইলেও) খুব দ্রুতই পৌঁছে যাচ্ছে যেটা পূর্বে সম্ভব ছিল না।

বর্তমানে বিশ্বায়ন আর প্রযুক্তির প্রভাব  আমাদের উপর কতটুকু সেটা বুঝার উৎকৃষ্ট উদাহরণ কোভিড-19 ভাইরাস। এই ভাইরাসের  উৎপত্তি যেখানেই ঘটুক না কেন এর প্রভাব বা ভয়াবহতার হাত থেকে পৃথিবীর কোন রাষ্ট্রই রক্ষা পাচ্ছে না। উল্লেখ্য যে পৃথিবীর ইতিহাসে পূর্বের কোন সংকটই সমগ্র পৃথিবীর মানুষকে এভাবে তটস্থ করতে পারে নাই। আবার এই বিশ্বায়নের ফলে আজ এটা সত‍্য হয়ে দাঁড়িয়েছে পৃথিবীর সমস্ত কাঁটাতার থাকবে কি থাকবে না।

অর্থনীতি ও রাজনীতি

বিশ্বায়নের সাথে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সকল কিছুই অঙ্গাঅঙ্গি ভাবে জড়িত। সুতরাং অর্থনীতি ও রাজনীতিও এর বাইরে নয়। বিশ্বায়নের অর্থনীতি ও রাজনীতিকে আমরা গ্লোবাল অর্থনীতি ও গ্লোবাল রাজনীতি বলতে পারিণ(তবে এই দুই বিষয় নিয়ে এখনও অনেক গবেষণার প্রয়োজন থাকতে পারে)। এই গ্লোবাল অর্থনীতি ও রাজনীতি সম্পর্কে জানতে হলে আমাদেরকে পূর্বের অর্থনীতি ও রাজনীতি সম্পর্কে কিছুটা ধারনা রাখা প্রয়োজন।

আধুনিক কালে অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ভাবে বিশ্বের শাসনকার্য পরিচালনা করার জন্য অর্থনীতি ও রাজনীতিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়।( অর্থনীতি ও রাজনীতি কে একত্রে করে আলোচনার কারণ সেই প্রাচীনকাল থেকে এই দুইটা পৃথিবীর ইতিহাসে পাশাপাশি অবস্থান করে চলছে)।

1. কলোনিজম বা কলোনি কালীন অর্থনীতি ও রাজনীতি

এই কলোনি কালীন অর্থনীতি ও রাজনীতির সূচনা ঘটে 1492 সালে কলম্বাসের আমেরিকা দখলের মাধ্যমে এবং পরিসমাপ্তি ঘটে 1941 সালের আগষ্ট মাসে তৎকালীন গ্রেট বৃটেনের সাথে আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট এর একটি গোপন চুক্তির মাধ্যমে। যে চুক্তির কথা 90% মানুষ জানে না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলার যখন ইংলিশ চ‍্যানেল পাড়ি দিয়ে বৃটেন দখল করতে আসে তখন বৃটেনের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল রুজভেল্ট এর কাছে সাহায্য চাইলে রুজভেল্ট এই চুক্তির মাধ্যমে বৃটেনকে সাহায্য করতে রাজি হয়। চুক্তিতে উল্লেখ ছিল যদি মিত্র শক্তি জয়ী হয় তবে বৃটেন কলোনী প্রথা বিলোপ বা নিষিদ্ধ করবে এবং পরবর্তীকালে 1945 সালে নিষিদ্ধ হয়। আর 1945 থেকে 1949 সালের মধ্যে সমস্ত কলোনি বিলুপ্ত ঘোষণা করে। কলোনি কালীন অর্থনীতি ও রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ ছিল বৃটেন, হল‍্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, পর্তুগাল, স্পেন এই ছয়টি দেশের হাতে।

2. নয়া সাম্রাজ্যবাদ অর্থনীতি ও রাজনীতি

নয়া সাম্রাজ্যবাদ অর্থনীতি ও রাজনীতির সূচনা ঘটে 1945 সালে রুজভেল্ট এর হাত ধরে জাতিসংঘ, আই এম এফ+বিশ্বব‍্যাক, এবং WBO প‍্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে এবং পরিসমাপ্তি ঘটে 2009 সালে(2008 সালের অর্থনৈতিক মন্দার মধ্য দিয়ে )। এই নয়া সাম্রাজ্যবাদ অর্থনীতি ও রাজনীতি  প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ছয় পান্ডবের হাত থেকে একক আমেরিকার হাতে পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণ চলে আসে। এছাড়া ডলারকে একক বৈশ্বিক মুদ্রা হিসেবে প্রচলন সহ একাধিক বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলো পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নেয়। এছাড়াও মুক্ত বাজার অর্থনৈতিক ব‍্যবস্থা প্রচলন করে পৃথিবীর অর্থনীতি মুষ্টিমেয় কিছু ব‍্যক্তির হতে গোচ্ছিত হয়।

3. গ্লোবালাইজেশন বা গ্লোবাল অর্থনীতি ও রাজনীতি

গ্লোবাল অর্থনীতি ও রাজনীতির সূচনা ঘটে 2009 এবং এটি এখন পযর্ন্ত চলমান আছে।
গ্লোবাল অর্থনীতি ও রাজনীতির মধ্য দিয়ে পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা আমেরিকার হাত থেকে চীনের হাতে চলে আসবে। আমেরিকা আর চীনের বাণিজ্য যুদ্ধ যার প্রথম প্রমাণ। চীনের হাতে কেন আসবে তার স্পষ্ট প্রমাণ চীন-ইরান সমোঝতা চুক্তি যা মধ্যপ‍্রাচ‍্য সহ ইউরোপের সকল দেশ সমূহের  চীনের দিকে ঝুকে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

তবে এখানে একটা বিষয় উল্লেখ্য যে যেসকল দেশ বা রাষ্ট্রপ্রধান গ্লোবাল অর্থনীতি ও রাজনীতিকে ধারণ না করে কলোনি অর্থনীতি ও রাজনীতি আর নয়া সাম্রাজ্য অর্থনীতি ও রাজনীতিকে আকড়ে থাকবে সেই দেশ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক  দিক থেকে পেছনে পড়ে যাবে।আর যারা বুঝতে পারবে তারা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দিক থেকে চীনকে অতিক্রম করতে না পারলেও সম অবস্থানে থাকবে।

এখানে একটা বিষয়ে ধারণা থাকা দরকার গ্লোবাল অর্থনীতি ও রাজনীতির পথটা কিন্তু আমেরিকা তৈরি করে দিয়েছে যেমন করে কলোনি অর্থনীতি ও রাজনীতি  সাম্রাজ্যবাদ অর্থনীতি ও রাজনীতির পথ তৈরি করে দিয়েছিল।

আবার আমেরিকা যদি এই গ্লোবাল অর্থনীতি ও রাজনীতিকে ঠেকিয়ে রাখতে চায় তা যেমন তারা পারবে না তেমনি গ্লোবাল অর্থনীতি ও রাজনীতির সম্পূর্ণ বিষয় যদি ধারণ  করে সেই অনুযায়ী চলেও তবুও সে তার হারানো জায়গা ফিরে পাবে না। ইতিহাস কথা কয়।

সুতরাং এই নয়া অর্থনীতি ও রাজনীতিকে প্রতিটি রাষ্ট্রের মেনে নেওয়াই শ্রেয় আখের পৃথিবী ও তার নিজ দেশের মঙ্গলের প্রশ্নে। আর মেনে না নেওয়া মানে পৃথিবী ও পৃথিবীতে বসবাসকারী সকল প্রাণীর জন্য অশান্তির বাহক।

কেননা সন্তান প্রসবের যখন সময় হয় তখন কেউ যেমন তাকে ঠেকিয়ে রাখতে পারে না বা জোর করে ঠেকিয়ে রাখলে যেমন মা সন্তান দুইজনকেই হারানোর সম্ভাবনা থাকে তেমনি নতুন এই অর্থনীতি ও রাজনীতিকে ঠেকানোর চেষ্টা করা মানে পৃথিবী আর অর্থনীতির দুই টাই ধ্বংসের চেষ্টার সামিল,যা অর্থনৈতিক মন্দা আর বিশ্বযুদ্ধের সম্ভবনা জাগিয়ে তুলে।আর বাস্তবতাকে মেনে নেওয়া মানে পৃথিবীতে জান্নাতের সুবাস অনুভব করা।

সবার শুভবুদ্ধির উদয় হোক। ধরিত্রের বুকে শান্তি নেমে আসুক।

3 comments:

  1. এটা বেশী ভাবতে হবে স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে।কারন অর্থনীতির একটা নতুন আলোড়ন সৃষ্টি হতে যাচ্ছে।

    ReplyDelete
  2. মতামতের জন্য ধন্যবাদ।

    ReplyDelete