Monday, July 27, 2020

নব শওকত এর কবিতা গুচ্ছ || ক্রুশবিদ্ধ কবি।

অতীত যেন কবির বুকে ক্রুশবিদ্ধ হয়ে আছে। ক্রুশ কী আর কবির কষ্ট বুঝে? না বুঝুক। তাতে কবির আপত্তি নেই। মূলত কোন কিছুরই তোয়াক্কা করেন না কবি। তিনি বরং কষ্ট ও মৃত্যু এসবের ঠোঁটে চুমো দিয়ে সৃষ্টির আনন্দে মেতে উঠতে চান। যদি কলম বাজেয়াপ্ত হয়ে যায় তবু কবি আঙুলে, রক্তের কালিতে লিখে যাবেন আপন কথা কবিতা রূপে। কবি তার মগজের ক্যানভাসে এঁকেছেন লেলিন, মার্কস আর প্রেমিকার গোলাপের সাথে কিনেছেন সুকান্ত, তাকে বুলেট/মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। কবির কাছে বাঁচা ও বিপ্লব সমার্থক। 

প্রকাশক : মেসেঞ্জার অব কসমোলজি।
প্রকাশ    : জুলাই, ২০২০ খ্রিস্টাব্দ। 
উৎসর্গ    : ভবিতব্য বিপ্লব কে।







ক্রুশবিদ্ধ কবি 


 
ছবিঃ মেসেঞ্জার অব কসমোলজি।


ক্রুশ

সব কথা বলা শেষ জানি
তবুও শেষের শরীরে
ক্রুশের মতো লেগে থাকে কিছু স্মৃতি
গত শীতের শিশির,
মেঠোপথ, একটা পরিচিত আকাশ
স্কুলের ঝং ধরা টিনের উপর বসে থাকা নিঃসঙ্গ শালিক
একটা সবুজ চাদর, কুয়াশায় ভিজে থাকা দুটো চোখ,
মনে পড়ে?
থাক, পড়লেই বা কি?
ক্রুশ কি আর জানে যিশুর কি কষ্ট?

তবে জানো নাকি এখন
অন্ধকারের দেয়ালে কান পাতলেই শুনতে পাই
অদূর অতীতের শুদ্ধতম ভুল এর চিৎকার
চোখ খুলে দেখতে পাই নিজ হাতে নিজেকে খুন করার স্বচ্ছ ছবি
হাত নাড়লেই ছুঁতে পাই এক ছিন্নভিন্ন লাশ
যার পাশে শুয়ে থেকে এখনো হুহু করে কাঁদি
যেইভাবে কাঁদতাম অবুঝ শৈশবে একটা নীল সাইকেল এর স্বপ্নে
আহারে, আমি অন্তত এভাবে মরে যেতে চাই নি।

কবি

কবি কী তোমায় ছাড়া জন্ম দিতে পারে না কবিতা?
তবে জানো,
কবি কখনো চায় না সে তার কবিতার কাঙ্ক্ষিত নারীকে স্পর্শ করুক,
কবি কখনো চায় না তার প্রণয় সত্যি হোক,
কবি কখনো চায় না প্রেয়সীর লাল ঠোঁট তার ঠোঁটে আমর্শ হোক ,
কবি কখনো চায় না প্রিয়া বাসন্তী শাড়িতে এক সন্ধ্যায় তার হাত ধরুক৷
কবি কখনো চায় না প্রিয়তমার কাজল হোক তার নামে,
কবি কখনো চায় না কেউ তার অপেক্ষায় থাকুক,
কবি কখনো চায় না কেউ তার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করুক।
কবির চাই ক্ষত, একান্ত ব্যাক্তিগত কিছু ক্ষত ;
কবির চাই অন্ধকার, যে অন্ধকারে নিজেকে চেনা যায় ;
কবির চাই শব্দ, যে শব্দ দিয়ে জীবন লিখা যায় ;
কবির চাই মৃত্যুর ঠোঁট, যে ঠোঁটে চুমু দিয়ে কবিতা জন্ম দেয়া যায়।

কবিতা

দেখো আবার নেমেছে বিকেল একই শব্দে, একই রঙ নিয়ে আকাশ ;
হায় আলো? সন্ধ্যা হয়ে হয়ে এলো !
নদীর পাড়, দূ.....রে জোনাকের মতো সভ্যতার আলো,
ইচ্ছে করে নদীর হাওয়ায় মাতাল হয়ে উড়ে যেতে তোমার গাঢ় চুলে!

দেখো আকাশ! একটা নক্ষত্র তোমার লাজুক চোখে চেয়েছে
মেঘের ঘোমটা তুলে।
পাখি হয়ে উড়তে থাকি তোমার কাছে,
জানি এখনি আকাশে অন্ধকার নিবিড় হয়ে উঠবে,
রহস্যময়ী নক্ষত্রও মুছে যাবে, মুছে যাবে তুমি
মুছে যাবে স্মৃতি, হাওয়া, ক্লান্ত নদী, মুছে যাবে পাখি।
কেবল থেকে যাবে, যায় কালের মরুতে পথ হারিয়ে যাওয়া
পোড়া কপালের এক কবিতা।

বিপ্লব

যদি পৃথিবীর সব কলম বাজেয়াপ্ত করে নাও
তবুও আঙুল-রক্তে লিখে যাবো বিপ্লব ;
স্লোগানে স্লোগানে মুছে দিবো কালের বুকে বইতে থাকা
তোমাদের নষ্ট সমাজ নদীর গতি।
আর বুলেট?
যে মগজে ঝুলিয়েছে লেলিন, মার্কস আর
প্রেমিকার গোলাপের সাথে কিনেছে সুকান্ত 
তাকে বুলেট/মৃত্যুর ভয় দেখাও?

 জীবন

জীবনরে কইলাম জীবন লও একলগে ঘুমাইতে যাই? 
তহন জীবন আমারে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়া কইলো
কর্তা আমার মেলা কাম বাকি,
চুলার উপ্রে দুঃখ বসাইয়া আসছি, এদিকে ঘরে নাই সুখ ;
সুখ আনতে অনিশ্চিত অন্ধকারে যাওয়া লাগবো।

খানিক পরেই জীবন আমারে বিরাট ব্যস্ততার লগে
কিছুটা করুণা কইরা কইলো
কর্তা চুলার উপ্রে যে দুঃখ বসাইছি
ঐনে একটু পুরান স্মৃতি ছিটাইয়া নাড়াইতে থাকেন
আর বেশি শুকাইয়া গেলে তিন ফোঁটা চোক্ষের পানি দিয়েন ;
আমি ব্যাগ নিয়া অন্ধকারের দিকে যাই
দেখি সুখ পাওয়া যায় কিনা,
আইজ কাইল-
সব সুখ নাকি নষ্টারা বেজায় দামে খরিদ কইরা ফেলে।


লেখা পাঠাতে যোগাযোগ করুনঃ 
মেসেঞ্জার অব কসমোলজি পেইজ 
মোঃ শামীম রেজা 
মোঃ মাসুদ মিয়া 
তানজিল আহমেদ আকাশ

No comments:

Post a Comment