Wednesday, July 8, 2020

নতুন সকালের প্রতীক্ষায় ( পার্ট - ১) - মোঃ শামীম রেজা


রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন ধারণায় বাংলাদেশ উন্মুক্ত বাজার নীতির মডেল অনুসরণ করে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সূচকে যে চলক গুলো শক্তিশালী হিসেবে দেখা যায় সেখানে এদেশের সামাজিক এবং দীর্ঘমেয়াদী টেকসই উন্নয়নে ইতিবাচক কোন নীতি আদৌ গ্রহণ করা হয়েছে কিনা সেটা স্বাধীনতার অর্ধশত বছর পর এসে হিসেব করলে বেরিয়ে আসবে।

বৈশ্বিক অর্থনীতির সাথে উন্নয়নে সামিল হতে হলে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা থাকতে হয় এবং সেই পরিকল্পনাকে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করার জন্য প্রয়োজন হয় সময়োচিত দূরদর্শীতা আর বিষয় সংশ্লিষ্ট শিক্ষা। সে অর্থে ১ম, ২য়,৩য় শিল্প বিপ্লব হয়ে ৪র্থ শিল্প বিপ্লবে পৃথিবী। শিল্প বিপ্লবের এই স্তরায়ন শিল্পবাদী কারখানা তাত্ত্বিকেরা করেছেন যেখানে প্রযুক্তিকে অর্থনৈতিক ক্রিয়ার অনুবর্তী হিসেবেই কেবল বিবেচনা করা হয়।  প্রযুক্তির এই অভিঘাতে মানুষের সাংষ্কৃতিক পরিস্থিতির অবস্থা কিরূপ প্রভাবিত হয় এবং সেই প্রভাব সার্বজনীন মানবিকতার নিক্তিতে কতটা মানবিক সেটা দেখার ও কোন ব্যবস্থা রাখা হয়নি।

৪র্থ শিল্প বিপ্লবের ধারণা গোটা পৃথিবীর সামাজিক-রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে অন্য এক স্তরে নিয়ে যাওয়ার কথা বলছে। এখানে প্রযুক্তির যে বিষয়গুলো  উৎপাদনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করার বিষয় নিয়ে কাজ চলছে সেগুলো হল, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিং,
উন্নতমানের রোবোটিক্স ও অটোমেশন, ইন্টারনেট অফ থিংস, ব্লক চেইন প্রযুক্তি, থ্রি-ডি প্রিন্টিং, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, উন্নত মানের জিন প্রযুক্তি, নতুন ধরনের শক্তি।

বৈশ্বিক রাজনীতির ডিলটা আসে অর্থনীতির উপর দাঁড়িয়ে।  সে অর্থে গোটা মানব বিশ্বকে তিনটা জাত অংশে দেখা যেতে পারে ১. রাষ্ট্র ২. জনগন ৩. ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

রাষ্ট্র জনগনের জাগতিক জীবনের সামগ্রিক কল্যাণার্থে তৈরি হওয়া প্রতিষ্ঠান যা ধারাবাহিক ক্রম ব্যবস্থাপনার সচেতন পরিবর্তনীয় মানুষের প্রয়াস। সে অর্থে রাষ্ট্রের জবাবদিহিতা থাকে সেটা যথাযথ প্রয়োগ হওয়া না হওয়া এখানে অপ্রাসঙ্গিক। ব্যবসায়ের যে ধারণা সেখানে মুনাফা একমাত্র মানদন্ড। ব্যবসায়ের প্রয়োজনে মানুষের মধ্যে ঔ ব্যবসায়ের পণ্যসমূহকে জায়েজ করার জন্য প্রতিষ্ঠান গুলো মানুষের ভৌগোলিক সীমানায় যতরকম সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ রয়েছে তার সবগুলোকে কাজে লাগায়। আপনার ধর্ম, সংস্কৃতি সব ঠিক আছে এগুলো র সাথে শুধু আমাদের পণ্যগুলো যোগ করে নিন তাহলে আপনাদের ধর্ম, সংস্কৃতি অধিক মাত্রায় উদ্ধার হয়ে যাবে। এই বোধে উত্তীর্ণ শিক্ষিত জনগন খুব দ্রুতই বিভক্ত হয়ে যায় ভোগবাদীতার নিক্তিতে।

প্রান্তিক হয়ে পড়া এই অসভ্য প্রতিযোগীতার বাইরে থাকা ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠি সহ যারা এর বাইরে থাকতে চেয়েছে এই বাণিজ্যিক আগ্রাসন থেকে নিজেদের রক্ষা করতে চেয়েছে তাদের এই বর্বর সওদাগরি সভ্যতা অনাধুনিক বা অসভ্য তকমা দিয়েছে।

অখন্ডায়নের এই যুগে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সভ্যতা-সংস্কৃতির মান বিচার এর ব্যতিক্রম হয়নি বিশেষত উপননিবেশিক প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থার দরুণ তা বেশ মজবুত হয়ে আছে শহুরে শিক্ষিত সমাজে। এতদ  বিচারে জনগনের সাথে রাষ্ট্রের এবং রাষ্ট্রের সাথে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাথে জনগনের সম্পর্কটা প্রকৃত অর্থে কেমন এবং এই তিনের মিথস্ক্রিয়ায় সংস্কৃতি-সভ্যতার গতি সেই গতির নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কার হাতে বেশি, কেন বেশি, বেশি হওয়ার দরুণ কি ঘটে সমাজে সেগুলো নৈর্ব্যক্তিকভাবে প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতিতে বিশ্লেষণ করে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে শিল্প-বিপ্লবের কোন পণ্য আমরা শিল্পায়িত করবো নাকি আমরা পণ্য হয়ে উঠবো?

উন্নয়ন সূচকের গজকাঠি অর্থনৈতিক উন্নয়নের সম্মুখীনতাকেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে নির্দেশ করে। তো কল্যাণ রাষ্ট্র বা উন্নয়নমুখী রাষ্ট্র যাই হোক না কেন দেশজ অর্থনৈতিক নীতি-নির্ধারনের সাথে সাথে বৈশ্বিক রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ডিলিংসটাও করতে হয়। এর সাথে জড়িয়ে থাকে সাধারন মানুষের জীবন। ধর্ম, শিক্ষা, আচার, প্রথা ইত্যাদি;
যেগুলো মানুষের জ্ঞান চর্চার সাথে সম্পর্কযুক্ত।

প্রতিষ্ঠান হিসেবে "রাষ্ট্র" ব্যবস্থাপনার কাজ করছে রাজনৈতিক মানচিত্রের সীমানায় এবং অপরাপর রাষ্ট্রের সাথে বিভিন্ন চুক্তি-বিনিময় করে। রাষ্ট্রের এই প্রাতিষ্ঠানিক চরিত্র এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক চরিত্র একরকম হওয়ার কথা নয় উদ্দেশ্যগত ভিন্নতার কারণেই। রাষ্ট্র যদি মানবিক সূচকগুলোকে প্রতিষ্ঠা করতে চাই (যা আল্টিমেটলি উন্নয়ন সূচকগুলোর সাথেই সম্পর্কযুক্ত) ব্যক্তির ভিতরেও সেই প্রচেষ্টার অঙ্কুর থাকার কথা।

প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান-চর্চার প্রায় সবগুলো মাধ্যম রাষ্ট্রের জীম্মায়। কিন্তু ব্যক্তি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মতই আত্ম-অর্থ-উন্নয়নের মডেলে চলার প্রবণতায় থাকার দরুণ তার অর্জিত সকল জ্ঞান প্রয়োগ হচ্ছে ঔ জায়গাতে।

(প্রশ্ন হলো সেটা কিভাবে হতে পারে? কেন এমনটা ঘটে? সম্পদ মালিকানা ব্যবস্থাপনাগত কারণ? এগুলো কি দেশের ইন্টেলেকচুয়াল এবং রাজনীতিবিদরা বোঝেন না?)
তখন অর্জিত জ্ঞানের সমস্ত ইথিকস-মরালিটি একটা গাজকাঠি দ্বারা জাস্টিফাইড হচ্ছে "আপনি বাঁচলে বাপের নাম"। সে অর্থে সভ্যতার অগ্রযাত্রায় জ্ঞানের বিকাশ ঘটেছে কিন্তু তার প্রবণতা আদতে  কোনদিকে ধাবিত হয়েছে? উন্নয়ন যাই ঘটুক না কেন তা ব্যক্তির জ্ঞানের সাথে যদি মানবিকতাকে আধেয় না করতে পারে সেই জ্ঞান দানবীয় বা আসুরিক হয়ে উঠবে।
আর সেই উন্নয়ন অতি দ্রুত অরাজকতার কারণ হয়ে উঠতে পারে। রাজনীতি আর অর্থনীতির এই রসায়নটা মার্কেটিং পলিসি সবচাইতে ভালো বোঝে এবং বাজার প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার শর্তগত কারণেই বৈশ্বিক রাজনৈতিক (বিশেষ করে পুঁজিবাদী দেশগুলোতে) ক্ষেত্রে যে পরিবর্তনই আসুক না কেন সেটা তাদের উপর কোন প্রভাব ফেলতে পারে না।

চলমান...
০৭.০৭.২০২০

No comments:

Post a Comment