Wednesday, July 15, 2020

সবকিছু নতুন করে গড়ে তোলার প্রস্তুতি নেয়াই সবচেয়ে সঠিক পথ হতে পারে || মুরশীদ সেলিন।


-লাদাখে ভারত-চীন মুখামুখি।
-পুলিশে সয়লাব হংকং, সেনাদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ, ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি।
-যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি উপেক্ষা করে ভেনেজুয়েলায় পৌঁছল ইরানি ট্যাঙ্কার।
(দৈনিক মানবজমিন - ২৭ মে ২০২০)

বিশ্বের বেশীরভাগ সম্পদ যখন অল্পকিছু ব্যক্তির হাতে পুঞ্জীভূত হয় তখন কোন রাষ্ট্রের পক্ষেই মাসের পর মাস লকডাউন দিয়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রেখে নাগরিকের ভরনপোষন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব না। সে ধনী যুক্তরাষ্ট্র হোক কিংবা হোক সে দরিদ্র বাংলাদেশ। কেননা ব্যক্তির হাতে সম্পদের পূর্ন নিয়ন্ত্রন চলে যাওয়ায় রাষ্ট্রগুলো সেই সক্ষমতা হারিয়েছে। ফলে জীবন ও জীবিকার তাগিদে প্রতিটি রাষ্ট্রের শ্রমজীবী মানুষদের জীবনের ঝুঁকি মাথায় নিয়ে কাজে ফিরে যাবার বিকল্প পথ আপাতত খোলা নেই, যখন দরিদ্ররা রাষ্ট্রকে কর দিতে অক্ষম এবং ধনীরা কর ফাঁকি দিতে পারঙ্গমতা প্রদর্শন করেছে।

নিওলিবারেলিজম পুজিবাদকে এমন অবয়বে হাজির করেছে, শোষন ও বৈষম্যের অবশ্যম্ভাবী ফল হিসেবে দেশে দেশে অসন্তোষ যার সাধারন পরিনতি। মানুষের এই ক্ষোভ মোকাবিলায় পুজিবাদের সামনে কর্তৃত্ববাদী পপুলিস্ট রাজনীতির উত্থান ঘটানো ছাড়া আর বিকল্প ছিলো বলে মনে হয় না। বিভক্ত ও বিভ্রান্ত করা ছাড়া একবিংশ শতাব্দীর তথ্য প্রবাহের যুগে শোষন চালু রাখা সম্ভব নয় এটা সকলেই বোঝে। ট্রাম্প, মোদী, বলসেনারো, জনসনসহ নাম বলার অযোগ্য এমন অনেক পপুলিস্ট রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিকাশ ঘটেছে এরই ধারাবহিকতায়।

কিন্তু এতে যে শেষ রক্ষা হবে না এবং পরিনতি যে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের দিকে ধাবিত হবে তা অনুমিতই ছিলো। শতাব্দীর ভয়াবহতম বৈশ্বিক মহামারি সেই পরিনতির গতি তরান্বিত করছে হয়তো। এখান থেকে ঘটনা কখন কোনদিকে গড়ায় সেটাই এখন দেখার বিষয়।

মজার ব্যপার হচ্ছে নিওলিবারেলিজমের হাত ধরে বিশ্বজুড়ে পপুলিস্ট রাজনীতির বিভ্রম প্রায় সব জায়গায় মধ্যপন্থী ও বামপন্থীদের যথাসম্ভব প্রতিরোধের মুখে পড়েছে এবং এখনো পড়ছে। কেবলমাত্র বাংলাদেশের মধ্য ও বামপন্থীরাই পপুলিজমের পালে হাওয়ার অনুকুলে সজোড়ে বৈঠা ঠেলেছে।

হতে পারে তারা এর বিপদ সম্পর্কে ধারনা করতে পারেনি অথবা তাদের ভিন্ন এজেণ্ডা ছিলো। আপাতদৃষ্টিতে দ্বিতীয়টি হবার সম্ভাবনাই প্রবল বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

কিন্তু তাদের এই অবিমৃশ্যতার ফল যা হয়েছে তা হলো রাষ্ট্র ও সমাজের ভেতরকার প্রতিরোধক্ষমতা নিঃশেষ হয়ে যাওয়া, পারস্পরিক বিশ্বাসযাগ্যতা শূন্যের কোটায় নেমে আসা এবং জনগনের মাঝে অপ্রয়োজনীয় অথচ আত্মঘাতী বিভেদের পথ প্রশস্ত হওয়া।

সার্বিক পরিনতিতে বাংলাদেশে লুটপাট ও সম্পদ পাচারের যে কাঠামো গড়ে উঠেছে তা থেকে বেড়িয়ে আসার পথ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। সেক্ষেত্রে আসন্ন ঝড়ের পর সবকিছু নতুন করে গড়ে তোলার প্রস্তুতি নেয়াই সবচেয়ে সঠিক পথ হতে পারে।

২৮.০৫.২০২০

No comments:

Post a Comment