Friday, June 12, 2020
করোনা, রাষ্ট্র এবং পাশ-বালিশ > শ্রী রীতি
আমি পাশ-বালিশ নিয়ে ঘুমোবো কিনা সেটা আমার ব্যাপার। এই নিয়ে কারো জ্ঞান আমি শুনতে চাই না। কিন্তু এটা খুবই গুরুতর প্রশ্ন যে, করোনাকে পাশ-বালিশ করেই যদি ঘুমোতে হয় তাহলে দুমাস ধরে লকডাউন করেছিলেন কেন?
যে বিষয়গুলি সম্পর্কে আমি খুব ভালোভাবে অবহিত তার মধ্যে এটাও রয়েছে যে করোনা ভাইরাস নিয়েই আমাদের গোটা মানবসমাজকে আগামী দিনে বাঁচতে হবে। এটা নিয়ে আমি এত বড় বড় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের যুক্তিগ্রাহ্য বক্তব্য শুনে নিয়েছি যে আপনার কাছ থেকে এই জ্ঞান শুনতে চাই না। তাছাড়া এটাতে আমি খুব ভীত, তাই আপত্তি করছি এবং অন্য কোনো উপায় খুঁজে বেড়াচ্ছি এমনও নয়। কিন্তু যেহেতু আপনি ঐ চেয়ারটায় বসে আছেন, সেই কারণে আপনাকে সুনির্দিষ্টভাবে কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর দিতেই হবে। এড়িয়ে যাওয়া চলবে না।
করোনা ভাইরাসের মেডিসিন/ভ্যাকসিন বের করার দায়িত্ব আপনার নয়, আপনি কেন ব্যর্থ, এসব প্রশ্নের উত্তর আপনাকে দিতে হবে না।
কিন্তু লকডাউনের দুই মাস সময়টা ছিল প্রস্তুতির জন্য। মানুষ কৃচ্ছসাধন করলেন, সেই সুযোগে আপনার সরকার স্বাস্থ্যক্ষেত্রে কোন প্রস্তুতিটা নিল?
দুমাস পরে এবার আমি ভাবতে পারবো তো করোনা হলেও চিন্তা নেই, সরকারী হাসপাতালে আমার চিকিৎসার সুব্যবস্থা রয়েছে? ভেন্টিলেটর, অক্সিজেন ইত্যাদির পর্যাপ্ত ব্যবস্থা হয়েছে তো?
আচ্ছা, ব্যক্তিগত সতর্কতা অবলম্বন করে যদি বা করোনা সংক্রমণ থেকে বেঁচেও যাই তাহলেও অন্যান্য নানা রোগ তো আমাকে ছাড়বে না, তার চিকিৎসার ব্যবস্থা হাসপাতালে এবার ফিরে এসেছে তো?
আচ্ছা, আমার বয়স না হয় সবে পঞ্চাশ পেরোলো, কিন্তু আমার বহু প্রিয়জন, আত্মজনের বয়স হয়েছে, অনেকে ডায়াবেটিস, অ্যাজমা, হাইপ্রেসার ইত্যাদির নানা রোগে ভুগছেনও। করোনা হলেই এবার আর তাঁদের প্রায় বিনাচিকিৎসায় মরতে হবে আর কোমরবিডিটির তালিকায় নাম লেখাতে হবে না তো?
মন্দির মসজিদ খুলতে বলেছেন, বেশ করেছেন। কিন্তু বলি কি, হাসপাতালগুলোকে এই দুমাসে খোলার মতো করে খোলার ব্যবস্থা করেছেন তো? নইলে ডায়ালিসিস আর কেমো নেওয়ার অপেক্ষায় যারা দিন কাটাচ্ছেন তাঁদের কি হাসপাতালের বদলে ধর্মস্থানে যেতে বলবো?
করোনা যখন শুরু হয়েছিল তখন আপনার সাঙ্গপাঙ্গরা মিম তৈরি করে ফেসবুকে ছড়িয়েছিল, ছবিতে দেখা যাচ্ছিল আপনি দুহাত দিয়ে করোনা ভাইরাসকে রুখে দিচ্ছেন আর রাজ্যবাসী নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে। আপনার স্তাবকরা বলতে শুরু করেছিলেন যে, মমতা ব্যানার্জি থাকতে এ রাজ্যে করোনা থাবাই বসাতে পারবে না। সম্ভবত তাঁরা আপনার নামে মন্দির তৈরির পরিকল্পনা করছিলেন, শীতলা মন্দিরের মতো। আর আপনি? আপনি তখন প্রশান্ত কিশোরের পরামর্শ মতো রাস্তায় গোল্লা আঁকছিলেন। দেড় দুঘন্টা ধরে টিভিতে বকবক করে কীভাবে হাত ধুতে হবে শেখাচ্ছিলেন, কলকাতা এবং জেলায় জেলায় অজস্র কোভিড হাসপাতাল গড়ে তোলার গল্প শোনাচ্ছিলেন।
ভালোই করেছেন। ঠিকই আছে। আপনি যেমন রাজনীতিক তেমন রাজনীতিই করেছেন। কিন্তু এবার তো জবাব দিতেই হবে। জবাব পেলে আমি নিশ্চিন্তে পাশবালিশ জড়িয়ে ঘুমোতে পারব। আর না পেলে আমি তো এখন ঘুমিয়ে সময় কাটাতে পারব না।
দুশ্চিন্তায় আমার ঘুম উবে যাবে আর আমি আপনার প্রশাসনকে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে দেব এটা ভুলেও ভাববেন না। প্রতিদিন আঙুল তুলে আপনাকে দায়ী করে যাব। যদি উপযুক্ত সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো থাকে তাহলে করোনা ভাইরাসকে নিয়ে জীবন কাটাতে আমার আপত্তি নেই। না থাকলে, করোনা ভাইরাসকে তাড়ানোর ক্ষমতা আমার নেই, কিন্তু আপনাকে ক্ষমতা থেকে তাড়ানোর লড়াই করে যাব। যদি তাতে স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর সামান্য উন্নতিও হয়; করোনাকে নিয়েই না হয় জীবন কাটাবো।
১২.০৬.২০২০
Labels:
এক পলকে মনীষীর জীবনী
FROM LOCAL TO COSMOLOGY AND VICE-VERSA.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment