অন্যপাতা

Sunday, July 26, 2020

এম ইকবাল এর কবিতা গুচ্ছ - "ভালোবাসাহীন মানচিত্র"।

সময়ের প্রবাহ অনন্ত। এ অনন্ত যাত্রায় পৃথিবীতে কখনো আসে শুভ্র ভোর, কখনো জাহেলিয়াতের অন্ধকার। জাহেলিয়াতের কালে নর্দমার কীট ধেয়ে আসে আর কুটিল কলম আঁকে নরকের ছবি। এ কীট মূলত মানুষেই থাকে, মানুষের বোধে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকে। কবি এ কুটিল অবস্থা থেকে মানুষকে বেরিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন। কোরবানী করতে বলেছেন নিজের ভিতরে লুকিয়ে থাকা পাশবিক বৈশিষ্ট্যকে। সভ্যতার গায়ে লেপ্টে থাকা কলঙ্ক যেন মুছে যায়, শুদ্ধ পাটাতনে মানুষ যেন হয়ে ওঠে চিরায়ত সৌন্দর্যের প্রতীক গোলাপ প্রস্ফুটনকারী বৃক্ষ গোলাপ, এই কবির প্রর্থনা।


প্রকাশক : মেসেঞ্জার অব কসমোলজি।
প্রকাশ    : জুলাই, ২০২০ খ্রিস্টাব্দ। 



উৎসর্গ    : 'মানুষ' কে।


ভালোবাসাহীন মানচিত্র 



প্রার্থনা

সময়ের নেই কোন পাড়
তার অনন্ত প্রবাহে
ধুয়ে যাক সব কলংক
এই অসভ্য সভ্যতার।

কবর অথবা জন্মভূমি

ঘুম নেই, তাই বেঁচে থাকা
নতুন ভোরের অপেক্ষায়...।
রাত্রির দাফন শেষে
শুভ্রবসনে নিজেকে জড়িয়ে
ভিখিরির মতো করে দাঁড়াবো একদিন...
তোমার আঙিনায়।
পাথরের মতো কঠিন তুমিও
ফেরাবে না জানি
ফেরানো যাবে না আমাকেও-
তবুও দুহাত তুলে
আমার স্বপ্নকে আশির্বাদ করবে
এটাও জানি...।
শুধু জানবে না কেউ
আমার স্বপ্নে তুমিও ছিলে
দূঃসময়ে রোদ্দুর হয়ে।
আমিও ভিখিরি ছিলাম
একটা কবিতার-
একটা গোলাপের-
একটা পরিপূর্ন অন্ধকারের...
যা শুধু তুমিই পারো দিতে।

আলেয়া

প্রিয়তমা, আলো হতে চেয়ে মানুষের পৃথিবীতে
এখনো রয়ে গেলে প্রাগৈতিহাসিক অন্ধকারে?
এখনো তোমার দু'চোখ জুড়ে পরাবাস্তব দৃশ্যাবলী
অভিশাপ হয়ে শুধুই নরকের ছবি আঁকে ।
অবিরত ধেয়ে আসা নর্দমার কীটেরা
এখনো তোমার আধুনিক হৃদয় কুড়ে কুড়ে খায়,
এখনো তোমার রক্তিম বুকে আঁকা-
ভালাবাসাহীন শ্বেত মানচিত্র।
অথচ তুমি ভালোবেসেই রক্তাক্ত হয়েছিলে
ক্ষতঃবিক্ষত ঝাঁঝরা করেছিলে আপন বুকের পাজর
তবুও তোমার স্বপ্নজুড়ে হাতছানি দেয়
আলেয়ার অদ্ভুত সব গল্প।

অথচ তুমি প্রত্যুষে জেনেছিলে
আলেয়ারা রোজ ভুল ছবি আঁকে
প্রতিটি নাগরিক চোখে।

মানুষের মৃত্যু নেই

মৃত্যুহীন মানুষ হতে
নিজের মধ্যে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকা পশুত্বকে কোরবানীর বিকল্প নেই।

পশুকে নাশ করার মধ্যে দিয়েই
জন্ম হয় মানুষের-
তাই তো আজীবন চলে পশু কোরবানীর উৎসব।
কতটুকু মানুষ হোলে...?
কতটুকুই বা কোরবানী হোলো...?

শেষ নিঃশ্বাস ফেলেই
জবাব দিতে হয় অমূল্য সব প্রশ্নের।
শেষ নিঃশ্বাস ফেললেই
উন্মোচিত হয় মানুষের পরিচয়।

কতটুকু কোরবানী হোলো...?
আর কতটুকুই বা মানুষ হোলে...?
জবাব আছে-
যতটুকু থাকবে বেঁচে পরকালে।

বৃক্ষগোলাপ

এত যে কাঁদা মাখামাখি
জল ছোড়াছুড়ি 
এও কি ভালোবাসারই আরেক রূপ
অনেক মূল্য দিয়ে কেনা হীরার টুকরোর মতো?

মুষল ধারার বর্ষণ হতেও
গর্জন লাগে কিছু
তারপর সব নির্মল হয় প্রকৃতির শুদ্ধতায়-
আবির্ভূত হয় সব সৌন্দর্য্য।

তবুও এই বর্ষণে ঝরে যায় কিছু পাপড়ি
যা পৃথিবীকে সৌন্দর্য্যের স্বপ্ন দেখিয়েছিল
আর চিরায়ত সৌন্দর্য্যের সেই পূর্ণ গোলাপ
স্নিগ্ধতা নিয়ে ফোটে নতুন ডালে। 

তবুও আমি কসম করে বলতে পারি
যে গোলাপ ফোঁটেছিল একদিন
ঝরে গেছে আজ
তার সৌন্দর্য্য ম্লান হয়না এতটুকু প্রেমিকের কাছে
প্রেমের পরশ হয়ে চিরদিন বেঁচে থাকে
প্রতিটি প্রেমিকের বুকপকেটে।

গোলাপ ফুটিয়েছিলো যে বৃক্ষ
তার আগেই ফুটিয়েছিলো বৃক্ষের কাঁটা
পৃথিবীকে পরিপূর্ণ সৌন্দর্য্য উপহার দেবে বলে।

তুমি বৃক্ষগোলাপ-
ফোটাও শত ফুল
বুকে নিয়ে সহস্র কাঁটা।

লেখা পাঠাতে যোগাযোগ করুনঃ 


ইমেইল :  shimul2016.bsm@gmail.

No comments:

Post a Comment