অন্যপাতা

Monday, August 3, 2020

কবি যারিন তাসনীম এর কবিতা গুচ্ছ - ইশক

কবি যারিন তাসনীম প্রচলিত অচলতা ভেঙে প্রেমের চিরায়ত স্বরূপ অন্বেষণ করেছেন। প্রত্যেকটি কবিতাই জীবনের গভীরতর উপলব্ধিতে নির্মিত। প্রশ্ন গুলো যেন ভাসমান প্রেমিক কে এক ধাক্কায় প্রেমের সাম্পান থেকে ফেলে দেয় নিম্নতম স্তরে। কবি ইশকের গভীর সমুদ্র হাতড়ে তুলে এনেছেন - ইশক।

প্রকাশক: মেসেঞ্জার অব কসমোলজি।
প্রকাশ   : আগস্ট, ২০২০ খ্রিস্টাব্দ।
উৎসর্গ  : পৃথিবীর সমস্ত প্রেমিকদের।

   কবি যারিন তাসনীম এর কবিতা গুচ্ছ - ইশক
কবি যেরিন তাসনিম




প্রেমিক

গুটিকয়েক বসন্ত পেরিয়ে,
অম্লান বদনে,যেই তোমার দরজায় কড়া নেড়ে ছিলাম,
অমনি তোমার উড়ো প্রশ্নের আঘাত,
ক্ষুরের মত হৃদয় ছিন্নভিন্ন করেছিলো।
অবশ্য তা আমি বুঝতে দেয়নি,
হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলাম,
এই আশায়,হয়তো দীর্ঘদিন পরে দেখা হবার
আনন্দে বুকে টেনে নিবে !
কিন্তু তুমি তো
বুক পকেট থেকে টুপ করে ৫ টাকার আধুলি দিয়ে বলেছিলে
বিদেয় হওতো বাপু ।
তবে এমন তো কথা ছিল না,
তুমি তো প্রেমিক, শত শত জনম পেরিয়ে,,,
তোমার দ্বারে যে রুপেই দাড়ায় না কেনো?
তোমার তো এক পলকে চিনে নেবার কথা,,
তাহলে কি, আমার জানা প্রেমিকের সংজ্ঞাটা ভুল ছিল?

 শ্রী রীতির কবিতা গুচ্ছ

এখানে ক্লিক করুন 

অপেক্ষা

তোমাকে যে বহুবার ছুঁয়েছি, এমন কিন্তু নয়, তবুও
আমার পিপাসিত আত্মা ঘুরে ফিরে শুধু তোমাকেই
খোঁজে,
এই খোঁজ অনন্তকাল ধরে চলছে,এ যেন মহা সমুদ্র
ছেঁচে গভীর থেকে এক অদৃশ্য খাজনার বাক্স খোঁজার
মত,
কত শত বছর পেরিয়ে কত সহস্র প্রেমিকের ওষ্ঠাদেশ ছুঁয়েও মেলেনি সেই পিপাসা মেটানোর উৎস
হাজারো রজনী স্বার্থবাদী প্রেমিকের বাহুডোরে কাটানোর পরে মনে হলো, উফফ তুমি হীন তৃষ্ণার্ত জীবন আর কত জন্মে আমি পাবো?

তুমি জানো বিছানার পর বিছানা পাল্টেছি,,সঙ্গী ও পাল্টে দেখেছি, তোমাকে পাওয়া যায় কিনা,?
নাহ আমি প্রতিবারই হতাশ বদনে উল্টো রথের বৃষ্টি বিলাস করেছি,

আর আশায় বুক বেঁধেছি এবার না হলেও ফের পরের রথে আমার জগন্নাথ ঠিক আসবে।


রহস্য

আমিই সকল ক্লান্তি তোমার
আবার শরীরজুড়ে  শান্তি,
ঠোঁটের কোণে হাসির কারণ
মিছে মায়ার ভুল-ভ্রান্তি
আমিই তোমার দেহ-তরী
রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে আছি
যন্ত্রণা হয়ে হৃদয়ে ঢুকে
সুখের মলম লাগিয়ে রাখি
আমিই তোমার বুকের ব্যামো
পথ্য রুপে আমিই আছি
দেহের মাঝে রুহ আমি,
দুরে থেকেও কাছে থাকি,
আমিই তোমার রাগ হয়ে
অভিমানে প্রেম ছড়ায়
আমি তোমার ঘৃণা হয়ে 
 লোভের ভেলা ভাসায়
আমিই তো দুঃখের কারণ
 তোমার  সুখের প্রলোভন
জীবন নামের মায়া নদীতে
বেঁচে থাকার একমাত্র কারণ
বন্ধুর পথে চলার সাহস
আমিই তোমার আশা,শেষ ভরসা বটেও
আমি পুণ্য,আমিই পাপ
অভিশাপ ও আমি,
আমিই তোমার আশীর্বাদ
আমি কর্ম,আমিই ফল
চোখের কোণে বিন্দু বিন্দু জল,
ভোরের সূর্য, পাখির ডাক,নির্মল হাওয়া,
দুপুর বেলা প্রখর তাপে অস্থিরতা
দুপুর গড়িয়ে বিকেল যেনো স্বস্তির হাতছানি,
গোধূলি লগ্নে সূর্য্যি ডোবার বিদায় বেলাও আমি,
নদীর টলমল জল,নৌকো ভরা জেলের দল,
নদীর মাছ,পেটের ক্ষুধা
ক্ষুধা মেটানোর রাস্তা যে সব,
ঘুর্ণিঝড়ে উথাল পাথাল ঢেউ 
উদাস দুপুরের ঘরহীনের হাহাকার
শেষ বিকেলে বটের ছায়ায় আশ্রয়
বড্ড অট্টালিকায় উঠে মুখ ফিরিয়ে রই,
আমি পাহাড়, আমি ফসল,
আমিই ধ্বংস, আবার আমিই সৃষ্টি
আমি প্রেম, আমিই প্রেমিক,
আমিই চিরকাল বিপ্লবী
আবার আমিই রক্ষণশীল,
একদিকে আমি গড়ি,অন্য দিকে নষ্ট করি,
আমি তোমার অস্তিত্ব , তোমার অনুভুতি
আমি  যন্ত্রণা দানকারী,
সেই আমিই তো উপশমকারী,
আমি উপকারী হয়ে উপকার করি,
আমিই সব কেড়ে নিয়ে নিঃস্ব করি,
আবার আমিই মহা দানবীর,
তোমাকে জ্বালায় আমি,আবার আমি নিজেও জ্বলি,
পঞ্চমী তে করি প্রেম নিবেদন
ষষ্ঠী তে তার বোধন,
সপ্তমী তে যায় ছেড়ে
আমিই এসে অষ্টমী তে ধরি হাত,
নবমী তে ঘুরবো বলে
দশমি তে যায় বিসর্জন
আবার আমি লক্ষ্মী হয়ে আসি ফিরে
কখনও বা সরস্বতী
কলিযুগের রাধা আমি
কলির কেষ্ট সেও আমি,
তোমার বুকে আমারই তো বসবাস,
রক্ত হয়ে শিরায় উপশিরা চলাচল,
আমিই তোমার মুখের বুলি,
প্রতিবাদী আন্দোলন
রাজপথে লাশের মিছিলে,মানবতার আত্মহনন
আমিই তাল সুর ছন্দ মিলিয়ে
দেয় তোমায় আনন্দ
আমিই অনুভূতি হয়ে কবিতায় পাই ঠাঁই,
আমি শিল্পী, আমি আঁকি জীবনের সব চিত্র
অভিনয়ে মাতিয়ে রাখি মর্ত,
আমিই করি ভেদাভেদ, আবার বুক ফুলিয়ে বলি আনো সমতা,
আমি ধর্ম, ধর্মের নিয়মে অধর্ম দেখে বিস্মিত হয়ে বলি
আমার সৃষ্টি কত বোকা???
আমি বহুরূপী, আমি শুধু ধরা দেয় প্রেমিকের চোখে,
আমি থাকি তোমাদের মাঝেই,
কেনো খোঁজ দিগ্বিদিকে??

জীবন

পূর্নিমার আলোয় চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে রুপন্তির অভিকের কথা মনে পড়ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলোর খুনসুটি আজও ওর একাকিত্বের সঙ্গী।
ঠিক সে সময় প্রত্যয় এসে বললো, মাম্মা মাম্মা পাত্তা পাত্তা(পাস্তা,পাস্তা) খাবো,
আচ্ছা মামনি চলো বানিয়ে দিচ্ছি,
যে মেয়েটা কখন রান্নাঘরে পা রাখেনি,কখনও ইচ্ছে করেও চুলার ধারে যায়নি,আজ তাকে সব করতে হচ্ছে,
চুন থেকে পান খসলেয় মহাবিপদ, রুপন্তিও সব যেনো মিষ্টি হাসি দিয়ে মেনে নিতে শিখেছে।
যে মেয়েটা ওজন বেড়ে যাবে তা জেনেও খাওয়াতে কখনও ধ্যান দেয়নি,
আজ সেই মেয়েকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কোমড়ের ভাজ টা ঠিক আছে কিনা দেখতে হয়,কারণ ওখানে যদি চর্বিরা বাসা বাঁধে তাহলে স্বামীর কটুক্তির থেকে বাঁচা মুশকিল,
আজ মেকাপ করে নিজেকে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখতে হয়,
কিন্তু এইতো সেদিনের কথা পড়াশোনার চাপে কালো দাগ পড়া চোখ নিয়েও অভিকের সামনে দাঁড়ালে অভিকের কাছে মা দুর্গার চেয়ে কম কিছু মনে হত না,

আচ্ছা ভালবাসা আর সুখ টা একসাথে কেনো থাকতে পারেনা??
সবাই জানে রুপন্তি খুব সুখে আছে,স্বামীর মোটা টাকার মাইনে হাতে নিয়ে থাকে, আগের চেয়ে সুন্দরী হয়েছে, মেয়ে স্বামী নিয়ে সুখে ঘর করছে,

কিন্তু রুপন্তির মনের খবর কেউ রাখছেনা, অভিকের মত তার স্বামী তার শরীর খারাপ নিয়ে উতলা হয়না,
ওসব নাকি ঢং, এই তো বিয়ের আগের কথা সামান্য ব্যাথা হলেও, অভিক কত উতলা হত, বারবার জানতে চাইতো এখন কেমন আছো, ব্যাথা কমেছে, ওষুধ খেয়েছো,
আর যদি কোন রকমে জানতে পারতো অনিয়মের জন্য ব্যাথা বেড়েছে, তাহলেই মুখ ফুলিয়ে আরও অনিয়ম করতে বলতো,

সেই অভিমান টাও কত যে ভালো লাগতো রুপন্তির, ভালবাসার মানুষ টা এত ভালবাসে যে অন্য কারোর কাছ থেকে সামান্য অবহেলাও সহ্য হয়না।

সারাজীবন যখন পাশে থাকার অনুমতি দাওনি ঠাকুর, তাইলে ভালবাসার জন্য অনুমতি কেনো দিলে, আজ অন্তত সংসার টা নিয়ম করে করতে পারতাম।

এই সব প্রশ্নই রুপন্তির মনে ঘোরপাক খেতে থাকে,
বিয়ের পর রুপন্তির স্বামী বলেই দিয়েছিল, লেখাপড়া করেছো ভালো কথা,চাকরি -বাকরি করা চলবেনা।
আমাদের পরিবারের মেয়ে বউরা চাকরি করেনা,
রুপন্তিও মাথা নিচু করে মেনে নিয়েছিল
কারণ ও জানতো যেদিন ও নিজের হাতে ওর জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন গলা টিপে হত্যা করেছিল,

স্বামীর সাথে তার সম্পর্ক শুধু মাত্র রাতে বিছানায় পরিপাটি হয়ে মনোরঞ্জন করা পর্যন্ত,
স্বামী তো পরমদেব, তাঁকে আরাধ্য দেবতার মত অঞ্জলি দিয়ে পুঁজো দিতে হয়,
কিন্তু রুপন্তির তা মনে হয়না, রুপন্তি তার স্বামীর মধ্যে আপাদমস্তক স্বার্থপর রক্তমাংসের অমানুষ খুঁজে পায়,
তাকে সে কি করে আরাধ্য করবে?

তবে রুপন্তি যেনো সব খারাপ সব অনিয়ম মেনে নিতে শিখেছে এক মাত্র প্রত্যয় এর জন্যই বেঁচে আছে।

লেখা পাঠাতে যোগাযোগ করুনঃ

মেসেঞ্জার অব কসমোলজি পেইজ
shimul2016.bsm@gmail.com

No comments:

Post a Comment