Monday, August 17, 2020

বৈরিতা নয়, চাই প্রকৃতি ও মানুষের সখ্যতা - একেএম খাদেমুল বাসার।



    বৈরিতা নয়, চাই প্রকৃতি ও মানুষের সখ্যতা

 লেখক


যে শহর সোডিয়াম নিয়নের আলোয় আলোকিত হয় সে শহর কি করে তার মুগ্ধতা  ছড়াতে পারবে? ইট-পাথরের  শহর কখনোই প্রকৃতি দিয়ে তার মুগ্ধতা ছড়াতে পারেনি, আগামীতেও পারবে কি না সন্দেহ রয়েছে। কৃত্রিমতা দিয়ে আর কতটুকুই বা করা যেতে পারে। সেজন্য আমি সব সময় গ্রাম্য এলাকা বা প্রকৃতি পছন্দ করি। সুনসান নীরবতা আর পাখির কোলাহলে মুখর এক অপার্থিব সুখ। দিনের আলো কমে যাবার সাথে সাথে আরেক সৌন্দর্য এসে হাজির। যেখানে জোৎস্নার সাথে আবার জোনাকির মিতালী। আর যদি প্রকৃতির মাঝ দিয়ে নদী বয়ে যায় তাহলে তো পুরাই সোনায় সোহাগা একটা ব্যাপার। নদীতে ঢেউয়ের শব্দ  বাড়তিমাত্রা যোগ করে।


(রুটার ব্রিগম্যানের এটা পরিবর্তনের সময়)


শহুরে জীবন আর গ্রামীণ জীবনের যে বিস্তর ফারাক তা কিন্তু চাইলে পুরোপুরি না হোক অনেকাংশে পরিবর্তন করা যেতে পারে। এতো এতো বিশাল অট্টালিকার ভিড়ে একটু ফাঁকা জায়গা পেলেই মানুষের মন আনন্দে নেচে উঠে আরেকটা অট্টালিকা তৈরির চিন্তায়। এই চিন্তাটা যদি একটু পরিবর্তন করা যেত তাহলে এই শহুরে জীবনে প্রকৃতির ছোঁয়া পাওয়া যেত। এ শহর যেমন মানুষদের রোবট বানিয়ে রেখেছে ঠিক সমানতালে অর্থ-বিত্তের এই ভয়ডরহীন খেলায়ও মাতিয়ে রেখেছে। যে খেলায় একেকটা মানুষ নিজেই তার প্রতিযোগী। এসব ভয়ডরহীন খেলায়  বলির শিকার হচ্ছে প্রকৃতিই। যে প্রকৃতি আমাদের জলবায়ু থেকে শুরু করে নানানকাজে  অবিরত সহায়তা করেই যায় তাকেই আমরা দূরে সরিয়ে দিচ্ছি অর্থ-বিত্তের নেশায় বুঁদ হয়ে।

আমরা চাইলে পারি মানুষের সাথে প্রকৃতির আগের সে শখ্যতা ফিরিয়ে আনতে। ইট-পাথরের এ শহরে দরকার শুধু একটু চিন্তাধারার পরিবর্তন। প্রতিটা মানুষ যদি তার নিজের মতো করে প্রকৃতিকে ভালবেসে তাদের নীড়ে ঠাঁই করে দেয় তাহলে অনায়াসেই সম্ভব এই অসাধ্যকে সাধন করা। মানুষ নাকি তার স্বপ্নের সমান বড়। যে শহরে বিভিন্ন দূষণে শ্বাস নিতেই এখন কষ্টকর হয়ে গেছে  সে শহরে মানুষ কতবড় স্বপ্ন দেখে তা আসলে আমার বোধোগম্য নেই। আমার কাছে এ শহরের মানুষের স্বপ্নগুলোকে আঁষাঢে বৃষ্টির মতো মনে হয়। একজনের থেকে এক ধাপ এগিয়ে গেলেই যেন এরা খুশি। প্রকৃতির সাথে যদি সখ্যতাই গড়ে না উঠে তাহলে এসব করে কি লাভ?


(আরও পড়ুনঃ শ্রী রীতির কবিতা) 

 
শহুরের কোটি কোটি মানুষের মধ্যেও কিছু ভিন্ন ধাঁচের মানুষ রয়েছে যাদের মাধ্যমেই এই শহর প্রকৃতির ছোঁয়া পায়। তারাই হাটিঁ হাঁটি পা পা করে প্রকৃতিকে তাদের নিজের মতো করে গড়ে তুলছে। মনে হয় একজন মা যেন তার সন্তানকে যেন কোলে পিঠে মানুষ করছে। তাদের দেখেই আরো কিছু মানুষ যোগ হচ্ছে। শহুরে জীবনে তারা তাদের ঘরকে প্রকৃতির মাধ্যমে যেভাবে সাজিয়েছে তা আসলেই দেখার মতো।

আরও পড়ুনঃ পৃথিবী কোন পথে?

একটা বিল্ডিংয়ের ছাদকে অযাচিতভাবে ফেলে না রেখে সেখানে আপন মমতায় বৃক্ষরোপন করে পাখিদের অভয়ারণ্য বানানোর যে ক্ষমতা সেটা আসলেই সবাই পারেনা। শহুরে কিছু মানুষের মনে এই আইডিয়া ঠিকই বের হয়েছে। তারাই আবার ছাদেই বানিয়েছে কৃত্রিম পুকুর, খামার আরো কতো কি। যা আসলেই সেই মানুষটিকে আর বাকি আট-দশ থেকে এগিয়ে রাখবে। এভাবেই শহুরে মানুষগুলো প্রকৃতির সাথে তাদের সখ্যতা গড়ে তুলে।

অন্যদিকে গ্রামীণ জীবনে তো প্রকৃতির ছোয়া লেগেই আছে। এই জীবনে যারা বেড়ে ওঠে তাদেরকেই আমার আপন লাগে। নগরায়নের কোন ছোঁয়া নেই। প্রকৃতির সাথে মানুষের যে সখ্যতা তা সত্যিই মনোমুগ্ধকর। 
করোনাকালীন সময়ে মানুষ বুঝেছে প্রকৃতির সাথে কতোটা অবিচার করেছে মানবজাতি। প্রকৃতিকে বিলীন করে তারা যে আকাশকুসুম স্বপ্ন দেখেছিল তা যে আসল স্বপ্ন নয় সেটাও তারা বুঝেছে। অর্থ- বিত্ত দিয়েও যে প্রকৃতির অভাব পূরণ করা যায়না মানবজাতির কাছে সেটা এখন স্বচ্ছ পানির মতো পরিষ্কার। রোবট বনে যাওয়া মানুষ গুলো হাতে দিনের পুরোটাভাগ  সময় পেয়েও কেমন যেন পরিশ্রান্ত। এই সময়েও যে তাদের মনে বিদ্বেষের সৃষ্টি হয়েছে। ছোট একটা ভাইরাস কেন শুধু মানুষকেই কষ্ট দিচ্ছে , কেন অন্যকোন প্রাণীকূল কষ্ট পাচ্ছেনা সেটা নিয়েও তাদের বিস্তর সমালোচনা। প্রকৃতির সাথে যে পরিমাণ অবিচার করা হয়েছে সৃষ্টিকর্তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে মানবজাতিকে বুঝিয়ে দিয়েছে।

(আরও পড়ুনঃ বৈশ্বিক সংকট ও সমাধান ভাবনা)


এখনই সময় মানবজাতি আর প্রকৃতির প্রেমে জোড়া লাগানোর। এ সম্পর্ক গড়ে উঠলে প্রকৃতি আবার  নবরূপে সেজে উঠতে পারবে। আর মানবজাতি পাবে তার পূর্বের মতো স্বাভাবিক জীবন।

লেখা পাঠাতে যোগাযোগ করুনঃ

মেসেঞ্জার অব কসমোলজি পেইজ

মেইল - shimul2016.bsm@gmail.com

No comments:

Post a Comment