Monday, November 1, 2021

ছোটগল্প - আড্ডা- ভূবন মুন্সী

 আড্ডা

Messenger of cosmology
ভূবন মুন্সীর ছোটগল্প- আড্ডা




বাহিরে তুমুল বৃষ্টি। শৈশবের আকাশ ভাঙা দিন যেনো ফিরে এলো ফের। উৎসব আয়োজনে মগ্ন মানুষ। ধোঁয়া সরিয়ে দেখে নিই মানুষের আনাগোনা।
আমার চোখ প্যারালাল দৃষ্টি ফেলে বসে থাকে। ধোঁয়ারা স্পাইরাল হয়ে উর্দ্ধমুখী।
বাউল বলেছিলো,
সত্ত্বা যদি স্পাইরাল হয়ে উর্দ্ধে উঠে, অতপর ছুঁয়ে ফেলে সহস্রার তবেই মুক্তি; কথাটি মনে পড়তেই অন্তর্মুখী হলাম।শামসুদ্দিন আবুল কালামের মতো পথ জানা নাই ভাবে বসে আছি। বাউল বাক্য যেন অচিন ক্রিপ্টোগ্রাফ।
'কি খবর?' শব্দ শুনে হুঁশ হলাম; কবি আরও কিছু বলেছে কি-না শুনি নাই।


চোখে তাকালাম। অপোজিট চোখ থেকে জিজ্ঞাসা এলো, কেমন আছেন?
কিছু উত্তর এলোনা কন্ঠ ছুঁয়ে।
তবু বললাম আড়ষ্ট আছি, বুঝা যাচ্ছে না কিছু। তবে প্রবলেম আছে।
কেমন?
কন্ট্রাডিকশন।
যেমন?
ভাবগত।
এক্সপ্লেইন্যাবল?
নো, আনএ্যাবল।
হোয়াই আনএ্যাবল! আই'ম এক্সপ্লেইন ইট। মি. সাধু বলে উঠলো।
কবি থামিয়ে দিয়ে বললো, আপনি সবটা শোনেননি!
'অজান খবর না জানিলে কিসের ফকিরি' বলে সাধু ভাবে গেলো।
স্টপ কবি, উনাকে বলতে দিন, আমি বললাম।
'এই আমরা বহির্মুখে ব্যাস্ত,
কী করে জানবো অন্তরের খবর!
কে আছে সেখানে
কি চায়
কেনো চায়
কখনো কি জানা হয়েছে আমাদের!
আত্মতত্ত্ব জানিনা
কি করে জানবো আত্মার খবর!' সাধু বলতে থাকলো।
'একবার একূলে 
আরেকবার গোকূলে,
ইহাই কন্ট্রাডিকশনের মূল কারণ।'


ভাই খেলার কি খবর? অর্থ এসে জিগ্যেস করলো।
মুড পাল্টে গেলো সবার।
মি. সাধু ঠা ঠা হাসি থামিয়ে বললো, কার খেলা কে খেলায় জানিনাতো ছোট ভাই।
বাংলাদেশ জিতবে,
আমি শিওর,
আই লাভ বাংলাদেশ।
ভাই আমি কি একটা চা খেতে পারি?
তবে জিততে কষ্ট হবে- অর্থ বললো।
আমি বললাম, হ্যা।
সে বললো, ভাই আপনারা কি প্রাইমারি এক্সাম দিয়েছেন?
আমি বুঝলাম আড্ডার পাশা এবার উল্টালো।
'ভাই কেমন দিলেন? যারা টিকবে তারা কিন্তু প্লেয়ার। প্রশ্ন কিন্তু স্ট্যানডার্ড হয়েছে।'
কবি বললো, 'প্লেয়ার তো ভাই সবাই। টিকা না টিকা দিয়ে যোগ্যতা ম্যাজার হয়না। এটা পরীক্ষা নাকি প্রহসন!এটা সেটা কত কোটা! প্রশ্ন আউট! মাজা আর কোস্তের জোর!২৪লক্ষ এপ্লিকান্টের বিপরীতে ১২সহস্র চেয়ার! ফাকিং সিস্টেম!'


ধোঁয়া টানছে সবাই। গিঞ্জি ঘরে ছড়িয়ে আছে সাড়ে চার হাজার রাসায়নিক পদার্থ। শিরায় শিরায় ওদের স্রোত। বুক চেম্বারে নিকোটিনের চলাচল। একদিন সে কাবু করবে সচল চেম্বার। তবু টানছি। এখানে সবাই টানছে। কারণ জিগ্যেস করলে হয়তো বলবে এমনিই টানি; সেই মেয়েটির মতো করে 'এমনিই সাঁজি'।
অবশ্য ঢাকা'র অবস্থা আরও দিগম্বর। মল- মূত্র- ধোঁয়া একাকার।
রূপম গুনগুনিয়ে গান গাইছে, 
রাত জাগা চোখ নষ্ট বাতাস 
পাশে কেউ নেই একলা হতাশ 
আর ভূল দর্শন গিলে গিলে তোমার আমার 
বাড়ছে বিসুখ।
সাধু উঠে দাঁড়ালো।
'সবাই থাকুন।
আসি আমি' বলে বেরিয়ে গেলো।
 বাহিরে এখনো বৃষ্টি হচ্ছে। ততোটা তুমুল নয়। সবাই বেরিয়ে যাবার সময় এখন।
ওয়াটার ক্যালকুলাসে আমরা কেউ দক্ষ নই। কথার ক্যালকুলাস কারো জানা নেই। এতোক্ষণে বৃষ্টিকণা, কন্ঠকথা কোন পথে কোন গন্তব্যে গেলো হিসেব কষা হলোনা কারও। সবাই ছুটলাম ঘরে, প্রাত্যহিক অভ্যাসের পথে।

০৩.০৬.১৯

No comments:

Post a Comment