Wednesday, November 10, 2021

ছোটগল্প - ভাঙচুর - ভূবন মুন্সী।

ভাঙচুর

messenger of cosmology
ভূবন মুন্সী



সুবোধ চুরুট টানতে টানতে ঘরে প্রবেশ করলো। ডান হাতে স্মার্ট ফোন। ফোনটা টেবিলে ধাক্কা দিয়ে রেখে বললো- বাল ছাল মিটিং টিটিং আর ভাল্লাগেনা। দেশ টেশ গোল্লায় যাক, সবাই মারা দিক, আমার কী? তাড়াতাড়ি মিটিং শেষ করবেন।

প্রগতি পার্টির অগ্রজ নেতা উত্তম আগে থেকেই বসা। রুষ্ট চোখে তাকালো সুবোধের দিকে- তুমি এতো স্ল্যাং ল্যাঙ্গুয়েজ কোথায় শিখলা?

ক্যান, আপনার দেশ থাইকা শিখলাম। যা শেখানো হইলো তায় শিখলাম।

তোমার মাথা বন্ধক দিছো?- উত্তম বললো। 'সব ব্যাপারে সিলি মুড বন্ধ কর।'

সুবোধ এবার মনে মনে কথা বলছে- শালা! খালি উপদেশ। কী বাল ফালান সারাদিন, জানি।

সকাল আর মাগরিব একসাথে ঘরে ঢুকলো। দুজনের সখ্যতা খুব। সবার জানা মতে ইটিস পিটিস চলে। তবে সকালের প্রেম বিরহের কাব্যগ্রন্থ বেশ সাড়া পেয়েছিলো। মারজুক রাসেলের দেহবন্টনবিষয়ক দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর কাব্য গ্রন্থটিও বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছিলো তরুন ও বুদ্ধিজীবী মহলে। 

সুবোধ বাঁকা চোখে তাকিয়ে আছে, সকালকে তার খানকি খানকি লাগে। যদিও সকাল ওতো খারাপ না। মাগরিব ছেলেটার মধ্যে লাম্পট্যের জ্বিন আছড় করে আছে। 'শালা, মালটারে ঠিক ঝুটিয়ে নিছে।'

বিপ্লব, স্লোগান, উদ্যম আর মেধা একসাথে এলো। বিপ্লব বললো- সবাই এসে গেছে? সুবোধ বললো- হ্যাঁ। উত্তম বললো- দাদা, সাহস আর দৃষ্টি এখনো আসেনি। বাদবাকি আমরা সবাই আছি। 'সাহস অসুস্থ দাদা, ও আজ আসতে পারবেনা। দৃষ্টিও আসবেনা। দৃষ্টি গতকাল শ্বশুর বাড়ি গেছে।'

উত্তম ভাবে সুবোধ ছেলেটা বেশি সুবিধার না হলেও কাজে পারদর্শী। সবার দিকে নজর তার।

সবাই গোল টেবিলে বসে গেলো। মিটিং শুরু। "দেশের চলমান সংকট ও সমাধান শীর্ষক আলোচনা" - প্যানাটা দেয়ালে সাঁটা। এয়ার ফ্রেশার লেমন গন্ধ ছড়াচ্ছে। মাগরিব কথা বললো দ্রব্য মূল্যের উর্ধগতি নিয়ে। 'এটা একটা কূটনৈতিক ব্যাধি', 'মন্ত্রী ও দোকানদারদের স্বার্থগত সন্ধি বারবার এ ব্যাধি বাড়িয়ে দিচ্ছে। '

সকাল সাহিত্যের আকাল নিয়ে কথা তুললো। 'নপুংসক পিরিয়ড পার করছি আমরা।'

স্লোগান, উদ্যম, মেধা জনগণকে দেশের সংকট নিরসনে কি করে এক করা  যায় তায় ভাবছে।

উত্তম সুশীল সমাজের নিরব ভূমিকার নিন্দা জানিয়ে বলতে থাকলো- দেশটা কে দেখবে তবে? কে আর্ত মানুষ নিয়ে ব্রিফ করবে? আমাদের রোজ সংবাদ সম্মেলন করা দরকার।

সবাই সবার কথাকে যৌক্তিক ও যুগসত্য মনে করে তালি বাজাচ্ছে। কথার ফাঁকে ফাঁকে তালি পড়া এদেশের বংশগত রেওয়াজ।

সুবোধ লাইটার বের করে চুরুট ধরাতে যাচ্ছে... 'মিটিং শেষ?' সবাই ক্রোধ ঝাড়লো। কুল হতে বললো।

'থামুন সুধীবৃন্দ'- সুবোধ বললো। 'দাদা, সংযত গত বছর গুম হলো, এখনো খবর নাই। আমরা যদি অর্গানাইজড থাকি, তবে সংযতকে নিয়ে কোন পদক্ষেপ কেন নেইনি? সভ্যকে মেরে ফেলা হলো! কি হলো? মাঝে মাঝে গোল টেবিলে আসলাম, কন্ঠ খিঁচলাম, চলে গেলাম- কিছু হবে? আমরা সমাজ ও রাষ্ট্রের কোন বালই ছিড়তে পারবোনা। এটাকে না বলে সংগঠন, না সাংগঠনিক চরিত্র। যার যার, তার তার- কী সংগঠন? সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির কোন পদক্ষেপ আমাদের আছে? নাই। ক্যামনে! ক্যামনে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব!'

বিপ্লব বললো, উত্তম কিছু বলবা? 'দাদা, আমরা হুট করে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারিনা। আবেগীয় সিদ্ধান্ত নিলেও এগিয়ে যেতে পারবোনা।' কাউন্টার টক! সুবোধ কথার পা ঠেঁলে দিলো উত্তমের কথায়। 'হুট করেনা মানে কী আঠারো মাসে বছর গোনা! আবেগের রস ছাড়া ছোবড়া বুক নিয়ে বদল চাচ্ছি? বাহ্! "I love my country" এটা আবেগীয় নয়!'

'প্লিজ সাইলেন্ট' বিপ্লব সবার উদ্দেশ্যে বললেন। 'পরস্পরকে ভালোবাসি, রেসপেক্ট করি। নিজেরা এতো কথার বিভেদে জড়ালে হবে? কথার হাত ধরেই মনের বিরোধ আসে।'

সুবোধ বললো- দাদা, এটাতো ব্যক্তি বিরোধ নয়, মতের দ্বন্ধ। এটা ছাড়া পরিকল্পনার স্বচ্ছতা আসবে কোথা থেকে? একেক জন আমরা একেক প্ল্যাটফর্ম থেকে এসেছি। নয়া উদ্যোগে, নয়া প্ল্যাটফর্মের চুলচেরা স্বচ্ছতা দরকার, চরিত্রের ভঙচুর দরকার।

বিপ্লব, উত্তমরা এখন যে যার মতো। মাগরিব আর সকাল সংসার করছে। স্লোগান কন্ঠ ক্যান্সারে ভূগছে।উদ্যম, মেধা বিদেশ পাড়ি জমিয়েছে। 

সেদিনের সেই বৈঠকটাকে রাষ্ট্র পক্ষ দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র মূলক বৈঠক হিসেবে চিহ্নিত করেছিলো। জঙ্গিবাদের কিছু আলামতও নাকি বৈঠক স্থলে পাওয়া গিয়েছিলো। মিডিয়া দারুণ উদ্বেগে কলম চালিয়ে দু চার দিন পর থেকেই আরেক উদ্বেগে ব্যস্ত হয়ে গেছে। সময় দা পত্রিকার নাম পাল্টে ফেলেছে। বিপ্লবদের সাথে সংযোগ থাকার ব্যাপারে কোন ডকুমেন্ট না থাকায় উনি পর্দার আড়ালেই রয়ে গেলেন।

সুবোধ এখনো কারাগারে। সময় দা তার জামিনের দাবিতে নিরপেক্ষ মহল থেকে কথা বলছেন।

No comments:

Post a Comment