Wednesday, October 27, 2021

ইমোশন বনাম রিয়েলিটি - ভূবন মুন্সী।



ইমোশন বনাম রিয়েলিটি




আপনি দেশ মানুষ নিয়া ভাবতে এলেন কেন ভাই? 
দেশ দুনিয়া জাহান্নামে যাক, আপনার কি? বিপ্লবের জন্য, বদলের জন্য কেউ কী আপনাকে ভাড়া করেছে? জোর করেছে স্লোগান দিতে? মিছিলে যেতে?

পৃথিবী যে গতিতে পাগলা হয়ে যাচ্ছে - একে লাগাম পড়ানো চাট্টিখানি কথা না! আপনার ইমোশন, রিয়েলিটি, ক্যাপাবিলিটি, নলেজ আর দম লাগবে বিপ্লব করতে। ধৈর্য লাগবে।

কী, আপনার অনেক ইমোশন? কত রাত মানুষের কথা ভেবেছেন? কেন মানুষের কথা ভেবেছেন? মানুষের মুক্তির জন্য, শান্তির জন্য? নাকি বেহুদা ইমোশন?

ইমোশন দিয়া কিচ্ছু হবেনা? তবে ভাই, আপনি গতি আনবেন কোত্থেকে? অন্যের দুঃখে ব্যাথিত হবেন কি করে?

রিয়েলিটি? হ্যা, এটা লাগবে। থাকতে হবে। কিন্তু আপনে রিয়েলিটি রিয়েলিটি কইরা চিল্লাইতাছেন ক্যান! বাস্তবতায় আপনি বেকার, দূব্বল, বাপ চাচা কেউ এমপি মন্ত্রী না। ভাই, এতো রিয়েলিটি নিয়া মানুষের কথা ভাবোন যায়? কার্ল মার্ক্সের রিয়েলিটি কী ছিলো? বঙ্গবন্ধুর রিয়েলিটি?

এতো রিয়েলিটি নিয়া মনুষ গুনতে আইছেন? দেশ দুনিয়ার মানুষ হিসাব করতেছেন? আরে আপনার পরিবারে কয়টা মাথা কনতো! কী চারটা? পাঁচটা? আরেকবার হিসেব করুন। দেখুন তো আপনার বাপ ভাইয়ের মাথাটা বাদ পড়লো কিনা! অতি বাস্তবতায় বুঁদ থাকা ব্যাটারা বউ সন্তান ছাড়া কারো মাথা গুনতে পারেনা। আপনার দ্বারা বিপ্লব, বদল, সঙ্ঘবদ্ধতা? সম্ভব না ভাই।

ধৈর্য? কতদিন ধরছেন ভাই? কী, হিসাব নাই! হ্যা ভাই, এটাইতো ঠিক। আপনি জীবন পুড়িয়ে মানুষের কথা ভাবছেন, এখানে তো হিসাব থাকবোই না। শুধু মানুষের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। যতদিন বাঁচবেন, ততদিনই সংগ্রাম করে যাবেন।

আপনি কী পাইলেন? না, আপনি কিচ্ছু পাননি। পাবেনও না! সত্যি বলতে কী, আপনি কী ডিমান্ড রাখেন? কী প্রত্যাশা আপনার? দেশ দুনিয়া যদি আপনার সংগ্রামের মূল্য তাৎক্ষণিকভাবে বুঝতে পারে, তবে তো সব মানুষ সুবোধ! সুবোধ সমাজের জন্য আপনি এতো ঘাম ঝরাচ্ছেন কেন?

আর যদি সমাজে সুবোধ না থাকে, তবে আপনি কারো কাছে কিছু, এমনকি সম্মান প্রাপ্তিও আশা করতে পারেন না। আদম হতে মুহাম্মদ (সঃ), সক্রেটিস হতে চে, গৌতম হতে  লালন তাঁরা কী প্রত্যাশা করেছিল?

দেখুন, আপনার চোখের সামনেই আদালত আড়াই হাজার বছর পরে সক্রেটিসকে নির্দোষ ঘোষণা করলো। এইতো গত কাল কিংবা পরশু বঙ্গবন্ধুকে ঢাবি তার ছাত্রত্ত্ব ফিরিয়ে দিলো।

সমস্ত সাজানো অপরাধ আর অপবাদ কাঁধে নিয়া তাঁরা একটা জিনিসই প্রত্যাশা করতেন, তা হলো দেশ দুনিয়া মানুষের মুক্তি। তাই না?

তাঁদের আক্ষেপ ছিলোনা, ব্যক্তিগত প্রত্যাশা ছিলোনা। ছিলোনা, কারণ তাঁরা বন্দীদের জন্য লড়ছেন- কারাগারে, কাঁটাতারে, লোভে মোহে বন্দী মানুষ মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত কিছু কী দিতে পারে?

ভাই, দমটা তো লাগবে। তেজ বিকাইলে চলবো? যতদিন দম টানতে পারবেন, ততদিন দম রাখবেন। দম না থাকলে আপনার সব কিছুতেই ভয়, দ্বিধা জাগবে। 

ঝিলাম নদীর তীরে পুরুর কথা আপনার মনে আছে? ব্যাটার দম ছিলো। স্বামীজীর কথা মনে করুন, ক্যামন দম! সেই সময় জাত ধর্ম নিয়া কথা কইতে লালনের দম লাগেনি? 

আপনি এইসব ঐতিহাসিক ঘটনা গুলা পৌরাণিক বইলা চালায়া দিয়েন না। ঐতিহাসিক সত্য, রিয়েলিটিকে নাটক ফটক বা ইমোশনালি আলাপ পাড়া ভাইবেন না। সবটাই রিয়েলিটি।

ইতিহাস তো থেমে যায়নি। ইতিহাস রচিত হচ্ছে। হতেই থাকবে। আপনার ইতিহাস। আপনি সিরাজ নাকি মীরজাফর? আপনার নাম আপনি নিজেই লিখবেন ইতিহাসের পাতায়।

ভূবন মুন্সী

No comments:

Post a Comment