Tuesday, October 26, 2021

শব্দের রাজনীতি এবং গণমাধ্যম - মুরশীদ সেলিন।



শব্দের রাজনীতি এবং গণমাধ্যম
messenger of cosmology



‘ভোটের অধিকার’ আদায়ে আ.লীগের পথেই হাঁটবে নুরুলদের দল - এটা ২৬ অক্টোবর ২০২১ এ প্রকাশিত দৈনিক প্রথম আলোর একটি সংবাদ শিরোনাম। 

লক্ষ্য করার বিষয় যে প্রথম আলোর কাছে দলটি অধিকার পরিষদ নয়, বরং নুরুলদের দল। এরা কিন্তু আওয়ামীলীগকে হাসিনাদের দল, বিএনপিকে খালেদাদের দল, জাসদকে ইনুদের দল কিংবা সিপিবিকে সেলিমদের দল বলে পরিচয় করিয়ে দেয় না। প্রথম দিনেই অধিকার পরিষদকে নুরুলদের দল বলে চিহ্নিত করার মধ্য দিয়ে যে বার্তাটি পাঠকের কাছে যায় তা হলো ‘ওটা আসলে কোন রাজনৈতিক দল নয়, বরং নুরুলদের মত কয়েকজনের একটা গ্রুপ মাত্র’। 

এবার শিরোনামের মূল খবরে আসা যাক। প্রথম আলো বলছে ভোটের অধিকার আদায়ে আওয়ামীলীগের পথেই হাটবে অধিকার পরিষদ। আপাতদৃষ্টিতে পাঠকের কাছে বিভ্রান্তিকর মনে হতে পারে বিষয়টা, অনেকের কাছে হাস্যকরও ঠেকাতে পারে। কিন্তু এ প্রসঙ্গে প্রতিবেদনের অংশটি পড়লে এর প্রেক্ষাপট সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যায়। 

প্রথম আলো বলছে, “মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তির সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে দলের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘আমরা এ ব্যাপারে এখন যে প্রধানমন্ত্রী আছেন, ওনার শিক্ষা নেব। উনি যেভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ১৯৯১ সালে কাজ করেছেন, আমরা সেভাবে অগ্রসর হওয়ার চিন্তা করছি। যাঁরা বাংলাদেশের জনগণের ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করতে রাজি আছেন, আমরা তাঁদের সঙ্গে কথা বলব, তাঁদের সঙ্গে কাজ করব। এ ব্যাপারে কারও আপত্তি থাকলে থাকতে পারে, তাতে আমাদের কিচ্ছু করার নেই।”

১৯৯১ থেকে ২০২১ - ৩০ বছর খুব লম্বা সময় নয়। বিশেষত আমাদের যাদের বয়স পঞ্চাশ থেকে ষাটের মধ্যে তাদের স্মৃতি এত কম সময়ে ফিকে হওয়ার সম্ভাবনা কম। কিন্তু নতুন প্রজন্ম যাদের বয়স ২০ থেকে ৩০ এর মধ্যে তাদের অনেকেই হয়তো জানেন না ১৯৯১ এ কী হয়েছিলো। ফলে তাদের মধ্যে কিছুটা বিভ্রান্তি সৃষ্টির সুযোগ থেকেই যায়। 

এরশাদ পতনের পর ১৯৯১ সনের ২৮ শে ফেব্রুয়ারীর প্রথম নির্বাচনে অপ্রত্যাশিতভাবে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে বিএনপি। সংসদে আওয়ামীলীগ, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামিসহ সবগুলো ছিলো বিরোধী দল এবং সেই সুবাদে শেখ হাসিনা ছিলেন বিরোধী দলীয় নেতা। মাগুড়া উপনির্বাচনে কারচুপির পর ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে বিরোধী দলগুলো যে আন্দোলন শুরু করে, প্রধান ও বৃহত্তম বিরোধী দল হিসেবে আওয়ামী লীগের নেতা শেখ হাসিনাই ছিলেন সে আন্দোলনের নেতা এবং সেই আন্দোলনে জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামের সক্রিয় সমর্থন ও অংশগ্রহন ছিলো। জোটবদ্ধভাবে না হলেও নিজেদের মধ্যে লিয়াজো করেই  আন্দোলনের কর্মসূচী পালিত হয়েছে এবং পরবর্তীতে সংবিধান সংশোধন করে তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। 

তো সেই সময়ে ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে জামায়াতের অংশগ্রহনে কোন সমস্যা না থাকলে এখন কেন তা বড় সমস্যা হিসেবে হাজির হচ্ছে সেই প্রশ্নটি অনুচ্চারিত থেকে যাচ্ছে। 

বিভ্রান্তির এই কালে ইতিহাসের এই সত্যকে মাথায় রেখে গনমাধ্যম পাঠ করলে পাঠকরা কিছুটা হলেও রাজনীতির পাঠ উদ্ধার করতে সমর্থ হবেন বলে আশা করা যায়। কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষে সাফাই গাইতে না চাইলেও গনমাধ্যমের মতলবি রাজনীতির বিষয়টি উপেক্ষা করে থাকা কঠিন।

মুরশীদ সেলিন
রাজনীতি বিশ্লেষক 

No comments:

Post a Comment